স্বামী স্ত্রীর প্রেমময় বন্ধন-আখিরাতের জান্নাতি বাগান
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১১ মার্চ, ২০১৫, ০১:৫৪:৫৯ রাত
স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রেমময় বন্ধনের ভিত্তি রচিত হয় পারস্পারিক বিশ্বাস, ত্যাগ, সততা, সন্মান, ভক্তি, ভালোবাসা ও মুহব্বতের উপর। এভাবেই দুজন মানুষের হৃদয় ও আত্মার স্বতঃস্ফূর্ত মহামিলনে অর্জিত হয় পার্থিব জীবনের অনন্ত সুখ শান্তি ও আখিরাতের সফলতা। যে বিষয়গুলি অত্যন্ত সুগভীর, সুসংহত ও সুদূরপ্রসারী। আর এর শেকড়ের মূলে রয়েছে জ্ঞানার্জন, খোদাভীতি, ধর্মানুশীলন ও নেক আমল। যেখানে প্রতি দিনের কর্মে উপস্থিত থাকে নৈতিক ও চারিত্রিক গুণ বৈশিষ্টের সমাহার। এভাবেই দু’টি হৃদয়ে জন্ম হয় অবিশ্বাস্যকে জয়ের এক অভূতপূর্ব শক্তির সেতু বন্ধন। যা অপ্রতিরোধ্য। এরূপ একটি সত্য ঘটনা এখানে পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
অপূর্ব সুন্দর সাজানো গোছানো একটি পরিপাটি বাগান। আর বাগানের বুক জুড়ে কিছু অংশে রয়েছে একটি মনোহরী রুচিশীল বাড়ী। সুস্বাদু ফলমূলে ভরা বাগানবাড়িটি। ইচ্ছেমতো ফলমূল খাওয়া ছাড়াও বাগানের সৌন্দর্য, হৃদয় প্রশান্তি করা মৃদুমন্দ হাওয়া ও সুনিবিড় ছায়া ছিল দম্পতিটির জন্য বেশ উপভোগ্য। এই মনোমুগ্ধকর নয়ন শীতল করা বাগানবাড়ীটি ছিল উম্মুদ দাহদাহ এবং তার স্বামী আবুদ দাহদাহের নিকট অত্যন্ত প্রিয়। সেখানে সুখ শান্তিময় সংসারে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে উম্মুদ দাহদাহের দিন অতিবাহিত হতে থাকলো। কিন্তু তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এতো সুন্দরভাবে গড়া সংসার ও বাগানবাড়ি এমনকি পুরো জিন্দেগীসহ পৃথিবীর সবকিছুই হলো ক্ষণিকের জন্য। সে অনিশ্চিত সময়কালও আবার অনির্ধারিত তার কাছে। কোন মুহূর্তে সেই ক্ষণ এসে তার সামনে উপস্থিত হবে সে বিষয় তার সম্পূর্ণ অজানা। তা হতে পারে একঘণ্টা, একদিন, মাস, বছর বা সত্তর বছর! কিছুই বলতে বা উপলব্ধি করতে পারে না সে!!
এই চির সবুজ শ্যামলিমায়পূর্ণ মায়াঘেরা বাগানবাড়ীটির আয়ুষ্কালও ঠিক তেমনি, ক্ষণস্থায়ী। যে কোন মুহূর্তে ধ্বংস বা নষ্ট হতে পারে। তাই উম্মুদ দাহদাহের প্রাণের চাওয়া ছিলো এক চিরস্থায়ী বাগানের এবং জীবনের। যা কোনদিন কোন অবস্থাতেই বিনষ্ট হবে না। আবুদ দাহদাহ বেশ কিছুদিন যাবত দ্বীনের মহব্বতে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সান্নিধ্যে ছিলেন এবং সেখানেই তিনি অমূল্য এই স্থায়ী বাগানের সন্ধান পেলেন।
হঠাৎ একদিন আবুদ দাহদাহ এসে তার স্ত্রীকে বললো, হে আমার প্রাণাধিক প্রিয়তমা! উম্মুদ দাহদাহ!! চলো এখনিই আমাদেরকে এ বাগানবাড়ী ছেড়ে চলে যেতে হবে। কেননা আমি জান্নাতের খেজুর গাছের বিনিময়ে এই বাগানবাড়ী অন্যের কাছে বিক্রয় করে দিয়েছি। ঘটনার আকস্মিকতায় উম্মুদ দাহদাহ প্রথমে একটু বিচলিত হলেন বৈকি! কী এমন বিপদ হলো! যে আমার এই সখের প্রিয় বাগান ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু পরবর্তী ঘটনার বর্ণনা শোনা মাত্রই আনন্দে পুলকিত হয়ে উঠলেন উম্মুদ দাহদাহ। যা ছিল আবুদ দাহদাহের কাছে অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কারণ তিনি ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিলেন, যে বাগানবাড়ীটি বিক্রির বিষয়টি জানার পর উম্মুদ দাহদাহের না জানি কী তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়!!
কিন্তু উম্মুদ দাহদাহ ছিলেন বুদ্ধিমতী বিচক্ষণ এক ঈমানীদীপ্ত বিশ্বাসী নারী। তিনি অল্পতেই বুঝে নিলেন যে, এই ক্রয় বিক্রয়ের আদান প্রদান হয়েছে স্বয়ং নবীজির সাথে। আর এর বিনিময় হলো সরাসরি জান্নাতের খেজুর গাছ! এর অর্থ জান্নাত প্রাপ্তি!! এই কথা ভেবে তিনি আবুদ দাহদাহকে এমন অবাক করা প্রশান্তিময় জবাব দিলেন যা শুনে মুহূর্তেই তার কলিজা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তিনি বলে উঠলেন, হে আমার প্রিয়তম! কতই না লাভজনক ব্যবসা তুমি করেছো! আমি এতোদিন যে স্বপ্ন আমার হৃদয়ে লালন করেছি তা তুমি আজ সত্যে পরিণত করলে!!
এবার চলুন, প্রকৃত সত্য হাদীসের আলোকে হযরত আনাস (রাঃ) এর বর্ণনা হতে শুনি সেই ঘটনাটি। তিনি বলেন, একদিন এক ব্যক্তি নবী (সাঃ) কে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! একজনের একটি খেজুর গাছ আছে। আমি সেটা দিয়ে আমার প্রাচীরটি মেরামত করতে চাই। আপনি দয়া করে তাকে একটু বলে দিন। আল্লাহ্র নবী (সাঃ) সেই গাছের মালিককে অনুরোধ করে বললেন, তোমার খেজুর গাছটি তুমি তাকে দিয়ে দাও, বিনিময়ে তুমি জান্নাতে খেজুরের গাছ পাবে। কিন্তু সেই ব্যক্তি এ কথা শুনে তা দিতে অস্বীকৃতি জানালো।
এর সেই মুহূর্তে আবুদ দাহদাহ সেই মালিকের কাছে তার বাগানবাড়ীর বিনিময়ে খেজুর গাছটি বিক্রির কথা বললে সে সাথে সাথে রাজী হয়ে যায়। তারপর আবুদ দাহদাহ নবীজির কাছে গিয়ে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! এই খেজুর গাছটি এখন আমার। যা আমি আমার বাগানবাড়ীর বিনিময়ে ক্রয় করেছি। আমি গাছটি আপনাকে দিলাম। আপনি ইচ্ছে করলে সেই ব্যক্তিকে এখন গাছটি দিয়ে দিতে পারেন। এই ঘটনা শুনে নবী (সাঃ) ভীষণ আনন্দিত হলেন এবং অনেকবার বললেন, “আবুদ দাহদাহ এখন জান্নাতে খেজুরের ফলে পরিপূর্ণ বাগানের মালিক।
এরপর আবুদ দাহদাহ নিজ গৃহে ফিরে তার স্ত্রীকে একে একে পুরো ঘটনাটি খুলে বললেন। জানালেন তার বাগানবাড়ীর বিনিময়ে জান্নাতে খেজুর গাছের লাভজনক ব্যবসার কথা। (বায়হাকী, হাদীস ৩১৭৭, সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৭১৫৯)।
বর্ণিত ঘটনা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো স্বামী এবং স্ত্রীর পারস্পারিক সাহায্য সহযোগিতা, সমঝোতা, বিশ্বাস, সততা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ছাড়া সুন্দরভাবে পার্থিব এবং আখেরাতের দুর্গম পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান, মজবুত ঈমানী চেতনা ও বাস্তব জীবনে তার পূর্ণ অনুশীলন। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর সামান্য ত্যাগ ও সুখ ভোগ আখিরাতের জান্নাত প্রাপ্তির কাছে অতিশয় তুচ্ছ এই মূল্যবান বিষয়টি এই সত্য ঘটনায় সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে।
আমরা প্রত্যেকেই আখেরাতের পথিক। তাই আল্লাহ্র পথে স্বামী স্ত্রী একে অপরকে বাধাগ্রস্ত না করে বা টেনে না ধরে উৎসাহিত করা অপরিহার্য। অনন্তকালের সফলতা ও পরম সৌভাগ্য অর্জনে এক্ষেত্রে উত্তম স্বামী স্ত্রীর প্রেমময় বন্ধন হতে পারে আখিরাতের জীবনে শ্রেষ্ঠতম জান্নাতি বাগান।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯৬ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অপুর্ব সুন্দর একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু ।
অতি উত্তম কথা,অতি সত্য সুন্দর,শ্বাসত কথা কলেছেন। অসাধারণ লাগল। এটাই সঠিক।
আপনার এই ঘটনা সুন্দরভাবে উপস্থান করাটা পড়লাম। কেন জানি মন বিক্ষিপ্ত ছিল। ভাল এবং খারাপ লাগার মাঝামাঝি ছিলাম। সকাল থেকে শুয়েই আছি ঘন্টার পর ঘন্টা। অনেক কিছু পড়লাম কিন্তু এই সরল সুন্দর লেখাটি আমার ভেতরে চলে গেল। আমাকে এমন এক উপলব্ধী দিল যার জন্যে মনটা প্রতিক্ষায় ছিল।
সরলতাই ইসলামের সৌন্দর্য্য। সাহাবীরা কতটা সহজভাবে ইসলামকে চরম গভীরতায় গ্রহন করেছিলেন। আমাদের স্বার্থবাদী চিন্তা আমাদেরকে কখনই সুখী করেনা। আত্মত্যাগের কারনে মনের মধ্যে যে খুশী আসে তা পুরো জান্নাতি খুশী। এর কোনো তুলনা নেই। আমার মনে হচ্ছিল,আমি সেই সাহাবীর স্থানে আছি,আর মনে হচ্ছিল সেই সাহাবীর স্ত্রীর মত স্ত্রী আল্লাহ আমাকে দান করবেন। যার হাত ধরে আমি জান্নাতুল ফিরদাউসের স্বপ্ন দেখতে পারব। আল্লাহ যেন আমাকে পৃথিবীতে কখনই কষ্ট না দেন। আমি মানুষকে কষ্ট দেইনা,আর অন্যকে ক্ষমা করি। ছোট খাট কষ্টও আমার কাছে অসহ্য লাগে আর কষ্টদাতাকে আমি অনিচ্ছায়ও ক্ষমা করি,এই আশায় যে,আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন।
আল্লাহ যেন আমার দুনিয়া এবং আখিরাত সুন্দর করেন। এই তুচ্ছ পৃথিবীর অল্প সময়ে যেন ধোকাগ্রস্ত না হই। আমি যেন আমার মালিকের গোলামীর জিঞ্জির থেকে বের না হই। আল্লাহ যেন আমাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। আমার জন্যে প্রান খুলে দোয়া করুন। অনুরোধ রইলো
আপনার জন্য তাই মন থেকেই দোয়া আসে না চাইলেও। নিশ্চয়ই দয়াময় আপনার সৎ মনোবাসনা ও আকাঙ্ক্ষাগুলো পূর্ণ করবেন ইনশআল্লাহ্।
খুব ভালো লাগলো জাজাকাল্লাহু খাইরান
আপনার প্রথম উপস্থিতি ও ভালোলাগা অনুভূতিতে আমারও অনেক অনেক ভালো লাগলো। জাজাকাল্লাহু খাইর।
খুবই চমতকার হয়েছে।
সূরা আল হাদীদের ১১ নং আয়াতের ব্যাখ্যা পড়ুন -
مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّـهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ وَلَهُ أَجْرٌ كَرِيمٌ ﴿١١﴾
প্রত্যাশার জায়গাটা বাড়িয়ে দিলেন। আশা করছি আপনার থেকে সেরকম খেদমত পাবে উম্মাত।
প্রাণ খুলে আপনি ও আপনার পরিবারের জন্য দয়াময়ের দরবারে প্রার্থনা জানাই সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য।
আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রিয় হাবীবকে বলেছেন, আমি আপনাকে শুভসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি। জাহান্নামীদের সম্পর্কে আপনাকে কোন প্রশ্ন করা হবে না (সূরা বাকারাঃ ১১৯)।
জ্ঞানগর্ভ ও চমৎকার মন্তব্যের জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ব্যাখ্যামূলক বিজ্ঞ মন্তব্য ও অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য প্রাণভরা দোয়া রইলো। জাজাকাল্লাহু খাইর।
অনেক ধন্যবাদ
কী ভালো লাগলো ভাইয়া?
সত্যি সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমগনের জীবনী পড়লে নিজেদের ঈমান, ত্যাগ , আল্লাহকে স্মরন অনেকবেশী সতেজ হয়! হিদায়াতী ঈমান জাগানিয়া পোস্টটির জন্য শুকরিয়া!
আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আমাদর প্রতিটি মুসলিম দম্পতির ঘরকে আখিরাতর জান্নাতর বাগান হিসেবে কবুল করে নিন! আমীন!
আমার আপুটির জন্য অনেক অনেক অনেক দোআ, শুকরিয়া, শুভকামনা রইলো!
আপনার অপূর্ব সুন্দর দোয়ায় আমীন। ছুম্মা আমীন।
আজকাল ইসলামী আন্দোলনে বিবাহিতদের অনীহা, পিছুটানের অন্যতম কারণ স্ত্রীর স্বামীকে ঘরে আটকে রাখা, বলে, তুমি একজন না করলে কিছু হবে না, অন্যেরা আছে তারাই আন্দোলন পরিচালনা করবে, আর সন্তানের মায়াতো রয়েছেই।
অন্যদিকে অবিবাহিতদের জন্য বাবা মাইয়ের আল্লাহর ভালবাসার চাইতে মাতা পিতার টান কে বড় করে দেখানো।
সত্যি এমন একজন স্ত্রীর ইসলামী আন্দোলনের ভাইদের জন্য অনেক বেশি আকাংক্ষিত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন