হেরিনু আমি প্রহেলিকাময় প্রকৃতির প্রেমে.........!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:২৪:০৮ রাত
এ যেন জীবনের স্বপ্নময় স্বর্গীয় মুহূর্ত আমার! অসীম মুগ্ধতায় বার বার কেবলি মনে হচ্ছিল মহান রব তাঁর প্রাচুর্যমণ্ডিত মনোহরী শোভায় অকৃত্রিম মায়াভরে এ পৃথিবীকে ঢেলে সাজিয়েছেন, সোবহান আল্লাহ! সুইজারল্যান্ডসহ অনেক দেশ ভ্রমণ করার সৌভাগ্য আমার রব আমাকে দিয়েছিলেন কিন্তু সেখানকার সেই মোহিত করা সৌন্দর্যগুলো আমার হৃদয়ে এমনিভাবে রেখাপাত করেনি। যা চর্মচক্ষু ও অন্তর দৃষ্টি দিয়ে অবলোকন না করলে ভাষায় রূপায়িত করা সম্ভব নয়। আমার মালিক যে কত সুন্দর, কত দয়াবান-মেহেরবান তা ভেবে ভেবে তন্ময় হয়ে যাচ্ছিলাম আমি।
আমার মহান রব বসুমতীর বুকে মনের মাধুরী মিশিয়ে গেঁথে গেঁথে বসিয়েছে অলৌকিক স্বপ্নাবিষ্ট সৌন্দর্যমণ্ডিত মুক্তার হাজারো দানা। দক্ষ কারিগর তাঁর সুনিপুণ সৃষ্টির রূপ নিখুঁতভাবে ঢেলে দিয়েছেন নয়ন মোহিত করা মাধুর্যে। এযেন পলকে পলকে সৌন্দর্যের পলকহীন প্রলয়। সাজানো গোছানো পরিপাটি উদ্যান ভরপুর এক বিস্ময়কর সৃষ্টিরূপে। এযেন প্রকৃতি নয়, এযেন পাতালপুরীর স্বর্গরাজ্যের মায়াময়ী লাস্যময়ী নিস্পাপ এক অপরূপা কিশোরী বালিকা। আহা...!! একই অঙ্গে এতো রূপ!!
কয়েক পরিবারের সদস্য মিলে বিশাল এক দল স্কটল্যান্ডের হাইল্যান্ডে বেড়ানোর পরিকল্পনা করে পূর্বেই হোটেল বুক করা হয় সেখানে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা জায়গাটিতে রাত কাটানোর পরিকল্পনা নিয়ে বাসা থেকে বের হই আমরা।
কিছুদূর যেতেই চোখে পড়লো পাঁচ-ছয় মুখী সুদৃশ্য আঁকা বাঁকা সাজানো পথের আকর্ষণীয় মনোমুগ্ধকর বিলাসী স্বপ্নের রাস্তাগুলো। একই সাথে পথের দু’ধারে প্রাণোৎসর্গ করা বিভিন্ন বাহারি রঙের গাছ গাছালী। একেকটি গাছের রূপ, সৌন্দর্য ও মাধুর্য একেক রকম। তার সাথে মিলেমিশে আছে ঘন সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা প্রকৃতির প্রাণবন্ত উপস্থিতি। আর স্থির থাকতে পারলাম না আমি। সাথে সাথে হাতে কলম তুলে নিলাম।
ঝলমলে রোদ। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সাদা শত শত সুখী মেষগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল সবুজ কাননে ফোটা সদ্য শুভ্র গোলাপ। আবার কোথাও সাদা কালো ডোরা কাটা ঘোড়ার পাল। আবার কোথাও বা ভিন্ন জাতের স্বাস্থ্যবান প্রাণীগুলো প্রাণের উচ্ছল আনন্দে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতিও তাদেরকে আনন্দদানে ব্যস্ত। অবিশ্বাস্য সত্যিই অবিশ্বাস্য!
প্রাণসঞ্চার করা অসংখ্য লেকে রাজহাঁসগুলো কেমন যেন আহ্লাদী হয়ে পৃথিবীর সব সুখ ভোগে মত্ত। সাথে ছুটে চলেছি আমরাও প্রান্তরের পর প্রান্তর। এযেন সত্যিই এক অতুলনীয় প্রান্তস্পর্শী অনুভূতি। যা শুধু অনুভব করা যায় ভাষায় রূপায়ন করা যায় না।
আমার মহান রব যে ভাষাতীত সৌন্দর্যপ্রিয় তা মনের গহীনে আরেকবার অনুভব করলাম। প্রলুব্ধতার প্রলেপ আলপনা এঁকে যাচ্ছিল অবিরত এ হৃদয়পটে। প্রলম্বিত ভ্রমণ শেষে মনটা বার বার প্রলোভিত হচ্ছিল আর একটু সময় ক্ষেপণের জন্য। প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউ প্রশান্তি ঢেলে হৃদয়কে করেছিল প্রশস্ত, প্রশমিত। প্রফুল্লিত পর্বত মালার সাথে অজস্র ছোট ছোট পানির নহর বা জলপ্রপাত যা অবিরামভাবে ভালোবাসার শুভ্রতা ছড়িয়ে দুধের মত ধবধবে পানি উজাড় করে দিচ্ছিল সাগর বক্ষে। প্রপাত রেখাগুলোর এযেন এক মহা মিলন মেলা। জীবন্ত প্রাণের প্রবাহ। প্রবাহিত জল স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টার অনিঃশেষ অনুপম সৃষ্টির অপরূপ কৌশল।
পর্বতশৃঙ্গের চূড়ায় মাঝে মাঝে গড়ে উঠেছে সৌখিন মানুষের বাস। কোথাও দু’একটি নয়নাভিরাম বাংলো গড়ে উঠেছে। পর্যটকগণ ক্যারাভান এবং তাবু টানিয়ে উপভোগ করছে উদার ধরিত্রীর স্বর্গীয় সুধা। এ প্রদীপ্তির বিমোহিত করা আনন্দঘন চিত্তাকর্ষক দৃশ্য সত্যিই অভূতপূর্ব।
আবার কোথাও বিশাল পর্বতমালাকে বুকে জড়িয়ে আছে আকাশের মেঘমালা। এ এক অবিশ্বাস্যকর অভিজ্ঞতা। অন্তরাত্মা দিয়ে অনুভব করলাম এই ছোট্ট দু’টি আঁখি কত বিশালত্বকে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে আলহামদুলিল্লাহ্। পারলৌকিক জগতের কথা ভেবে ভয়ে এবং আশায় আরও বেশী আবেগপ্রবণ তথা রোমাঞ্চিত হলাম। মনের প্রশস্থতার মাঝে আমার প্রভূর আসমানী অকৃপণ দান, কে যেন আমার দেহে মনে সুখানুভূতির আবেশ ছড়িয়ে দিলো। যিনি আমাকে আশ্রয় প্রশ্রয় দান করেছেন। যিনি দাতা, মহাদাতা। ভালোলাগার উষ্ণতার প্রসূপ্তি তাই সীমানা বিহীন। পবিত্রতম প্রাঞ্জলতায় ভরা। মাইলের পর মাইল জুড়ে উঁচু উঁচু পাহাড়ের কোল ঘেঁষে মিশে আছে শত শত নানান জাতের বিশাল বিশাল কারুকার্যময় গাঢ় সবুজ গাছের নয়নাভিরাম দৃশ্যের অপূর্ব সমাহার। কতবার মনের অজান্তে সোবহান আল্লাহ-সোবহান আল্লাহ বলেছি মনে নেই।
মাঝে মাঝে প্রকৃতিকে প্রশ্ন করেছি হে প্রিয়দর্শীনী, তুমি এত্তো সুন্দর কেন? মহান সৃষ্টা তোমার হৃদয়োচ্ছ্বাস উপভোগ করার জন্য আজ আমাকে তাঁর অপার করুণায় সিক্ত করেছেন। আজ আমি সত্যিই প্রীত, ধন্য, সার্থক ও কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে। হে যাদুময়ী নান্দনিক প্রকৃতি তুমি আজ আমাকে তোমার প্রেমপূর্ণ সৌন্দর্য দিয়ে ভিজিয়ে দিলে, আবদ্ধ করে রাখলে চির প্রেমবন্ধনে। বিদায়ের ক্ষণে প্রীতিভরে প্রেমময়ীর জন্য তাই রেখে গেলাম আমার প্রেমাকাঙ্ক্ষী আন্তরিক প্রীতি সম্ভাষণ। যুগে যুগে মানবকূলে আমার মহামহিম পরয়ারদেগারের বিস্ময়কর সৃষ্টির মাহাত্ম্য মানুষের আত্মিক ভাবনাশ্রিত অনুরাগ দৃষ্টিকে উন্মোচিত করে স্রষ্টার পানে আকর্ষিত হোক এটাই প্রত্যাশিত।
“হৃদয় কেবলি হারাই হারাই
তোমার মাঝে প্রভূ গো সদাই।
হে দয়াবান, তুমি সুন্দর
সৃষ্টি তোমার কতো মনোহর”।
বিষয়: বিবিধ
১৯৩০ বার পঠিত, ৫০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভিশু ভাইয়া আমার শৈশব মনে হয় আপনার পছন্দ হয়নি, তাইনা?
অনেক ধন্যবাদ
"তোমরা ভ্রমন কর আর দু'চোখ মেলে মহান রবের সৃষ্ট অনিন্দ্য সৌন্দর্য্য-শক্তিমত্বা উপলব্ধি কর।"
ঐশী নির্দেশনার আওতাভুক্ত সুন্দর অর্থপূর্ণ একটি 'সফর' অসাধারণ বর্ণনাশৈলী ও আকর্ষণীয় চিত্রের মাধ্যমে জীবন্ত ফুটে উঠেছে।
সুবহানাল্লাহ-আলহামদুলিল্লাহ বলার সাথে সাথে লেখকের সুস্হ্যতা-দীর্ঘায়ু কামনা করছি মহান রবের কাছে,আমিন।
সুন্দর লিখাটি মন ছুয়ে গেলো।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার প্রপিক কি বদলিয়েছেন ভাইয়া?
ভালো বলেছেন।
তোমাদেরকে আসলেই কেন জানি অনেক মিস করি হ্যারি । ভালো থেকো সবসময় মাই লাভ্লি সান। তোমার জন্য অন্নেক অন্নেক দোয়া ও প্রাণভরা শুভেচ্ছা রইলো। জাজাকাল্লাহু খাইর।
আপনার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় সিক্ত হলাম। অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানবেন। দেশে যাওয়া আসার পথে কখনো ইংল্যান্ডে ট্রানজিট নিলে যাব ইনশা আল্লাহ্। জাযাকাল্লাহ আপু। দোয়া করবেন।
আপনার অনুপমেয় প্রতি-উত্তরটি মনকে ছুঁয়ে গেলো!
হ্যা, আমার নিজের ছবিই দিয়েছি এবার। এটিই প্রোপিক হিসেবে চলবে ইনশা আল্লাহ।
ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা আপনাকে।
জাজাকাল্লাহু খাইর।@ সন্ধ্যাতারা
মন্তব্য করতে লগইন করুন