ডিমেনসিয়া - এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০২ এপ্রিল, ২০১৫, ০৭:১৫:৪১ সন্ধ্যা
তালিব সবেমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করেছে। বয়োবৃদ্ধ বাবা মাকে অনেক কষ্টে তার লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করতে হয়েছে। তাই সে এক বন্ধুর আন্তরিক সহযোগিতায় বিদেশে পাড়ি জমায় পরিবারের প্রয়োজনে। বিদেশের মাটিতে অনেক চড়াই উৎরাই শেষে একদিন সে একটি নার্সিং হোমে চাকুরী নেয় কেয়ারার হিসাবে। এই পেশার শুরুতেই প্রয়োজনীয় কিছু ট্রেনিং কোর্সে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিলো তালিবকে।
যথারীতি সমস্ত ট্রেনিং সুসম্পন্ন করে চাকুরীতে যোগদান করে তালিব। এটি একটি মূলতঃ বৃদ্ধাশ্রম যাকে ইউ, কে- তে বলা হয় নার্সিং হোম। ডিউটিরত অবস্থায় তালিবের কাজ হল অন্য অভিজ্ঞ ও দক্ষ সহকর্মীদের সাথে এই বৃদ্ধাশ্রমে অবস্থানরত বয়োজ্যৈষ্ঠদের নিত্যদিনের সবধরনের প্রয়োজন চাহিদানুসারে পূরণ করা। যেমন উঠানো, বসানো, শোয়ানো, পোশাক পরিচ্ছেদ পরিধান করানো, গোসল করানো, খাওয়ানো ইত্যাদি।
রেসিডেণ্ডকে মুখে তুলে খাওয়ানো হচ্ছে
ওয়াকিং এইড দিয়ে হাটতে সহযোগিতা করা হচ্ছে
মেশিনের সাহায্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে
বিছানায় শোয়ানো হচ্ছে
এখানে ভর্তিকৃত পুরুষ ও নারীদেরকে বলা হয় রেসিডেণ্ডস। তাদের প্রয়োজন নিরূপণ করে বিশেষ করে এই রেসিডেণ্ডদেরকে স্থানান্তরিত করার সময় তাদের উচ্চতা, ওজন, নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন রকমের অত্যাধুনিক যান্ত্রিক মেশিন ব্যবহার করা হয়। এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক দক্ষতা ও জ্ঞান প্রশিক্ষণকালীন সময়ে হাতে কলমে তালিবকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। এই রারেসিডেণ্ডসগণ মূলতঃ এই নার্সিং হোমে অবস্থান করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত।
কর্মরত অবস্থায় তালিবকে প্রায়ই আনমনা হয়ে ভাবতে হয় এই রেসিডেণ্ডসদের আচরণ দেখে। তারা এমন সব অবিশ্বাস্য আচরণ করে যার সাথে সে পূর্ব পরিচিত ছিল না। পূর্ব বাস্তব জীবনে এসব লক্ষণ বা আলামত চোখে দেখা তো দুরের কথা জীবনে সে শুনেওনি কোনদিন। তাই কৌতূহল নিবারণের জন্য তালিব তার ফ্লোর ইনচার্জ মাইক-কে একদিন জিজ্ঞেস করে। পরে মাইকের কাছ থেকে তালিব জানতে পেরেছে রেসিডেণ্ডদের অস্বাভাবিক আচরণের অনেক অজানা লোমহর্ষক কাহিনী।
ফ্লোর ইনচার্জ তালিবের জন্য ডিমেনসিয়ার উপর একটি ট্রেনিং প্রোগ্রাম অনুমোদনের পাশাপাশি ছোট একটি বিষয় ভিত্তিক আলোচনার আয়োজন করে। ডিমেনসিয়া বিষয়টির উপর সংক্ষিপ্ত এক আলোচনায় মাইকেল বলেন, ডিমেনসিয়ার অনেক প্রকারভেদ আছে। তবে ডিমেনসিয়ার মধ্যে ভাসকুলার ডিমেনসিয়ার লক্ষণ ও রূপ ভয়াবহ। এটি এক ধরণের মনসংক্রান্ত বা মানসিক রোগের নাম। যার কারণ ধমনীর ইল্যাসটিসিটি বা স্থিতিস্থাপকতা অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় মস্তিস্কে রক্ত চলাচল কমে যায় ফলে মানসিক সুস্থতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে এবং দিনে দিনে সেটির ক্রমাবনতি ঘটতে থাকে।
যা ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি, বিচারিক শক্তি, ব্যক্তিত্ববোধ ও স্বাভাবিক আবেগ নিয়ন্ত্রণকে বাধাগ্রস্ত করে। ফলে তাদের মানসিক বিভ্রমসহ স্বাভাবিক আচরণের অবনতি ঘটে যা অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অবতারণা করে। এসব অভাবিত আপত্তিকর ঘটনা প্রায় প্রতিদিন ঘটে নার্সিং হোমগুলোতে। এমতাবস্থায় রেসিডেণ্ডদের মাঝে উপনীত হওয়া বিপরীতমুখী অস্বাভাবিক আচরণ দেখে অনভিজ্ঞ আপনজন, নিকটাত্মীয় এমনকি তাদের সেবাকাজে জড়িত সদস্য সদস্যাগণও প্রায়ই আতঙ্কিত হয়ে উঠে। চলবে ইনশআল্লাহ্!
বিঃ দ্রঃ - আগ্রহী ও কৌতূহলী বিজ্ঞ পাঠক/পাঠিকাবৃন্দের জন্য ডিমেনসিয়ার একটি সংক্ষিপ্তসার এখানে ইংরেজিতে উপস্থাপিত করা হলঃ
Dementia= a global and progressive deterioration of the mental faculties which is irreversible and affects memory, intellect, judgement, personality and emotional control. dementia is the result of an organic brain syndrome. the term brain failure is gradually replacing the term dementia because it conveys the fact that failure is a process, while the dementia simply suggests a state associated with nihilistic views on treatment and prognosis.
Arteriosclerotic= dementia due to insufficient blood supply to the brain caused by arteriosclerosis. it is usually occured in people aged 40-60 years. it is due to early degeneration of small cerebral blood vessels.
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৬ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
বোনের জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করবেন যেন, বিশেষ অনুরোধ থাকলো ।
মন্তব্য ও সাথে থাকার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
তোমার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
বোনের জন্য বেশী বেশী করে দোয়ার বিশেষ অনুরোধ থাকলো ।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
বোনের জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো ।
যেভাবে আপনার সহজ হয়, সেভাবেই লিখুন। আমি না বুঝলেও বুঝার মানুষের অভাব নেই। জাযাকিল্লাহ খাইর।
অত্যন্ত সহজবোধ্য ভাষায় ডিমেনসিয়া সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয়েছে আশাকরি বাংলায় লিখা অংশটি বুঝতে অসুবিধা হবে না।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
আমার জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো ।
আমার জন্ম এবং এস এস সি পর্যন্ত বেড়ে উঠা গ্রামে সুতরাং পান্তা খাবো না তা কি হয়! আমার ভীষণ পছন্দ খাঁটি সরিষার তেল এবং লাল শুকনা মরিচ সাথে পিঁয়াজ হলে আরও ভালো। আপনি কী শুঁটকি মাছ পছন্দ করেন?
জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্ খুব ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ছোট ভাই?
এখানে চলমান লাল মরিচ বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন ,তা আপনি বুঝতে পারেননি।
হ্যা পান্তা আমার প্রিয়,তবে ছোটবেলার মত স্বাদ এখন পাইনা। আমি ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ .....শুটকি মাছ আমি খাইনা। এর গন্ধ ভাল লাগেনা। তবে লোনা মা বা ইলিশ মাছ লবন দিয়ে যেভাবে রাখে ওটা ভাল লাগে। ইলশের ডিম ওহহহহহ...শুটকি বাদ...আপনি ইলশ ভাজেন,সাথে আলুভর্তা,ডাল..কব্জী ডুবিয়ে খাব
একটু বলুন না ছোট ভাই প্লিজ...
আর হ্যাঁ আমার ছোট ভাইয়ের জন্য ইলিশের ডিম ভাজি, ইলিশ মাছ ভাজি, আলুভর্তা, ডাল আর সব্জীর আমন্ত্রণ রইলো।
ধন্যবাদ।
একটি পেশা ও কিছু দূর্বল মানুষের বিষয়ে অবগত হলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাদের জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
প্রকৃতি দেয় চির কল্যাণকর পারিবারিক ও ধর্মীয় মুল্যবোধের অবক্ষয়ে আজ এই সব হোমের সৃষ্টি! ডিমেনসিয়া সৃষ্টিতেও দায়ী!
ভিন্নধর্মী উপস্হাপনা জানার পরিধি কে বাড়াবে নিশ্চয়!
জাযাকিল্লাহু খাইরান হে শ্রদ্ধেয়া আপুজ্বী!!
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
আপনার সাথে সহমত আপু। অনেক ধৈর্য এবং টেকনিক প্রয়োজন। আপনার স্বতঃস্ফূর্ত মূল্যবান উপস্থিতি, অনুপ্রেরণা , উৎসাহ এবং হৃদয়গ্রাহী সুন্দর ভালোলাগা চমৎকার অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
আপনাদের মত বিজ্ঞজনরাইতো আমাদের অজানা বিষয়গুলো জানাবেন, আর তাতে করে আমরা উপকৃত হলে তাঁর জাযা আপ্নারাও সমভাবে পাবেন।
ডিমেনসিয়ার কথা পূর্বেও শুনেছি, কিন্তু গুরুত্ব দেই নি ভালো ক্রে জানতে। এখন বড় বোন যখন তার আলোচনা নিয়ে হাজির হলেন তখনতো জানতেই হবে।
পাগলাটে আচরণ মানুষের কাছে সসময়ই বিরক্তির কারণ, বিরক্তি আসা স্বাভাবিক, কিন্তু বিরক্তিকে দমন করে তাদের সেবায় যে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবে, তার মত মহৎ দিল মানুষ আর কে হবে! এত্তোগুলো মানুষের দোয়ায় তার জীবন সুখে সমৃদ্ধিতে ভরে যাবে, যদিও সমৃদ্ধি নাও আসে, তবুও যে সেবা করতে হবে, এটা দায়িত্ব, মানবতার দাবী!
চলবে যখন আমি বসে থাকব না, সঙ্গেই আছি।
আর হ্যাঁ ভাই আমি কিন্ত বিজ্ঞ নই অতি সাধারণ। তবে চেষ্টা থাকবে অজানা বিষয়গুলো জানানোর। সাথে আছেন জেনে আনন্দিত হলাম।
অনেক চমৎকার কথা বলেছেন, “পাগলাটে আচরণ মানুষের কাছে সসময়ই বিরক্তির কারণ, বিরক্তি আসা স্বাভাবিক, কিন্তু বিরক্তিকে দমন করে তাদের সেবায় যে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবে, তার মত মহৎ দিল মানুষ আর কে হবে! এত্তোগুলো মানুষের দোয়ায় তার জীবন সুখে সমৃদ্ধিতে ভরে যাবে, যদিও সমৃদ্ধি নাও আসে, তবুও যে সেবা করতে হবে, এটা দায়িত্ব, মানবতার দাবী!
ভীষণ ভালো লাগলো......।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
এই সমস্যা কিন্তু এখন আমাদের দেশেও বেড়ে যাচ্ছে।
এই সমস্যা দিনে দিনে এখন আমাদের দেশেও প্রকট আকার ধারণ করছে।
আপনার স্বতঃস্ফূর্ত মূল্যবান উপস্থিতি, অনুপ্রেরণা , উৎসাহ এবং হৃদয়গ্রাহী সুন্দর ভালোলাগা চমৎকার অনুভূতির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
সত্যি একটি ভিন্ন ধর্মী এবং কঠিন বাস্তবতার সচিত্র বিবরন এঁকেছেন পোস্টটির মাধ্যমে! এই সুবাদে আমরা অনেক কিছু জানলাম আলহামদুলিল্লাহ!
দেশের বাইরে অনেক সমস্যা যেমন আছে তেমনি সমাধানের আধুনিক সরন্জাম ও ব্যবস্থাও আছে!তারপরেও অনেক সময় এই ধরনের অসহায় মানুষদের সাথে খারাপ ব্যবহারের খবর ও কানে আসে! যা দুঃখ জনক! আমার বাসার পাশে একটা ওল্ড হোম আছে সেখানে আমার পরিচিত একজন মহিলাকে আমি মাঝে মাঝে দেখতে যাই! তখন বুঝতে পারি লম্বা হায়াত আর শারীরিক অসুস্থতার কারনে কত কষ্টের মাঝেই মাউষকে দিনাতিপাত করতে হয়!
আল্লাহ আমাদের হায়াতে তাই্যেবা দান করুন, পবিত্র জীবন ও জীবিকা দান করুন এবং অন্যের কষ্টের কারন না করুন!আমিন ! জাযাকিল্লাহু খাইর!
সঠিক কথা বলেছেন আপু। সমস্যা সমাধানে আধুনিক সরন্জামাদি থাকার কারণে এসব অসহায় মানুষদের সেবা কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে। তারপরেও অনেক সময় এই ধরনের অসহায় মানুষদের সাথে খারাপ ব্যবহারের খবর ও চিত্র মনে হয় টিভি তে দেখে থাকবেন। মহান আল্লাহ্ আমাদের সহায় হউন।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
বোনের জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন