প্রজাপতি মন
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২১ মার্চ, ২০১৫, ১২:৫৩:১৪ রাত
মনের আকাশে স্মৃতির পাখীরা আজও ডানা মেলে উড়ে উড়ে যায় আমার জীবনে চন্দ্রালোকের স্নিগ্ধ আলো হয়ে। আজও জীবনের পরতে পরতে মিশে আছে সেই রাঙা রবির প্রভাত,সেই আবিরমাখা সোনা ঝরা সন্ধ্যা,সেই আনন্দময় আলোকিত দিন ও জোসনা ধোয়া স্বেত শুভ্র রাত। আর এসবের সাথে জড়িয়ে আছে এক অসাধারণ আলোকিত নারী। যাকে কোনদিন ভোলা যায় না। ভুলে যাওয়া সম্ভবও নয়। এ এক অন্য রকম উপলব্ধি। মাঝে মাঝে গভীর ভাবনাময় নীরবতার রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলি তাঁর স্মৃতিকথা মনে হলে। তিনি আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন একজন মহীয়সী নারী আমার বড় নানী। যার চির বিদায় হলেও এখনো তিনি বেঁচে আছেন আমার জীবনে ছায়া সঙ্গিনী হয়ে।
আমি তখন খুব সম্ভব ক্লাস ফাইভের ছাত্রী। প্রথম মায়ের সাথে রংপুরে বেড়াতে যাওয়া। আমার মায়ের বড় খালার বাসায় মানে আমার বড় নানী। আমার নানী এবং বড় নানী এতটাই ধার্মিক ছিলেন যে, তাঁদের দুজনের আমল দেখে আমি খুবই অনুপ্রাণিত হতাম। রাতের বেলায় যখন বড় নানীর পাশে শুতে যেতাম উনি ঘুমানোর আগে অনেক আদর্শ পরিবারের সুন্দর সুন্দর গল্প শোনাতেন। সে সত্য জীবনের গল্পগুলো আমি অসীম মুগ্ধতায় তন্ময় হয়ে শুনতাম। পরবর্তীতে একে একে সেই পরিবারগুলোর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিতেন। সেইসাথে বুঝিয়ে বলতেন লেখাপড়া করার গুরুত্ব। পড়ালেখা করলে কী সুবিধা এবং না করলে কী কী ভয়াবহ ধরণের পরিণতি হতে পারে।
পরবর্তী বাস্তব জীবনে ভীষণভাবে উপলব্ধিতে এসেছে যে, ঘুমন্ত শিশুপ্রাণ গুলোকে জাগানোর জন্য চাই একটুখানি স্বপ্নের নির্ভেজাল বীজ। যা চলার পথের নানাবিধ কণ্টকময় পথকে প্রসস্থ করতে শেখায়। যে পথচলা কখনই থমকে দাঁড়ায় না। হতাশ বা অস্থির হতে শেখায় না। ধীর শান্ত মস্তিস্কে গন্তব্য পথ ঠিক করে নেয়। পথের কাঁদা পানিকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতায় দূরে সরিয়ে অগ্রসর হতে উদ্যমী করে তোলে।
তাইতো কৈশোরে লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছার কাছে কোন বাধা বিপত্তি হার মানাতে পারেনি আমাকে। আমাদের গ্রামে সেসময় শুধু ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ার সুযোগ ছিল। ক্লাস নাইন ও টেন পড়তে হলে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসা সহ চার মাইল হেটে যেতে হতো। তাই সেসময়ে অনেক মেধাবী ছাত্রীর ভাগ্যে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হয়নি। পরিবারের তীব্র বাধার মুখে দমে যেতে বাধ্য হয়েছিলো তারা।
কিন্তু সেসময়ে বড় নানীর মূল্যবান কথাগুলো মনে আলোকপাত করায় পড়ালেখা করার প্রচণ্ড আগ্রহ আমার হৃদয়কে অশান্ত করে তুলেছিলো। বাবা মায়ের প্রবল আপত্তির মুখে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে আমি শুধুই কেঁদেছি স্কুলে যাওয়ার জন্য। আমার অবস্থা দেখে অবশেষে বাবা মা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। এমতাবস্থায় পড়াশুনা করার স্পৃহা বাস্তবে রূপ নিলো বটে কিন্তু প্রতিদিন চার মাইল হেটে যাওয়া আসা, পথে মাস্তানদের বিড়ম্বনা সবকিছু মিলিয়ে বিষয়টি এতো সহজ ছিল না। উপরন্তু বর্ষার দিনে সাত সমূদ্র তের নদী পার হয়ে স্কুলে যাওয়া আসা ছিল অনেক দুরূহ। কিন্তু আমি নাছোড় বান্দা। অগত্যা আমার এই ইচ্ছে পূর্ণ করতে আমার ছোট ভাইকে অনিচ্ছাকৃতভাবে তার প্রিয় স্কুল থেকে বিদায় নিতে হল আমার সাথে যাওয়া আসা করার জন্য।
আমার ছোট ভাইটি খুব মেধাবী ছাত্র হওয়ায় প্রধান শিক্ষক প্রথমে আপত্তি জানালেন। কিন্তু অবশেষে ছাড়পত্র দিতে বাধ্য হলেন তিনি। আর আমার ভাইটিরও কিছুই করার ছিল না। নিজের ইচ্ছেকে পুঁতে রেখে সে আমার স্বপ্নসাধ পূর্ণ করলো। অনেক কষ্ট স্বীকার করলো সে আমার জন্য! সে ভাইটি এখন একটি সরকারী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল আলহামদু লিল্লাহ।
এখনো ঝড়ের মুহূর্তে একখন্ড মেঘলা মনের আকাশে বড় নানীর মমতাময় স্মৃতির শিশির বিন্দুগুলো প্রশান্তিতে বর্ষিত হতে থাকে আমার অশান্ত মনে। যা সব ঘুমন্ত শিশুদের জন্য জানা অবধারিত। তবেই কেবল সুপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে হিংস্র দানবের মুখামুখি দাঁড়িয়ে পথ চলা সম্ভব হয়। আর স্বপ্ন হয় বাস্তব এদের জাদুময় স্পর্শে। আমার মরুভূমিময় জীবনে তিনি ছিলেন ছায়া শীতল ঘেরা মরুদ্যান। তাঁর প্রাজ্ঞতা ও ধর্মীয় বোধের শিক্ষার আলো ছিল অসাধারণ। যিনি ছিলেন পথহারা মানুষের দিশারী। তাঁর আশ্বস্তময় হৃদয় শীতল করা সান্ত্বনার মধুর বাণীতে প্রাণ জুড়িয়ে যেতো। তাঁর উদ্দীপ্তময় উপদেশগুলো অনাগত স্বপ্নজয়ের ব্যাকুলতা সৃষ্টি করতো শিশুদের মনে। জীবন গড়ার শিহরণে প্রতিটি চঞ্চল প্রজাপতি মন শিহরিত হয়ে উঠতো। আর এভাবেই অনাগত মুহূর্তের কাঙ্ক্ষিত ভাবনাগুলো বিকশিত হতো মনের কাননে।
আমার বড় নানীর মত এরূপ চরিত্রের মহৎ প্রাণ মানুষগুলো যখন ছোটদের বন্ধু হয়ে যায় তখন ছোটদের প্রজাপতি মনে যে কী ধরণের পুলক সৃষ্টি করে তা ভাষাতীত। অদম্য শক্তি তৈরি করে মনে। হৃদয় করে পরিপুষ্ট। অদম্য সাহস সঞ্চারিত হয় বিজয়ী হওয়ার। যে মনোবাসনা কখনও হারতে জানে না।
কচি মনে এ ধরণের প্রাণ সঞ্চারণের মাধ্যমে জান্নাতি পাখীদের জীবন হোক প্রশান্তিময় ও আনন্দদায়ক। জ্ঞানো প্রদীপের আলোয় প্রতিটি প্রজাপতি মনের চঞ্চল সোনামণিগুলোর জীবন কোন মহতী হৃদয়ের শুভ্রতার ছোঁয়ায় প্রশান্তিময় ও আনন্দদায়ক হোক, বিকশিত হোক আগামীর পথ চলা এই প্রত্যাশায়...।
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৭ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাই বলে কি ভাবছি আপনি স্বার্থকর
যেখানে যান আমরা আছি
আপনার মনের ভিতর।
অপেক্ষার অবসান হল বুঝি।
আপনার অভিযোগের জবাবে বলবো প্লেটের পোকা দেখতে গিয়ে একটু দেরী হয়ে গেল।
আমার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছি, আপনি আমার প্লেটের পোকার খবর ও পেয়ে গেলেন!!!!
আপনি যখন ভাল বলছেন, তাহলে ভালই!
) ) ) ) )
ভালো লাগলো পড়ে ধন্যবাদ।
নানীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ বেশ ভাল লেগেছে। আপনার নানীকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উত্তম জাযা দান করুন।
আমি জানি না, নানী হয়েছেন কি না, যদি হয়ে থাকেন, তাহলে নানীর আদর্শকে সব সময় বুকে
ধারণ করবেন এই কামনা।
পারছি না, মন্তব্যকেমন যেন অগোছালো হচ্ছে...
জ্বি না ভাইয়া নানী হতে পারিনি। তবে...।
সুন্দর অভিব্যক্তিসহ ভালোলাগা অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা থাকলো।
মহান রাব্বুল আলামিনের কাছের কোটি কোটি শোকরিয়া যে সারাজীবন তিনি আমাকে লেখাপড়ার মধ্যেই রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ্।
সুন্দর অভিব্যক্তিসহ আপনার ব্যক্তিগত সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা থাকলো।
আপনার ওখানে এখন কয়টা বাজে আংকেল?
• মনের আকাশে
• স্মৃতির পাখীরা ডানা মেলে উড়ে উড়ে যায়
• জীবনে চন্দ্রালোকের স্নিগ্ধ আলো হয়ে।
• জীবনের পরতে পরতে
• রাঙা রবির প্রভাত, সোনা ঝরা সন্ধ্যা, জোসনা ধোয়া স্বেত শুভ্র রাত।
• নীরবতার রাজ্যে
• বেঁচে আছেন ছায়া সঙ্গিনী হয়ে।
• ঝড়ের মুহূর্তে,
একখন্ড মেঘলা মনের আকাশে
• স্মৃতির শিশির বিন্দুগুলো প্রশান্তিতে বর্ষিত
• মরুভূমিময় জীবনে
ছায়া শীতল ঘেরা মরুদ্যান।
• চঞ্চল প্রজাপতি মন
• ভাবনাগুলো বিকশিত হতো মনের কাননে
মা-শা-আল্লাহ ।
আল্লাহ আপনাকে সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু দান করুন। আপনার মনোজগতে যে ঐশর্য্যের ভান্ডার রয়েছে সেগুলো সবার মাঝে বেশী করে বিতরন করার তৌফিক দিন।
সুন্দর অভিব্যক্তিসহ হৃদয় জুড়ানো সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার সুন্দর দোয়ায় আমীন। ছুম্মা আমীন।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা থাকলো। ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
আল্লাহ আপনার পরিবারের সবাইকে ইসলামের পথে, ঘুম জাগানিয়ার স্বপ্ন বীজ বপনের পথে কবুল করে নিন! আমীন!
জাযাকিল্লাহু খাইর!
আমি কিন্তু বসে আছি প্রতীক্ষায়......।
হৃদয় শীতল করা অভিব্যক্তিসহ সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার সুন্দর দোয়ায় আমীন। ছুম্মা আমীন।
প্রতীক্ষার প্রহর বুঝি শেষ হচ্ছে ...।
তবে আমি কিন্তু বাস্তবে ধৈর্যশীল এবং ক্ষমাশীলতার অনেক সত্যায়ন পেয়েছি। আল্লাহই ভালো জানেন।
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা থাকলো। ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
আপনার মত একজন আংকেল পেয়ে আমিও অনেক আনন্দিত এবং গর্বিত।
আমার বড় নানীকে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানিয়ে নিন আপনার সাথে আমিও কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি।
আমার ছোট ভাইটির জন্য আপনার সালাম ও অনুভূতিতে আমার প্রাণটা ভরে গেল আংকেল।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা থাকলো। ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
আমাদের জান্নাতী পাখীটার জন্য এত্তো এত্তো দোয়া ও স্নেহাদর......।
আপনার নানীকে আল্লাহ জান্নাতের মেহমান করুন। আপনার প্রতি শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা থাকলো। ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
আমার নানী ও খুব ভাল আমাকে অনেক আদর করে ।
তোমার নানীর কথা জেনে অনেক অনেক ভালো লাগলো। ওনাকে আমার সালাম দিও এবং দোয়া করতে বলিও।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে তোমার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা থাকলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন