প্রতিচ্ছবি
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৬ এপ্রিল, ২০১৫, ১১:১৩:৫২ রাত
বিরাজিত চরম অস্থিরতায় ক্রমেই আতঙ্কিত হয়ে উঠছে মোনেম। তার অন্তরাত্মা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে প্রতিপক্ষের তাড়নায়। বাবার মৃত্যুর পর মা আর ছোট বোন সাবিহার ভবিষ্যৎকে ঘিরে রচিত হয়েছিল মোনেমের স্বপ্ন। কিন্তু অকস্মাৎ একদিন মাতালদের একটি দল স্কুল থেকে আসার পথে ক্লাস ফাইভের ছাত্রী তার আদরের বোনকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। প্রায় এক মাস হয়ে যাচ্ছে যার হদীস আজও মেলেনি।
বিচারের দাবীতে স্থানীয় মাতব্বরের স্মরণাপন্ন হলে তাকেও যত্রতত্র গুম করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। তার বাড়ীটি এখন আতংকিত মৃত্যুপুরী। দুঃখিনী মায়ের দিকে তাকাতেই মোনেমের ভিতর আঁতকে উঠে, কষ্টের পাথর আরও ভারী হয়ে অনুভূত হয় তার হৃদয়ে। মেয়ের শোকে অনাহারী ও নিদ্রাহীন রুগ্ন মায়ের মুখে হাসি ফোটানো, বোনকে খুঁজে বের করা, নিজের জীবনের নিরাপত্তা, অসহায় মানুষদের শান্তি নিশ্চিত করাসহ জীবন সংসারের নানা দুর্বোধ্য জটিল অংকের হিসাব মোনেমের মস্তিস্ককে যেন ক্রমেই অকেজো করে দিচ্ছে।
অথচ মোনেম ও তার ছোট বোনকে শিক্ষার ক্ষেত্রে তার বাবা মা ছোটবেলা থেকেই নিরন্তর সাধনা ও অব্যাহত প্রয়াসের মাধ্যমে ধর্মীয় বোধ ও বিশ্বাসের শিক্ষাকে গুরুত্বের সাথে অগ্রাধিকার দিয়েছে। সর্বাবস্থায় তারা সত্যকে আঁকড়ে ধরে থেকেছে। ন্যায় ও সত্য পথের অভিযাত্রা থেকে কখনও কেউ তাদেরকে এক চুলও আপোষ করাতে পারেনি ।
কিন্তু দ্রুত পরিবর্তনশীল এই গ্রামের প্রতিচ্ছবি এখন যেন বড়ই অচেনা। শুধু মোনেমের একার ঘরে এই হতাশার চিত্র নয়। পুরো গ্রামে ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব ও অনুশীলনে বিলুপ্তির পথে মুসলমানদের আদর্শিক বোধের দুর্গতি, নিরীহ উম্মাহর নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতির কারণে শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবনকে যে বিপর্যস্ত ও বিপদগ্রস্ত করে তুলেছে তা ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে উঠে মোনেম। যা মোনেমের বিবেককে প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দেয়, হৃদয়ে জাগায় বিপ্লবী চেতনা।
প্রকাশ্য দিবালোকে ক্ষমতা এবং পেশীর বলে মাদক সেবন, ধর্ষণ, গুম, ভূমি দখল, কথায় কথায় দোকান পাট জ্বালিয়ে দেয়া এবং লুণ্ঠন চলছে নির্বিচারে। মিথ্যাচার, শঠতা ও নির্মমতা গ্রাস করছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন। কেড়ে নিচ্ছে মানুষের নির্মল শান্তি সুখ। ভোগ সর্বস্ব মানুষের দাপটে সমস্যা ও জটিলতার অগ্নি দহনে পুড়ছে নিরীহ মানুষ কিন্ত দায়িত্ববান ক্ষমতাবানরা নিরুত্তর, নির্বিকার!
এমনকি ধর্মীয় বিশ্বাসের ছদ্মাবরণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাধর অমুসলিমদের দাসত্ব করার অনিবার্য চিত্র অঙ্কিত হচ্ছে ধুঁকে ধুঁকে অসাড় হওয়া মানবসভ্যতার মর্মমূলে। বুদ্ধির নামে অবিবেচক গোষ্ঠী ভয়ঙ্কর ব্যক্তি বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে মানুষের আত্মা, বোধ, বিশ্বাস, নীতি নৈতিকতাকে বিষময় করে তুলছে। সব হারিয়ে অনেকেই আজ নিঃস্ব বোবাদের ভূমিকায়। যার কোন ক্ষতিপূরণ নেই, হয়না।
এর প্রসারতা ও গভীরতা এতটাই ব্যাপক যে শোষিত গোষ্ঠী ক্ষীণ কণ্ঠে তাদের ব্যথা উচ্চারণের ক্ষমতাটুকু পর্যন্ত রাখে না। সেটাও সুকৌশলে লুণ্ঠিত করা হয়েছে অনেক আগেই। এই মহা প্রলয় থেকে বের হওয়ার কোন পথ খোলা নেই মোনেমের সামনে। এ যেন অনিবার্য নিয়তি। অন্যায় শক্তির আগ্রাসনের দাপটে পর্যুদস্ত গোষ্ঠী মুমূর্ষ অবস্থায় চূড়ান্ত পরিণতির জন্য ধাবিত হচ্ছে উপান্তর না দেখে।
ধর্মপ্রাণ মানুষদের আল্লাহ্মুখিতার বিস্ময়কর আকর্ষণ এবং আখেরাতের সুখ শান্তিময় অনন্ত সফলতার চাবিকাঠিই একমাত্র সান্ত্বনা ও বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ভাবে মোনেম। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলতেই সাদা পোশাকধারী কয়েকজন লোক মোনেমকে তুলে নিয়ে গাড়ীতে উঠায়। ধর্মানুরাগী মায়ের বিলাপে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে কিন্তু ততক্ষণে অবলম্বনের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু মুছে দিয়ে সবকিছুই দৃষ্টির অচিন্তনীয় সীমানায়......।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৮ বার পঠিত, ৩৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার দুটি শব্দ এতো ভারী যার মর্মোদ্ধার করাটা সত্যিই সুকঠিন।
বিশ্বময় বিরাজিত প্রতিচ্ছবির এযেন জীবন্ত রুপায়ন।
বোনের জন্য দোয়ার অনুরোধ রইলো।
উৎসাহদান ও গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আবু জান্নাত লিখেছেন : আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে তার প্রিয় বান্দাদেরকে বেশী বেশী পরিক্ষা করেন। দুঃখ দূর্দশা যেন তাদের লেগেই থাকে। অথচ অবিশ্বাসীরা দাপুটে ও অহংকারে দুনিয়াতে বিচরণ করে, আর মুমিনদের দেখে তাচ্ছিল্ল করে। ইন শা আল্লাহ দুনিয়ার জিবন থেকে আখিরাত মুমিনদের জন্য কতই না উত্তর। অতএব এসব দুশ্চিন্তা ও বিপদ মুমিনের জিবনে লেগেই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সুন্দর কলামটির জন্য আপুনিকে অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ। জাযাকিল্লাহু খাইরান! সহমত
বোনের জন্য দোয়ার অনুরোধ রইলো।
এটাই আমাদের জীবনের প্রতিদিনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। আপনার স্বতঃস্ফূর্ত মহা মূল্যবান উপস্থিতি, প্রেরণাময় উৎসাহ ও গুরুত্বপূর্ণ অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
বোনের জন্য দোয়ার অনুরোধ রইলো।
দেশের বাস্তব চিত্র খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আপু । অনেক ধন্যবাদ আপু ।
বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদের নির্মম নিষ্ঠুর বাস্তবতা দরদময় হাতে উপস্হাপিত হয়েছে! সাথে সাথে এ থেকে চির মুক্তির কল্যাণকর পথও বাতলে দিলেন সুন্দর ভাবে-
"ধর্মপ্রাণ মানুষদের আল্লাহ্মুখিতার বিস্ময়কর আকর্ষণ এবং আখেরাতের সুখ শান্তিময় অনন্ত সফলতার চাবিকাঠিই একমাত্র সান্ত্বনা ও বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন!"
জাযাকিল্লাহু খাইরান শ্রদ্ধেয়া আপু্জ্বী!!
সর্বোপরি আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, প্রেরণাময় উৎসাহ ও ভালোলাগা অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমার ছোট ভাইয়ের সময়গুলো এখন ভালো যাচ্ছে তো? প্রাণভরা দোয়া রইলো আপনার জন্য।
ওয়ালাইমুনুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ.....
শ্রদ্ধেয় ভাই-বোনদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন,কখনো তাৎক্ষনিক বা কিছু দেরীতে!
চেষ্টা করছি সবর করার!
আল্লাহ ভরসা!!
যার কেউ নেই, তার জন্য স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আছেন, সারা পৃথিবীর মানুষ নাইবা থাকল, তিনিই যদি থাকেন পাশে তবে আর কি লাগে!
পাঠকের আশংকা, মোমেনের মায়ের এখন কি হবে? অকূল পাথারে পড়বে নিশ্চয়! হা পড়বে, সে অকূল পাথারকেও বাসযোগ্য করার জন্য, স্বাভাবিক জীবন যাত্রার চাইতে বেশি সুখ স্বাচ্ছন্দ দানে দয়ার সাগর আল্লাহতো রয়েছেন !
আমার বোনটি, এতো হৃদয়গ্রাহী করে কেমনে লিখে!!!! এক কথায় লা জবাব!
দেরি করার জন্য স-------রি------না, বলব না সরি! কারণেইত দেরি করেছি তাইনে! কি ঠিক বলিনি!
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, প্রেরণাময় উৎসাহ ও ভালোলাগা অনুভূতি সবসময় আমার বিশেষ প্রাপ্তি। আজকেরটিও তার ব্যতিক্রম নয়। ঠিকই বলেছেন ভাইয়া। সবকিছুর জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
পরীক্ষা কেমন চলছে? ভালো আছেন তো?
অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও দোয়া রইলো আপনার জন্য।
আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি, কিন্তু ঘাড় আমার সোজা হয় না! রাতে ঘুমের ঘোরে কে এসে ঘাড় মটকে দিয়ে গেলো, বুঝে উঠতে পারছি না! ছোট বেলায় ঘুমে সাপ বিচ্ছু দৌঁড়াতো, এখন অন্য কিছু এসে ঘাড় মটকে দিয়ে যায়!
আর হ্যাঁ কে ঘাড় মটকে দিলো? এর পরও কথা বলছেন কীভাবে??!!
আর হ্যাঁ ছোট ভাই আমি জানি আপনি খুবিই ব্যস্ত তারপরও একটু ছোট্ট অনুরোধ সম্ভব হলে যাইতুন – এর জন্য লিখুন প্লিজ!
এখন কি বিষয়টি পরিষ্কার?
একদিন এক বড় অনেক বকা বকি করে বললে আমার লিখা পত্রিকায় দিতে, দিলাম, প্রথম লিখাই পাবলিশ হয়েছে। পরে আর কখনো দেয়া হয়য় নি, অনেকে বলেছে দেয়ার জন্য, কিন্তু ঐ যে বলে না, যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়া পড়শির ঘুম নেই, আমার হয়েছে তাই!!!!! মানুষ কি আমাকে বলে বলে সব করাবে???? আমার কি নিজ উদ্যোগে কিছু করা যায় না? কেন এমন হয়????
আমি আসলেই জানি না, এমন একটা পত্রিকা আছে! খুব খুব খুব লজ্জিত!
জাযাকিল্লাহু খাইর!
যাক দারুণ এক অনুভূতি এবং ভাললাগা নিয়ে কী বোর্ডে হাত চালাচ্ছি......।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আর আমি ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন ? অরিজিন্যাল লাল মরিচ দিয়ে আলুভর্তা করেছেন ?
আমার ভাইটি ভালো জেনে আমারও খুব ভালো লাগলো। আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। অরিজিন্যাল লাল মরিচ দিয়ে আলুভর্তা??!!
এটা আবার সেই নাকি...... ছোট ভাই ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন