বসন্তের প্রতীক্ষায়
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ৩০ মার্চ, ২০১৫, ০৭:২৭:২৮ সন্ধ্যা
কোন কারনে তুলি মনোঃকষ্ট আর বেদনার অনলে দগ্ধিভূত হলে সে সমূদ্রের পারে গিয়ে একান্ত নিরালায় বসে বসে প্রকৃতির রূপ আস্বাদন করে হৃদয়ের দাহ নিবারণ করতো। আবার কখনও সমূদ্রের অশান্ত গর্জনের শব্দ ও উত্তাল করা ঢেউয়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলতো কোন এক দূর অজানার অচিন্ত্য দেশে। সেখানকার স্নিগ্ধ শীতল করা অবিশ্বাস্য প্রকৃতিকে দেখে তুলি মনে মনে ভাবে বিধাতা যেন বিশেষ যত্নে সখ্যতাবশতঃ সেগুলোকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন।
সাগর, পাহাড় আর ঝর্ণার দেহের সাথে পরম মমতায় জড়িয়ে থাকে অভিভূত করা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ঝর্ণার শরীর বেয়ে অবিরামভাবে বিশাল জলরাশির প্রবহমান স্রোত কোথা থেকে আসছে কেউ জানে না। ঠিক যেন তুলির মনে উথলে উঠা কান্নার ঢেউয়ের মত। তারপরও প্রকৃতির দেয়া নিঃস্বার্থ এই অপরূপ সঙ্গিনীকে পেয়ে তুলি হয় তৃপ্ত, মুগ্ধ। এটিই তার জন্য হৃদয় শীতল করা প্রকৃষ্টতর স্থান যা তার দয়ালুর উত্তম দান, সর্বান্তকরণে ভাবে তুলি।
বসন্তের অপূর্ব সমারোহে ও ঘন সবুজের নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে মাতোয়ারা হয়ে ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে পুরো এলাকাটি। তাদের হৃদয় উজাড় করা অস্বাভাবিক রূপে মোহিত হয় তুলি। আর মনে মনে ভাবে বৃক্ষরাজিরা তাদের মনের সবটুকু আনন্দ ঢেলে সেজেছে নববধুর সাজে তাদের প্রিয়জনদের একান্ত সান্নিধ্য আর ভালোবাসা পাবার মোহে।
নাম না জানা গাছগুলোর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তুলি। বাহারি ফুলগুলি কেমন যেন ভাবের দোলায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাকে। হৃদয়ে তোলে অজানা আলোড়ন, ভাবনার জগতে জাগায় শিহরণ আর আনমনা করে দেয় তাকে সুমিষ্ট এক ঘ্রাণ। নীল, হলুদ, কালো, সাদা, লাল নানা বর্ণের ও রঙের পাঁপড়ির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন সাজের থোকা থোকা কেশ মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয় তুলিকে।
ধীরে ধীরে পালা বদলের এক ক্ষণে একদিন এক শীতের বিকেলে তুলি অবাক হয়ে দেখে এখন আর মায়াভরা গাছগুলোতে কোন বাহারি ফুলের সমারোহ নেই। নেই কোন মন জুড়ানো হৃদয় শীতল করা সবুজ পাতার সজীবতা। শুধু জীর্ণ শীর্ণ শরীরে হারানোর বেদনায় অসহায়ার মত তাকিয়ে আছে বিষণ্ণ মনের শুকনা ডালপালাগুলো। এ যেন সোমালিয়ার কঙ্কালসার শিশুগুলোর নিষ্ঠুর আহাজারির বিমূর্ত অবয়ব। তুলি মুহূর্তেই বেদনার্ত হৃদয়ে আঁতকে উঠে। তার মনে উদিত হয় শত শত প্রশ্নের!
ফুলের মত, সবুজ গাছের মত, পাঁপড়ির মত, প্রকৃতির মত হারানোর করুণ পরিণতি দেখে বেদনায় ডুকরে কেঁদে উঠে তুলি। মনে হল, ঐ গাছের সাথে তার জীবনের কী এক অদ্ভুত মিল! ঋতুর রাজা বসন্ত মানুষের মনে জাগিয়ে তোলে আনন্দময় ভাবনা ও বৈচিত্র্যময় পরিতৃপ্তির রঙ। তাইতো প্রকৃতি প্রেমীরা ছুটে যায় তাদের কাছে এবং তাদের রূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে নিজেদের মনের ভাব রাঙিয়ে দিয়ে, ভাবে তুলি। অথচ শীতের তীব্রতায় যখন বৃক্ষরাজিরা সবকিছু হারিয়ে ফেলে হয়ে যায় নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ, সৌন্দর্যহীনা তখন কেউ তাদের খোঁজ রাখে না। অযত্ন আর অবজ্ঞায় পড়ে থাকে উপেক্ষিত অবহেলিত হয়ে। যা তুলির হৃদয়ে ছড়িয়ে দেয় হতাশা, বিষণ্ণতা আর অতৃপ্ততার কালো মেঘ।
নানা কথা ভেবে ভেবে তুলির কষ্ট আরও গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে উঠে। সে ভাবতে থাকে বৃক্ষরাজিদের শরতের পর বসন্ত আসবে কিন্তু আমার জীবনে যে বসন্ত একবার চলে গেছে তা কী আর কখনও ফিরে আসবে??!! নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে তুলি?! আবার ভয়ার্ত কণ্ঠে নিজেই বলে উঠে সে; জীবন বৃক্ষের যৌবন বসন্ত ফিরে ফিরে আসে কিন্তু আমার জীবনের যৌবন বসন্ত একবার চলে গেলে তা আর কখনই ফিরে আসবে না! সাথে সাথে বিষয়টি তুলিকে চিন্তার গভীর সমূদ্রে ফেলে দেয়!!তাহলে কেন সে এই ক্ষণিক বসন্তের মোহে জীবনকে সদা ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে??!!! মুহূর্তেই হৃদয়ের পিঞ্জরে কোরআনের আওয়াজের শব্দমালা তরঙ্গায়িত হতে থাকে...
জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে, কিয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং বেহেশত যে লাভ করবে সেই সফলকাম এবং পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয় (সূরা আল ‘ইমরানঃ ১৮৫)।
নতুন বোধ আর ভাবনার জাগ্রত জোয়ারে তুলি গতিপথ খোঁজে মুক্তির কাঙ্ক্ষিত বসন্তের প্রতীক্ষায়। হৃদয়ের সবটুকু নির্যাস আর সুষমা ঢেলে ক্ষণিকের এ বসন্তকে তুলি সপে দিতে চায় চিরযৌবনা বসন্তের জন্য। যা তুলির জন্য জান্নাতি সুবাসিত ফুলে ফুলে মাধুর্যমণ্ডিত করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে অনন্তকালের জন্য মৃত্যুর ওপারে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৮ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শ্রদ্ধেয় সুপ্রিয় আপুনি, মনের মাঝে কেমন যেনো একটা তীব্র আঁচড় অনুভব করলাম লিখাটা পড়ে! এতো সুন্দর করে বষন্তের আগমনী লিখলেন আর পরক্ষনেই সকল শূন্যতার প্রতিচ্ছবি মৃত্যু!
মোহময় বষন্তের হাতছানি অনেকটাই মরিচীকার মতোণ তাই না আপু!
আমার জীবনে যে বসন্ত একবার চলে গেছে তা কী আর কখনও ফিরে আসবে??!
এই আর্তনাদ আমিও যে শুনতে পাচ্ছি!
জান্নাতি সুবাসিত ফুলে ফুলে মাধুর্যমণ্ডিত করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে অনন্তকালের জন্য মৃত্যুর ওপারে। আমিন!
জাযাকিল্লাহু খাইর!
“তোমার মূল্যবান প্রথম উপস্থিতি
অর্থ কিছু অসাধারণ প্রাপ্তি”
যা তোমার মন্তব্য কখনই বিমুখ করে না।
অনুপ্রেরণাময় সুন্দর অভিব্যক্তিমাখা মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
তোমার জন্য হৃদয় নিংড়ানো অনিঃশেষ দোয়া, শুভেচ্ছা এবং অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
আমার জন্য দোয়া করিও বেশী বেশী করে অনুরোধ রইলো।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে অটল থাকার তাওফিক দান করুন। আমাদের অবস্থার উন্নতি দান করুন। তিনি ছাড়া আমরা অসহায়
আপনার হৃদয়স্পর্শী দোয়ায় আমীন। ছুম্মা আমীন।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
বোনের জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না যেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে, কিয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং বেহেশত যে লাভ করবে সেই সফলকাম এবং পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয় (সূরা আল ‘ইমরানঃ ১৮৫)।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে অটল থাকার তাওফিক দান করুন। আমাদের অবস্থার উন্নতি দান করুন। আমীন ।
তোমার হৃদয়স্পর্শী দোয়ায় আমীন। ছুম্মা আমীন।
তোমার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
বোনের জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না যেন।
আপনার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি, অনুপ্রেরণা ও হৃদয়গ্রাহী কথাগুলো খুবই উদ্দীপ্ত করে আমাকে লিখার জগতে।
আমি আমার পাঠকদের কথা বিবেচনায় রেখে চেষ্টা করি অতি সহজ সরল ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপনের জন্য। কিন্তু এটা আমার স্বভাবজাত একটি ভালোলাগার এবং ভালোবাসার বিষয় যা আমি ইচ্ছে করলেও কেন জানি উপেক্ষা করতে পারিনা!!
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
অ্যান্টিমনির জন্য দোয়া করতে ভুলবেন না যেন।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
আমার লিখার জগতে আপনার মূল্যবান কথাগুলো ঠিক যেন হীরের টুকরোর মত দামী।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
আমার জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করবেন অনুরোধ রইলো।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয়া প্রাণপ্রিয় আপুজ্বি।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও হৃদয়গ্রাহী সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
লিখেন না কেন আপু?
আপনার জন্য প্রাণভরে দোয়া করি পরম করুণাময় আপনাকে দ্বীনের পথে অবিচলিত রেখে দুনো জাহানের কামিয়াবী অর্জনের তৌফিক দান করুণ। আমীন।
বোনের জন্য দোয়ার অনুরোধ রইলো।
আপা আপনাদের আহ্বান শুনলে ইচ্ছে করে আবার আগের মত নিয়মিত হয়ে যাই। কিন্তু কেন যে পারছিনা!! তবুও চেষ্টা করছি দুই একদিন পরপর মন্তব্যের মাধ্যমে নিয়মিত থাকতে।
যত্ন নিলেও কি সে আগের রূপে ফিরে আসে? আসে না, পকৃতির নিয়ম অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট সময় পর কেবল তাকে স্বরূপে দেখা যায়। তবে ঐ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অবশ্যই যত্ন করা চাই, নয়ত বস্নত আসবে, কিন্তু বসন্তেও তার জীর্ণতা শীর্ণতা প্রকাসধ পাবেই।
পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কিয়ামতের দিন একটি মানুষও সামনে এগোতে পারবে না, তার মধ্যে একটি হলঃ যৌবন কে কোন কাজে ব্যয় করেছে?
মানুষের মাঝে চেতনা আসার জন্য কোন না কোন বিষয় অবদান রাখে, তুলির মনে ঋতুবৈচিত্র দারুণভাবেই আলোরণ সৃষ্টি করেছে। তাই বলব, চোখ শুধু সুন্দর জিনিস দেখার জন্য নয়, প্রকৃত সত্য উপলব্দির জন্য চোখের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
চোখ শুধু দেখার নয় খোদার সৃষ্টিকে নিয়ে ভাবারও! অনেক সুন্দর ভাবনাময় হৃদয়স্পর্শী অনুভূতি।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
বোনের জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করবেন যেন, বিশেষ অনুরোধ থাকলো ।
কেমন আছেন শ্রদ্ধেয় আপুজ্বী আপনারা?
আল্লাহ মহান আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ভালো রাখুন সব সময়-এই দোয়া করি আমি!
আমার জন্যেও দোয়ার দরখাস্ত জানালাম!
দুর্বল বান্দা আমি,পরীক্ষায় সবর করতে পারি না! আল্লাহ যেন হেদায়েত করেন আমায়!!
আপনার জন্য সবসময় প্রার্থনা করেছি ভাইয়া। ইনশাআল্লাহ মহান প্রভুর ইচ্ছায় সবকিছু একদিন ঠিক হয়ে যাবে এবং উত্তমে পুরুস্কারে পুরুস্কৃত হবেন আপনি।
এটাই উত্তম মুমিন বান্দাদের জন্য পরীক্ষা এবং সুসংবাদ। আমাদের কাজ হল বিপদে একটু সবর ও ধৈর্যধারণ করা।
• আপু ভালো আছেন তো?
• লেখাপড়া, পরীক্ষা কেমন চলছে আপু?
• তাড়াতাড়ি লিখা নিয়ে আসুন প্লিজ। খুব খু-উ-ব মিস করি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন