কঠিন মুসিবতে মুমিনের প্রশান্তি!!!!
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২০ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:১৭:০৩ সকাল
মহান প্রতাপশালী অফুরন্ত ধন ভাণ্ডারের একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ্র দেয়া নির্মল শুভ্র আনন্দে মানুষ যেমন আনন্দ উচ্ছ্বাসের স্রোতে হারিয়ে যায় অফুরন্ত চিরসিক্ত ও চির প্রবাহমান নির্ঝরিণীর সীমাহীন স্বপ্নালোকে যেখানে সে উপভোগ করে জীবনের পরিপূর্ণতা আর মহিমাময় রবের প্রাচুর্যতা ঠিক তেমনি এর বিপরীতে বিপদ এলে হতচকিত, দিশেহারা ও পাগলপ্রায় হয়ে উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ছুটাছুটি করে এবং মরণ চিন্তার অতল সমুদ্রে তলিয়ে হাবুডুবু খেতে শুরু করে। জীবনের ভাঁজে ভাঁজে এমনিভাবে আচমকা লুকায়িত থাকে অবর্ণনীয় হাজারো দুঃখ বিষাদ, বিরহ বিচ্ছেদের অনেক অজানা বর্বর লোমহর্ষক কাহিনী যা জ্ঞান, ঈমান, আকীদা ও সবরের সাথে মোকাবিলা করতে হয় একান্ত আল্লাহ্র নির্দেশিত পথেই।
এজন্যই বিশ্ব জগতের মানবগোষ্ঠীকে যাবতীয় কঠিন বিপদ, হতাশা, বালা-মুসিবত, দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত করে পরীক্ষা নেয়া হবে যা আল কোরআনে উল্লেখসহ সতর্ক করে মুমিনদেরকে কঠিন প্রস্তুতির জন্য নিগুঢ় সত্য কথাটি আগেভাগেই জানিয়ে দিয়ে পাশাপাশি এর কারণটি রহস্যাবৃত না রেখে বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ
“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছু ভয়ভীতি দিয়ে, কিছু ক্ষুধা বা আর্থিক সংকট দিয়ে আবার কখনও জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দিয়ে। এমতাবস্থায় সুসংবাদ দাও ঐ সকল ধৈর্যধারণকারীগণকে যারা সর্বাবস্থায় অবিচল থাকে, এদের উপর যখন বিপদ মুসিবত আসে তখন তাঁরা বলে উঠে, নিশ্চয়ই আমরা একমাত্র আল্লাহ্র জন্যে এবং আমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে”।
এভাবে প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তিকেই বিপদ-মুসিবতে রেখে যাচাই করা হবে পরীক্ষার মাধ্যমে কখনও ব্যক্তিগতভাবে এবং কখনও সমষ্টিগতভাবে আর এটাই আল্লাহ্র বিধান। মানুষ তার জীবনে এ পরীক্ষার সম্মুখীন হবেই হবে। এভাবেই আল্লাহ্ জাল্লাহ শানহু তার প্রেরিত বান্দাদের ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, দৃঢ়তা-অবিচলতা ও ত্যাগ-কোরবানী পরখ করে নেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে কার ঈমান আকীদার স্তর কোথায় এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠায় কে কতটা নিষ্ঠা ও দরদ ভরে ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত সেটা প্রমাণ করা হয়। যারা যতো বেশী কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবে তারাই আল্লাহ্র দৃষ্টিতে ততোবেশী উপযুক্ত ও যোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে ।
এক্ষেত্রে যারা ঈমানের পরিপূর্ণ স্বাদ পেয়েছে তারাই কেবল জীবনের সমস্ত বিপদাপদ, দুঃখ দুর্দশাকে আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত হিসাবে হাসি মুখে বরণ করে তাদের সকল সত্ত্বা ও অস্তিত্বকে প্রভুর নিকট সোপর্দ করে অন্তরের আভ্যন্তরীণ শক্তিগুলোকে শাণিত করেছে। এভাবে ক্রমান্বয়ে মুমিনের অন্তরের মরিচা অপসারিত হয়ে ঈমানের আসল রূপ, সৌন্দর্য, চারিত্রিক বৈশিষ্ট, স্বকীয়তা ও দৃষ্টি ভঙ্গির স্বচ্ছতার মাধুর্য চারিদিকে বিকশিত হতে থাকে। আর এমনিভাবেই ঈমানদারগণের ত্যাগ তিতীক্ষায় অন্যরা মুগ্ধ, বিস্মিত-অভিভূত হয়ে ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুপ্রাণিত ও অনুরক্ত হয়ে উঠে।
সবচেয়ে মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জীবনে বেঁচে থাকার জন্য সাহায্য সহযোগিতার সম্ভাব্য সকল পথ রুদ্ধ হয়ে একজন মুমিনের জীবনে চতুর্দিক থেকে যখন বড় বড় ঝড় তুফান আসতে থাকে তখন সে সমস্ত মন প্রাণ উজাড় করে দিয়ে এক আল্লাহ্র মধ্যেই নিজেকে নিবিষ্ট চিত্তে ডুবিয়ে দিয়ে একমাত্র তাঁরই আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং শুধুমাত্র তাঁরই সাহায্য প্রার্থী হয়। এভাবেই আল্লাহ্র সাথে দূরত্বের সব দ্বার উন্মোচিত করে অতি নিকটবর্তী হয়ে আত্মিক যোগসূত্র কায়েমের মাধ্যমে সে আল্লাহ্র সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে যান। আর এটাই ঈমানের অত্যন্ত তাৎপর্যময় মূল্যবান রত্ন।
বিশ্বাসীগণকে মহান রাব্বুল আলামীন এজন্যই তাঁর সান্ত্বনার বাণী শুনিয়েছেন, “আর সুসংবাদ দাও এ সকল অবিচল মুমিনদেরকে যারা বিপদ আসলে বলে আমরা তো একান্তভাবে আল্লাহ্র জন্যে এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাবো”।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন হলেন হকের হাকিম। যিনি সর্ব শক্তিমান মহা বিচারপতি আকাশ ও জমিনের একচ্ছত্র অধিপতি এবং সকল প্রকার ভাল মন্দের বিচারক। সেজন্য কঠিন সংগ্রামের অসহনীয় তীব্র জ্বালা যন্ত্রণা ও কষ্টকর মুহূর্তে অবশ্যই মুমিনগণ আত্মবিশ্বাস, আল্লাহ্ভীতি, রবের সন্তুষ্টি ও দৃঢ়তার সাথে মহান প্রভুর নিকট নিজেকে সবরের সাথে সোপর্দ করেন পরিত্রাণ পাবার আশায়-আকাংখায় এবং দয়া ও অনুগ্রহের প্রতীক্ষায়।
নামায মানুষকে সীমাবদ্ধ জগতের গণ্ডী ছাড়িয়ে সীমাহীন ঊর্ধ্বাকাশের বাসিন্দার সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করে, অনুভবে প্রকাশ পায় শান্তি ও মুক্তির অপার আনন্দ। যেমন চৈত্রের দুপুরের প্রচণ্ড তাপদাহে সুশীতল বায়ুর মৃদু মন্দ হাওয়া একজন তৃষ্ণার্ত, ঘর্মাক্ত পথিকের মন জুড়িয়ে দেয়। প্রেয়সী যেমন চাতক পাখীর ন্যায় দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুণে অপ্রত্যাশিত ও অলৌকিকভাবে তার প্রাণাধিক প্রিয়তম-এর সান্নিধ্য পেয়ে যায়। অকল্পনীয় বিস্ময়কর শিহরণের অনুভবে মন্ত্র মুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে থাকে, অনুভূতি বলে ঠিক যেন স্বপ্নিল অমিয় আশার স্নিগ্ধ আলোক রশ্মি।
সেজন্য নিদ্রাবিলাসী মানুষ যখন গভীর আয়েশে মগ্ন হয়ে স্বপ্নের রাজত্বে বেহুঁশ থাকে জাগতিক বিলাসিতা নিয়ে, মুমিনগণ তখন নিঝুম সুসুপ্ত রজনীর কোমল স্পর্শে দিদার ভ্রমণে খুঁজে বেড়ায় তাঁর মহা মহিম প্রভু মহা শক্তিধর এলাহীকে। তাঁর দরবারে আবেগাপ্লুত হয়ে আত্মসমর্পণ করে, বিভোর বিমুগ্ধ হৃদয়ে পরম শান্তির পরশে এবং তাঁরই প্রেমময় অভূতপূর্ব ছোঁয়ায় ডুবে যায় অনন্ত অসীম অতল দরিয়ায়। প্রেমময় দয়াময়ের অপার করুণায় পুলকিত, শিহরিত ও রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে সমগ্র ধরিত্রী।
যে কোন প্রতিকূল অবস্থায় কিংবা মহা কঠিন বিপদের সময় আল্লাহ্র পথে মুমিন যে ত্যাগ ও কোরবানী স্বীকার করে, জান মালের যে ক্ষয় ক্ষতি বরদাশত করে ও শাহাদাত লাভের যে প্রবল আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে আল্লাহ্র দৃষ্টিতে তারাই বিজয়ী। যারা একাগ্রচিত্তে ও একনিষ্ঠভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিবিষ্ট এসব বিজয়ীদের জন্য মহান রবের সর্বোত্তম পুরুস্কার হচ্ছে দয়া ও অনুগ্রহ। আল্লাহ্ সুবহানুতা’য়ালা এসব মুমিনদেরকে সেই মেহেরবানী দান করবেন যা নবীদের জন্য নির্দিষ্ট ও বরাদ্দ।
তাইতো আল্লাহ্র প্রিয় বান্দাগণ সেজদাবনতভাবে নিজেকে আল্লাহ্র কাছে গভীরভাবে সপে দিয়ে আশান্বিত ও পুলকিত হয়। নামায মানুষের অন্তরকে বিগলিত করে ভরিয়ে দেয় অনুপম প্রশান্তিতে, দেখিয়ে দেয় সুমহান আলোকিত পথ এবং হৃদয়কে শীতল পরশে আলিঙ্গনের মাধ্যমে প্রজ্জ্বলিত করে স্বচ্ছ সমুজ্জ্বল নূরের বাতি। ত্যাগ ও গুরু দায়িত্ব পালনে জীবনকে উজ্জীবিত করে পরম তৃপ্তিতে, যোগায় অসীম শক্তি আর দুর্দমনীয় সাহস, প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে দেয় প্রশান্তির অবারিত নির্মল আনন্দের অফুরাণ ঝর্ণাধারা। আল্লাহ্ পাক এভাবেই তাঁর অনুপম অনুগ্রহ এবং মেহেরবানী দিয়ে মুমিনদের দুঃখ-দুর্দশা, জান-মালের ক্ষতি, ত্যাগ-কোরবানী ও শাহাদাতের মহামূল্যবান বিনিময় দান করবেন। এ কারণেই মুমিনগণ কঠিন মুসীবতে অন্তরে অনুভব করে পরম আনন্দ ও জান্নাতের প্রশান্তি। আল্লাহু আকবর।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর বলেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে সবরের মত দূর্লভ গুণে ভূষিত করুন, আমিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন