সাঁঝের ঝরা পাতা: রমাদানের আবেদন
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৭ জুলাই, ২০১৪, ০৮:১৯:২৬ রাত
অতীত স্মৃতিগুলো কাঁটার মত হৃদয়ে বিঁধছে। ক্ষত-বিক্ষত হৃৎপিণ্ডে রক্ত ঝরছে অবিরত। প্রচণ্ড জর গাঁয়ে নিয়ে জানালার পাশে বসে বাগানে সদ্য ফোটা ফুলের সুবাসে আর প্রজাপতির আন্দোলিত আনন্দিত জীবনের সাথে হারিয়ে গিয়েছিলেন মাহিয়া কিছুক্ষণের জন্য। কোমল স্নিগ্ধ বাতাস আর প্রকৃতির অপার মুগ্ধতা প্রাণে বুলিয়ে দিয়েছিল শান্তির পরশ। ক্ষণিকের জন্য সব ব্যথা-বেদনা ভুলিয়ে ভাসিয়ে দিয়েছিল তাঁকে আনন্দের অন্তহীন এক অস্পর্শীয় গহীনে। ফেলে আসা দিনগুলোর হাসি আনন্দের হাজারো স্মৃতিমালার অনুভূতির তরঙ্গে দোল খাচ্ছিলেন তিনি। জীবনের সুন্দরতম মুহূর্তগুলো চাঁদের আলোর ন্যায় তাঁর সামনে স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে। মনের কোণে উঁকি দিচ্ছে নববধূ হয়ে আমজাদ সাহেবের ঘরে প্রবেশ করার অমূল্য এক স্মৃতি। বছর পূর্তিতে একমাত্র ছেলের আগমনে কি খুশীর বার্তাই না বয়ে এনেছিল তাঁদের জীবনে। তারপর পৃথিবীর বুক আলো করে বাড়তি আনন্দে ভরে দিয়েছিল অতি আদরের নাতী এবং নাতনী। সবকিছু মিলিয়ে পরম করুণাময় তাঁকে দিয়েছিলেন অভাবনীয় এক স্বর্গীয় সুখ।
কিন্তু হঠাৎ একদিন আমজাদ সাহেব অফিসে স্ট্রোক করে পরোপারে চলে যান। এরপর স্বামী হারানোর শোকে মাহিয়ার স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে থাকে। নিজের নাড়ী ছেঁড়া রক্ত হয়ে উঠে অপরিচিত। অনাদরে, অবজ্ঞা আর অবহেলায় কাটতে থাকে জীবন। সন্তানের সংসারে হয়ে উঠেন অসহনীয় এক বাড়তি বোঝা। ধৈর্যের চরম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একমাত্র সন্তান আর নাতী নাতনীর সংস্পর্শে জীবনের বাকী দিনগুলো কাটানোর আকুতি ছিল তাঁর। কিন্তু ভাগ্যে তা জোটেনি। বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছিল বৃদ্ধাশ্রমে।
আজ বেশ কিছুদিন থেকে শরীরে প্রচণ্ড জর তাই মুখে কোন খাবার সহ্য হচ্ছে না। শরীরটা কঙ্কালসার হয়েছে। অনেকদিন আদরের নাতি-নাতনি আর একমাত্র সন্তানকে দেখেননি তিনি। মনটা ভীষণ উতলা হয়ে উঠেছে আজ। প্রিয়জনের স্পর্শের প্রত্যাশায় হাহাকার করছে বুকের ভিতরটা। এক বুক কষ্ট আর আফসোসে হৃদয়টা ভেঙ্গে চৌচির হচ্ছে। দুঃখে-অপমানে দু’চোখে ঝরছে প্রবল বর্ষণ। অবজ্ঞার অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। বৃদ্ধাশ্রমের এক পরিচিত অভাগিনী এসে হাত ধরে তাঁকে বিছানায় শোয়ায়ে দিলেন। তারপর গভীর এক নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন মহান প্রভুর সান্নিধ্যে। ইন্না লিল্লাহি.........।
সাঁঝের ঝরা পাতা ঝরে গেল বেদনার অতলান্তে। আমাদের কাছে আকুতি ভরা হাজারো প্রশ্ন রেখে.........!!!!!!!!
.............................................................................................
অথচ আল্লাহ্ পাক কোরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে মাতা পিতার অধিকার তুলে ধরে তাঁদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার জন্য গুরুত্বসহকারে তাগিদ দিয়েছেন। মাতা পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো (বনি ইসরাইলঃ ২৩)। অপরপক্ষে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় অবহেলা ও অসদাচরণের কঠিন আজাব সম্পর্কেও অবহিত করেছেন। বাবা-মার সাথে বেয়াদবি করা কবিরা গুনাহ। অন্যান্য পাপকার্যের শাস্তি কিয়ামত পর্যন্ত বিলম্বিত হলেও মাতা পিতার প্রতি অবাধ্যতা ও নাফরমানির শাস্তি আল্লাহ্ পাক জীবিতাবস্থায় প্রদান করবেন (রাওয়াহুল হাকিম, আবি বাকরা)। শিরক, মাতাপিতার অবাধ্যতা ও জিহাদ থেকে পলায়ন এই তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
উন্নত দেশগুলোতে প্রত্যেকটি মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থানের দায়িত্ব সরকারের। জীবন সায়াহ্নে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সব প্রয়োজনীয় চাহিদা ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সোশ্যাল ওয়ার্কার, কণ্টীনিউং কোয়ালিটি কেয়ার, সেইভ গার্ডিংসহ রয়েছে বিভিন্ন মনিটরিং সেল। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কোন পিতা মাতার অধিকারহরণ, শারীরিক মানসিক নির্যাতনরোধে নেই কোন আইন বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। বর্তমান সময়ের আলোকে মাতা পিতার অধিকার নিশ্চিতকরণে ইসলামী চেতনার পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে অনতিবিলম্বে সরকারী উদ্যোগ অতীব জরুরী। মহান করুণাময় সকলকেই এই পবিত্র মাহে রমযানে মাতাপিতার হক আদায় করে দুনো জাহানের মহা সাফল্য অর্জনের তৌফিক দান করুণ। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৩ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
৪ 242673 ০৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৯:২১
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন