“প্রিয় বাবা” আমার প্রেরণার পৃথিবী পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:২৩:০৯ সন্ধ্যা
আকাশের হৃদয় ফুঁড়ে যেমন চাঁদ উদিত হয়, প্রত্যুষে অন্ধকার ভেদ করে যেমন আকাঙ্ক্ষিত সূর্যের আলোচ্ছটায় ঝলমল করে হেসে উঠে সমগ্র পৃথিবী ঠিক তেমনি আমাদের গ্রামের মানুষ যখন দুঃশাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত পিষ্ট সেই সময়ে প্রতিবাদের ঝাণ্ডা নিয়ে মানুষের বন্ধু হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন আমার বাবা। তিনি মানুষের অন্তরের কষ্টগুলো নিজের করে নিয়ে তাদের মধ্যে নিরাপদ স্বপ্নের বীজ বুণে দিতেন। সেগুলো ধীরে ধীরে পাতা-পল্লবে, ফলে–ফুলে শোভা বর্ধন করতো, বিকশিত হতো, সুবাসিত করতো সমাজ এবং সংসারকে। এলাকার মানুষ সমস্ত অশান্তির দাহ থেকে মুক্ত হয়ে অনুভব করতো শান্তি ও শীতল পরশ। আমার নিজস্ব জগতের চলার পথের পাথেয় ও জীবন্ত আদর্শ হয়ে অন্তরের মণিকোঠায় যে ব্যক্তিটি জ্বলজ্বলে আলোর ঝর্ণাধারায় উদ্ভাসিত সে আমার বাবা। আমার চির জনমের একান্ত বন্ধু, প্রিয়জন। যিনি অনন্য-অনুপম ভাললাগার ভূবনে সারাক্ষণ অন্তরের অন্তহীন গহীনে অগণিত স্মৃতির পাতায় বিদ্যমান এবং সর্বোপরি আমার প্রেরণার পৃথিবী।
সত্যিই ভাবতেই অবাক লাগে! কী বিচিত্র অদ্ভুত মানুষের জীবন! এই জীবনের পরতে পরতে মিশে থাকে সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, ব্যথা-মিলন, বিরহ-বেদনা গাঁথা চিরন্তন কাহিনী। অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তারই কিছু উল্লেখযোগ্য স্মৃতি সন্মানিত পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরার একনিষ্ঠ প্রয়াস। জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক স্মৃতি থাকে যেগুলো হৃদয়পটে ভাসলে আনন্দে আত্মহারা হতে হয়। আবার কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত থাকে যা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এক পলকেই। বিষাদের যন্ত্রনায় ছটফট করতে হয় আমৃত্যু। সুপ্রিয় সন্মানিত পাঠক প্রারম্ভেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই অসহ্য দহনের কিছুটা ভার আপনাদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে একটু প্রশান্তি ও হালকা বোধ করার জন্য।
স্মৃতিবিজড়িত ঘটনাগুলো দিবানিশি মনের গভীরে নাড়াচাড়া করলেও আজ লিখতে বসে দু’চোখে অনিয়ন্ত্রিত শ্রাবণের অঝোর ধারা বয়ে যাচ্ছে। সুখ-দুঃখের সুবিশাল স্মৃতির পাতাগুলোকে কিছুতেই অতিক্রম করতে পাচ্ছি না। একে একে মনের আয়নায় ভেসে উঠছে সব। আজকের লেখা যেন অসাধ্য সাধনের দুঃসাধ্য দুরূহ প্রচেষ্টা। বোধ করি মানুষের সুপ্ত বাসনাকে বিকশিত করার মানসে বি ডি ব্লগের সৃজনশীল মহতী উদ্যোগের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। তাই বিষয় ‘প্রিয় বাবা’ এর দুর্নিবার আকর্ষণের টানে ও মোহে অবদমিত মন প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে। অশান্ত সাগরের ঢেউয়ের গর্জন যেন মনের গহীনে আঁচড়িয়ে আঁচড়িয়ে বেদনায় হাহাকার করে উঠছে। বাবার রেখে যাওয়া স্নেহের অমূল্য অপরিসীম ভাণ্ডার উথলিয়ে উঠছে বার বার। মনে হোল এ বিষয়ে কিছু না লিখলে বাবার প্রতি চরম অবিচার, অন্যায় ও অবজ্ঞা করা হবে। বাবার প্রতিটি মুহূর্ত আজ জীবনকে নতুন করে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে, শুরু হয়েছে হৃদয়ে অদম্য অনিঃশেষ তোলপাড়। যদিও নিয়মিত নামাযান্তে বাবার মাগফেরাতের জন্য বিশেষভাবে দোয়া আজগর করে নীরবে অশ্রু বিসর্জন করে থাকি। যিকিরের মধ্যেও আমার বাবাকে প্রতি মুহূর্তেই অন্তরের অন্তঃস্থলে একান্ত নিবিড়ভাবে অনুভব করি। আসুন তাহলে আর দেরী না করে মূল কথায় আসা যাক;
যে বাড়ীতে আমরা থাকতাম সেটা ছিল আমার দাদার। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী হলেও অনেক সৌখিন ও রোমান্টিক মনের মানুষ ছিলেন। বিশাল জায়গাজুড়ে পরিকল্পিতভাবে মনোরম পরিপাটি দোতলা আদলে নির্মিত তাঁর বিলাসবহুল স্বপ্নের নান্দনিক গ্রামের বাড়িটি দেখলে সহজেই তা অনুমাণ করা যেত। নৈসর্গিক অপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্যের সমারোহের সাথে সবুজ শ্যামলিমা, ফুল আর ফলের অবিশ্বাস্য ভালোলাগার রহস্যময় চাদরে ঢাকা ছিল সেটি। পুরো বাড়ীটিতে বিভিন্ন বাহারী রঙের ফুলের মৌ মৌ সুবাসে মনে হতো যেন এটা একটা জান্নাতের বাগিচা।
আমার বাবা ছিলেন প্রথম ছেলে সন্তান। তিনিও ছিলেন তাঁর বাবার মতই সৌখিন তবে নিজে খুব সাধাসিধে জীবন যাপন করা পছন্দ করতেন। তাঁর জীবনের সব শখ এবং স্বপ্নের জায়গাটি জুড়ে ছিল অবহেলিত-বঞ্চিত, নিপীড়িত-অসহায় মানুষ। তাদের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে, বিপদে আপনজনের মত দিন রাত পাশে থেকে, অন্যায় জুলুমের প্রতিবাদ করে সহায় সম্বলহীন মানুষকে বিপদমুক্ত করে উনি হতেন উদ্বেলিত পরিতৃপ্ত। ধান, চাল, তেল, লবণ, পকেটের টাকা থেকে শুরু করে জমির বাঁশ পর্যন্ত সবকিছু উজাড় করে দিতেন মানুষের জন্য। আমার বাবার জন্মই যেন হয়েছিল গরীব দুঃখী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য। মানুষ যেমন আহার ছাড়া কল্পনা করা যায় না, আমার বাবাকেও ঠিক তেমনি মানব দরদী বন্ধু ছাড়া ভাবাই যেত না। ওনার হৃদয়ের পুষ্টি ছিল মানব সেবা। এভাবেই নিজের সারাটি জীবন মানুষের কল্যাণে অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে তাঁর মন-মনন চেতনা বিবেককে করেছেন প্রশস্থ পরিপুষ্ট আনন্দিত ও শান্তিময়।
বাবার বন্ধুরা তাঁকে নবাব সিরাজদ্দৌলা বলে ডাকতেন কেননা তিনি ক্ষমতা ও প্রাচুর্য বৈভবে তাঁর সমকক্ষ না হলেও, দেখতে এবং আচার আচরণে অনেকটাই তাঁর মত ছিলেন। তিনি ছিলেন অসহায় এবং গরীবের প্রিয় বন্ধু। যিনি অকাতরে নিজের সম্বলটুকু উজাড় করে বিলিয়ে দিতেন গরীব দুঃখীদের মাঝে আর সেই অপার আনন্দটুকু পরে প্রাণভরে উপভোগ করতেন। এজন্যই গ্রামের মানুষের কাছে তাঁর পুরো জীবন অনুপম, অতুলনীয়, আদর্শিক এক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম হিসাবে পরিগণিত ও সমাদৃত। তাই তো তিনি আমাদের কাছে শুধু একজন উত্তম বাবাই নন একজন উত্তম মানুষও বটে।
চলবে......।
বিষয়ঃ contest_father
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৫ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কোরান ও সুন্নার আলোকে আলোকিত মানুষ।
তাই আপনার লেখায় বুঝা যায়, আপনার
ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রয়েছে। যা আপনি বিকশিত করছেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আপনার হাতকে আরো গতিশীল করবেন, ইসলামের পথে লেখার জন্য। আমিন।
রিপোর্ট করুন
আপনার লিখা আগেও পড়েছি। তাই লিখার মান নিয়ে আর বেশী কিছু বলবোনা। আপনার শ্রদ্ধেয় বাবা সম্পর্কে সামনের পর্বগুলোতে আরো জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আমার গল্পটিও পাঠের আমন্ত্রণ রইল।
মন্তব্য করতে লগইন করুন