ফেলে আসা আলো আঁধারির দিনগুলি – পর্ব ৫
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১২ মার্চ, ২০১৫, ০২:২৯:৪৭ রাত
পর্ব ৪
http://www.bd-today.net/blog/blogdetail/detail/6327/mbanu/62409
নির্যাতনের রক্তাক্ত সিঁড়ি বেয়ে ক্রমেই সমস্যা প্রবলভাবে প্রকট হয়ে উঠলো। আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ নির্ভরতা, অবিচল আস্থা ও মায়ের দোয়ার উপর ভরসা রেখে নিজেকে স্থির ও আশ্বস্থ করলাম। এমনি এক টলটলায়মান পরিস্থিতিতে আবারো সিদ্ধান্ত নিলাম এই দুঃসময়ে নুরুল ইসলাম স্যারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল বেলা স্যারের বাসার অফিসে গিয়ে উপস্থিত হলাম। ততদিনে স্যারের অফিসের সকলেই আমাকে বেশ ভালোভাবে চিনতো। আমাকে দেখে স্যারের পি এস বললেন, উনি আজ খুব ব্যস্ত এখনেই একটি প্রোগ্রামের জন্য বাইরে যাবেন। সেই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয় ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদার লোক উপস্থিত থাকবেন। বিষয়টি জানার পর অফিস থেকে বের হয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম এখন আমার কী উচিৎ!! হঠাৎ দেখি স্যার সিঁড়ি দিয়ে নামছেন, ড্রাইভার প্রস্তুত। আমাকে সামনে দেখে জিজ্ঞাসা করতেই ছালাম জানিয়ে বললাম জরুরী প্রয়োজনে এসেছি। স্যার বললেন তাড়াতাড়ি গাড়ীতে উঠেন আমি যেতে যেতেই শুনবো তারপর যাওয়ার পথে আপনার কর্মস্থলে আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে যাব।
কিছু বলার আগেই স্যার গাড়ীতে উঠে বসলেন এবং আমিও কিছুটা দ্বিন্বান্বিত অবস্থায় উঠে গেলাম। পথিমধ্যে সব শুনে আমাকে আস্বস্থ করলেন এই বলে, উনি যে অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন সেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয়ের পাশেই উনার আসন। অনুষ্ঠান শেষে চা চক্রের সময় আমার বিষয়টি উথাপন করবেন। হতাশার মাঝে কিছুটা আশার আলোর সম্ভাবনা যেন উঁকি দিলো মনে। স্যারের আন্তরিক হস্তক্ষেপে পরবর্তীতে সরাসরি বদলী সাময়িকভাবে বাতিল হলো। কিন্তু প্রতিপক্ষের দায়ের করা একাধিক মামলার ঘানি টানতে নরকের গ্লানি বহন করতে হলো। অপরদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও ঐক্যবদ্ধতার কাছে বিচ্ছিন্ন সুবিধাবাদি মামলাবাজরা যুৎ করতে না পারলেও সারাক্ষণ সরকারের ক্রীতদাসের ভূমিকা অব্যাহত রাখলো।
কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ না হতেই সরকারী দলের ছত্রছায়ায় গৃহপালিত কিছু ব্যক্তি কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো। তারা অনেকেই জানতো যে, আমি সাংগঠনিক পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার জন্য বরাবরেই আগ্রহী ছিলাম আমার পরিবারের কারণে। যদিও আমি কোন অন্যায় শক্তির কাছে পরাজয় মেনে নিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। উদ্ভুত এই পরিস্থিতিতে সাড়া দেশের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ অন্যায়ের কাছে হার না মানার একই নীতিতে অটল থেকে দালাল মামলাবাজ নেতাদের এই অন্যায় দাবী অগ্রাহ্য করার পাশাপাশি পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য পথ অনুসরণের পক্ষে রায় দিল।
এমতাবস্থায় পূর্বে কাউন্সিল সম্মেলনের মাধ্যমে সাড়া দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতা নেত্রী নির্বাচনের প্রথা থাকলেও অন্তর্দ্বন্দ নিরসনকল্পে প্রতিনিধি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। যাতে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দনীয় ব্যক্তি নির্বাচন সম্ভবপর হয়। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রতি তীব্র অনীহা থাকা সত্ত্বেও বিরোধী পক্ষের কাছে সংগঠন নিরাপদ নয় এই যৌক্তিকতায় আমাকে আবারো ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধ্য করা হলো। কিন্তু বিস্ময়কর বিষয় হলো সভানেত্রী পদের জন্য যে ব্যক্তি মনোনয়ন গ্রহণ করেছিলো সে নির্বাচন বিধি মোতাবেক তার নমিনেশন প্রত্যাহার করে নিলো। ফলে অন্যান্য পদে নির্বাচন হলেও আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো পুনঃনির্বাচিত হলাম।
নির্বাচনের ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় বিরোধী পক্ষ আবারো তলে তলে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকলো। এরই মধ্যে বিস্বস্থ একজনের মারফত জানতে পেলাম ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক স্কলারসীপের সুযোগ ঘোষিত হয়েছে। যদিও প্রার্থী নির্বাচনের শর্তাদি পূরণ করা ছিল অত্যন্ত জটিল ও কষ্টসাধ্য। প্রার্থী নির্বাচন প্যানেলে কোন বাংলাদেশী থাকবে না বিষয়টি জেনে একটু স্বস্তিবোধ করে পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করলাম।
যথারীতি পরীক্ষা শেষে ফলাফলের জন্য প্রহর গুনছিলাম। হঠাৎ একদিন সংবাদ এলো পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী দেড় শত জনের মধ্যে দশজনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে যার তালিকায় আমিও রয়েছি। যদিও পরবর্তীতে ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ইংলিশ পরীক্ষার স্কোরের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত পর্বে পাঁচ জন মনোনীত প্রার্থী ইউ, কে –তে মাস্টার্স প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করবে। যার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করবে ব্রিটিশ সরকার। খবরটি শুনে তাৎক্ষনিকভাবে পুলকিত হলাম এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংলিশ কোর্সে অংশগ্রহণ করবো এই আশায় প্রহর গুনতে থাকলাম। চলবে
বিষয়: বিবিধ
১৫০৪ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পরের পর্বের অপেক্ষায়!
আপনার অতীতের পথচলার সাথী হতে পেরে খুবি ভালো লাগছে! জাযাকিল্লাহু খাইর!
আমি ফাস্টু
আপনার জন্য প্রাণভরে দোয়া করলাম আপুজ্বি। ভালো থাকবেন খুব ভালো এই প্রত্যাশায়।
ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট ছোট দুঃখ কথা
নিতান্ত সহজ সরল,
সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু-চারটি অশ্রু জল।
নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।
------------------
আপনার গল্পটাও শেষ হয়ে হইল না শেষ। রেজাল্টটা জানালে মনে পাঠক আগামী পর্ব পড়ার আগ্রহ একটু কমে যেত। ভাল লাগলো ৬ষ্ঠ পর্ব পড়ার অপেক্ষায়..।।
চমৎকার একটি মন্তব্য এবং আগামী পর্ব পড়ার অনুভূতি রেখে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করলেন সেজন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। জাজাকাল্লাহু খাইর।
এ পর্বেও সাথে আছি। শুভেচ্ছা জানবেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার অতীত কাহীনি পড়তে বেশ ভাল লাগছে । ধন্যবাদ আপু ।
পেশাজিবি সংগঠন গুলি এই সব দলবাজ দের হাতে পরে সব পেশায় উৎকর্ষতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেন এই দেশে।
অপূর্ব সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
আর হে, সভানেত্রী পদে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে বাসী অভিনন্দন।
চলছে যখন আমিও চলি
মনে করার মানসিকতা ভালো লাগলো।
আপনার মন্তব্য করার দারুণ অভিব্যক্তিতে সত্যিই মুগ্ধ হচ্ছি ভাইয়া।
বাসী অভিনন্দন তাজা হিসাবে গ্রহণ করলাম।
আপনার মূল্যবান উপস্থিতি ও প্রেরণার জন্য অনিঃশেষ দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আমি সাদামাটাভাবেই কমেন্ট করছি, তাতে যদি মুগ্ধতা ছড়ায়, তাহলে তা কাকতলীয় ব্যাপার।
আরো কিছু জানার থাকলে সংকোচ না রেখে প্রশ্ন করবেন, এখন আর লুকাবার কিছু নেই, যখন লুকিয়ে থেকেও হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা শতভাগ।
আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন