“ভালোবাসা” বাঁচতে জানে...... (এক রমযানের অনুভূতি)
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৫ জুলাই, ২০১৪, ০৯:১০:০৭ রাত
পবিত্র ঐশ্বর্যময় “ভালোবাসা” একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দের নাম যা প্রত্যেকটি নর-নারী তাঁর জীবনে আকাঙ্ক্ষা করে। প্রকৃত ভালোবাসা বাঁচতে এবং বাঁচাতে শিখায়। জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী করে তুলে। কল্পিত সুখের বাহারি রঙের প্রজাপতিগুলো ভাবনার আকাশে ডানা মেলে উড়তে থাকে। জীবনের সমস্ত গ্লানিকে মুছে দিয়ে সুখানুভূতির স্পর্শে ভরিয়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। আশা সঞ্চারণে উজ্জীবিত করে। এই বিশুদ্ধ ও বিস্বস্থ অনুভূতির নাম ভালোবাসা। মানুষ ভালবাসাকে নিবিড়ভাবে আঁকড়িয়ে গড়ে তোলে স্বপ্নের প্রাসাদ। আবার কেউবা কুঁড়ে ঘরে গড়ে তোলে স্বর্গ সুখ। সেই স্বর্গীয় চাঁদের হাসি ম্লান করে দেয় সবকিছুকে।
এরূপ স্বর্গীয় আলোর আভা আমার জীবনে এনে দিয়েছিল বড় একটা প্রাপ্তি। সুসংবাদ পেয়ে কেন জানিনা সাথে সাথেই আমার মনের কোণে একজনের মুখ ভেসে উঠলো। মনে হল এই প্রাপ্তি তারই দোয়ার বরকতে দয়াময় আমাকে দিয়েছেন। আসুন তাহলে ঘটনাটা একটু জেনে নিই। আমি জানি ভালো কাজের কথা শেয়ার করলে নেকী অনেক কমে যায়, তারপরও নিয়্যতের উপর সজাগ দৃষ্টি রেখে আপনারদের মাঝে শেয়ার করা, অসংখ্য স্মৃতির একটি।
আমি তখন শাহবাগে থাকতাম। এক রমযান ঈদে কেনাকাটার উদ্দেশ্যে গাউছিয়া যাবো। শাহবাগ মোড়ে রিক্সা খুঁজছিলাম। হঠাৎ দৃষ্টি পড়লো এক কঙ্কালসার বয়োবৃদ্ধ রিক্সা নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। পড়নে তাঁর শত ছিন্ন তালি দেয়া একটি জামা। আমি কাছে গিয়ে বিনয়ের সাথে বললাম, চাচা আপনি এই শরীর নিয়ে আমাকে টানবেন কী করে? চাচা আকুতি জানিয়ে বললেন, মা আমার রিক্সায় কেউ উঠতে চায় না। আপনারা আমার রিক্সায় না উঠলে আমার পরিবারতো অনাহারে থাকবে...।
তাঁর কথা আমার বুকের ভিতরে একটা প্রচণ্ড ধাক্কা দিল। মুহূর্তেই বোধোদয় হল আমার। আমি সাথে সাথে রিক্সায় উঠে চাচাকে বললাম, চাচা আপনি আস্তে আস্তে চালান। কষ্ট হচ্ছিল ভিতরে। এরপর চাচার কাছে জানতে চাইলাম কেন তিনি বৃদ্ধ বয়সে রিক্সা চালান?! চাচা একে একে তাঁর জীবনের অনেক কাহিনী বললেন। সেইসাথে জানালেন, সংসারে তাঁর আদর্শ স্ত্রী ও এক কন্যা রয়েছে। পুত্র সন্তান না থাকায় তাঁকেই এ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ফুটফুটে সুন্দর মেয়েটির মেয়ে দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু টাকার অভাবে ছেলের হাতে তুলে দিতে পাচ্ছেন না। জিজ্ঞেস করলাম কত টাকা দরকার সেজন্য। বাজেট দেখিয়ে বললেন সর্বমোট পাঁচশত টাকা দরকার। কিন্তু রিক্সা চালিয়ে আমি যা পাই তাতে তো পেটেই চলে না। এতো টাকা পাবো কোথায়?
ততক্ষণে আমি গাউছিয়ায় পৌঁছে গেছি। টাকা বের করার আগেই চাচার অনুরোধ আমি যেন বাজার শেষে ওনার রিক্সাই আবার শাহবাগে যাই। দেরীতে অসুবিধা নেই তাঁর! মুখের দিকে তাকিয়ে না বলতে পারলাম না। বাজারে প্রবেশ করে কেন জানিনা অস্বস্তিবোধ হচ্ছিল। তাড়াতাড়ি অল্প কেনাকাটা সেরেই একই রিক্সায় আবার শাহবাগে পৌঁছালাম। রিক্সা থেকে নেমে ওনার হাতে যখন আমি নতুন একটি পাঁচশত টাকার নোট দিলাম, চাচার সেই মুহূর্তের অভিব্যক্তি আজও আমার স্মৃতিতে ভাসে। ওনার উদ্দীপ্ত চোখ, দ্বীপ্তিভরা হাস্যজ্জ্বোল মুখখানি কখনই ভুলবার নয়। অনেক দোয়া করতে করতে বললেন আল্লাহ্ পাক আপনাকে আমার জন্য ফেরেস্তা করে পাঠিয়েছেন।
বৃদ্ধ বয়সেও চাচার উদ্দ্যমী মন, বেঁচে থাকার সাহসী প্রত্যয়, স্বপ্নসুখের অনুভূতি আর প্রাণের জৌলুস দেখে আমি থমকে দাঁড়াই। প্রিয়তমা স্ত্রী আর মমতাময়ী কন্যার জন্য ওনার গভীর ভালোবাসা আর স্নেহের নির্মল আকুতি ও অনিঃশেষ অনুভূতি আমাকে অনেক কিছু দেখিয়ে দিল এক পলকেই। বাসায় এসে ভাবছিলাম পৃথিবীর সহজ সরল প্রাণ এসব অল্পে তুষ্ট মানুষদের কথা। কত সুন্দর, কত স্নিগ্ধ তাদের চাওয়া পাওয়া। আর হৃদয়ে হৃদয় রেখে অনুভব করলাম আসলেই ভালোবাসা, বাঁচতে জানে...।
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৪ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গোপনে দান করা ভালো তবে মানুষকে অনুপ্রানীত করতে প্রকাশে দান করতেও কোন অসুবিধা নেই! আল্লাহ আপনার দানকে কবুল করুন!
আমিন!
শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, অনুপ্রাণিত হওয়ার মত একটি লেখা।।
প
মন্তব্য করতে লগইন করুন