শুভ্র মেঘ বিদূরিত করবে বিষাদের কালো ছায়া
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:৪৪:৫৯ সন্ধ্যা
ক্ষমতা, ধনৈশ্বর্য, মসনদপ্রীতি আজ এতই প্রবল ও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, বাংলাদেশকে কেন জানি এখন মনে হয় ফেরাউনের দেশ। কৃত্রিমসুখ ও ক্ষণস্থায়ী ক্ষমতার মোহে বিভোর হয়ে ফেরাউন যেমন ইসলাম ধর্ম, শিক্ষা, আল্লাহ্র প্রতি ঈমাণী চেতনাকে ধংস করার জন্য হিংস্রতায় মেতে উঠেছিল ঠিক তেমনি আজ আবারও একটি চক্র ফেরাউনী কায়দায় সংঘবদ্ধভাবে অতি নিকৃষ্ট পন্থায় ইসলাম তথা মুসলিম নিধনে তৎপর। তারা বোধকরি ফেরাউনের করুণ পরিণতির কথা বেমালুম ভুলে গেছে। ইতিহাস থেকে তাদের আবারও শিক্ষা নেয়া উচিৎ। আমরা সকলেই জানি পাষণ্ড ফেরাউন যার বাল্য নাম ছিল কাবুস তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত ও প্রলম্বিত করার জন্য মিশরে ইসলামী শিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছিল। তার দর্শন ছিল সুশিক্ষিত ধর্মপরায়ণ লোকেরা কোরআনের আলোকে তার কথা যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে উপেক্ষা করবে। আর অশিক্ষিত লোকদের সে যেভাবে বুঝাবে তারা সেভাবেই বুঝবে। তাই সে মিশরের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ধর্মীয় আলোচনা, ওয়াজ নছীহত সব বন্ধ করে দিয়েছিল। আইন অমান্য করার অপরাধে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করেছিল। দেশকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত করে, ন্যায়পরায়ণ বহু লোককে দেশ ছাড়া করে, কারাগারে বন্দী করে শুলে চরিয়েছিল, চল্লিশ হাজার আলেমকে জবাই করা হয়েছিল। এমনকি তার সাথে দ্বিমত পোষণ করায় ক্ষমতার লোভে উন্মাদ-উন্মত্ত হয়ে নিজের স্ত্রী বিবি আছিয়াকে পিটিয়ে, মাথায় ছুরি চালিয়ে ও সন্তানদেরকে উত্তপ্ত তৈলপূর্ণ কড়াইয়ে ডুবে মেরেছিল।
একইভাবে মূসা (আঃ) ও তাঁর অনুসারীগণের উপর ফেরাউন নির্যাতন চালিয়েছিল। বিশ্ব জগতের মালিক মূসা (আঃ) কে পাঠিয়েছিলেন ফেরাউনকে হেদায়ত করার জন্য কিন্তু তার ভাগ্যে হেদায়ত জোটে নাই, তার গোমরাহী ও গরিমার জন্য। পাপের ভারে নিমজ্জিত তার এই নাফরমানীর জন্য শাস্তিস্বরুপ লোহিত সাগরের পানিতে পানিতে তাকে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। দুনিয়ার জীবনেই তার জুটেছিল অপমানজনক মৃত্যু এবং আখেরাতেও রয়েছে তার জন্য||| লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। এই মহাপাপী ফেরাউনের লাশ মিশরে মমি করে জাদু ঘরের আলমারিতে রেখে দেয়া হয়েছে। যাতে করে এই নরপিশাচ নিষ্ঠুর পাষাণের পরিণতি দেখে মানুষ শিক্ষা নিতে পারে।
আজ দিবালোকের মত সুস্পষ্ট যে, গোটাবিশ্ব ইসলাম তথা মুসলিম নিধনে তাদের হিংস্র দাবা জঘন্যভাবে জীবনের সর্বত্রই ছড়িয়ে দিয়েছে। ইসলামিক কর্মকাণ্ড বন্ধে তারা পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে। তাইতো শুধুমাত্র নামায আদায় করার অপরাধে ছাত্রীত্ব বাতিল হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষার্থীর!! হলের সিট বাতিল করে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়েছে অভিভাবকের কাছে!! এই না হলে মুসলিম প্রধান দেশ!!! স্বাধীনতার নামে পরাধীনতা, ভোট দেয়ার অধিকার নেই, সত্য কথা বলা যাবে না, ঘরের কোণে ধর্ম পালনে জুলুম-নির্যাতন, কদর্যপূর্ণ মিথ্যের বেশাতি করে গুণী ও প্রতিভাধর আলেমদেরকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো, এসব কীসের আলামত?
তারপরও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দুর্যোগপূর্ণ ভয়াবহ বিপদের ক্ষণে, বিচারকের রায়ের মুহূর্তের ফাঁসিকাষ্ঠে দাঁড়িয়ে, পরম নিশ্চিন্তে ভাবনাহীন নিরুদ্বেগ মানসে, মুখে দীপ্তিময় আনন্দ মিশ্রিত প্রশান্তির হাসি নিয়ে, আচরণে অকৃত্রিম নম্র বিনয়ী অভিব্যক্তি ফুটিয়ে পরম করুণাময়ের প্রতি অশেষ আস্থা এবং অসীম ধৈর্যের চিত্র আমাদেরকে অনেক কিছুই শিক্ষা দেয়। এই উত্তাল অগ্নিময় পরিস্থিতিতে মুসলমানদের ঈমানের পরীক্ষা হবে, এটাই আল্লাহ্ পাকের অভিপ্রায়। আল্লাহ্ পাকের এই পরীক্ষায় প্রমাণিত হবে আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য কার মধ্যে কতটুকু সংগ্রামী চেতনা ও কোরবানীর তামান্না আছে। এজন্যই কোরআন মজীদে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, “আম হাসিবতুম আন তাদখুলুল জান্নাতা ওয়া লাম্মা ইয়ালামিল্লাহুল্লাজিনা জাহাদু মিনকুম ওয়া ইয়ালামাসসাবিরীন”– তোমরা কি এই ভেবে রেখেছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ্ এখনো পরীক্ষা গ্রহণই করেননি, কে তোমাদের মধ্যে জিহাদকারী এবং জিহাদে কে কতখানি অটল অবিচল। (সূরা আল ইমরান)
এই ঘোষণা স্পষ্ট করে যে, জিহাদ ও জিহাদের ময়দানে অটল, অবিচল ও দৃঢ় মানসিকতা জান্নাতের পূর্বশর্ত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্বাসরুদ্ধকর এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটিই পথ আল্লাহ্র নির্দেশিত মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের সুশীতল ছায়াতলে নির্মোহ-নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। এটাই মুসলমানদের জন্য ফরয কাজ। কোর’আনের ছায়ায় যুগে যুগে নিরবচ্ছিন্নভাবে মহান নেতাদের আত্মত্যাগ, বীরত্বগাঁথা সাহসিকতা, অবিচল ঈমানী চেতনা, দৃঢ়তা ও রক্তের কোরবানী আগামী প্রজন্মের জন্য নক্ষত্রের ন্যায় উজ্জ্বল অনির্বাণ শিখা হয়ে জ্বলবে। এই মহতী ত্যাগ ও কোরবানী জান্নাতী আলোর অবদমিত শিখা হয়ে অনন্তকাল ধরে শুভ্র মেঘে প্রশান্তি ছড়িয়ে বিদূরিত করবে বিষাদের কালো ছায়া। ইনশাল্লাহ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬৮ বার পঠিত, ৫৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই সব সিলি ব্যাপার নিয়ে ব্লগারদের মত সৃষ্টিশীল মানুষেরা একে অপরের পিছনে লেগে থাকবে, আইম এ লিটল বিট শকড আপু। আমার প্রতিটি লিখাতেই কিছু অনুভূতি রেখে যেতে ইচ্ছে হয়। আমি প্রতিটি পোষ্টই পড়ি, কিছু শিখার চেষ্টা করি। আমি শব্দনীড় নামের ব্লগটিতেও লিখছি। সেখানেও অন্যান্য ব্লগারদের পোষ্টে কমেন্ট করি, এতে অন্যদের সাথে হৃদ্যতা বাড়ে, নতুন ব্লগারগণ উৎসাহ বোধ করে।
আমি এই ব্লগে লিখবার বযাপারে উদ্যম হারিয়ে ফেলছি আপুজি।
কি করা উচিত আমার? কমেন্ট করা একেবারেই কি ছেড়ে দিবো?
শ্রদ্ধেয়া সন্ধাতারা আপু! বরাবরের মতই আনেক সুন্দর লেখনী আপনার মন কে ছোয়ে গেল!আল্লাহর কাছে আপনার সহ সবার সর্বাংগীন কল্যান কামনা করছি!
ফেরাউনের আলোচনায় ইসলাম ও কোরআন শব্দের ব্যবহার আমাদের মত সাধারণ পাঠককে ভূল বুঝাবে!
আপনার মন্তব্যে মনটা শান্ত হল, ভালো লাগল। হ্যা, ইনশা আল্লাহ এরপর থেকে কারো উস্কানিমূলক মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দেখাবো না।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@ কাহাফ ভাই, আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের সাথেই আছি ইনশা আল্লাহ সবসময়। ধন্যবাদ।
অনেক ভাললাগা একটা লেখা অনেক ধন্যবাদ আপু ।
কিন্তু এরপরও তারা ঈমান আনবে না, কারণ তারা অন্ধ, মুক ও বধিরে পরিণত হয়েছে। আর তাদের অন্তর হয়েছে মোহরকৃত।
যে মুসলমান জিহাদ হতে ভয় পায়, জিহাদের কথা শুনলে যার রক্তে দোল দেয় না, হৃদয় পুলকিত হয় না, আত্মা দিয়ে ওঠে না, তার ঈমানের অবস্থা একমাত্র আল্লাই ভালো জানেন। "হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।" (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৩৮)
"মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ।"
অসাধারণ পোস্টটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহ খইর
** ছোট্ট একটা সংশোধনী, মুসা (আঃ) আল্লাহর হুকুমে লোহিত সাগর দ্বিখন্ডিত করে পাড়ি দিয়েছিলেন। নীল নদ নয়।
সুন্দর পোস্ট|
জিহাদকে যতদিন আমরা ধর্মবিধান বলে না মানব ততদিন আমাদের এ অবস্থা চলতে থাকবে|অন্নেক ধন্যবাদ আপু |যাযাকাল্লা খাইর|
আল্লাহ যেন আপনার হাতকে আর গতিশীল
করেন।
আমরা এখন জাহিলিয়াত এর যুগে ফিরে ফিরে যাচ্চি।
আপনি ঠিকই বলেছেন, অবিশ্বাস্যজনকভাবে একটি মুসলিম প্রধান দেশে কীভাবে এতসব ঘটনা ঘটছে ভাবলেও গাঁয়ের লোম শিউরে উঠে।
আপনার জন্য অন্নেক দোয়া ও শুভ কামনা রইলো।
আপনি ঠিকই বলেছেন, অবিশ্বাস্যজনকভাবে একটি মুসলিম প্রধান দেশে ইসলামের শত্রুরা দামামা বাজাচ্ছে। এতসব ঘটনা ঘটছে ভাবলেও গাঁয়ের লোম শিউরে উঠে। আমাদেরকে তাই ঘরে বসে থাকলে চলবে না। সময়োচিত পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনার জন্য অন্নেক দোয়া ও শুভ কামনা রইলো।
এই মুজাহিদ,থমকে দাঁড়াও
নিতে দাও পদদুলি,
তোমার আশায় জেগে আছি আজও
ডরিনা মিথ্যে বুলি।
তোমার কন্ঠের কোরানের বাণী
আজো বাজে মোর কানে,
হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম সবাই
ছুটিত 'প্যারেডের' পানে।
মাহফিল নয়, মহা সমুদ্র
বর্ষায় ভরা নদী,
বজ্র কন্ঠে বাতিল কাঁপিত
হারানোর ভয়ে গদী।
নাগিনী-যুগিনী মেতেছে আজি
মাতমে ফাটায় বুক,
কলিজা কাঁপানো জানাযার মিছিলে
না জানি হারায় সুখ।
হতাশা নয়, রুখে দাঁড়াও
নেই পথ পালাবার,
শহীদ কাফেলার কাফনের মিছিল
শবযাত্রা কারবালার।
অভিমানীরাও আজি ছূটেছে জিহাদে
মুখে কোরানের বানী,
রক্তাক্ত জনপদের আর্তনাদ শূনো
ঘুচাতে হবে সব গ্লানি।
তোমার শব্দে পতঙ্গের মত
ছূটে এসেছে লাখো ভাই,
হারানোর কিছু নেই জগতে
নীড় ছেড়েছে তাই।
অশ্রু নয়নে যাবেনা তুমি
চেয়ে দেখো পেছন ফিরে,
কসম(সত্বার), তোমার মুক্তি নাহলে
ফিরবোনা আর নীড়ে।
আমরা আজ আল্লাহর একত্ব ভুলতে বসেছি। আজ শির্ক করলেও তাতে কেউ বাধা দেয় না বরং উৎসাহ দেয় তাই মনেহয় আল্লাহ আমাদের উপর জালেম শাসক দিয়ে আমাদেরকে শায়েস্তার করতেছে। এটা আমার মত আল্লাহু আ'লাম।
জালিম সরকারের হাতে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অত্যাচার নির্যাতনে নিস্পেষিত বাংলা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের মাঝে চরম হতাশার
দিনে এমন সুন্দর আশার বাণী সত্যি হতাশার কালো মেঘে শুভ্র মেঘ প্রশান্তি ছড়াবে।
আমরা প্রায় হতাশ হয়ে পড়ি, এতো অনাচার অবিচার দেশে বরাজ করছে, কিভাবে কি, ভাবতেই দারুণ হতাশা পেয়ে বসে, কিন্তু যখন ভাবি আল্লাহর রাসূলের নবুয়্যত প্রাপ্তির প্রাথমিক অবস্থার কথা, দেখতে পাই, উনার চতুর পার্শ্বে অজ্ঞতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনার বিরাজ করছে, চার পাঁচ সঙ্গী নিয়ে এই ঘোর অন্ধকার দূর করা কি করে সম্ভব! কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে পড়েন নি, আশায় বুক বেধেছেন সুদিন আসবেই, অনঅ্যাায় অপশক্তি পরাভূত হবেই। হয়েছেও।
যাই হোক, আপু লিখাটি অসম্ভব ভাল লেগেছে, এতো ভাল কেমন করে লিখেন!!!! খুব ইর্ষা হয় আপনাকে।
দোয়া করবেন আপনার মত করেই যেন লিখতে পারি।
শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিলাম, নিতে ভুলবেন না কিন্তু!
মন্তব্য করতে লগইন করুন