অশেষ আশীর্বাদ যখন অসহ্য অভিশাপ
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০২:০৮:৩২ রাত
মুসলিমজাতি মনে প্রাণে গভীরভাবে বিশ্বাস করে ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান যেখানে রয়েছে মানবজীবনের আশীর্বাদপুষ্ট সর্বতোমুখী সমস্যার অব্যর্থ পূর্ণাঙ্গ সমাধান। আর এর বিপরীতে রয়েছে অবমাননাকর সংঘাতময় অভিশপ্ত জীবন। ইসলাম বিহীন নীতিভ্রষ্ট মানবজীবন আজ তাই হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ, বিভীষিকাময়। খুদ কুঁড়ো খাওয়া কিছু ভণ্ড মুসলিম আজ প্রকাশ্য জনসভায় ইসলামের বিরুদ্ধে তথা দেশের বিরুদ্ধে দম্ভোক্তি করছে। একটি সভ্য মুসলিম দেশে ভাইয়ে ভাইয়ে চলছে মরো এবং মারো যুদ্ধের প্রাণপণ লড়াই। কী বীভৎস চিত্র! এক ভাইয়ের মৃত্যুতে আরেক ভাই উল্লাসে ফেটে পড়ছে। জাতি বিনাশী অমানবিক ও বিচারবহির্ভূতভাবে ক্রস ফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধ নাটক সাজিয়ে সন্ত্রাস ও আতঙ্কগ্রস্থ রাজনীতির মহড়া চলছে সর্বত্রই।
অবরোধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। রক্তাক্ত লাশের পাশে অস্থির স্বজনহারাদের আর্তচিৎকারে ভয়াল হচ্ছে আগামী দিনের অনিশ্চিত গন্তব্যপথ। অস্থির অর্থনীতির বেহাল অবস্থা। খেটে খাওয়া মানুষ অভুক্ত। ব্যবসা বাণিজ্য খাদের কিনারায়। অথচ ক্ষমতালোভী কপট নেতৃবর্গ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণের সাথে মিথ্যাচার করছে। শান্তির অজুহাতে ক্রস ফায়ারে সংহার করা হচ্ছে তরুণ সম্ভাবনাময় তাজা প্রাণ। পেট্রোল বোমাতাঙ্কে নিরীহ মানুষেরা পুড়ে মরছে। আহত হয়েছে হাজারেরও উপরে। এসব লোমহর্ষক ঘটনা মানুষকে করে তুলছে আতঙ্কিত দিশেহারা।
জাতির কাছে আজ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, অপরাজনৈতিক সংস্কৃতির ছায়ায় অগণতান্ত্রিক ধারার অশুভ নজীর স্থাপন করে দেশকে অস্থিতিশীল ও প্রতিহিংসার চরম পরিণামের দিকে কারা ঠেলে দিচ্ছে? অগণতান্ত্রিক পন্থায় ভোটার বিহীন নির্বাচন করে দেশকে চরম সংঘাতময় হুমকির মুখে কেন জিম্মি করা হচ্ছে? ভিন্ন মতালম্বীদেরকে জঘন্যভাবে হয়রানী, জুলুম, নির্যাতন ও প্রকাশ্য দিবালোকে ক্রস ফায়ারে বর্বরোচিতভাবে মেরে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির দৃষ্টান্ত কারা স্থাপন করছে?
ঘরে ঘরে স্বজনহারার করুণ আর্তনাদ। এরমধ্যে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৪ জন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করছে। পরে এটিকে বন্দুক যুদ্ধ বলে দাবী করা হচ্ছে। এধরণের ঘৃণ্য ও বর্বর নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। জনগণের ভোটাধিকার অন্যায়ভাবে কেড়ে নিয়ে রাজনীতি তথা ক্ষমতার মসনদ রক্ষার নামে যে জ্বালাও পোড়াও, হুঙ্কার, খুন, গুম, হত্যা, জুলুমবাজি, লুটপাট, ধর্ষণ, গণহয়রানীর মহাতাণ্ডব চলছে দেশব্যাপী যা আদিম জাহেলিয়াতকেও হার মানায়।
অপরাজনীতির অঙ্গনে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও শিষ্টাচার বহির্ভূত আদর্শ বিদ্যমান। ভোটবিহীন অবৈধ ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা আর ক্ষমতাচ্যুত করার যে ভয়ংকর অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে তাতে বিপর্যস্ত হচ্ছে খেটে খাওয়া নিরীহ দিনমজুর। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ইসলাম বিমুখ হওয়ার পরিণতিতে এসব অশান্তিময় ফেতনার সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যমান এই সমস্যাগুলোর সবচেয়ে সুষ্ঠু সমাধান কেবলমাত্র ইসলামই দিতে পারে। ধর্মীয় আলোকে অতি সত্তর এই মানসিকতা ও পরিবেশকে শোধরানোর উদ্যোগ না নিলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবন যেমন অশান্তিময় হয়ে উঠবে, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মও কঠিন বিপদের মুখে পড়বে যা কোন মানুষেরই কাম্য হওয়া উচিৎ নয়।
দেশের শান্তি, সম্প্রীতি, উন্নতি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণের লক্ষ্যে জাতির প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সংবিধান সংশোধনের নামে যারা তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন তা ফিরিয়ে দেয়ার দাবী আপামর জনতার। জনগণের কাছে দেশ প্রেমের নামে মিথ্যাচার ও সহিংসতা বন্ধ করে জনগণের প্রাণের চাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবী অনতিবিলম্বে মেনে নিয়ে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে দেশবাসীকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়া হোক এটাই সর্বস্তরের মানুষের একমাত্র প্রত্যাশা। আর তা না হলে অনবদ্য আশীর্বাদপুষ্ট শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলা কেন আজ প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির কবলে এক অসহ্য অভিশাপের অগ্নিগর্ভে নিপতিত হয়ে ভস্মের দারপ্রান্তে তার কৈফিয়ত অবশ্যই একদিন জনগণকে দিতে হবে।
ইসলামী শাসনাধীনে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের জান, মাল, সম্পদ ও সন্মান একটি পবিত্র আমানত। আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, একজন অমুসলিমও যদি কোন মুসলমানের দ্বারা এতটুকু নিগৃহীত হয়, তাহলে সেই জালিমের বিরুদ্ধে স্বয়ং তিনি আল্লাহ্র কাছে অভিযোগ পেশ করবেন। আল্লাহ্পাক বলেন, “হে মুমিনগণ তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে আঁকড়ে ধরো, শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু” (সূরা বাকারাঃ ২০৮)। মহান আল্লাহ্পাক আমাদের সকলকে বোঝার তৌফিক দান করুণ। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মহান আল্লাহ্পাক আমাদের সকলকে সঠিক বোঝ দান করুণ। আমীন।
মন্তব্যটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
বাস্তবতার প্রেক্ষিতে চমৎকার গঠনমূলক সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
নেট লাইনে কাজ চলায় নেট বন্ধ! বিকল্প ব্যবস্হায় কোন রকমে কাজ সারছি!
পঠনে আছি শুধু আজ!!
সুন্দর অনুভূতি রেখে যাওয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
কিন্তু এমন কেন হলো???
মূল কারণটি দূর না হওয়া পর্যন্ত এসব দুর্গতি ফুরাবেনা! হয়তো এক রূপ বিদায় নেবে এবং অন্যরূপে আবার আসবে!
কারণটা দেখুন-
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আমরা শুনিনি- আমাদের জাতীয় পন্ডিতেরা নিজেরা শোনেননি, মানেননি, জাতিকেও শোনাননি, মানতে দেননি-
এর ফলাফল কী হবে তা-ও কি আল্লাহতায়ালা বলে দেননি?-
(৪)(আমর বিল মারূফ ও নেহি আনিল মুনকার) সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ পরিত্যাগ করা আল্লাহর লানত, গজব ও ঘৃণার কারণ এবং এ কারণেই দুনিয়া ও পরকালে কঠিন শাস্তি নেমে আসবে।
তবে যারা নিষেধ করবে তারা আখেরাতে বেঁচে যাবে- দুনিয়াতে নয়-
"যে উপদেশ তাদের দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হয়ে গেল। তখন আমি সে সব লোকদের মুক্তি দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম গুনাহ্গার জালিমদেরকে নিকৃষ্ট আজাবের মাধ্যমে তাদের নাফরমানির ফলস্বরূপ। (সূরা আরাফ : ১৬৫)
এখন যাকিছু বিপর্যয় সবই তো আমাদের নিজ হাতের কামাই- যারা মন্দ করেছে, আর যারা মন্দ করতে দিয়েছে- ঠেকায়নি! সুতরাং ...
এখানে একজনের আর্তনাদ শুনুন(পড়ুন)
আপনার গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি, অতি মূল্যবান মন্তব্য ও আন্তরিক অনুভূতি এক অপরিসীম মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিল। মহান রাব্বুল আলামীন আপনাকে সর্বাবস্থায় ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন এবং দুনো জাহানের কামিয়াবী হাসিলের তৌফিক দিন এই প্রার্থনা রইলো। আমার জন্য দোয়া করবেন দয়া করে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন