কুসুমিত জীবনের পথরেখা অঙ্কিত করে চলে গেলে তুমি
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৬ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:১৫:৫৪ রাত
ভোরের মায়াবী নরম আলোয় ও হৃদয় জুড়ানো মৃদুমন্দ হিমেল বাতাসে নয়নাভিরাম দৃশ্যের ভিতর দিয়ে হেডফোনে আমার প্রাণপ্রিয় মানুষের কণ্ঠে কোরআন তেলোওয়াত শুনতে শুনতে কর্তব্যকাজের দিকে যাচ্ছিলাম। সাথে প্রাত্যহিক খবরের কাগজে চোখ বুলানো। পথে বের হলে যা আমার কম বেশী নিত্যদিনের অভ্যাস। হঠাৎ একটি খবরের দিকে আমার দৃষ্টি আটকিয়ে গেলো। শিরোনাম “স্মাইলিঙ মারটার এইজড টেন”। রুদ্ধশ্বাসে পড়ে ফেলি। সিরিয়ার এই দশ বছর বয়সী শহীদ বীর যোদ্ধার নাম আবু উবায়দাহ। কিন্তু ততক্ষণে হৃদয়ে বিদ্যুতের চমক অনুভব করলাম। ভিতরে বয়ে যাচ্ছিল ঝড়ের তাণ্ডব। গাল বেয়ে বর্ষণ শুরু হল আমার। হাজারো প্রশ্ন বিঁধতে থাকলো বুকে। কেননা দেশে দেশে মুসলমানদের জন্য আজ বড়ই দুর্দিন ও বদনসীব যে তারা আজ অন্যায় মোকাবিলায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় জিহাদ ও শাহাদতের তামান্নাকে কবরস্থ করে, আল্লাহ্র পথে জান ও মাল দেয়ার পরিবর্তে তসবী ও জায়নামাযকে নাজাতের অসিলা বানিয়েছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়, গর্হিত ও নিকৃষ্ট পন্থা।
এমনি ক্ষণে নির্ভীক মুজাহিদের এই অতুলনীয় অনুপম ত্যাগ ও গৌরবদীপ্ত জীবন উৎসর্গ বিশ্বের নামধারী মুসলমানদের জন্য এক মারাত্মক লজ্জাকর গ্লানি। যাদের ইসলাম চেতনা বিরোধী কর্মকাণ্ড গোটা মুসলিম ঊম্মাহকে নিঃসন্দেহে প্রশ্নবিদ্ধ করে, করে বিস্মিত। সরিসৃপের ন্যায় পলায়নপর সুযোগসন্ধানী এসব মুসলমানের কলঙ্কময় কর্ম শুধু অপমানজনক, অবমাননাকর বা হতাশাব্যঞ্জকই নয়, রীতিমত পশুসুলভ, বাহ্যিক ক্ষেত্রে এর থেকেও নিকৃষ্ট। ন্যক্কারজনক ঘৃণ্য মুসলমানরূপী মানুষের বিবেকের পরিবর্তনে যথার্থ শিক্ষা ও ভ্রম সংশোধনের জন্য আল্লাহ্র দ্বীনকে বিজয়ী করতে এবং সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এসব ক্ষুদে অবিচলচিত্ত সংগ্রামী বীর মুজাহিদদের পদাঙ্ক অনুসরণীয়, অনুকরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর আবেদনময়ী এবং হৃদয়স্পর্শী ঈমাণী চেতনা ও চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হল সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম কিতাব আল কোরআন এবং শ্রেষ্ঠতম দ্বীন ইসলাম আর শ্রেষ্ঠতম মানুষ মোমেন মুসলমান। এটাই প্রকৃত মোমেনের ঊজ্জ্বলতম উত্তরাধিকারের গর্বিত আত্মপরিচয়। তাইতো খন্দক, তাবুক, হুনাইন, কাদেসিয়া এবং কারবালার প্রান্তর মুসলমানদের অধিক প্রিয় ও পৃথিবী বক্ষে চির অবিস্মরণীয় শিক্ষাপ্রদ ঘটনা।
বিশ্ব জুড়ে আদর্শের লড়াইয়ে আবু উবায়দাহ-এর এই অমূল্য সাহসী আত্মত্যাগ ইমাম হোসেন (রাঃ) এর সর্বস্ব কোরবাণীর অনন্য নজিরবিহীন ইতিহাস নতুন করে আবারও প্রাণে তাজা সতেজ ঈমান ও অদম্য স্পৃহা-স্পন্দের ঢেঊ জাগিয়ে তুললো। মনে হল যারা প্রকৃত সৈনিক আক্ষরিক অর্থে তাদের কোন বিরাম বা বিশ্রাম নেই। বয়স, স্থান, কাল এবং পাত্র তাদের কাছে গ্রাহ্য বা বিবেচ্য বিষয় নয়। ইসলামের যে শ্বাশত বাণী, মানবতা রক্ষার যে চিরন্তন অপরিহার্য দাবী সেটা সারা বিশ্বময় আবার যেন অক্ষয় অমর হয়ে জ্বল জ্বল করে নব উদ্দীপনায় জ্বলে উঠলো। যে আলোর মশাল কেউ কোনদিন নিভাতে পারেনি আর কোনদিন পারবেও না। আল্লাহ্র যমীনে হক প্রতিষ্ঠায় আবাহমানকাল থেকে সংগ্রাম প্রতিরোধ অব্যাহত আছে এবং রোজ কেয়ামত পর্যন্ত চলবেই ইনশাল্লাহ।
অকুতোভয় মুজাহিদ আবু উবায়দাহকে ইসলামিক ওয়েব সাইটে একজন সর্বকনিষ্ঠ জ্বিহাদী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যে তাঁর বাবার সাথে যুদ্ধে শরীক হয়েছিল। মৃত্যুর কিছুক্ষণ পূর্বে তোলা তাঁর হাসিমাখা ছবিটি যেকোন পাষাণ হৃদয়কেও স্পর্শ করে। যা খুবই হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক ও অপ্রত্যাশিত। কিন্তু আকস্মিক বা অস্বাভাবিক নয়। যে নিজেই আনন্দচিত্তে রণে অবতীর্ণ হয়েছিল। জিহাদের ময়দানে এই অকুতোভয় মুজাহিদের অনিঃশেষ ত্যাগ ও আত্মদানের মহিমা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় হক ও বাতিলের দ্বন্দ্বে ন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য হৃষ্ট পুষ্ট দেহের প্রয়োজন নেই, শুধু দরকার ঈমানের বলিষ্ঠতায় মহৎ কর্ম সম্পাদনের ইচ্ছা ও সুতীব্র আকাঙ্ক্ষা। কারণ মুসলমানের হৃদয়ে যুদ্ধে জয় পরাজয়ের হিসাব বিন্দুমাত্র রেখাপাত করে না। তাঁরা জানে বিজয় অর্জিত হলে তা উত্তম এবং শাহাদাত নসীব হলে সেটা আরও উত্তম। কেননা আনুষ্ঠানিক ইবাদতের ফলাফল সম্পর্কে আল্লাহ্ ও রাসূল (সাঃ) এর কোন গ্যারান্টি না থাকলেও শাহাদতের প্রাপ্তি জান্নাত তা অবধারিত। ইসলাম তাই আমাদের নিকট আল্লাহ্ পাকের দেয়া এক শ্রেষ্ঠ নেয়ামত, অফুরন্ত অমূল্য রত্ন ভাণ্ডার।
শাহাদতের ঐশ্বর্যের আলোকবর্তিকা এভাবেই অনন্তকাল আল্লাহ্র অভিপ্রায় বাস্তবায়নে সর্বোৎকৃষ্ট মোমেন সর্বস্ব বিলিয়ে তাই আল্লাহ্র সন্তুষ্টিই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম সাফল্য এই উত্তম পথ রেখা প্রতিটি প্রাণে প্রাণে গ্রথিত করবে (দেখুন সূরা তাওবাহ)। ইসলামের সুমহান চিরন্তন বিধান পালন করে জান্নাতি জীবনের গ্যারান্টির এটাই একমাত্র পথ, এটাই সৎকর্মশীলদের জন্য উত্তম পুরুস্কার। তাইতো তুমি আমাদের পথিকৃৎ হয়ে এই জীবনের মহতী আলো জ্বালিয়ে উত্তম পথরেখা অঙ্কিত করে চলে গেলে অনন্ত স্বর্গীয় ভূবণে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৬ বার পঠিত, ৬৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঘটনা ও আপনার বর্ণনা - দুটো ই খুব হৃদয়গ্রাহী
আল্লাহতায়ালা তাকে অতি উচ্চ মর্যাদা দান করুন
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকিল্লাহ
আপনার দোয়ায় আমীন।
"জিহাদ কেয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।"
প্রিয় নবী সাঃ এর অমীয় বানীর মনগড়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ মুসলিমদের বর্তমান অধঃপতন-অবহেলা-নির্যাতিত-নিপিড়িত হওয়ার মূল কারণ।
নিজেদের কে মেকী আধুনিক-শান্তিপ্রিয় প্রমাণের নির্বোধ প্রতিযোগীতা মুসলিমদের কে পতনের চরমে নিয়ে গেছে।
অত্যন্ত নিন্দনীয়-গর্হিত ওনিকৃষ্ট পন্হা তাসবী-জায়নামাজে নাজাতের উসিলা খোজা কত বড় বোকামী তা 'আবু য়বায়দা' চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছে।
জান্নাতের গ্যারান্টিযুক্ত অমুল্য নেয়ামত এই'জিহাদ'এর প্রকৃততা,এর প্রয়োজনীয়তা সঠিক ভাবে মুসলিমদের অনুধাবনের তাওফিক করুণাময় আল্লাহ দান করুন,এই ই দোয়া।
অসাধারণ নান্দিকতায় একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়ের হ্রদয়গ্রাহী যুক্তিক উপস্হাপনার জন্যে জাযাকুমুল্লাহু খাইরান ফিদ্ দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ.....।
আপনার মূল্যবান ও মর্মস্পর্শী দোয়ায় আমীন। সবসময় ভালো থাকবেন খুউব ভালো। অন্নেক অন্নেক দোয়া রইলো। জাজাকাল্লাহু খাইর ভাইয়া।
জাযাকাল্লাহ খাইর।
ভালো থাকবেন খুব ভালো। বারাকাল্লাহু ফিক।
খুবই প্রাঞ্জল ভাষায় হৃদয়গ্রাহী করে বিষটি তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আল্লাহপাক তাঁকে অনেক বড় মর্তবা দান করুণ। অন্যরাও এই মর্তবা লাভে এগিয়ে আসুক।
অনেক ভালো লিখেছেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভালো থাকবেন খুব ভালো। বারাকাল্লাহু ফিক।
এখনকার অনেক মুসলমান মনে হয় বাদ হয়ে যাবে ভয়ে এবং লোভে, নতুন মুসলমানরা মনে হয় শাসন করবে ভবিষ্যৎ
আপনার সুন্দর শব্দ চয়ন এবং প্রশংসামূলক উপস্থাপনায় আমার অন্তর বিগলিত।
আমাদের সকলকে বেশি বেশি করে পড়াশুনা করা প্রয়োজন। আর মুসলমান পড়াশুনা না করলে মুসলমানিত্ব থাকে কীভাবে? যেখানে আমাদের রাসুল (সঃ) এর ওপর আল্লাহর প্রথম নির্দেশ, পড়...। যাক, আমরা বেশি করে পড়লেই সব ভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকতে পারব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝে শুনে সহীহ আমল করার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
আপনার দোয়ায় আমীন।
তোমার দোয়ায় আমীন। বারাকাল্লাহু ফিক।
লিখাটি পড়ে আমার মত অনেকের মাঝে কিছু সময়ের জন্য হলেও শাহাদাতের তামান্না জেগে উঠেছে সন্দেহ নেই। অনেক ধন্যবাদ আপু, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন।
আজ একদিকে মুসলমানরা পৃথিবীর বুকে নির্যাতিত অন্যদিকে কিছু মুসলিম বিলাসী জীবন যাপনে লিপ্ত! অথচ তারা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে পৃথিবীর বুকে কোন ইহুদির সাহস হত না মুসলিম নিধনের।
কেমন আছেন আপুনি?
আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার বর্ণনা খুবই চমতকার।
আপনার জন্য রইলো শ্রদ্ধামিশ্রিত অন্নেক অন্নেক দোয়া। ভালো থাকবেন খুব ভালো। জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন