“দুঃখ বিলাসী মনে, শান্তি অন্বেষণে”
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৪ আগস্ট, ২০১৪, ০২:৩৭:৫০ দুপুর
মানুষের জীবন বৈচিত্র্যতায় ভরা। প্রতিটি মুহূর্তে কী ঘটতে যাচ্ছে এক অন্তর্যামী ছাড়া আর কেহই জানেন না। জীবনের পরতে পরতে মিশে থাকে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, ভাল-মন্দের নানান সমাহার। কোন মানুষই বিপদ-আপদ বা অন্তহীন সমস্যার বাহিরে নয়। আর এই শত সমস্যার ভীড়েই আমাদের নিরন্তর পথচলা। কিন্তু আমরা অনেকেই অপ্রত্যাশিত এসব প্রাপ্তি মোকাবিলায় প্রস্তুত নই বলে কোন ছোট-বড় সমস্যা সামনে উপস্থিত হলেই সুষ্ঠু সমাধানের চিন্তা বাদ দিয়ে কষ্টে-শোকে ঝরা পাঁপড়ির মত ঝরে পরতে থাকি। দুঃখ বিলাসী বিষণ্ণ মনকে আঁকড়ে ধরে জীবনকে করে তুলি মরুভূমি, বিষাদময়। যা অর্থহীন। সুস্থবিবেক বা সুচিন্তাপ্রসূত তো নয়ই, নয় মানবিক দৃষ্টিবোধ সম্পন্ন। এতে ব্যক্তি জীবন যেমন আক্রান্ত হয় তেমনি নষ্ট হয় পারিবারিক ও সামাজিক জীবনও। আমার এক প্রিয় মানুষের দুঃখপূর্ণ অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যথিত অনুভূতি নিয়ে তাই আজকের এই লিখার অবতারণা।
আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে একদিন লং ড্রাইভে যাচ্ছিলাম আর পথে তার অভিজ্ঞতার কথা শুনতেছিলাম। সে বলল, একদিন আমার প্রচণ্ড মন খারাপ। রাস্তায় একাকী হাঁটছিলাম না পাওয়ার বেদনা নিয়ে। পথে হঠাৎ চোখে পড়লো এক সুদর্শন মানুষ তার দু’টি পা নেই। ছোট্ট একটি হুইলয়ে বসে সেও পথ চলছিল একাকী। মুখে তাঁর সুখ আর আনন্দের তৃপ্তি। আমি সমবেদনা জানাতে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই ক্যামন আছেন? সে উত্তরে প্রশান্তিভরে উচ্চারণ করলো আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক ভালো। পোষ্ট বড় হবে তাই বিস্তারিত লেখা সম্ভব হল না। আমার প্রিয়জন জানালো, আমি তার উত্তরে লজ্জাবোধ করলাম এবং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে মনে মনে ক্ষমা প্রার্থনা করলাম। নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হোল আমার। এজন্য যে আল্লাহ্ আমাকে সুন্দর সাজানো সংসার, বাড়ী-গাড়ী, অর্থবিত্ত দেয়া সত্ত্বেও তুচ্ছ একটি কারণে আজ বেশ কিছুদিন যাবত মনের ভিতরে অহেতুক কষ্ট বয়ে বেড়াচ্ছি। নিজেকে এবং পরিবারকে কষ্ট দিচ্ছি!! সুতরাং আমি মনে মনে তওবা করে আনন্দ চিত্তে বাসায় ফিরে গেলাম।
প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব জীবনবোধ আছে, আছে চিন্তা-ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। তবে জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া পূর্ণ হবে এটা যেমন ভেবে রাখা অনুচিত তেমনি না পাওয়ার বেদনায় পুরো জীবনটাকে অভিশপ্ত বা বেদনার্ত করারও কোন মানে হয় না। যারা সাধ্যের চেয়ে বেশী প্রত্যাশা করে না, অল্পে তুষ্ট থেকে জীবনকে জীবন দর্পণে সংজ্ঞায়িত করে তারা চলার পথে কখনও হোঁচট খেলেও সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে অপ্রতিরোধ্য বাসনায় সম্মুখপানে এগিয়ে চলে। নব উদ্যম-উদ্দীপনায় জীবনকে সাজাতে থাকে অদম্য স্পৃহায়। আর এরাই হয় বিজয়ী, সফলকাম।
জীবন চলমান বহতা নদীর মত। আমাদের সময়টা খুবই মূল্যবান। তাকে অযত্নে অবহেলায় অবজ্ঞা করা উচিৎ নয়। কারণ যে সময়টা চলে যাচ্ছে তা শত চেষ্টা করলেও আমরা আর ফিরাতে পারবো না। তুচ্ছ কারনে-অকারনে তাই অহেতুক সময় নষ্ট করা অপ্রীতিকর অনাকাঙ্ক্ষিত। যারা শান্তিময় জীবন দর্শনের প্রত্যাশী তাদের উচিৎ শান্তি বিনষ্টকারী বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা বিষয়কে সুন্দর মন নিয়ে মোকাবিলা করা। আর তা সম্ভব না হলে কৌশলে এড়িয়ে চলা। জীবনের প্রতিটি কাজ এবং ফলাফলের পরিণামসমূহ বিশ্লেষণ করে সেখান থেকে উত্তম শিক্ষা গ্রহণ করা। সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ্র উপর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল রেখে, উচ্চ মাত্রার ধৈর্য, সংযম, ত্যাগ ও সবর অবলম্বন করে সকল প্রতিকূলতা মাড়িয়ে অকুতোভয় বীরের মত সামনে এগিয়ে চলা। নিখাদ নির্মল ও অফুরান সুখ-শান্তির সুবাতাস তাঁদেরই অপেক্ষায়......।
বিষয়: বিবিধ
২৫২১ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে যখন দেখি আমার চেয়ে খারাপ অবস্থানের কাউকে তখন মনে অনেকটাই শান্তনা পাই ।আলহামদুল্লিলাহ ! আল্লাহ আমাকে অনেক ভাল রেখেছেন ।
সত্যি লেখা অনেক ভাল হয়েছে আপু ।
বরাবরের মতই তোমার অনিন্দ্য সুন্দর ও অনুপ্রেরণা জোগানো মন্তব্য আমার খুবই উপভোগ্য। আলহামদুলিল্লাহ্। জাযাকাল্লাহ খাইর।
পড়ে মনে সান্তবনা পেলাম,
শুকরান,
" যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার কাজ সহজসাধ্য করে দেন৷
এটা আল্লাহর বিধান যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন৷ যে আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার গোনাহসমূহ মুছে ফেলবেন এবং তাকে বড় পুরস্কার দেবেন৷ "
সুরা তালাক ৪-৫
শিক্ষা হলোঃ
এই উপদেশটি যদিও সবার জন্য এবং মানবজীবনের সব পরিস্থিতিতেই তা প্রযোজ্য । মুসলমানদের এ মর্মে সতর্ক করা হয়েছে আল্লাহ করানে যেসব নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা পালন করতে গিয়ে দায়িত্বের যত বড় বোঝাই আমাদের ওপর াসুক না কেন আল্লাহর ভয় মনে রেখে সর্বাবস্থায় তা মেনে চলতে হবে ইনশাল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের সকল কাজ সহজ করে দেবেন, আমাদের গোনাহ মাফ করবেন এবং আমাদেরকে বড় পুরস্কার দান করবেন ।
আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহর নির্দেসমূহ পালনের উদ্দেশ্যে যে বোঝা বহন করা হবে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হলো, তিনি মেহেরবানী করে সে বোঝা হাল্কা করে দেবেন এবং তার বিনিময়ে এত বড় পুরস্কার দেবেন, যা দুনিয়ায় বহনকৃত এই ক্ষুদ্র বোঝার তুলনায় অনেক অনেক বেশী মুল্যবান হবে ।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
অনেক অনেক শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন