হৃদয়ের জোছনায় জোনাকিরা আলো দেয়
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৫১:০২ রাত
মা তাকে অনেক আদর সোহাগ ভরে ডাকে ফুলমণি। ছোটবেলায় তার সুন্দর ফুটফুটে চেহারায় এই নামটি বেশ মানাতো তাকে। জন্মের পর থেকে পরিবারের সবার মায়া মমতায় বেশ কাটছিল তার আনন্দময় মুহূর্তগুলো। এভাবেই ভালো রেজাল্টসহ পড়াশুনার পাশাপাশি সময়গুলো অতি দ্রুত চলে যেতে থাকে ফুলমণির। পড়াশুনা শেষে তারপর এক সময় সে পদার্পণ করে বিবাহিত জীবনে। বিয়ের কিছুদিন পর সৌভাগ্যক্রমে তার স্বামী সজল আকর্ষণীয় বেতন ও সুযোগ সুবিধায় উত্তম একটি চাকুরীর সুযোগ পায়। প্রথম জীবনে স্বামীকে বাহ্যিকভাবে ভাল মনে হলেও ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে চাওয়া পাওয়ার বৈপিরত্য মারাত্মকরূপ ধারণ করতে থাকে। ধর্মীয় চিন্তা চেতনায়, মন মননে, আচার অনুশীলনে প্রতিভাত হয় আকাশ পাতাল তফাৎ। বিয়ের পর পর্দার ক্ষেত্রে ঘোরতর আপত্তি তোলে। এমনকি হাতকাটা ব্লাউজ পড়তে ফুলমণিকে উৎসাহিত করতো সজল। কটাক্ষ ভরে কথায় কথায় উদাহরণ স্বরূপ সে তার মেয়ে কলিগদের উপমা টানতো।
স্বামীর ধ্যানে জ্ঞানে সবসময়ই মিশে থাকে বিপুল বিত্তবৈভবের স্বপ্ন বাসনা আর মুখে লেগে থাকে নিত্যনতুন মেয়ে বান্ধবীর রোমান্টিক গল্প। সজলের ভাষায়, তার মেয়ে কলিগরা উচ্চ বংশীয় বিলাসী ঘরের মেয়ে, অত্যাধুনিক, রূপসী এবং উচ্চশিক্ষিতা তো বটেই। একই অফিসে একসাথে কাজ করার সুবাদে তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হতে পেরে সে ধন্য ও গর্বিত মনে করে নিজেকে। তাই বুঝি ফুলমণিকে আজকাল তার স্বামীর একবারেই পছন্দ হয় না। তার সাহচর্য যেন স্বামীর ঘিণ ঘিণ লাগে। নিজের একান্ত আপন মানুষটিকে চিন্তে অনেক কষ্ট হয় ফুলমণির। এযেন অথৈ সাগরে সাঁতার না জানা এক অসহায় আরোহীর মত। প্রতি মুহূর্তে দম আটকিয়ে আসার যোগাড়। চলার পথের প্রতিটি পদক্ষেপে স্বামীর অবজ্ঞা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য আর অসহ্য অপমানে ফুলমণি ক্ষত বিক্ষত, পর্যুদস্ত ও দিশেহারা।
বিবি আছিয়াসহ মহীয়সী নারীদের কথা ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার অনেক চেষ্টা করে ফুলমণি। সে ভাবে আল্লাহ্ বলেছেন, তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো এবং নিশ্চয়ই উহা কঠিন কাজ বিনীতগণ ব্যতীত (সূরা বাকারাঃ ৪৫)। মা বাবা ভাই বোন ভীষণ কষ্ট পাবে ভেবে তাদেরকে বলতেও কেমন জানি অজানা সঙ্কোচ আর দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করছিলো ফুলমণির মনে। আত্মীয় স্বজন ও সামাজিক লোক লজ্জার ভয় তো আছেই। তারপর অকস্মাৎ একদিন কাকতালীয়ভাবে অতি ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবীর সাক্ষাৎ মেলে ফুলমণির। যে এখন কানাডায় থাকে। নিয়তির অপার করুণায় তারই আন্তরিক প্রচেষ্টায় ও প্রাণপণ সহযোগিতায় কানাডার ভিসা পেয়ে যায় ফুলমণি। এ সংবাদে ফুলমণির স্বামী আনন্দে আত্মহারা, মহাখুশী। তারপর সোনালী ডানায় ভেসে ভেসে শুরু হয় সবকিছু গোছানোর পর্ব।
সমস্ত আয়োজন শেষে একদিন আপনজনদের কাছ থেকে বিদায় নেবার পালা। ফ্লাইটের টিকিট এবং ফুলমণির অতি প্রিয় কোরআনুল মজীদ সে রেখেছে পরম সযতনে তার হাতের কাছেই। হঠাৎ করেই কোরআনের দিকে নজর পড়ে তার স্বামী সজলের আর তীব্রভাবে আপত্তি তোলে তা সাথে না নেয়ার জন্য। তাহলে নাকি এয়ারপোর্টে ফুলমণিকে আটকিয়ে দেবে কোরআনুল মজীদ সাথে রাখার অপরাধে। কিন্তু জীবন চলার পথে স্বামীর অনেক পর্বতসম অমানবিক অন্যায় নীরবে সহ্য করলেও বিদায়ক্ষণে কোরআনুল মজীদ সাথে না নেয়ার বিষয়ে কিছুতেই আপোষ করতে পারে না ফুলমণি।
অবশেষে বিক্ষিপ্ত মানসিকতায় একমাত্র অনন্ত অসীম দয়াময়ের উপর আস্থা ও ভরসা রেখে অধিক সতর্কতা এবং পবিত্রতায় বুকে তুলে নেয় আল্লাহ্পাকের দেয় অমূল্য রত্ন পাক কালাম। যার প্রতিটি শব্দে-আয়াতে মিশে আছে অচিন্তনীয় শিক্ষা, একান্ত বিশ্বস্ততা, নির্ভরতা ও নিঃস্বার্থ পরোপাকারী বন্ধুর সাহায্য সহযোগিতা সহমর্মিতা, মহা বিপদাপদের একান্ত সাথীত্বের অঙ্গীকার যার অমিয় ভাণ্ডারে রয়েছে অফুরন্ত শান্তির অঝোর ধারা, যে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে সান্ত্বনা যুগিয়েছে জীবনের কঠিনতম মুহূর্তগুলোতে।
ফুলমণি জানে আল্লাহ্পাক এভাবেই সান্ত্বনা দিয়েছেন, হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ্কে ভয় কর এবং তাঁর প্রেরিত রাসুলের প্রতি ঈমান আনো, তিনি তাঁর অনুগ্রহে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরুস্কারে ভূষিত করবেন এবং তিনি তোমাদের জ্যোতি দিবেন, যার সাহায্যে তোমরা পথ চলতে সক্ষম হবে, (অধিকন্তু) তিনি সব (পাপ) মোচন করে দিবেন। আল্লাহ্ তায়ালা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সূরা হাদীদঃ ২৮)। মজবুত এই বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে তারপর বিদেশের কঠিন বাস্তবতাকে সততার সাথে পরাভূত করে আজ সে নিরুদ্বেগ, নিশ্চিন্ত। সুখ শান্তি, পার্থিব উন্নতি, পারলৌকিক ভীতি, ধন সম্পদ, সন্মান প্রতিপত্তি সবকিছুতেই মহান রাব্বুল আলামীন যেন ফুলমণির উপর অপার করুণা ঢেলে দিয়েছেন অবারিত করে তার জীবনে। কোন দুঃখ তাপ গ্লানি আজ আর তার নেই, নেই কোন না পাওয়ার কষ্ট বেদনা।
পাক কালামের মর্মস্পর্শী শান্তি শান্ত্বনা প্রতিক্ষণে মমতায় ঢেকে রাখে ফুলমণির অন্তরকে যেমনি ভালোবাসার শিশির বিন্দু জমে থাকে গাছের পাতায় ও ঘাসের ডগায়। এযেন মরুর উতপ্ত প্রান্তরে মেঘমালার সুশীতল ছায়াদান। আবার কখনও মনে অনুভূত হয় এযেন বিশাল কষ্টের পাথর খণ্ড থেকে প্রবাহিত সুমিষ্ট নহরের বিরামহীন বর্ষণ। কখনো বা তার হৃদয়ে জেগে উঠে সমুদ্রের অতল প্রাণ থেকে সিঞ্চিত মণি মুক্তা হীরা কাঞ্চনের বিপুল সমাহার। ফুলমণি তাই আজ বুকভরা অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতায় সেজদায় লুটিয়ে দু’চোখের আনন্দাশ্রু ছেড়ে দিয়ে বলে উঠে, হে মহামহিম প্রভু! তোমার মহিমা বোঝা আসলেই ভার! হায় আল্লাহ্! তোমার কী অপরিসীম মহানুভবতা ও মহব্বত!! এ কী অসাধারণ মহানুভবতার পরম তৃপ্তির স্বাদ জাগিয়ে দিলে তুমি এই নশ্বর জীবনে আমার!! হে মহান পবিত্রময়, মহাবিজ্ঞ মহাজ্ঞানী তুমি এমনভাবে আমাকে সিক্ত করছো, অনুগ্রহীত করেছো তোমার মহান দয়ায় যা ছিল আমার একেবারে কল্পনাতীত। এ মুহূর্তে ঠিক যেন হৃদয়ে প্রশান্তির বাঁধভাঙ্গা জোছনায় জোনাকিরা উদ্বেলিত হয়ে প্রাণভরে আলো ছড়িয়ে দেয় সবকিছু উজাড় করে জীবনের অন্য এক মহা প্রাপ্তির প্রান্তরে অভাবিত মুগ্ধতায়।
বিষয়: বিবিধ
১০৫২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সাথেই রইলাম।
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়। দোয়া রইলো। বোনের জন্যও দোয়া করতে ভুলবেন না যেন।
আপু গল্প ভাল লাগছে কিন্তু শেষটুকু বেশী বুঝতে পারি নাই ।
কোন কথাগুলো বুঝতে অসুবিধা হয়েছে আফ্রাম্নি?
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়। দোয়া রইলো। বোনের জন্যও দোয়া রাখবেন আপু।
আস সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ শ্রদ্ধেয়া আপুজ্বী!
কাজের ব্যস্ততায় পঠনের লোভ সংবরণ করতে পারলাম না! ফুলবানুদের মত নারীদের দ্বারাই এ জগত বেহেশ্তী আনন্দে ভরে উঠে,যদিও দুনিয়া লোভী সজলরা তা বুঝতে পারে না!
জাযাকিল্লাহু খাইরান!!
ভালো থাকবেন খুব ভালো সবসময়। দোয়া রইলো। বোনের জন্যও দোয়া চাই কিন্তু!
পড়েছি আর আল্লাহ কে বলেছি আল্লহ আমার ভাগ্গে এমন একজন মহিলা দিও।
মন্তব্য করতে লগইন করুন