স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে ভাবনার আনন্দ
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৩ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:০২:৫১ রাত
মহান আল্লাহর বিশাল বিস্ময়কর সৃষ্টির কথা স্মরণে রেখে সর্বাবস্থায় মহান দাতার অফুরাণ সত্ত্বা ও সীমাহীন দানের প্রতি সন্তুষ্টি কামনায় নিজেকে নিবেদন করাই হলো একজন মুমিনের পরম আনন্দ। যে রবকে জমিন ও আসমানের সমস্ত সৃষ্টিকুল তাঁর অফুরন্ত নিয়ামত বরকত রহমত এবং সান্নিধ্য পাবার আশায় ও আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল চিত্ত হয়ে অবিরত ডাকে। প্রতিপালককে যারা বিনয়, নীরবতা ও প্রফুল্ল চিত্তে ডাকে নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রহমত তাঁদের অতি সন্নিকটেই। (সূরা আরাফঃ ৫৬)
আল্লাহ্র সৃষ্টির মাহাত্য, গুরুত্ব, ও তাৎপর্য এবং সেইসাথে সারা জাহানের মানবকুলকে অবিশ্বাস্য নেয়ামত দানের সুখবর স্বয়ং আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে অসংখ্যবার উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও এহকাল-পরকাল সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন ও শিক্ষা লাভের মাধ্যমে যাতে উভয় জাহানের কল্যাণ সাধন সম্ভব হয় সেজন্য দিয়েছেন পবিত্র আল কোরআন।
কোরআনের সত্য সুন্দর আলোকিত পথে তারা যেন নিজেদের সাফল্য অর্জন করতে পারে এজন্য যুগে যুগে সতর্ককারী হিসাবে নবী পাঠিয়েছেন। যাতে করে সমগ্র বিশ্বের মানবগোষ্ঠী ভালো মন্দের গুরুত্ব এবং পার্থক্য অনুধাবন করে সঠিক হেদায়তের পথে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করতে পারে। এর সাথে রয়েছে বহু হাদীস ও আলেমগণের অনেক মূল্যবান অভিজ্ঞতা এবং বাণী সম্বলিত কিতাব ও উপদেশ। পবিত্র আল কোরআন বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশস্বরূপ। (সূরা মুমিনঃ ৫৪)
এজন্যই আল্লাহ্ জাল্লাহ শানহু তাঁর সৃষ্টির নিপুণতা গভীরতা বিশালতা ও মাহাত্ব্যকে নিগুঢ়ভাবে চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-গবেষনা করতে এবং তাঁর নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করতে সকল বান্দাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। শোকর অর্থ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। নিয়ামত দাতার প্রতি অনুগ্রহের মূল্য স্মরণে হৃদয় মন উজাড় করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং তাঁর দানসমুহ তাঁরই ইচ্ছা ও মর্জি মাফিক ভোগ বা ব্যবহার করা। যারা সর্বাবস্থায় দাঁড়িয়ে, বসে কিংবা শুয়ে আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা ভাবনা করে এবং বলে, হে আমাদের রব তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করোনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করো। এঁদের জন্য আখেরাতে মহাপ্রতিদান রয়েছে। (সূরা আল ইমরানঃ ১৯০-১৯১)
তাই স্রষ্টার এই অবিশ্বাস্য বিশাল সৃষ্টি ও অনিঃশেষ দানের প্রতি ঈমানদারগণ কৃতজ্ঞতা প্রদানের মাধ্যমে একান্ত নিবেদিতভাবে প্রফুল্ল চিত্তে শোকর ও সন্তুষ্টি আদায় করে। এরূপ মস্তিস্কে সৃষ্টি সাগরের অতলান্ত ভাবনায় ডুবলে একজন মুমিনের দেহ-মন-আত্মা মহান প্রভুর বিশালতায়, ভালবাসায়, অগাধ বিশ্বাসে, আর শান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। এভাবেই আল্লাহ্র প্রকৃত বান্দাগণ তাঁর স্রষ্টার নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ ও সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করে দুনো জাহানের কামিয়াবি লাভে ধন্য হয়। অপরদিকে কিছু সংখ্যক লোক আল্লাহ্র সৃষ্টি জগতে বাস করে তাঁরই দেয়া নেয়ামত ভোগ করে অনুগ্রহকারীর অনুগ্রহকে অকৃতজ্ঞ ও বিদ্বেষপ্রসূতভাবে অস্বীকার করে। সুতরাং তারা অচিরেই এসব নিমকহারামী, গাদ্দারী ও নাশোকরীর পরিণাম ভোগ করবে। (সূরা বাকারাঃ ১৬৬)
সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাতের মধ্যে যারা সুস্থ ও বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন তাদের জন্য আল্লাহ্ পাকের সৃষ্ট আকাশ, পৃথিবী, রাত দিনের আবর্তন, নদ-নদী, সমুদ্র এবং মহা সাগরে ভাসমান জলযান সমূহ, আকাশ হতে বারী বর্ষণ ও উহার সাহায্যে মৃত্যু প্রায় নির্জীব ভূমিকে নতুন জীবন দান, উদ্ভিদ ও প্রাণবান সৃষ্টির বিস্তার সাধন, বায়ুর গতি প্রবাহ এবং আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যস্থলে নিয়ন্রি ুত মেঘ মালায় অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে। (সূরা বাকারাঃ ১৬৪)
তোমরা যখন জলযান ও পশুর পৃষ্ঠে দৃঢ়রূপে বসে আরোহণ করো তখন তোমার রবের সৃষ্টিকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করো এবং বলো ‘পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি আমাদের অসমর্থ হওয়া সত্ত্বেও এগুলিকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। (সূরা যুখরুফঃ ১৩)
অতএব আল্লাহ্র সৃষ্ট নেয়ামতগুলি নিবিষ্ট চিত্তে ভাবো যেন তোমাদের কল্যাণ হয়। যেমন পৃথিবীতে থাকার জন্য বাসস্থান, কোমল মাটিতে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ, পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ সবকিছুই আল্লাহ্র দান। (সূরা আরাফঃ ৭৪)
আর যারা কৃতজ্ঞ চিত্তে মহান স্রষ্টার আজ্ঞাধীন থেকে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে, অসীম সৃষ্টিকে নিয়ে ভাবনার অতলান্তে নিমজ্জত থাকে সেইসকল চিন্তাশীল বিনয়ী আল্লাহভীরু মুমিনগণের জন্য আখিরাতে রয়েছে অনন্ত জান্নাতের সুসংবাদ। (সূরা হাজ্জঃ ৩৭)
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৭ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
৫
207361
১৩ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:০৪
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার হৃদয় ছোঁয়া মন্তব্য পড়ে দারুণ লাগছে। আপনার জন্য অনিঃশেষ দোয়া রইলো। মহান রাহমানুর রাহীম যেন সকলকেই ওনার রহমতের ছায়াতলে ঠাই দেন। যেদিন কেউ কারো সাহায্য কারী থাকবে না। শুকরান জাযাকাল্লাহ খাইরান। Good Luck Good Luck Good Luck
এই ভাবে করলে পোঁছবে না ।
"সৃষ্টি সাগরের অতলান্ত ভাবনায় ডুবলে একজন মুমিনের দেহ-মন-আত্মা মহান প্রভুর বিশালতায়, ভালবাসায়, অগাধ বিশ্বাসে, আর শান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। "
সোনার বাংলা ব্লগের পর আজ প্রথম পড়লাম আপনার লেখা । আল্লাহ আপনার কলমের জোর বাদিয়ে দিন । জাযাকাল্লাহ খায়ের
ভালো লাগলো
পিলাচ
মন্তব্য করতে লগইন করুন