মায়াবী মনের আঙিনায় স্বপ্নের চারাগুলো মুগ্ধতা ছড়ায়
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১২ মার্চ, ২০১৫, ১০:০১:৪০ রাত
পার্থিব আঁধারের কাছে আলোকিত আপন মানুষগুলো দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে ব্যথাতুরভাবে! সময়ের সাথে সাথে এই ভালো মানুষগুলো বদলে যাচ্ছে খারাপ মানুষের সাহচর্যে। এই ভালো লোকগুলো খারাপ চরিত্রের মানুষগুলোকে না বদলাতে পেরে নিজেরাই বদলিয়ে যাচ্ছে অবিশ্বাস্যকরভাবে। অথচ আল্লাহ্ পাক বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন মানুষ ও পাথর। যেখানে নিয়োজিত আছে কঠিন স্বভাবের ও নির্মম হৃদয়ের ফেরেস্তাগণ। যারা আল্লাহ্র আদেশ পালনে সচেষ্ট, কখনও অবাধ্য হয় না” (সূরা তাহরীমঃ ৬)।
রাতের পরে আসে দিন, দিনের পরে রাত। এটি আল্লাহ্ পাকের এক বিশেষ নেয়ামত। দিনে মানুষ জীবন জীবিকার জন্য ঘর্মাক্ত হয়ে পরিশ্রম করে পরিশ্রান্ত হয় আর রাত হলে নিশ্চিন্ত মনে বিশ্রাম করে এটি আল্লাহ্র বিধান। কিন্তু যুগের আবাহনে পরিবেশ পারিপার্শ্বিকতার সাথে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতার কারণে একে অন্যের সাথে তাল মিলে চলতে গিয়ে আমরা যেন স্রোতের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছি। কারণগুলি নিয়ে একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন বৈকি!
বিশ্বজুড়ে চলছে তথাকথিত আধুনিকতার ছোঁয়া। ধর্মীয় শিক্ষা, সভ্যতা-ভব্যতা, নীতি আদর্শবোধের কথা এখন অনেক মানুষের গাঁয়ে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। অথচ ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মধ্যে যে, স্বতন্ত্রবোধ, সংস্কৃতি, চারিত্রিক মাধুর্য তা দূরে ঠেলে রেখে কীভাবে শান্তিময় জীবন রূপায়িত হতে পারে? তাইতো এদের হৃদয়ের ভিতরে বয়ে চলছে নিত্য আত্মিক বিপর্যয়ের ঝড় তুফানের প্রলয়তা! হারিয়ে যাচ্ছে অনন্ত জীবনের নির্ভুল সৌভাগ্যের হিদায়াতি পথ।
আধুনিকতার নামে চলছে নিজেকে শোভনীয় ও আকর্ষণীয় করে অপরের চোখে তুলে ধরার জম্পেস প্রতিযোগিতা। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে সবকিছুই ঠিকঠাক কিন্তু এর বিপরীতে অর্থাৎ পর্দা করে চললে আপনাকে যে কোন সময় প্রতিকূল পরিবেশের ঝাঁপটায় অপ্রস্তত বা বিব্রত হতেই হবে। আর এর জন্য আপনার মানসিক পূর্ব প্রস্তুতি খুবিই প্রয়োজন। যারা এক সময় আপনার অতি কাছের প্রিয়জন বলে মনে হতো তারাও সুযোগ বুঝে হুল ফুটিয়ে ছাড়বে।
এসব জলন্ত জটিল পরিবেশের অভিজ্ঞতাগুলো ঈশিতাকে প্রায়ই অস্থির ও ব্যাকুল করে তোলে। ভোগ বিলাসে অভ্যস্ত এসব চিরচেনা মানুষগুলো পারলৌকিক জীবনের ব্যাপারে কতটা উদাসীন ও নির্মোহ তা তাদের চলনে ও বলনে বেশ স্পষ্ট! মাঝে মাঝেই ঈশিতার কেবলিই মনে হয় জীবন জীবিকার জটিলতার অজুহাত তুলে যুগের দমকা হাওয়ার মতই অতি সহজে তাদের মন, মনন, মগজ, বুদ্ধি ও বিবেচনা দ্রুত বদলে যাচ্ছে! স্রোতের তোড়ে খড় কুটোর মত কীভাবে যেন ভেসে যাচ্ছে কাছের মানুষগুলোর সত্য ও ন্যায়ের চেতনাবোধ!!
এসব মানুষ বেমালুম ভুলে গেছে নিজের শেকড়ের কথা! আখিরাতের ভয়াবহ পরিণামের কথা!! অবশ্যম্ভাবী ধ্বংসকেই তারা বেঁছে নিয়েছে কৃতিত্বের হাতিয়ার হিসাবে। অপরিণামদর্শী বিলাসী জীবনের মোহে ইসলাম বিরোধী দর্শনেই গৌরববোধ করে তারা, মহা তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। অতঃপর একদিন কাল বৈশাখীর তাণ্ডবে তছনছ হয়ে যায় সবকিছু, অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায় একেবারে স্বপ্নের মত। তারপর অথৈ সাগরে হাবু ডুবু খেতে খেতে নিরাশ নির্জীব হয়ে পরে। ব্যর্থতা আর হতাশার গ্লানি নিয়ে হারিয়ে যায় বিস্মৃতির অতলে এক সাগর হাহাকার নিয়ে। মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকে ঘৃণিত হয়ে। তবুও তাদের হুঁশ হয় না। মনে হয় তাদের ইন্দ্রিয় শক্তি পুরাপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে, নেই কোন অনুভব অনুভূতি!!
জাহান্নামের কঠিন আযাব তাদের কাছে অলীক কল্পনা মাত্র। কবর-হাশর, কিয়ামত-পুলসিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম তাদের কাছে এখন আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাদের মোহ, অনুরাগ ও আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল বিলাসী বস্তু, নগদ যা পাও হাত পেতে নাও। খাও দাও আর ফূর্তি করো। আল্লাহ্র ভয় কিংবা মৃত্যু তাদের অন্তরকে ঝাঁকুনি দেয় না, তাদের আঁখিকে করে না অশ্রুসিক্ত, পাথর হৃদয়ও হয়না এতটুকু বিগলিত। তাদের মধ্যে কারো কারো আবার বদ্ধমূল ধারণা মৃত্যুর পর আর কোন জীবন নেই সুতরাং হিসাব নিকাশের প্রশ্নই উঠে না!
ঈশিতা এসব ঘটনা দেখে এবং ভেবে ভেবে কূল কিনারা পায় না। সাহানা, সাবিহার সাথে ছিল তার দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব অথচ সময়ের ব্যবধানে আজ কতটা পাল্টে গেছে তারা। ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের আলোর কণিকা তাদের মধ্যে জ্বালাতে গিয়ে কতভাবে লাঞ্ছিত ও তিরবিদ্ধ হতে হয়েছে তাকে। চরম অনীহা ও অনাগ্রহ প্রকাশ করে ধৃষ্টতামূলক জবাব দিয়েছে তারা। তাদের আদর্শের বিপরীতে দাঁড়াতে গিয়ে অনেক রকমের পেরেশানীর মুখামুখি ও সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টির কারণে অভদ্র–অশালীন কথার বিষ হজম করতে হয়েছে তাকে! অথচ দ্বীনি সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ঈশিতা না বোঝার ভান করে হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছে সবকিছু এই প্রত্যাশায় যে, একদিন তাদের বোধোদয় হবে।
অপরদিকে আপনজনদের কাছ থেকে ক্ষত বিক্ষত হলেও মনের মধ্যে একটাই প্রশান্তি ছিল স্থিরকৃত গন্তব্যপথে ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির অনুশীলনে নিজেকে সে অবিচলিত রাখতে পেরেছে। বন্ধুদের দেয়া কষ্টের দাগ মুছে ফেলে সমস্ত প্রতিকূলতা মাড়িয়ে আজও সে অসীম সাহসে দাঁড়িয়ে আছে নিজের সীমানায়। অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে নিজের সীমিত জ্ঞানবৃত্তির নিরন্তর সাধনা প্রয়াস। দুর্গম আঁধারির এ দুর্জয় অভিযাত্রা চলছে বহমান। তাইতো আখেরাতের জবাবদিহিতার ভয়ে কোন ঝড় ঝাঁপটা, অপমান অপদস্ত কিংবা অপ্রত্যাশিত গ্লানি তাকে গতানুগতিক স্রোতে ভাসাতে পারেনি। অত্যন্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টি ও ধৈর্য সহকারে আল্লাহ্র নির্দেশিত বিধিবিধান মেনে চলছে যদিও পরিবেশ তার সম্পূর্ণ প্রতিকূলে।
দৃঢ় প্রত্যয়ী বাসনা নিয়ে সীমাহীন অদম্য স্পৃহায় পথের বাঁকে বাঁকে ঈশিতা ঈমানের প্রভূত স্বাদ খুঁজে পেয়েছে ধর্মীয় আদর্শের পুনর্জাগরনী বাগিচায়। সফলতার সন্ধানে সুদীর্ঘ প্রাণান্ত প্রয়াস প্রচেষ্টায় আজ অনুভূত হচ্ছে আলোর ঝর্ণাধারার রৌশনী ভাসছে স্রোতের বিপরীতে। পরিবেশ পরিস্থিতিতে উপযুক্ত আচরণ, তাদের ত্রুটি বিচ্যুতি সংশোধনের পাশাপাশি তার নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভাগুলো গভীর বিচক্ষণতার সাথে বিকশিত করতে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট সে। সাথীদেরকে উপদেশ দেয়ার জন্য দিবসের উপযুক্ত সময় বেছে নিচ্ছে যাতে বন্ধুদের বিরক্তির উদ্রেক না করে। মমতা, ভালোবাসা ও বিচক্ষণতা দিয়ে তার চেষ্টা সে অব্যাহত রেখেছে। এতে তার চাওয়া পাওয়াগুলো ফলপ্রসূও হচ্ছে।
স্নেহ, ভালোবাসা, মায়ামমতা, প্রেমানুরাগ ও কল্যাণকামিতার সুফলতা অনেক দেরীতে হলেও ঈশিতার ভাগ্যে জুটছে। সে মনে মনে প্রিয় রাসূলের কথা বেশী বেশী স্মরণ করে। কোরআনুল কারীমে বলা হয়েছে, অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরিত হয়েছেন, তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু (সূরা তাওবাঃ ১২৮)। কোরআন মজীদে আল্লাহপাক আরও ইরশাদ করেছেন, “যারা আমার সন্তুষ্টির জন্য সামর্থ্য ব্যয় করে অবশ্যই তাদেরকে আমার পথসমূহ দেখিয়ে দিবো আর আল্লাহ্ নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন (সূরা আনকাবূতঃ ৬৯)। শাশ্বত সান্ত্বনার বাণীগুলো অভিভূত করা মুগ্ধতায় ঈশিতার হৃদয়ে প্রশান্তির দ্যুতি ছড়িয়ে দেয় মুক্তার দানার মতো আর ভাবনার আকাশে ভেসে উঠে স্বপ্নের বিকশিত চারাগুলো মিষ্টি আলো হয়ে যা ঢেউ খেলে যায় মায়াবী মনের আঙিনায়।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৯ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক অপেক্ষা, এর যেন শেষ নেই। শুক্রবারে বাড়িতে ফোন করে অনেক বলেছি ও শুনেছি, প্রায় দু ঘন্টা কথা বলেছি, মনটা যেন ফ্রেস হয়ে গেল। এরপর একটু হাটাহাটি, অতঃপর সুপার মার্কেট থেকে সামান্য বাজার করলাম, জুমার নামাজের পর খাবার খেয়ে ঘুমালাম, বিকালে আবারো বাড়িতে ফোন, মাগরিবের পর কিছু দোস্তা আহবাব এর সাথে একটু ঘুরাঘুরি। এভাবেই সারাটা দিন কেটে গেল, তাই নেটে আসা হয় নাই। এইমাত্র আপনার লিখাটি পড়লাম। খুব ভালো লাগলো। ইসলামী ভাবধারায় সমাজকে এগিয়ে নিতে অনেক কুরবানীর প্রয়োজন, প্রয়োজন সাহাবাদের (রা.) মত ঈমান। আমরা যে দূর্বল ঈমানদার, মনে হচ্ছে বাতিলের বৃষ্টিতে খড়কুড়ের মত ভেষে যাব। দোয়া চাই, আল্লাহ তায়ালা যেন আমার/আমাদের ঈমানকে দৃঢ় ও মজবুত করে দেয়।
মন্তব্যের প্রতীক্ষায়......।
ধন্যবাদ। অনেক ভাল লাগলো।
প্রাণভরা দোয়া রইলো আপনার জন্য।
আপনার জন্য প্রাণভরা দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
সত্য সঠিক পথে থাকলে সাময়িক কষ্ট যাতনা ভুল বুঝাবুঝি হলে ও একসময় সে সফল হবেই ।
অনেক ধন্যবাদ আপু ।
তোমার মেধাদীপ্ত বিজ্ঞ মতামত সত্যিই আমাকে অনেক মুগ্ধ করলো।
প্রাণভরা দোয়া রইলো। জাজাকাল্লাহু খাইর।
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
কেমন আছেন?
সুন্দর লিখাটির জন্য শুকরিয়া! ছবিটা অসাধারন লাগলো!
ছবিটি আমারও খুব পছন্দের আপু তাই আমার এক প্রিয়জনকে আঁকতে বলেছি। যার ছবি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত ইউ কে – তে। জাজাকাল্লাহু খাইর।
আশা করা যায় আল্লাহর সাহয্যে সর্বদা সঠিক সিদ্ধান্তের আলোকে চলা সম্ভব হবে।
সুন্দর ও গঠনমূলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের গভীরে পদার্পণ করে আপনার সুন্দর অনুভূতি বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন