প্রাণাধিক প্রিয়তমাকে “প্রাণদণ্ড” !!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০১ জুন, ২০১৪, ১২:৫০:২৪ দুপুর
বিচারকের মঞ্চে বসা একজন শাসকের অতুলনীয় সততা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা, ও আদর্শিক মূল্যবোধে অভিভূত হয়ে দু’চোখে আনন্দাশ্রু গড়িয়েছিল গভীর শোকে শোকাচ্ছন্ন এক অসহায় হৃত বিহ্বল পরিবারের। এই অবিশ্বাস্য শ্বাসরুদ্ধকর সত্য কাহিনী সেদিন মানুষের বিবেককে বিপুলভাবে আলোড়িত করেছিল। গোটা দেশজুড়ে সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে শুরু হয়েছিল তোলপাড়। যে রায় ইতিহাসের পাতায় আজও অম্লান হয়ে জ্বল জ্বল করে সত্য ও ন্যায়ের দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
সম্রাট আকবরের তিরোধানের পর ১৬০৫ খৃষ্টাব্দে বাদশাহ জাহাঙ্গীর ভারতের সিংহানের অধিকারী হন। যিনি প্রথম জীবনে আচার আচরণে, দেহায়বে ও বেশ ভূষায় পুরো দস্তুর ইসলাম বিরোধী ছিলেন। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে হযরত মাওলানা আহমদ মুজাদ্দিদ আলফেসানীর ইস্পাতসম ঈমানী ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে ধন্য হয়ে বাদশা জাহাঙ্গীর পরবর্তীতে ইসলামের সুশীতল স্নিগ্ধ ছায়াতলে নবজাত শিশুর ন্যায় নির্মল ও পরিশুদ্ধ জীবন লাভ করেন।
বাদশাহ জাহাঙ্গীর তাঁর প্রাণপ্রিয় মোহময়ী রূপ লাবণ্যের জীবন্ত প্রতীক সহধর্মিণী নূর জাহানকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালবাসতেন। তিনি একদিন ছিলেন নূরজাহানের খেয়াল খুশীর খেলার পুতুল। সে সময়ে বাদশাহর সাথে রাজ দরবারে নির্যাতিত অসহায় প্রজাদের সরাসরি সাক্ষাতের কোন সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে আহমদ মুজাদ্দিদের পরামর্শে প্রজাদের সাথে বাদশা জাহাঙ্গীর প্রত্যক্ষ সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেন। সেইসাথে দরবারের ফটকে শিকলের সাথে ঘণ্টা সংযুক্ত করা হল জাহাঙ্গীরের শয়নকক্ষ পর্যন্ত। যাতে করে রাজকর্মচারীদের দ্বারা সমস্যার সমাধান হয়নি এসব নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত, অভুক্ত মানুষ শেকল টেনে নিজেদেরকে সাক্ষাৎ প্রার্থী করতে পারেন। এভাবেই তিনি দুঃস্থ অসহায় মানুষের সমস্যার সন্তোষজনক সমাধানসহ দুঃখ নিবারণ করে তাদের মুখে হাসি ফুটাতেন।
চোখ ধাঁধানো, প্রাণ জুড়ানো অপূর্ব অপরূপা সুন্দরী এই রমণী নূরজাহান একদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রূপচর্চার কাজে নিমগ্ন ছিলেন। এ সময় বিকৃত মস্তিস্ক প্রসূত এক হিন্দু প্রজা আচমকা তাঁর নিজ শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে। আর তাকে দেখার সাথে সাথে নূরজাহান গুলি ছুঁড়লে ঘটনাস্থলেই সেই প্রজা মৃত্যুবরণ করে। এরপর মৃতের নিকটাত্মীয় নূরজাহানের বিরুদ্ধে বাদশা জাহাঙ্গীরের নিকট বিচারপ্রার্থী হলে অনন্য বিশ্ব সুন্দরী প্রিয়তমা নূরজাহানের বিচারের রায় তিনি ঘোষণা করেন “মৃত্যুদণ্ড”।
অবিশ্বাস্যকর এই ঘটনার আকস্মিকতায় উপস্থিত সকলেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলেন। আর সবচেয়ে বেশী যিনি হতবাক ও বিচলিত হলেন তিনি তাঁর জীবনসঙ্গিনী জাহাঙ্গীরের প্রাণাধিক প্রিয় নূরজাহান। তিনি ডুকরে কেঁদে উঠে বলতে লাগলেন- “হে স্বামী পুরানা দিনের কোন কথা কি আপনার মনে নেই! আমার প্রেম, ভালবাসা, মায়া, সেবা সমস্ত কিছু একটু মনের তুলাদণ্ডে কি ওজন করলে হত না?” বাদশা জাহাঙ্গীর নয়নভরা বেদনাশ্রু নিয়ে বলেন, “ প্রিয়া নূরজাহান আমি আমার মনের তুলাদণ্ডে তোমার সারাজীবনের সবকিছু এক পাল্লায় চাপিয়েছি, আর অন্য পাল্লায় চাপিয়েছি হযরত মুহাম্মদের (সঃ) আইনকে; বারে বারেই আমার কাছে ভারী হয়েছে ইসলামের আইনের নির্দেশ। ইসলামের আইনে তুমি তাকে হত্যা করতে পারতে কারোর প্রাণনাশের বা ব্যভিচারের অপরাধে, কিন্তু সে দোষ তো তার ছিল না। সে ছিল বিকৃত মস্তিস্ক। অতএব আবার বলছি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত- তোমার প্রাণদণ্ড”। বিচারপ্রার্থী স্বপ্ন দর্শকের মত নাটকীয় ইসলামী বিচার ব্যবস্থা দেখে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “হে আমার বাদশাহ আমরা আর প্রাণদণ্ড দেখতে চাই না, নূরজাহানকে আমরা ক্ষমা করলাম। আমরা আজ বুঝলাম ইসলাম সত্যিই শান্তি ও সত্যের নিরপেক্ষ ধর্ম”।
আবেগাপ্লুত কান্নাবিজড়িত নূরজাহান তাদেরকে প্রচুর ক্ষতিপূরণ দিয়ে ও ক্ষমা ভিক্ষা করে তবে নিজের প্রাণ ফিরে পেলেন। (মইজুদ্দিনের লেখা আদর্শ জীবনের ১১২-১১৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।
সূত্রঃ চেপে রাখা ইতিহাস
বিষয়: বিবিধ
১৮৬৪ বার পঠিত, ৫৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর এটাই সত্য যে সব কিছুর থেকে উপরে আল্লাহু সুবহানওয়াতালার হুকুম এবং রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লহু আলাইহিওয়াসাল্লামের ) আদর্শ ।
* ঐ সময় রাজ রাজরাদের জন্য কি পিস্তল/বন্দুক দেওয়া হত ? কেন এগুলো দেওয়া হত ? আত্মরক্ষার জন্য নিশ্চয়ই ।
আর একজন অপরিচিত লোক একেবারে শয়ন কক্ষে কোন কিছু না বলেই প্রবেশ করলো , সে যে বাদশা ও তার স্ত্রীকে আঘাত করার জন্য আসে নি তার প্রমান কি ছিল ?
আর এসব বন্দুক তো রাখাই হয় এধরনের পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য ।
আপনার বাসায় কোন অপরিচিত লোক হঠাত করে ঢুকে পড়লে আপনি কি করবেন ? তারা তো রাজা রানী ছিল । তাদের জীবন তো আরও বেশী ঝুঁকি পূর্ণ ।
রানী নুরজাহান তো ইচ্ছে করেই তাকে মারে নি , তার কাছ থেকে ক্ষতির আশংকা করেছিল বলে গুলি চালিয়েছিল ।
ইসলাম তো রক্ত ঋণের কথাও বলে । বাদশা কি তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য সেটাও করতে পারতেন না ?
এটাকে রামের সিতা বিসর্জনের মত মনে হল ।
আমার কাজিন হলো হারিকেন।
সেও ভাই, তবে আমি আদর করে ওকে ভাবী বা খালামনি ডাকি। (কারন ও খেপে যায় তাই ভালো লাগে)
তার বয়স ২৯ আমার থেকে ৫ বছরের বড়।
আমরা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি।
এটা হলো আমাদের পরিচায়।
আজকের এই দিনে আপনার জন্য আমার উপহার ..... "আপনাকে আমার প্রিয়-ব্লগার করে নিলাম" বরন করে নিলাম হাতুড়ি দিয়ে কারন এটা আমাদের প্রিয়
এই না হলে গুণী ভাই
</html>
অনেক কঠিন বাস্তবতাকেই নিয়ে লিখা শিক্ষণীয় পোস্টের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। পরিপুর্ন ভাবে ইসলামে দাখিল হওয়ার এটাই চিরন্তন পদ্ধতি। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন