মনের গহীনে স্বপ্নের কলিরা মনের গহীনে স্বপ্নের কলিরা
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২২ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৩২:১৫ রাত
হৃদয়ের আঙিনায় স্বপ্নের বীজ কচি লতাপাতায় বিকশিত হতো মনের অজান্তেই। যেখানে কলিগুলো ফোঁটার অপেক্ষায় প্রহর গুনতো দিবারাত্রি স্বপ্নহীন বেদনা বিঁধূর অনিশ্চিত জীবনের দোলাচলে। অপ্রতিরোধ্য বাসনার তীব্রতায় উদ্বেলিত হয়ে প্রথম মনের ভিতরের লুকানো অসম স্বপ্ন মালার কথা আমার মমতাময়ী জননীর কাছে তুলে ধরি। আমার কথা শেষে আমার মায়ের দু’চোখ আনন্দে চিক চিক করে উঠে কিন্তু পরক্ষণেই অপ্রত্যাশিত সমস্যার ভাবনা তাঁকে কয়েক মুহূর্ত আচ্ছন্ন করে রাখে। কিছুটা সময় নিয়ে বললো, “চিন্তাটা তো খুবই ভালো, তবে আরও সময় নিয়ে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার”।
পরবর্তীতে পরিবারের দু’একজনের মৃদু আপত্তি থাকলেও আমি পরিবারের প্রথম সন্তান হওয়ার কারণে মানসিকভাবে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে মায়ের আগ্রহে কাজ শুরু করি। বার বছর পূর্বের কথা তখন আমি দেশেই চাকুরীরত ছিলাম। তাই অতি ক্ষুদ্র পরিসরে গ্রামের শিক্ষা ও মায়া-মমতা বঞ্চিত মহিলা শিশুদের জন্য গড়ে তুলি আমার প্রাণের কানন। যেখানে অতি প্রত্যুশ্যে ছোট ছোট জান্নাতী পাখীরা এসে আরবীসহ সহী হাদীসের আলোকে ও আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের গুরুত্বপূর্ণ আদেশ উপদেশসহ করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ক আলোচনা শুনে এবং সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিঞ্চিত জ্ঞান আহরণ করে।
প্রায় আড়াই বছর আগে দেশে বেড়াতে গিয়ে স্বচক্ষে সেই স্বপ্নের কলিদের উজ্জ্বল-উচ্ছ্বল-দ্বীপ্তিময় হাসিমুখ দেখে প্রাণটা মুহূর্তেই ভরে উঠলো। এই পবিত্র তারকারাজির প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা উপস্থিতি অঙ্গনটিকে আনন্দে মুখরিত করে তুললো। যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর হৃদয় জুড়ানো। আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। এযেন আমার পরম পাওয়া। পুলকিত চিত্তে মনের মাধুরী মিশিয়ে অপার মুগ্ধতায় তাদের দিকে তাকিয়ে রই। এ এক অভিনব ভালোলাগা। হৃদয়ে বয়ে যাচ্ছিল অবারিত শান্তির ফল্গুধারা। এ এক আলোকময়-পুন্যময় পৃথিবী। মহৎ আর কল্যাণের স্পর্শে আমি শিহরিত হলাম। প্রাণভরে দয়াময়ের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম।
বর্তমানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কাজের পরিধি ও বিস্তৃতি দিনে দিনে বাড়ছে। বিকশিত হচ্ছে। আমার পরম শ্রদ্ধেয়া স্নেহময়ী মা তাঁর দরদী হাতের ছোঁয়ায় অনুপম যত্নে আর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় হৃদয়ের সবটুকু উজাড় করে আজ প্রায় বার বছর যাবত নিবিষ্ট চিত্তে অতি আগ্রহে আর মনের আনন্দে উনার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ্। আমি জানি আমাদের গ্রামে অনেক সন্মানিত বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ অতি আন্তরিকতার সাথে সম্পাদন করছেন। সে তুলনায় আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস খুবই বিব্রতকর। কিন্তু সামান্য এ কাজটুকু আমার প্রাণে যে অভূতপূর্ব তৃপ্তি আর আনন্দ ঢেলে দিয়েছে তা খুবই মহা মূল্যবান। এ আনন্দ আমি কোটি টাকা ব্যয় করেও হয়তোবা কোনদিন উপভোগ করতে পারতাম না।
সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল আমার মা একজন তালীমের মুরুব্বী উনার দায়িত্বে রয়েছে কয়েকটি এলাকা। যেখানে তিনি নিরন্তর ব্যস্ত থাকেন দ্বীনি কাজকর্মে। তা সত্ত্বেও আমার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে নিবেদিত ও নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন মমতামাখা হৃদয়খানি দিয়ে। আর প্রাণভরে উপভোগ করছেন আদরের এই কচি মুখগুলোর সান্নিধ্য। এক ঝাক বেহেশ্তী পায়রার সামনে তাঁর উপস্থিতি মাসুম হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে আনন্দমাখা অনুভব, করে তোলে তাদেরকে উজ্জীবিত, যোগায় বেঁচে থাকার প্রেরণা, জাগিয়ে তোলে শিক্ষার অপার আনন্দ, হৃদয়ে বুনে দেয় আগামী দিনের স্বপ্নের বীজ, জীবনকে করে তোলে মায়াময় মহতী। এ সত্যিই এক অপূর্ব আশা জাগানিয়া। যাদের বন্ধন মা’কে সর্বক্ষণ অতি আপনজনের মত আষ্টে পিষ্টে বেঁধে রেখেছে। তাদেরকে ছাড়া মা আমার কোথাও নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে পারেন না। তাদের কচি মনের পরশ তাঁর হৃদয়ে পূর্ণিমার দ্যুতি হয়ে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে প্রতিক্ষণে। ফোনে বা স্কাইপে মায়ের মায়াভরা মুখ ও দরদী কণ্ঠ শুনে তা আমি খুব ভাল করেই হৃদয়ঙ্গম করতে পারি। এর মূল্য ও প্রাপ্তিই বা কম কীসে। আমাদের প্রাণের মাঝের স্বপ্নের চাঁদমুখগুলো পরম আনন্দে প্রস্ফুটিত হয়ে একটু হলেও যেন আগামী প্রজন্মকে আলোকিত করতে পারে, সুঘ্রাণ ছড়াতে পারে, এই সুবাসিত মুহূর্তের জন্য সকলের কাছে শুভ কামনা ও দোয়া প্রার্থনার অনুরোধ রইলো। সেইসাথে আমার মহিমাময় প্রভূ সকলকেই ভালো রাখুন, শান্তিতে রাখুন এই প্রত্যাশা। আমীন।
সুপ্রিয় সন্মানিত পাঠক/পাঠিকাবৃন্দ অনুগ্রহপূর্বক এই লিখাটিকে আমার ভাল কাজের ফিরিস্তি কিংবা নিজেকে জাহির করার মানসিকতা বলে ভাববেন না দয়া করে। আমার মহান প্রভু জানেন আমি কি নিয়্যতে আজ এই লিখাটি লিখলাম। যিনি আমার অন্তর্যামী, একমাত্র অভিভাবক এবং আশ্রয়দাতা।
বিষয়: বিবিধ
১৫৯১ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মূল পোস্টটি পাঠের সময় যেই বেহেশতী আবহে শরীর মন ছেয়ে গিয়েছিল, শেষের এ অংশটুকু পাঠে সেই অনুভূতিটায় একটা বিশাল ধাক্কা খেল। কারণটা আপনার সরল মনের আশংকার গহীনে নিহিত সত্যটুকু - আমরা বাংলাদেশীরা আসলেই একটা ক্রিমিনালের জাত। মানে সবাই না, আবার অনেকেই।
আমি কিন্তু আপনার নিয়্যত সম্পর্কে খুবই সচেতন। এবং আপনার এবং খালাম্মার এই মহতী উদ্যোগের কথা এবং তার ফলাফল সম্পর্কে জেনে মনে মনে খুবই হিংসে হচ্ছে এই ভেবে যে, আপনি দেশ/সমাজের জন্য ক্ষুদ্র থেকেই বেশ বড় একটা কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন, দিতে পেরেছেন, আর আমাদের মাঝে অনেকেরই সেই ক্ষমতা থাকলেও সঠিক প্ল্যান, চিন্তা আর মননের অভাবে তা করা সম্ভব হয় নি। আল্লাহ আমাদেরকেও এমন মহত কাজের ভাগীদার করুন, তাঁর দরবারে দুহাত তুলে এই প্রার্থনা করছি। আল্লাহ আপনাকে ও আপনার মহিয়সী মাতাকে হায়াতে তৈয়্যেবা দান করুন, আমিন।
কিন্তু সাহিত্যের মাধুর্যের অতিরন্জন মাঝে মাঝে কেমন যেন খাপ ছাড়া মনেহয় ! যেমন, প্রান প্রিয়, পুজারী ইত্যাদি শব্দগুলো সবস্হানে ব্যবহার করতে হয়না ।
আমার অনেক দিনের পরিকল্পনা আল্লাহ তাওফিক দিলে আমি একটা বড় দ্বীনি শিক্ষা কমপ্লেক্স করতে চাই। যেখানে বহুমুখী শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষা এবং কুরআন ও হাদীস নিয়ে গবেষণা হবে, থাকবে প্রকাশনা বিভাগ এবং দাওয়াতি বিভাগ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু আলেম ব্যক্তিদের সাথে কথা হয়েছে, উনাদের শুধু সমর্থনই নয়, সাথে থাকতে রাজী আছেন। এ বছরই শুরু করার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু কিছু প্রতিবন্ধকতার জন্য পিছিয়ে গেল। আগামী বছর থেকে ইনশাআল্লাহ কাজ শুরু হবে। সকলের দোয়া চাই। আপনাদেরকেও দাওয়াত দিব ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ আপনাকে ও খালামনিকে এর উত্তম প্রতিদান দান করুন দুনিয়া ও আখিরাতে ।আমীন
জাজাকিল্লাহ খাইর
মহান আল্লাহ আপনার প্রচেষ্টাকে কবুল করুন আমিন ,,আপনার প্রচেষ্টায় যেন বাগানের ফুল সমাজে মিষ্টি বাতাস চড়িয়ে দেয়,,আমিন
আমরা কেহই জানিনা আল্লাহ্ পাক কাকে কীভাবে পুরুস্কৃত কিংবা ধিকৃত করবেন। আপনার অন্তরের অনুতাপ-অনুশোচনা মহান রবের প্রতি আপনার অধিক ভীতি ও মানবীয় গুণের বহিঃপ্রকাশ। আমরা সবাই সবার জন্য মহান রাব্বুল আলামীন দরবারে মিনতি জানাই তিনি যেন আমাদের সকলকেই উত্তম প্রতিদান দেন। আমরা সকলেই যেন একই জান্নাতী সুদৃশ্য ক্যারাভানে অনন্তকাল থাকতে পারি।
জ্বী ভাইয়া আড়াই বছর পূর্বে বেড়াতে গিয়েছিলাম দেশে। আপনার জন্য দাওয়াত রইলো আমার ছোট্ট কুটীরে। কখনও ইংল্যান্ডে আসলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না যেন। ছোট্ট দাবী রইলো আপনার কাছে। আপনি কোথায় আছেন? আপনিসহ পরিবারের সকলের জন্য ছালাম ও অনিঃশেষ দোয়া রইলো। জাযাকাল্লাহ খাইর। রমজানুল মোবারক।
সাবিক্বু ইলা মাগফিরাতুম্ মিররাব্বিকুম ইলাল জান্নাহ... > > >
আপনার কি দেশে থেকে মায়ের সাথে এই কাজ করার ইচ্ছা ও সামর্থ্য ছিল ? আপনি বছরান্তর এখানে বেড়াতে আসতেন আর ফোনে , স্কাইপেতে খবর রাখতেন , কিসে আপনাকে বাঁধা দিয়েছিল যেটা আপনারই স্বপ্ন ছিল সেটা মায়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পূরণ করা হতে ?
'' তাই অতি ক্ষুদ্র পরিসরে গ্রামের শিক্ষা ও মায়া-মমতা বঞ্চিত মহিলা শিশুদের জন্য গড়ে তুলি আমার প্রাণের কানন। ''
০ শুধু বঞ্চিত মহিলা শিশুদের প্রতি খেয়াল করলেই কি হবে ? জান্নাতি পাখি কি শুধু তারাই হতে পারে ?
এতিম তো ছেলে শিশুরাও হয় !
মন্তব্য করতে লগইন করুন