দ্বীনের পথে মন ময়ূরী পাখনা মেলে উড়ে
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:১০:৪৪ সকাল
বিশ্বের পর্যটকদের কাছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলে খ্যাত এডিনবরায় তখন আমি বসবাসরত। যে বাড়ীতে আমি থাকতাম সেটা কেনার সময় আমাকে যে বিশেষ দিকটি আকর্ষণ করেছিল তা হল বিশেষ ধরণের মনোরম গাছ গাছালীসহ একটি সুন্দর ফুলের বাগান। অধিকন্তু বাসার কার্পেটিং সহ সবকিছু নতুনভাবে সাজানো। বাসার চারিদিক ছিল শুন শান নীরবতা। বাসার মেইন গেটে ছিল একটি বড় গোলাপ গাছ। সেখানে প্রতিদিন হিমেল বাতাসে গোলাপের পাঁপড়িগুলো পুরো জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকতো। ভোর বেলা দরজা খুললেই মনে হতো কেউ যেন আমার জন্য পাঁপড়ি বিছিয়ে রেখেছে। মনের অজান্তেই প্রাণে এক ধরণের শুভ্রতা অনুভব করতাম।
বাসায় পুরো পরিবারসহ থাকার নিয়্যত থাকলেও পরবর্তীতে মালিকের ইচ্ছায় তা আর হয়ে উঠেনি। পরম শান্তিদাতা দয়াময়ের সিদ্ধান্তের উপর ভরসা করে কঠোর সাধনা ও নিষ্ঠার সাথে আমাকে পাঁচ বছর একাই কাটাতে হয়েছিল সেখানে। ফলে ফুল টাইম জব শেষে অধিকাংশ সময় আমার একান্ত সঙ্গী বা বিনোদন ছিল কোরআন তেলওয়াত, দ্বীনি বই পড়া, জিকির আজগর করা, নফল রোযা ও ইবাদতের মধ্যে ডুবে থাকা। অনেক দিন এমনও হয়েছে যে আমি একশত রাকায়াত নফল নামায আদায় করেছি। হৃদয়ের ভিতর তখন কেমন যেন অপার শান্তি আর তৃপ্তিতে ভরে উঠতো। জিকির এবং ইবাদতের স্বাদের কাছে মনে হতো পৃথিবীর সকল স্বাদই মূল্যহীন, তৃপ্তি বিহীন। মাঝে মাঝে এমন সব অলৌকিক কিছু ঘটনা ঘটে যেত যে, আমি সৃষ্টিকর্তার দানের মুগ্ধতায় তন্ময় হয়ে ভাবনার সমুদ্রে হারিয়ে যেতাম। তারপর সম্বিৎ ফিরে এলে আবার সেজদায় লুটিয়ে পড়তাম মালিকের দরবারে। ভেসে যেতাম পরম শান্তির এক অনাবিল পরশমাখা জান্নাতি ভূবনে। মনে হতো এই স্বর্গীয় উদ্যানে থেকে যাই জনম জনম ধরে।
আমার বাসা থেকে সমুদ্রের দুরুত্ব দশ মিনিটের পায়ে হাটা পথ। কোনদিন বাসায় ভালো না লাগলে সাড়া দিনের খাওয়া ও পানীয় সাথে বেঁধে নিয়ে সমুদ্র ধারে বসে অপরূপ প্রকৃতির সৌন্দর্যে হারিয়ে যেতাম। হৃদয় সাগরে ভাবাবেগের তরঙ্গমালায় সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব মনের দর্পণে ভেসে ভেসে উঠতো। এমনি মুহূর্তে বুকের ভেতরে শান্তি সুখের কলিটা আস্তে আস্তে ফুটনোম্মুখ হয়ে আমাকে ছুঁয়ে দিতো। অপরূপ মায়াঘেরা এক নির্মল আনন্দঘণ পরিবেশ থেকে পরিবারের টানে চলে আসি একদিন নিউ ক্যাসেলে। এখানে আমার একমাত্র ছেলে ‘ল’ এ পড়াশুনা করার কারণে প্রতি বছর ‘বার’ করতে আসা এক ঝাঁক তরুণ তরুণীর সাক্ষাৎ মেলে। তাদের আলাপচারিতা, পার্টি, ধুম ধামের পর্ব মালা থাকলেও আমার একটাই নেশা ও উদ্দেশ্য থাকতো, তা হলো তাদের কাছে যে কোন মূল্যেই হোক দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। কারও কটাক্ষ বা ভ্রুক্ষেপে কর্ণপাত না করে চালিয়ে যাওয়া এ কাজটিতে আমি আশাতীত সাফল্য পেয়েছি ইনশআল্লাহ্।
আমি বর্তমানে যে বাসায় থাকি সেটা চার বেড রুমের বাসা। আমি যে ফ্লরে থাকি সেখানে তিনটা বেড রুম। আমি থাকি মাঝখানে আর আমার দু’পাশের দু’টি রুমে ভাড়া থাকতো দু’জন মেয়ে। একটি মেয়ে সদ্য বিবাহিতা আর একজন অবিবাহিতা। তারা দু’জনেই সুদর্শনা এবং দীর্ঘ কেশী। বাহিরে বের হলে অনেক সাজু গুজু করে চুল দুলিয়ে দুলিয়ে হাটতো। আমি প্রথমে তাদেরকে দেখে বেশ অস্বস্তিবোধ করতাম। আর মনে মনে ভাবতাম কীভাবে এদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিবো। তারপর সম্পর্কের এক পর্যায়ে পৌঁছে আমি তালীমের ব্যবস্থা করি। যেখানে নফস শয়তানের সাথে জিহাদ করা, শরীয়তের সমস্ত আদেশ, ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও মুস্তাহাব আদায় করা, হালাল হারাম মেনে চলা, সুন্নতি কাপড় ব্যবহার করা, মেসওয়াক করে ওযু করা, জান্নাতের সুসংবাদ এবং জাহান্নামের ভয়াবহতা সহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
একটু ধৈর্য ও অল্প মেহনতের সাফল্যেই তারা দুজনে পরবর্তীতে এমন সুন্দরভাবে হিজাব পড়া শুরু করলো যে ওদের নতুন রূপ ও সৌন্দর্যে আমি বিস্মিত হলাম। এমনকি গত রমযানে আমি দশ দিনের ইতিকাফে বসলে ওদের একজন আমার সাথে ইতিকাফ করে। ইতিকাফরত অবস্থায় ওর আমল, দয়ালু মানসিকতা ও চারিত্রিক মাধুর্য দেখে আমার মনটা অনুপম মুগ্ধতায় ভরে উঠে। পরবর্তীতে তালীমের মধ্যে তাদের ইসলামী আলোচনা, ধর্মীয় জ্ঞানবোধ, ন্যায়নিষ্ঠা, উদার ব্যবহার ও আগ্রহ আমাকে ভীষণভাবে উজ্জ্বীবিত করে। তাদের আমল ও সৎ কর্মের প্রাণান্তকর সদিচ্ছায় সত্যিই আমি অভিভূত এবং আনন্দিত। এই সামান্য সংশোধন ও পরিবর্তনটুকু হয়তো অনেকের কাছেই অনেক তুচ্ছ কিন্তু আমার কাছে এর অনুভূতিটুকু আকাশচুম্বী। প্রতি মুহূর্তে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণায় ডুবে থাকা আমার মনের মাঝে সতত বয়ে চলে পুণ্য আহরণে দ্বীনি পথের কুসুমিত সুবাস যা আনন্দে বিগলিত মন ময়ূরী বিচরণ করে উন্মুক্ত আকাশে এমনিভাবে স্বপ্নের ডানা মেলে।
হে আমার মহান মনিব, মেহেরবানী করে আমাদের সকলের বড় ছোট পাপের কালিমা মোচন করে এমনিভাবে পুন্যের নূর ঢেলে দাও মোদের সর্বাঙ্গে। আমাদের সকলকেই মউতের কষ্ট, কবরের আযাব ও জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে হেফাজত করো। হে মহামহিম দয়ার সাগর তোমার দরবারে তাই অশ্রুসিক্ত নয়নে আকুল মিনতি হৃদয়ের কাঙ্ক্ষিত চাওয়া গুলোকে তুমি তোমার রহমতের ছায়ায় স্থান দিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে আমাদের সকলকেই প্রকৃত জ্ঞানার্জন ও ইসলামী জিন্দেগীর সাথে কবরে যাওয়ার সৌভাগ্য নসীব করো। মায়া মুহাব্বতের সকলকেই এমন ঈমান ও আমল করার তৌফিক দান করো যাতে শেষ বিচারের দিনে জান্নাতে গিয়েও যেন একই সঙ্গে থাকতে পারি। আমীন।
সৌজন্যেঃ আমার প্রাণপ্রিয় হ্যারি ও আওন।
বিষয়: বিবিধ
২০০৭ বার পঠিত, ১০৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নিচে ... পড়ে কমেন্ট করেছি। আওণ কিন্তু এখনও পড়ে নাই, সে ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করতেছে মনে হচ্ছে!
বিদগ্ধজনদের কাছে সব সৃষ্টিতেই মহান স্রষ্টার অপরুপ সৌন্দর্য্যময়তা ফুটে উঠে,রবের পরাক্রমশালীতা ছড়িয়ে দিতে চায় চারিপার্শ্বে-শুকরিয়াতান!
আকর্ষিত দরদময় উপস্হাপনায় অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকুমুল্লাহু খাইরান জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয়া আপুজ্বী!
ব্লগের ময়দানে আপনার সরব পদচারণা বিমোহিত করবে আমাদের কে, মনে রাখবেন কথাটা!!
শুকরিয়া কাহাফ ভাইয়া
ধন্যবাদ আপনাকে ।
দোয়ায় আমীন।
আপনার জন্যও প্রাণভরা দোয়া রইলো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায়। বারাকাল্লাহু ফিক।
আপনার জন্য নিরন্তর শুভ কামনা ও প্রাণভরা দোয়া রইলো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায়। বারাকাল্লাহু ফিক।
আর সেই চেষ্টার ফল অবশ্যই আমি আপনি আমার চারিপাশ ভোগ করে।
আপনার লেখা সত্যি চমতকার। আন্তরিক মোবারকবাদ।
এই আয়াতটি মনে পড়লো।
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম। [৩:১০৪]
নিরন্তর শুভ কামনা ও প্রাণভরা দোয়া রইলো তোমার জন্য। ভালো থাক, সুস্থ থাক সব অবস্থায়। বারাকাল্লাহু ফিক।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা যেন সবাইকে জানার বোঝার মেনে চলার তৌফিক দান করেন। আমীন
সুন্দর লিখার জন্য ধন্যবাদ ।
উৎসাহ প্রদানের জন্য নিরন্তর শুভ কামনা ও প্রাণভরা দোয়া রইলো আপনার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায়। বারাকাল্লাহু ফিক।
আপনার অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। আমার প্রত্যক্ষ দেখায় বেশ কিছু ঘটনা আছে যা আমি নিজেই বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অবলোকন ও উপলব্ধি করেছি। মাঝে মাঝে ভেবেও রেখেছিলাম বিষয়গুলো সবার সাথে শেয়ার করবো কিন্তু আজো তা হয়ে উঠেনি।
আপনার হৃদয়স্পর্শী মন্তব্য ও দোয়ার জন্য বারাকাল্লাহু ফিক।
আপনার জন্য নিরন্তর শুভ কামনা ও প্রাণভরা দোয়া রইলো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায় এই কামনায়।
আর হ্যাঁ আপুজ্বি এই বয়সেই হ্যারি এবং আওন ওরা দুজনেই ব্যক্তিজীবনে অনেক অনেক দায়িত্বশীল এবং কঠোর পরিশ্রমী। মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই এই ভেবে যে, এতো কঠিন দায়িত্ব পালন করে ওরা কীভাবে ব্লগিং করে। এ কারনেই ওদের প্রতি আমার অন্যরকম আদর স্নেহ মমতা এবং অনুভূতি। ভিশু ভাইয়ার ক্ষেত্রে বলবো উনি জেদী নন তবে অনেক অভিমানী। জাজাকাল্লাহু খাইর।
সাদিয়া আপুকে অনেকদিন দেখিনা। বাচ্চাদের নিয়ে ব্যাস্ত হবেন হয়ত। উনিও আপনার মত আরেকজন মমতাময়ী মা এবং বড়বোন। আপনাদের জন্য দোয়া রইলো আপু ভালো থাকেন
@ভিশু ভাইয়া..... "হিহি" নাকি হাসির মুওয়ান্নস রুপ মানে ফেম্যানিন ভার্ষন। তাই আপনি "হাহাহা" করে হাসেন!
আপনার জন্য নিরন্তর শুভ কামনা ও প্রাণভরা দোয়া রইলো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায় এই কামনায়। বারাকাল্লাহু ফিক।
আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে যে যারা নিজেরা ভাল ধর্মকর্ম করে তারা অন্যদের দ্বীন অমান্য আচরণগুলো দেখে তাদের বাঁকা চোখে দেখে|যা একেবারেই উচিত নয়|আপনি ভাল ব্যবহার করে উনাকে ভাল-মন্দের পার্থক্য বুঝান|তারপর বাকিটা উনার ইচ্ছা|তখন না হয় একটু বাঁকা চোখে দেইখেন তবে ঘৃণার চোখে নয়|
অন্নেক ধন্যবাদ আপনাকে| বরাবরের মত অনবদ্য লেখা|
আপনার জন্য নিরন্তর শুভ কামনা ও প্রাণভরা দোয়া রইলো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায় এই কামনায়।
আপনার সুন্দর দোয়ায় আমীন।
অসংখ্য ধন্যবাদ। খুব সুন্দর লিখেছেন। ভাল লেগেছে। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
আমার জন্য বেশী বেশী করে দোয়া করবেন ভাইয়া।
আপনার জন্যও মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়ার দরখাস্ত রইলো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায় এই কামনায়। বারাকাল্লাহু ফিক।
যখন সেই ব্যাক্তি আমি হতে উপরে উঠে যায় সত্যিই তখন হৃদয়টা আনন্দের অশ্রুতে প্রবহমান হয়ে যায়।
অনন্য লিখা পড়লাম।
জাজাকিল্লাহ খাম্মুনি।
খুউব খুউব শুকরিয়া
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায় এই কামনায়। বারাকাল্লাহু ফিক।
আপনি যা করেছেন, তা মোটেও তুচ্ছ নয়, বরং অনেক দুঃসাধ্য কাজ। আর আপনার মত দ্বীন ইসলামকেই তাদের জীবন উদ্দেশ্য করে নেয়, তাদের পক্ষে এই দুঃসাধ্য কাজটাই অনেক সহজ মনে হয়, নিঃসন্দেহে তা আল্লাহর পথে নিবেদিত প্রাণদের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ।
মন প্রাণ উজার করে দোয়া করছি, আপনার প্রতি মুহুর্তের সৎ কাজের সর্বোত্তম প্রতিদান যেন আল্লাহ আপনাকে দেন।
ভাল থাকুন।
আপনার অনুপ্রেরণাময় আবেগঘন কথাগুলো অনেক মূল্যবান এবং উৎসাহব্যঞ্জক। আপনার হৃদয় উজাড় করা আন্তরিক অকৃত্রিম দোয়ার জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া ভাইয়া।
আপনার জন্যও মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়ার দরখাস্ত রইলো। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সব অবস্থায় এই কামনায়। বারাকাল্লাহু ফিক।
এটাইতো কারণ? সরি!!!! আমি খুব ভুলোমনা, তাই কিছু আগে কি পড়লাম কিনবা কি করলাম কিছু পরে ভুলে যাই!!! যদি কিছু মনে না করে থাকেন তবেই শান্তি পাই।
আমার জন্যও এত্তো দোয়া করলে আল্লাহ কি আমাকে ভাল না রেখে পারবেন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন