ফেলে আসা আলো আঁধারির দিনগুলি- শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৯ মার্চ, ২০১৫, ১০:৪৪:৫৪ রাত
পর্ব ৮
http://www.todaybd.net/blog/blogdetail/detail/6327/mbanu/63344#.VRgsPnR0zIU
আমি তখন দেশের বাইরে। হঠাৎ একদিন স্যারের মৃত্যু সংবাদে আমার নিদ্রাহীন চোখ ও ব্যথাতুর হৃদয় এক দৃষ্টিতে চেয়েছিল জলপদ্মের দিকে। দীর্ঘশ্বাসে উড়ছিল তখন হৃদয় কাঁপানো স্মৃতিগুলো। বিষণ্ণ মনের মেঘভরা দেশে স্যারের নিজের হাতে লিখা স্নেহেভরা মনোমুগ্ধকর চিঠিটির সাথে কথা বলেছিলাম সেদিন। আমার সংরক্ষণে থাকা স্যারের লিখা চিঠি দু’টো গভীর স্নেহের প্রোজ্জ্বলতায় আজও সীমাহীন প্রেরণা ও শক্তির উৎস হয়ে যেন জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। বীণার তারে করুণ রাগিণী যেন যুগপৎ আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঊর্মিল স্মৃতিময় অগণন দৃশ্যের পাহাড়ে।
মেনে নিতে কষ্ট হয় আমার প্রিয় মানুষটি আর নেই এই ধরাতলে। যার স্নেহাতলে ও সান্নিধ্যের ছায়ায় থেকে অভিনব উদ্যমে এক নহলি ব্যঞ্জনায় নিজের গতিপথ তৈরীতে ব্যস্ত ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত এই আমি একদিন খুঁজে পেয়েছিলাম সঠিক চলার পথ। বৃহৎ বিপদাপন্ন বাঁকের বিষাক্ত কাঁটা ছাড়িয়ে যিনি আমার জীবনের পথকে করেছিলেন কুসুমিত মসৃণ। কেন জানি মনে হয় আমার প্রিয় মানুষটির মুখ এবং সঠিক চেহারা আজও বিলক্ষণ দেখতে পারি। যার প্রগাঢ় স্নেহের সাহসী আহ্বানে আমার প্রবল প্রত্যয়ী মন দুর্দমনীয় উদ্যমে তার মনস্বীতা নিয়ে ছুটে চলেছিল পূর্ণতার দিকে। স্পর্শকাতর মানসিকতায় ও গভীর চিন্তাপ্রবাহে প্রবিষ্ট হয়ে নির্দ্বিধায় অক্লেশে এই মহান মানুষটিকে সমাজ ভাবনার এক নৈর্ব্যাক্তিক মানবশিল্পী হিসাবে রূপায়িত করা যায়।
সতত হৃদয়পটে ভেসে উঠে স্যারের অসাধারণ ব্যক্তিত্বে ভরা দয়ালু মনের অভিব্যক্তিগুলো। যদিও ব্যস্ততম জীবনের মাঝে স্মৃতিকে হাতড়ানোর ফুরসুতই মেলেনি তাঁর। তারপরও মাঝে মাঝেই ব্যক্তিগত স্মৃতির দরজায় টোকা দিয়ে শুনিয়েছিলেন তাঁর জীবনের অমূল্য অভিজ্ঞতা। স্যারের কথা শুনে মাঝে মাঝে হার্ট বিট বন্ধ হওয়ার যোগাড় হলেও আমি পেয়েছিলাম আকাশসম প্রশান্তি এবং দুঃখ যাতনাকে জয় করার অচিন্তনীয় শিক্ষা।
যার দুর্নিবার টানে অদম্য স্পৃহায় নিরন্তর চলেছি আজও স্বপ্নের সন্ধানে। মহান প্রভূর অপরিসীম রহমতে যিনি ছিলেন আমার জীবনের স্বপ্নের রূপকার। সদা সর্বদা রূপকথার জীওন কাঠির মত যিনি মানুষকে স্বাপ্নিক করে তুলেছিলেন আর সেটা বাস্তবেও মূর্ত হয়ে উঠেছিল। মাঝে মাঝে তাই কষ্টে কুঁকড়িয়ে হারিয়ে যাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের তীব্রতায় তীরবিদ্ধ এক নীল কণ্ঠের আহত পাখীর মত। আজও বেশ মনে পড়ে সেসময় আমি কঠিন ব্যস্ততায় ধুঁকছি। স্যার চেয়েছিলেন আমি যেন সপ্তাহে অন্তত একদিন চট্টগ্রামে তাঁর নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান ইউ এস টিসি তে কাজ করি। প্লেনে যাওয়া আসার ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু বহুমুখী ব্যস্ততায় জর্জরিত এই আমি শত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেটা সম্ভব করতে পারিনি যা আজও আমাকে কাঁদায়। এখনো মনে হয়, আমার না পারার বিষয়টি স্যারের জন্য ছিল অনেক মর্মবিদারক।
আজ তাঁরই মৃত্যুর স্মৃতির ভারে খুলে গেছে আমার বিষাদে ভরা ডুবুরী আঁখি। আঁখির কোণে ছল ছল ক্রমাগত অপার নির্মিতি। আর এসব নির্মিতির ভেতর থেকে জেগে উঠা এই আমি জাগৃতির ভিতর নির্মিত ক্রিয়ার মাঝে সেই প্রতীকিকে খুঁজে বেড়াই। আমার জীবনের সবুজ ঘেরা পল্লবিত পুস্পকুঞ্জ থেকে ঝরে গেছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সুবাসিত প্রিয় ফুলটি। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, অশ্রুপ্লাবিত চোখে যখন ভাবি আমার শ্রদ্ধেয় ফুলটি আর কখনও সেই বৃন্তে শোভা পাবে না তখন ভারের বোঝা কেবলি বেড়ে চলে হৃদয়ে।
স্যারের মত আদর্শবান মানুষের সাথে সাক্ষাত, সান্নিধ্যলাভ ও হৃদয় নিংড়ানো স্নেহ-ভালোবাসা ও উপদেশ লাভের ব্যাকুলতা আজও ভাবায়, যার মধ্যে এতোটুকু অতিরঞ্জন নেই। তিনি তাঁর স্বীয় কর্মক্ষেত্রে ছিলেন একজন অনন্য দিকপাল। তাঁর সংসর্গের প্রভাব এতই যাদুকরী ছিল যে তাঁর অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে এই প্রতিভাময় বহুমুখী গুণের প্রতিফলন লক্ষণীয়। যিনি ছিলেন অসহায়দের পরম বন্ধু। সর্বস্তরের মানুষের কাছে তাঁর অতুলনীয় জনপ্রিয়তা, বিপদগ্রস্থদের প্রতি দান ও দয়াশীলতা যা স্যারকে তাঁর ব্যক্তিত্বের এক অপূর্ব চূড়ায় বসিয়ে দিয়েছে। এভাবেই তিনি একজন বিশ্ব বরেণ্য চিকিৎসকের গুণাবলী ছাড়িয়ে তাঁর চরিত্রের মাধুর্য ও মুগ্ধময়তায় এক অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন। তাঁর পরোপাকারী মহতী মনোভাব অনুকরণীয় ও নজিরবিহীন হয়ে থাকবে যুগ থেকে যুগান্তরে।
একজন মানুষের জীবনে যা সুন্দর স্বচ্ছ পবিত্র তার সবকিছু আল্লাহ্রই দয়ার দান। মানুষ তার নিজের যোগ্যতা, শক্তি ও প্রতিভার বলে কিছুই করতে পারে না যতক্ষণ না দয়াময়ের দয়া বর্ষিত হয়। সারা জীবনের যা কিছু প্রাপ্তি তার সবিই আমার প্রভূর দয়ায় ও অনুগ্রহে আমার সমস্যা সঙ্কুল অন্ধকার জীবনে প্রশান্তি ও আলোর প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন আমার প্রিয় স্যার। হে দয়াময় প্রভূ আপনি আমার শ্রদ্ধেয় প্রাণপ্রিয় স্যারের অন্ধকার কবরে নূরের আলো জ্বালিয়ে দিন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উঁচু মাকামের সন্মানিত মেহমান হিসাবে গ্রহণ করুণ। আমীন।
ফেলে আসা আলো আঁধারির দিনগুলির সব ক’টি পর্ব আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন স্যার জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে উৎসর্গীকৃত
বিষয়: বিবিধ
১৬১৫ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"হে দয়াময় প্রভূ আপনি শ্রদ্ধেয় স্যারের অন্ধকার কবরে নূরের আলো জ্বালিয়ে দিন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উঁচু মাকামের সন্মানিত মেহমান হিসাবে গ্রহণ করুণ। আমীন।"
বারাকাল্লাহু ফীক।
মহান মহিমাময় প্রভূ যেন আমাদের সকলের প্রার্থনা কবুল করে নেন। আমীন।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি, অনুপ্রেরণা এবং সংশোধনের জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া এবং হৃদয় নিংড়ানো অনিঃশেষ দোয়া।
পরম করুণাময় আমাদের সকলকেই দ্বীনের পথে অবিচলিত রেখে দুনো জাহানের কামিয়াবী অর্জনের তৌফিক দান করুণ। আমীন।
বোনের জন্য দোয়ার অনুরোধ রইলো।
আসলেই আমার স্যার একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন।
আপনি আমার স্যারের জন্য দোয়া করেছেন জেনে ভীষণ খুশী ও কৃতজ্ঞ হলাম। মহান মহিমাময় প্রভূ যেন আমাদের সকলের প্রার্থনা কবুল করে নেন। আমীন।
আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও অনিঃশেষ শুভকামনা রইলো।
বোনের জন্য দোয়ার অনুরোধ রইলো।
জান্নাতমণির জন্য বুকভরা দোয়া ও আদর এবং পরিবারের সবার প্রতি আমার ছালাম।
পরম করুণাময় আমাদের সকলকেই দ্বীনের পথে অবিচলিত রেখে দুনো জাহানের কামিয়াবী অর্জনের তৌফিক দান করুণ। আমীন।
আপনাদের জন্য প্রাণভরা দোয়া শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
প্রতিটি পর্ব অসাধারন লগেছে আপু! এই প্রথম কোন ছাত্রীর তাঁর অসাধারন এক প্রিয় স্যারকে নিয়ে লিখা এতো চমতকার পোস্ট পড়লাম! চমৎকার অনুভূতি!
আল্লাহ উনার সমস্ত গুনাহ খাতা মাফ কর দিয়ে উনাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের বাসিন্দা করুন। আমিন!
তোমার মন্তব্য মানেই আমার জন্য বিশেষ এক অমূল্য উপহার! কিছু বিশেষ প্রাপ্তি!! যেন হৃদয়ে মোড়ানো ভালোবাসার মোতি!!! অপূর্ব এক ভালোলাগা!!!! তোমার বিমুগ্ধ করা হৃদয় ছোঁয়া সুন্দর অভিব্যক্তি চিরদিন মনে থাকবে আমার আপু.........!!!!
তুমি আমার স্রদ্ধেয় স্যারের জন্য দোয়া করেছো জেনে ভীষণ খুশী ও কৃতজ্ঞ হলাম। মহান মহিমাময় প্রভূ যেন আমাদের সকলের প্রার্থনা কবুল করে নেন। আমীন।
তোমার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
আমার জন্য দোয়া করিও বেশী বেশী করে অনুরোধ রইলো।
এযেন খুঁড়িয়ে চলা এক পথহারা পথিকের নিরাপদ পথের দিক নির্দেশনা তুল্য। খুবই উজ্জ্বীবিত করে।
আর হ্যাঁ আপনি নিয়মিত হচ্ছেন না কেন?!
ব্লগের পুষ্টি বৃদ্ধিতে আপনাদের মত তীক্ষ্ণ মেধাদীপ্ত
ব্লগারদের খুবিই প্রয়োজন।
ভালো আছেন তো?
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
আমার জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করবেন অনুরোধ রইলো।
আপু ।
াআপু আল্লাহ আপনার স্যারকে জান্নাত নসীব করুন । আমীন ।
তুমি আমার স্রদ্ধেয় স্যারের জন্য দোয়া করেছো জেনে ভীষণ খুশী ও কৃতজ্ঞ হলাম। মহান মহিমাময় প্রভূ যেন আমাদের সকলের প্রার্থনা কবুল করে নেন। আমীন।
তোমার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
আমার জন্য দোয়া করিও বেশী বেশী করে অনুরোধ রইলো।
আমাদের জন্যেও দোয়ার দরখাস্ত থাকলো আপুনির কাছে! আমার বড় বোন বা ভাই নেই তাই আপনাকে বড় বোনের মর্যাদায় রাখলাম!
আপনার মত একজন দ্বীনি ছোট বোন পাওয়া আসলেই অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার আমার ছোট্ট আপি। আমার শ্রদ্ধেয় স্যারের জন্য দোয়া করার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
লিখেন না কেন আপু?
আপনার হৃদয়স্পর্শী দোয়ায় আমীন ।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন