ফেলে আসা আলো আঁধারির দিনগুলি – পর্ব ৬
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৩ মার্চ, ২০১৫, ০৭:০৮:৪৬ সন্ধ্যা
পর্ব ৫
http://www.bd-today.net/blog/blogdetail/detail/6327/mbanu/62647#.VQLhneH26ac
অপ্রত্যাশিতভাবে এক শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে সংবাদ পেলাম সে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জেনেছে যে, আমার নামে মামলা থাকার কারণে আমি ব্রিটিশ কাউন্সিলের কোর্সে অংশ গ্রহন করতে পারবো না। মুহূর্তেই হতাশ হলাম। খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অতি দ্রুত মন্ত্রণালয়ের স্মরণাপন্ন হলাম। আমার কথা শুনে তারাও অকপটে খবরের সত্যতা স্বীকার করলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ মনে হলো আমার সাথে আরও দু’জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে তাদের নামেও তো মামলা রয়েছে! তাহলে তারা কীভাবে কোর্সে অংশগ্রহণ করবে?!! সাথে সাথেই কর্তা ব্যাক্তিকে এই প্রশ্নটি করলাম। উত্তরে তিনি আমতা আমতা করে বলতে থাকেন আপনার ব্যাপারে আমি সিদ্ধান্ত নেইনি। তাই আপনার এই ব্যাপারে সঠিক উত্তরও আমার জানা নেই।
দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে এরূপ অযৌক্তিক উত্তর শুনে আমি বিস্মিত হলেও দমে গেলাম না। কালবিলম্ব না করে অন্য এক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আমার এক নিকটাত্মীয়ের কাছে ছুটে গেলাম। যিনি ছোটবেলা থেকেই আমাকে অনেক আদর করতেন এবং পড়াশুনা করার জন্য উৎসাহ যোগাতেন। হঠাৎ তাঁর দপ্তরে আমাকে দেখে চাচা বলে উঠলেন, কী কোন সমস্যা? উত্তরে বললাম জ্বি।
কুশলাদি বিনিময়ের পর চাচাকে ঘটনাটি খুলে বললাম। উনি রেগে গিয়ে সাথে সাথেই সেই জয়েন্ট সেক্রেটারীকে ফোন করলেন। তাঁর উত্তরে চাচা সন্তুষ্ট হতে না পেরে শাসিয়ে বললেন আমার ভাতিজী যদি কোর্সে অংশ গ্রহণের অনুমতি না পায় আর বাকীরা যাদের নামে কেস আছে তারা যদি কোর্সে যোগদান করে তাহলে এর বিরুদ্ধে আমি নিজেই বাদী হয়ে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করবো এবং এর শেষ না দেখে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।
বিদায় মুহূর্তে চাচা আমাকে আস্বস্থ করে বললেন তুই কোন চিন্তা করিস না, বিষয়টি আমি দেখছি। এরপর নুরুল ইসলাম স্যারকেও বিষয়টি অবহিত করি। সকলের যৌথ প্রচেষ্টায় পরবর্তীতে অনেক ঘটনার পর এক পর্যায়ে পুরো কোর্সটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। এতকিছুর পরেও মনের গভীরে তৈরী হয় স্বপ্ন ভাঙ্গার নিদারুণ কষ্ট। শুভাকাঙ্ক্ষীদের আশ্বাসবাণীতে কিছুটা হলেও অশান্ত মনে শান্তি আর ভরসা খুঁজে পাই। আবারো নতুন উদ্যমে শুরু হয় পথ চলা। এদিকে সরকারের ছত্রছায়ায় থেকেও দুষমনেরা বেশ মুষড়ে পরে। আমাকে হেনস্থা করতে গিয়ে তাদের স্বপ্নসাধ এভাবে খান খান হয়ে যাবে তারা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করতে পারেনি। তাই আবারো নতুন ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আমাকে আটকানোর জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠলো।
এরপর স্কলারশিপের বরাদ্দকৃত টাকা অর্থাৎ ব্রিটিশ সরকারের ফাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার হুমকির মুখে আবার ছয় মাস পর ঘোষিত হয় নতুন ব্যাচ সিলেকশনের। এবারো যথারীতি বিদেশী পরীক্ষক দ্বারা সবরকম পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং অপ্রত্যাশিত ফলাফলে আমিও নিজেও পুলকিত হলাম। যদিও তখন পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে আমি শঙ্কামুক্ত ছিলাম না। সবসময়ই এক ধরণের ভীতি তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াতো আমাকে। আবার না জানি কোন অজুহাতে আমার অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পরে।
অনেক প্রতীক্ষার পর এক শুভক্ষণে অফিসিয়াল চিঠি আমাকে হস্তগত করা হলো ব্রিটিশ কাউন্সিলের কোর্সে অংশ গ্রহণ করার জন্য। তিন মাসের কোর্স তারপর আবার পরীক্ষা অতঃপর চূড়ান্ত মনোনয়নের পালা। দশ জনের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন পাঁচজন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই মনোনীত চূড়ান্ত প্রার্থীদেরকে দু’বছরের স্কলারশিপের জন্য পাঠানো হবে ইউ কে-তে। আল্লাহ্র উপর ভরসা রেখে অদম্য প্রত্যয়ী মানসিকতা নিয়ে তখন নিয়মিত ক্লাস করছি। স্বপ্ন একটাই যেভাবেই হোক ভালো ফলাফল করতেই হবে। দুশমনদের মনোবাসনা কোনভাবেই সফল হতে দেয়া যাবে না।
এরই মধ্যে একটি দুঃসংবাদ পেলাম যে, জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম স্যার অসুস্থ হয়ে পি জি হাসপাতালে ভি.আই.পি ভর্তি হয়েছেন। শুনামাত্রই দ্রুত স্যারকে দেখতে গেলাম। স্যারের কাছে সংক্ষিপ্ত অসুস্থতার বিষয়াদি শুনে বেদনাবিঁধুর মনে বাসায় ফিরলাম। নিয়মিত স্যারকে দেখতে যেতাম। একদিন স্যারের জন্য নিজ হাতে বিভিন্ন ধরণের রান্না করে নিয়ে গেলাম।
পরের দিন দেখতে গেলে স্যার আমার রান্নার অনেক ভূয়সী প্রশংসা করলেন এবং সেইসাথে উনি খুব তৃপ্তি সহকারে খেয়েছেন বলেও জানালেন। কথাগুলো আমাকে খুশী করার জন্য কিনা জানিনা! তবে স্যারের কথাগুলো শুনে সেদিন ভীষণ আনন্দ হলো আমার। কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে বললাম, স্যার আমার দুঃসময়ে আপনি আমাকে সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করেন, বিভিন্ন জনকে টেলিফোনে বলেন আমি আপনার মেয়ের মতো কিন্তু আপনি আমাকে সবসময় আপনি বলে সম্বোধন করেন কেন? উত্তরে বললেন, জানেন আমি কখনই কাউকে তুমি বলে সম্বোধন করতে পারি না! চলবে
বিষয়: বিবিধ
১৬৮২ বার পঠিত, ৪৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পরের দিন দেখতে গেলে স্যার আমার রান্নার অনেক ভূয়সী প্রশংসা করলেন এবং সেইসাথে উনি খুব তৃপ্তি সহকারে খেয়েছেন বলেও জানালেন। কথাগুলো আমাকে খুশী করার জন্য কিনা জানিনা!
কিন্তু বললেন না কি কি রান্না করেছিলেন। বাক্যটা অসম্পুর্ণ থেকে গেল। আমার আমার ভেতরেও দহন যন্ত্রনা বেড়ে যেতে থাকর,জিহবা নিশপিশ করতে লাগল.....ওদিকে গরুর মাংস রান্না করছি,আবার ছোলার ঘুগনি বানাবো....
নেচারাল গরু না।
আর লেখার ব্যাপারে কোন কমেন্ট করার যোগ্যতা এখনো অর্জন করতে পারিনি, তাই নো কমেন্ট।
সবগুলো পোষ্ট রুদ্ধশ্বাসে পড়া এবং আগামী পর্ব লিখতে উৎসাহ দানের জন্য দোয়া ও ফুলেল শুভেচ্ছা।
আপনি যে অনেক সুযোগ্য লোক তা আপনার কমেন্ট পড়েই আঁচ করতে পারি। বিনয়ের জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া ভাইয়া।
ভালো থাকবেন খুব ভালো।
“অসত্যের কাছে কভু নত নহে শির,
ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর!”
জাযাকিল্লাহু খাইরান।
আমার সামনে নিত্য নতুন জ্বলন্ত অগ্নিময় দশা দেখে আমার মা প্রায়ই বলতেন যে, তাঁর জীবনে তিনি নাকি দুজন মানুষকে দেখেছেন অসীম ধৈর্যের তার মধ্যে আমি একজন।
যাহোক এসব পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়া ছিল আল্লাহ্ পাকের বিশেষ রহমত, দয়া আর করুণা। আমার সবসময় মনে হয় দয়াময় আমাকে অনেক ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন তাই পরীক্ষার মাধ্যমে আমাকে পুরুস্কৃত করেন আলহামদুলিল্লাহ্।
অসাধারণ অভিব্যক্তি রেখে যাওয়ার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শুভেচ্ছা রইলো।
ভালো থাকবেন খুব ভালো। জাজাকাল্লাহু খাইর।
দিয়ে প্রতিহত করা।
অসাধারণ অনুভূতি ও অভিব্যক্তিসহ উদীপ্তমূলক মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শুভেচ্ছা রইলো।
ভালো থাকবেন অনেক ভালো। জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ভক্তি রয়েছে,যদিও একটু শয়তানী করি কারন রক্ত কনিকার ভেতর থেকে মাঝে মাঝে দুষ্টামি আসে। তবে আপনি সত্যিই দারুন একজন। আসুন আল্লাহকে সাক্ষী রেখে আমরা ভাই বোন হয়ে যাই। সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। আজ থেকে আপনি আমার বড় বোন।
আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে আমিও আজ থেকে আপনাকে ছোট আদরের ভাইটি হিসাবে মন থেকে বরণ করে নিলাম আলহামদুলিল্লাহ্।
আপনার জন্য আমার নিরন্তর দোয়া ও শুভকামনা রইলো এবং আজীবন থাকবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আকবর।
আপু আমি কাউকে তুই , তুমি বলতে পারি না ছোট বড় সবাইকে আপনি বলি ।
এখন অভিযোগ দিলাম আপনি যাকে আদরের ছোট ভাই বানালেন সে কিন্তু মানুষকে তুই বলে ।
ধন্যবাদ আপু ।
আমরা সবাই জানি তুমি অনেক বুদ্ধিমতী এবং সহজ সরল অনেক ক্ষেত্রে। তাই বলবো মন্তব্য এবং প্রতিমন্তব্যের ক্ষেত্রে আরেকটু সতর্ক হতে। সম্মান স্নেহ ভালোবাসা আদর মমতা কেউ কাউকে এমনি এমনি দেয় না তা অর্জন করতে হয়। আমি জানি সে গুণাবলী তোমার মধ্যে আছে।
আমার আদরের ছোট ভাইটির কাছেও আমার প্রত্যশা থাকবে কোন সঙ্গত কারণ ছাড়া সে যেন অনাহুত কাউকে মনোঃকষ্টমূলক সম্মোধন ভবিষ্যতে আর না করে।
এবার একটু হাসো আমার ছোট্টবোন আফ্রাম্নি।
এই পোষ্টে দেখাম আপনারা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে ভাই বোন হয়েছেন তাই আমি যাষ্ট ফান করেই বড় বোনের কাছে ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি আপু এটা যাষ্ট ফান ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না ।
ধন্যবাদ আপু । @ সন্ধাতারা আপু
একজন মানুষের উচ্চ শিক্ষা কে বাধা দেওয়ার জন্য একটি পুরা স্কলারশিপ ই বাতিল করে দেওয়া হলো!!!
আমাদের সংকির্ন দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কতটুক ক্ষতি করেছে। আমার মনে হয় আপনার উচিত হবে সঠিক সময়ে এই কাজে জড়িতদের নাম প্রকাশ করা। কারন এরা দেশের শত্রু সেটা প্রমানিত বিষয়।
যারা এসব অন্যায় ও অনৈতিক কাজগুলো করেছে সমাজ, পেশার এবং দেশের মানুষের কাছে তারা ভালভাবে চিহ্নিত। সেসময়ে আমার বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলনের ছবি সবই দৈনিক এবং অন্যান্য পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে।
চমৎকার একটি মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
পরের পর্বের অপেক্ষায়.......
জাযাকিল্লাহু খাইর
প্রেরণাপূর্ণ অনুভূতিসহ পরের পর্ব লিখার উৎসাহ জাগিয়ে দেয়ার কৃতজ্ঞতা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আসলে শুক্রবার ডিউটি নেই বিধায় একটু ফ্রিভাবে ঘুরাফেরা করি। বাড়িতে ফোন করে মা, বাবা, ভাই, বোন, জান্নাত ও তার মায়ের সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি। ব্লগে আসা হয় না। খূব সুন্দর অতীত লিখলেন। অনেক সালাম রইল খালামনি।
খুব ভালো লাগলো জেনে যে, ছুটির দিনে আপনজনের সাথে কুশলাদি ও সুখ দুঃখ শেয়ার করেন। জান্নাতমণির দোয়া ও শুভকামনা রইলো। পরিবারের সকলের প্রতি সালাম।
আপনার পরম আত্মীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ঠিক তেমনি একজন। অবশেষে কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন বলে আপনাকে অভিনন্দন।
চলবে আমিও চলব।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া এই অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী মানুষটির গুণের যে অমরিমেয় স্নেহের স্নিগ্ধতা আমার জীবনে পেয়েছি তা ভাষায় অবর্ণনীয়।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণা সত্যিই তুলনাহীন ভাইয়া।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
চলুক সাথেই আছি.........।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া , শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা রইলো।
বোনের জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করার জন্য বিশেষ অনুরোধ থাকলো ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন