প্রভূর পরশে !!!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৯ মার্চ, ২০১৫, ১০:১১:৪৭ রাত
শম্পা একদিন অনুভব করলো তার সমস্ত দেহ মন চৌচির, প্রচণ্ড তাপদাহে। মন বলে কোন অস্তিত্ব টের পাচ্ছে না সে। প্রচণ্ডভাবে পিপাসার্ত শম্পা দ্বিগবিদ্বিগ জ্ঞানশূন্য হয়ে পানি খুঁজছে কিন্তু কোথাও এক ফোঁটা পানি নেই তৃষ্ণা নিবারণের। নিস্তেজ অসাঢ় দেহ মনে নেই কোন বোধশক্তি। শুধু অনুভব করছে শরীরের প্রতিটি লোমকূপ থেকে আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছে। দম আটকিয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড অবিশ্বাসী এক হিংস্র ঝড় তার কষ্টার্জিত সবকিছুকে মুহূর্তের মধ্যেই নির্মম নির্দয়ভাবে তছনছ করে দিচ্ছে। কাউকে শুভাকাঙ্ক্ষী বা বন্ধু ভাবতে সে শিউরে উঠছে বার বার। নির্ঘুম রাতের প্রহরগুলো তাকে অস্থির আর ভয়ার্ত করে তোলে। আর বিস্ময়ে ভাবতে থাকে মানুষ কতো সহজে বদলাতে পারে! বদলে যায়!! এর বেশী আর কিছুই ভাবতে পারে না সে!!!
এরপর একদিন তার মমতাময়ী মায়ের দোয়ায় এবং আকাশের কল্যাণে শম্পা পেয়ে যায় এক শ্রেষ্ঠ বন্ধুর সন্ধান। কোন এক অশান্ত মুহূর্তে ছটফট করতে করতে শম্পা হঠাৎ তৃষ্ণা নিবারণের জন্য হাতের কাছে পেয়ে যায় এক বিস্বস্থ প্রিয়বন্ধু “কলম”। নিজের অব্যক্ত যন্ত্রণাগুলোকে ঢেলে দেয় কাগজের হৃদয়ে। পরম যত্নে, ভালোবাসায় বিগলিত হয়ে প্রাণের স্পন্দনে তাকে আত্মার সংস্পর্শে রেখে দেয় একান্ত বন্ধু করে। যে কোনদিন বিশ্বাসঘাতকতা করে না, ছলচাতুরী জানে না। গভীর মমতায় উজাড় করে ঢেলে দেয় শুধু। অদৃশ্যের এই মধুর দান ও দয়ার পরশ শম্পার হৃদয়ে নতুন সুর তোলে। উপহার দেয় এক নব পুস্পিত জীবন। যা প্রতিনিয়ত তার হৃদয়ে ঢেউ খেলে যায়, আলোকের মায়াময় ও শান্তিময় ঝর্ণা ধারায়।
তারপর ধীরে ধীরে গভীরভাবে শম্পা অনুভব করে কোথা থেকে যেন বর্ষিত হচ্ছে শান্তি আর রহমতের প্রবল বৃষ্টি। এ কোন সাধারণ বৃষ্টি নয়। মহান প্রভূর ভালোবাসার বৃষ্টি। মুহূর্তেই শম্পার হৃদয় শীতল হয়। অদৃশ্যের অসামান্য দয়ার দানকে সে পরম যত্নে হৃদয়ে ভরে রাখে। অভিভূত হয়ে মহান প্রভূর শোকরিয়া আদায় করে সে। তন্ময় হয়ে ভাবতে থাকে কী অমূল্য রত্ন পেয়েছে সে, তার এই অবহেলিত বেদনাময় জীবনে।
খুঁজে পায় শম্পা এক অমূল্য আলোয় ভরা মুক্তার খনি। পরম সাধনার ধন। তার ধ্যান জ্ঞান, চেষ্টা আর সাধনার মধ্যমণি এখন এই “বন্ধু কলম”। শম্পার হৃদয়ের গভীর বিশ্বাস আর শান্তির নাম এই প্রিয় কলম। এই কলম বন্ধুর বদৌলতে প্রাপ্ত আসমানী দান ও দয়া তাকে বদলে দিয়েছে, বুক ভরে ঢেলে দিয়েছে প্রশান্তি। যা তাকে পূর্ণতা এনে দিয়েছে। সমৃদ্ধ করেছে তার চিন্তা–চেতনা, ভাব–ভাবনা, বিবেক–আবেগ ও হৃদয়বৃত্তির সুকুমার পুস্পিত শাখা প্রশাখার আলিঙ্গনকে। এই বন্ধু কলম দিয়েছে তাকে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা, সন্মান, প্রতিপত্তি আর সামনে চলার অবারিত গতি ও অসীম শক্তি।
প্রভূর ভালোবাসার শিশির বিন্দুর স্পর্শ শম্পা অনুভব করে তার প্রতিটি শিরা উপশিরায়। পরিপূর্ণ ভালোবাসার পরশে পরিতৃপ্ত হয় সে মন্ত্রমুগ্ধের মত। মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন প্রাণ ভরে উঠে তার। আর এরূপ মুহূর্তে সাথে সাথে সে সেজদায় লুটিয়ে পরে। কতক্ষণ শম্পা এভাবে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে থাকে জানে না। তার ইচ্ছা হয় আজন্ম এভাবেই সেজদায় লুটিয়ে থাকতে। শম্পার মনে অনুভূত হয় এই মুহূর্তটুকু তার জীবনের বিশেষ এক মধুময় প্রাপ্তি। এসময় শম্পা উপলব্ধি করে সুমিষ্ট কিছু পানীয় সে পান করছে তার প্রচণ্ড তৃষ্ণা নিবারণে। যে অনুভূতি তার সারা শরীরে শীতলতার পরশ ছুঁয়ে দেয়। ধন্য হয় সে, হয় তৃপ্ত। আর এই শীতল করা ভালোবাসার স্বাদটুকু সে পেয়ে যায় তার মহামহিম প্রভূর কাছ থেকে।
শম্পা তার ভালোলাগার এই বোধ বিশ্বাস আর অনুভূতিকে একান্তভাবে তার করে হৃদয় কন্দরে পরম যতনে রেখে দেয়। প্রবল আত্মবিশ্বাস আর দীপ্ত প্রত্যয়ে আঁকড়ে ধরে থাকে তার এই “প্রভূর ভালবাসা” কে সমস্ত শক্তি ও সত্ত্বা দিয়ে। শম্পা হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নেয় সেই অবিশ্বাস্য বোধকে। যার প্রতিদানে শম্পা ক্রমেই অনুভব করে তার অনুভূতির ভিন্নতা, স্বাদ, চিন্তা, চেতনা, উন্নতি ও সমৃদ্ধি এককথায় সবকিছুতেই। এই আপন ভূবনের আনন্দ পরশে, বিস্ময়ে ও কৃতজ্ঞতায় বিভোর হয়ে থাকে শম্পা। তখন সে হয়ে যায় অন্য পৃথিবীর এক বাসিন্দা।
প্রভূকে ভালোবাসার জন্য একাকীত্বের আনন্দ, নিঃসঙ্গ নির্ঘুম রাত্রির আনন্দ, নির্জনে ভাবনার আনন্দ, সেজদায় লুটিয়ে থাকার আনন্দ শম্পা প্রাণ ভরে উপভোগ করে। চেষ্টা করে শম্পা তার ভালোলাগাটুকু বিলিয়ে দিতে তারই ভালোবাসার পৃথিবীকে নিরলসভাবে। এমনিভাবে দয়াময় তাকে একটু একটু করে বদলিয়ে দিয়ে সবকিছু থেকে বিমুখ করে একান্তভাবে তাঁর করে নেয়। শম্পার দরদী-প্রেমময়-প্রেমাস্পদ এখন শুধুই একজন, মহান প্রভূ। যাকে পেয়ে এহজীবনে আর কিছুতেই তার কোন আগ্রহ নেই। প্রভূর ভালোবাসায় সে এতটাই কাতর যে আর কিছুই চাই না তার। তার ভালো মন্দ ও হৃদয়ের একান্ত ভালবাসার কথাগুলো শুধু ভালোবাসার জনকেই ঢেলে দেয় অকৃপণভাবে একান্ত নিরালায়।
ভালোবাসার আর প্রেমের সাথে আত্মার বন্ধনের এই চারা গাছটি এভাবে ক্রমশই বিকশিত হয়ে শম্পাকে ছায়া দেয়, সুমিষ্ট ফল দেয়, দেয় ভালোবাসার অনাবিল প্রশান্তি। যে মোহময়ী প্রেরণায় শম্পা উদ্ভাসিত হয়ে উঠে নবরূপে। আবির্ভূত হতে থাকে কুসুমিত সুবাসে। যার সুঘ্রাণে ভরে যায় চারিদিক নব নব আনন্দে আর সুন্দরের আভাসে।
পরম মুগ্ধতায় শম্পা ভাবে যা পেলাম তা হতে পারে না কোন মানবের অবদান, এর সবটুকুই আমার মহান করুণাময়ের অনিঃশেষ ভালোবাসার দান। এ এক নতুন জীবন, প্রভূর ভালোবাসার পরশে সিক্ত নতুন এক প্রাণ।
আসুন না!! শম্পার মতো আমরা সবাই প্রভূর ভালোবাসা পাবার প্রত্যাশায় “কলম বন্ধুকে” হৃদয়ের আঙিনায় মহব্বতের সাথে লালন করি, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়!!!
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৩ বার পঠিত, ৪০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দিলাম সাড়া আগ পিছ না ভেবেই।
সত্যি কলম বন্ধুটা পৃথিবীর যত ঝুট ঝামেলা, টেনশন পেরেশানি থেকে মুক্ত করে মনের আকাশে মেখে দেয় শান্তির সুবাতাস।
আমার যখন মন খারাপ হত, কোরআন নিয়ে বসতাম, এখন অবশ্য তেমন বসা হয়য় না, আগের মত স্পীড নেই, কিন্তু একেবারে বিচ্যুত নয়! এখন যখন পড়তে বসি খুব দরদ দিয়ে বসি।
আর যখনি কোণ্ন আয়াতের অর্থ বা ব্যখ্যা ভাল লেগে যায় তা বিশ্লেষণ করে ছোট্ট আকারে ফেসবুকে পোস্ট করে দেই। এইখানে আমার কলম বন্ধুটা আমাকে এক পরম শান্তি তৃপ্তি এনে দেয়।
আলহামদুলিল্লাহ্! শম্পার কলম বন্ধুকে পেয়ে স্রষ্টার প্রতি সৃষ্ট অনুরাগ ভালবাসা দেখে অনেকে কলম কে বন্ধু বানাতে উদগ্রীব হবে শুধু মাত্র স্রষ্টাকে রাজী খুশি করার জন্য।
আপনার জন্যো শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।
ভাবিয়া করিও কাজ করিও না... সদা মনে রাখা দরকার!!!
আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও অভিব্যক্তি মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিলো। আপনার ফেসবুকে যেতে হবে দেখছি সময় করে। শেষের অভিব্যক্তিটুকু অসাধারণ...।
এখনো বলেননি কিন্তু হতাশার কারণ কি?
গতকাল ভীষণ ব্যস্ততা গেছে। এমনকি আমার আংকেলের পোষ্টে খুব তাড়াতাড়ি একটি কমেন্ট করেই ছুট দিতে হয়েছে...
আপনার জন্য নিরন্তর দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমি ক্ষুদ্র মানুষ, এই দু চার লাইন লেখি, ব্লগ ফেসবুক, টুইটারে। শোনে খুশি হলাম আমার ফেসবুকে যাবার আগ্রহ পোষণ করেছেন।
এখনো বুঝেন নি হতাশ কেন? আপনাদের জন্যই ব্লগে নিয়মিত হওয়া, আপ্নারা আসবেন না, তাতে কষ্ট হয়য় না বুঝি!
একটা কথা, ভালবাসা অব্যাহত রাখুন, কিন্তু আমাদের ভালবাসতে গিয়ে নিজের অত্যাবশ্যকীয় কাজ ফেলে আসবেন না। সব সেরে তবেই আসবেন।
প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা থাকলো।
আপনি একটা দুষ্টু জান্নাতের বাপ!
হেইয়া মনু, মোরে ভয় দেহাইয়া লাভ নাই! মনু, বুঝঝো?
আপনার উল্লেখিত স্থানগুলোর একটাতেও আমার বাড়ি পড়ে নি!!! কি মজা!
খুব সুন্দর লিখেছেন। ভাল লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ। জাযাকিল্লাহু খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।
আপনার স্মৃতির পাতা থেকে যেটুকু উদ্ধৃতি দিয়েছেন তা লিখার চেয়ে হাজার গুণ ছুঁয়ে গেল।
আপনার কাছে অনুরোধ রইলো এই ধরণের কোন বই বা লিখা আপনার পি ডি এফ সংগ্রহে থাকলে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন!
পরম করুণাময় আপনাকে দীর্ঘায়ু দান করে দ্বীনের সেবা করার তৌফিক দিন আমীন।
মন্তব্য আসছে........ আগে সিরিয়াল দখল......
মন্তব্যের প্রতীক্ষায় ...।
বাহ! দারুন লিখেছন গো আন্টি, সম্পা আর কলম নিয়ে কিযে সুন্দর হৃদয় নিংড়ানো প্রভুর ভালবাসার গল্প। আমি কিন্তু কাহিনী থেকেও আপনার ভাষাশৈলি, শব্দ চয়ণ, বাক্যের গাথুনী তে বিমুগ্ধ, মাশা-আল্লাহ এত উচুমানের সাহিত্য, অলংকারী লিখুনি কিভাবে অর্জন করেছেন গো। নিশ্চয় অনেক মেহনত করে। ধন্যবাদ।
যদি সুন্দর কিছু এই লিখনী মাঝে লুকায়িত থাকে
তবে তা মহান প্রভূর দান,
আমি পাপী তাপী, সদা অশ্রু ঝরাই শুধু
আমার নেই কোন কৃতিত্ব এতে বিন্দু পরিমাণ।
আপনার হৃদয় বিগলিত করা মন্তব্যে মম অন্তর বিকশিত হোক এই আমার প্রত্যাশা এবং প্রার্থনা।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
খুবই সুন্দর হয়েছে আপু ।
কী সুন্দর হয়েছে তা কিন্তু বলোনি!!
প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা থাকলো।
শম্পা হঠাৎ তৃষ্ণা নিবারণের জন্য হাতের কাছে পেয়ে যায় এক বিস্বস্থ প্রিয়বন্ধু “কলম”। নিজের অব্যক্ত যন্ত্রণাগুলোকে ঢেলে দেয় কাগজের হৃদয়ে।✔
যদিও আমরা কাগজ কলমে লিখিনা আর! এখন স্মার্টফোনের স্কৃর্নে মায়াবী কিবোর্ডে আঙ্গুলের বিচরণে মনের কথা গুলো সাজায় আনন্দ বেদনায়!
আপনার উপস্থাপনা অসাধারণ! ধন্যবাদ
শম্পা কিন্তু এখনো নিয়মিত তার প্রাণের একান্ত কথামালাকে ডায়েরীর বুকে সযত্নে তুলে রাখে। আধুনিক কী বোর্ড তখন থাকে তার নাগালের একটু দূরে।
স্মার্ট ফোনে ভুল বানানে ভরা লিখনী শম্পার এখনো হৃদয় ছুঁতে পারেনি!
প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
ধন্যবাদ।
মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
আমি ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি কেমন আছেন? আপনাদের উদ্দীপ্তময় উপস্থিতি ও অসাধারণ সুন্দর মন্তব্য অভিভূত করলো।
আপনার হৃদয় ছোঁয়া দোয়ায় আমীন। ছুম্মা আমীন।
আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়।
আমার জন্য দোয়া করবেন।
আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও অনিঃশেষ শুভকামনা রইলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন