আল কোরআনের অলৌকিক সৌন্দর্য

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:৩৪:২৭ সকাল



পৃথিবীর বুকে এমন কোন মহামূল্যবান বিস্ময়কর উপভোগ্য বস্তু নেই যা আল কোরআনের মত করে এত নির্মল, নিখাদ ও অভাবনীয় অনন্ত স্বাদ অন্তরের মধ্যে ঢেলে দিয়ে তন্ময় করে রাখে। দুনিয়ার ব্যবস্থায় গড়ে উঠা আনন্দ ফূর্তি বিনোদন ক্ষনিকের জন্য আর কোরআনের জৌলুসপূর্ণ গোপন খনির যাদুমাখা আনন্দ মন-প্রাণকে স্থায়ীভাবে উপচে দেয়, ভরিয়ে তোলে অন্তর্নিহিত শান্তিতে অনন্ত কালের জন্য অনাবিলভাবে। সুখ-দুঃখ, ঘাত-প্রতিঘাতময় দুঃসহ জীবনের পরতে পরতে আল কোরআনের অফুরাণ আনন্দে বিমোহিত হয়ে অনুধাবন করেছি এর অসাধারণ মাহাত্ব্য এবং অলৌকিক সৌন্দর্য।

প্রসঙ্গত একটি ঘটনার অবতারণা করছি তা হল, পরিবার পরিজন সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকবো বুকভরা এই আশা আর স্বপ্ন নিয়ে বিদেশ বিভুয়ে অনেকটা অজ্ঞতা প্রসূত হয়ে আবেগের ঘোরে একটা শখের ছোট্ট বাড়ী ক্রয় করি। পরবর্তীতে এই আশা আর স্বপ্নের ব্যতয় হলে উপায়ন্তর না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই সে বাসায় একাই থাকতে শুরু করি। যেটা আমার জীবনের একটি ব্যতিক্রম ও ভয়ংকর অবিশ্বাস্যকর ঘটনা। অনেকেই বাসা ভাড়া নেয়ার জন্য আগ্রহী হলেও আমি তখন ভাড়া দিতে সম্মত হইনি। কারণ বহুবিধ যার মধ্যে অন্যতম ছিল মানুষ গুলোর নামায কালাম তো দুরের কথা তাদের ছিল শরাব পানের অভ্যাস। কাছের অনেকেই আমাকে মূর্খ ভেবে কটু কথা বলার প্রয়াস পেতো এজন্য যে ভাড়া দিলেই আমি মাস শেষে বাংলাদেশী টাকায় অর্ধ লক্ষ টাকার বেশী ভাড়া পাবো। সেইসাথে আমার নিঃসঙ্গতারও একটা সুন্দর সমাধান হবে। অথচ বোকামির কারণে সেটা থেকে আমি বঞ্চিত হচ্ছি। স্বভাবতই তারা নিরাপত্তার কথা ভেবে আমার উপর একটু নাখোশ ছিল।

অনেক দিনের পুরনো অভ্যাস আমার জিকির করতে করতে ঘুমিয়ে যাওয়া। কিন্তু এক রাতে আমার কোনভাবেই ঘুম আসছিলো না। আনুমাণিক ভোর ৩টার সময় ভয়ে আতঙ্কে মাইনাস ডিগ্রী তাপমাত্রাতেও আমার পুরা শরীর ঘামে ভিজে টপ টপ করে পানি পড়ছে। গোটা শরীর থর থর করে কাঁপছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল এখনই দম বন্ধ হয়ে মরে যাব। অনন্যাপায় হয়ে পাশের এক সহপাঠীকে ফোন করলাম যার উদ্যোগে আর সহযোগিতায় আমার বাড়ীটা নেয়া। সে আমার বাড়ী থেকে দু’মিনিট পায়ে হাটার দুরুত্বে থাকতো। ফোন পেয়ে সে আমাকে তার বাসায় ডাকলো। আমি আমার অপারগতার কথা বলে এমনকি পায়ে হেটে মেইন দরজা খুলে দিবো এ শক্তি বা সাহস কোনটাই আমার নেই তাকে জানালাম। সুতরাং সে বললো আমি গাড়ী নিয়ে আসছি যাতে আপনার হাটতে না হয়। বাড়ীর সামনে উপস্থিত হয়ে যখন আমাকে সে ফোন দিল তখন আমি গেটের চাবি জানালা দিয়ে নীচে ফেলে দিলাম যাতে সে উপরে উঠে আমার রুমে আসতে পারে।

পরে আমাকে তার বাসায় নিয়ে পরম যত্নে মাথায় তেল লাগিয়ে দিয়ে, কিছু তরল খাবার জোর করে খাইয়ে ঘুমের ওষুধ সেবন শেষে বিছানায় শুইয়ে দিল। পরের দিন তার কর্তব্য কাজে যাওয়ার সময় ছিল সকাল সাতটার আগে। সুতরাং ঘুম থেকে উঠে দেখি পাশের টেবিলে নাস্তাসহ বাসার চাবি রেখে দিয়ে সে তার গন্তব্যস্থলে চলে গেছে। ভীষণভাবে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হলাম আমার সহপাঠীর কষ্টের কথা ভেবে। কেননা একই পেশায় থাকার কারণে ১২ ঘণ্টার শিফট করার ধকল আমি বুঝি। তাই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এই ভেবে যে, যিনি আমার অভিভাবক তিনি অনেক পরাক্রমশালী, শক্তিধর। তাই সর্বশক্তিমানের উপর ভরসা করাই অধিক শ্রেয়। ভাবলাম এতে নিজে যেমন নিরাপদ ও ভালো থাকবো তেমনি অন্যরাও থাকবে ঝামেলা মুক্ত।

এমনিভাবে পরবর্তীতে একে একে সব বিপদাপদকে আমি আমার মহান প্রভুর ইচ্ছা ও দয়ায় জয় করতে শিখলাম। কারণ আমি জানতাম, আল্লাহ্‌র দয়া থেকে তারাই নিরাশ হয় যারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট (সূরা হেজর ৫৬)। একটানা পাঁচ বছরেরও বেশী আমি একাই সে বাড়ীতে বসবাস করি নিজেকে অন্তহীন গভীর এক সাধনার জগতে নিক্ষিপ্ত করে। প্রতিদিনের অভ্যাস অনুযায়ী নফল ইবাদত, নফল রোযা, জিকির আজগরসহ প্রভাতে ফজর নামায আদায় শেষে যখন অর্থসহ কোরআন তেলওয়াত করি তখন অনুভব করি কে যেন আমার সব চিন্তা-কষ্টসমূহ শুষে নিয়ে চন্দ্রালোকিত শান্তির জগতে নিয়ে যাচ্ছে, তখন আপনা হতেই মনটা পুলকিত হয়ে খুশীতে ভরে উঠে। আর্তনাদ করে মন বলে আমার মালিক মহান এবং তাঁর মহান কেতাব সত্য-শুভ, কল্যাণ ও স্বর্গীয় সৌন্দর্যে ভরপুর।

এমনিভাবে আজও একান্ত আপনজন যখন প্রত্যাশিত আচরণের বিপরীতে কলিজাটা ছিঁড়ে নিতে ভয়ংকর রূপে উদ্যত হয় কিংবা অতি পরিচিতদের কাছ থেকে কোরআনকে ভালবাসার কারণে উপহাস-তাচ্ছিল্য, নিন্দা-অপবাদ কুঁড়াতে হয় তখন অবিশ্বাস্যকরভাবে মহীরূপে চারিদিক থেকে স্বস্তি আর শান্তির আবেশে যে আমাকে বিমুগ্ধ করে রাখে, পরম ভালবাসায় অভিষিক্ত করে সেটি হোল আল কোরআন। বিষাদময় বেদনাদায়ক মুহূর্তগুলো নিমিষেই নতুন আলোর স্নিগ্ধ স্পর্শের ছোঁয়ায় প্রাণ সঞ্চারণ করে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনুপম এক স্বর্গের জগতে সবল চিত্তদানে। মনটা হয়ে যায় বরফ শীতল। এ এক অভিনব বিস্ময়কর অলৌকিক ভাললাগা যা শুধু অনুভব করা যায় ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

ভ্রমণ পিপাসু হওয়ায় অনেক পর্যটকের অভিজ্ঞতার কাহিনী শুনেছি তারা তাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনায় বলেছেন সুইজারল্যান্ড হোল বিশ্বের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দিত প্রাণ জুড়ানো হৃদয় ভুলানো দেশ কিন্তু সুইজারল্যান্ড সফর করে আমার কাছে কেন জানি সেই অর্থে তা মনে হয়নি। সুইজারল্যান্ড সন্দেহাতীতভাবে সুন্দর বটে কিন্তু আমার রাজত্যের কণা পরিমাণও নয়।

এক কথায় আমার স্বপ্নের পৃথিবীটার সাথে কোন দেশেরই তুলনা চলে না। সেই ভূবনের সৌন্দর্য বর্ণনায় আমি নির্বাক ভাষাহীন। সে জগতে স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকের যে অপরূপ সৌন্দর্যের কারুকাজ, যে সুবিশাল কল্পনাতীত অনুভূতি বিরাজমান, যে অফুরন্ত আশ্চর্য দ্বীনি জোশের মোহ মায়ায় আমি অভিভূত সেটা শুধুই এ মন জানে। আমি যুক্তরাজ্যে আসার পূর্বে আমার আত্মীয়ার কাছে গল্প শুনেছিলাম যে পুরো এডিনবরা হোল কোন এক খ্যাতিমান শিল্পকর্মের জীবন্ত প্রতীক, যেন তার রং তুলিতে আঁকা এক অপূর্ব কল্পনার জগত। অথচ যুক্তরাজ্যে অবস্থিত এডিনবরার অনেক অপরূপ সৌন্দর্য পাহাড়-সাগর, ঝর্ণাধারা, রংধনু মেশানো মেঘ মালায় পরিপূর্ণ আকাশ আর পাগল করার মত অপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্যের মিশ্রণে একাকিভূত হওয়া মনোমুগ্ধকর বহু জায়গা আমি অবলোকন করেছি কিন্তু আমার ভূবনের সৌন্দর্যের সাদৃশ্য বা মিল কোথাও খুঁজে পাইনি। মহান সৃষ্টিকর্তার বিমুগ্ধ রহস্যঘেরা এ আমার একান্ত বিচরণশীল মধুময় অবিশ্বাস্যকর স্বপ্নের জগত।

আমার পুণ্যবতী মায়ের দোয়ার বরকতে বহু বছর সাধনা করে মনের আরশী থেকে প্রকাণ্ড দেয়ালের একটা একটা করে ইট ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে আমি একদিন অন্তর্যামীর অসীম করুণায় সেই জগতের সন্ধান পাই যেখানে আমি পরম আনন্দে পরিপুষ্ট চিত্তে প্রবেশ করি। আলহামদুলিল্লাহ্‌। পেয়ে যাই তাঁর অমূল্য রত্ন ভাণ্ডার আর এখন সেখানেই অবগাহন করি দিবানিশি আশ্চর্য এক অনুভূতি নিয়ে। ইসলামের স্বাদ মূলতঃ তারাই পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারে যারা কোরআনকে নিজের অস্তিত্ব ও আত্মার সাথে গেঁথে নিয়েছে। তাই ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতায় অন্তরের অন্তঃস্থল দিয়ে বিশ্বাস এবং অনুভব করি এই মহান গ্রন্থ শুধু আখেরাতে নয় এই দুনিয়াতেই আমাদেরকে দান করে অসামান্য, অপরিমাপতুল্য, অলৌকিক অমিয় শান্তির সুধা যেখানে মানুষকে কোন দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করতে পারে না। সেখান আছে শুধু জান্নাতর বিস্ময়সূচক সুখানুভূতি ও আত্মার উচ্ছ্বসিত প্রাঞ্জলতা।



বিষয়: বিবিধ

১৪৭৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

206032
১১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৪০

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : নাঁচতে না জানলে উঠান বাকা। সভ্য মানুষের ফোরামে ৭ শতকী কোরানের বর্বর অধ্যায় না তুলাই ভাল।
১১ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:২৬
154874
এহসান সাবরী লিখেছেন : প্লিজ আল কুরআনের কোন সূরার কত নম্বর অ্যাত আর আল হাদিসের কথায় আপ্নার মত অসভ্য লোকের দাবি অনুযায়ী প্রমাণ দেয়া আছে বর্ণনা করেন।জেনে নিব
206112
১১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
ফালতু মন্তব্যগুলি মুছে দিন। এগুলির জন্য আমাদের পয়সা দিয়ে কেনা ব্যান্ডউইথ নষ্ট করার কোন মানে হয়না।
২৩ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৬
192236
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আমি বুঝতে পারিনা এসব পথহারা ব্লগার ধর্ম তথা পবিত্র কোরআন নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য করার পরও তাদেরকে লিখার অনুমতি দেয়া হয় কেন? তাকে আমার ব্লগে ব্লক করলাম। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। দোয়া রইলো।Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File