একটি অমূল্য চিঠি এবং শিক্ষণীয় মর্মস্পর্শী ঐতিহাসিক ঘটনা

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৬ মার্চ, ২০১৪, ০১:০৫:০৫ রাত



সর্বস্তরের মানুষ ভালোভাবেই জানতো যে, কোন মুসলমান যুদ্ধ কিংবা আগ্রাসী কর্মকাণ্ড প্রথমে শুরু করেনি। আল্লাহ্‌র পথ থেকে মানুষকে বলপূর্বক ফেরানো, আল্লাহ্‌র বাণীকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মাসজিদুল হারামের অবমাননাসহ নানাবিধ অপকর্ম অনাচার মোশরেকদের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে। তারা আল্লাহ্‌র প্রতি কুফরী করেছে এবং সাধারণ মানুষকে কুফরী করতে বাধ্য করেছে। মোশরেকরা মাসজিদুল হারামের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে তার পবিত্রতা লঙ্ঘন, মুসলমানদেরকে অবর্ণনীয় অত্যাচার নির্যাতনসহ তাদেরকে ধর্মচ্যুত করতে জঘন্যভাবে বাধ্য করেছে। মদ, ব্যভিচার, জুয়া, লুটপাট, সংঘাত, সংঘর্ষ আর রক্তপাতের তাণ্ডবে ভূলুণ্ঠিত ও লাঞ্ছিত হতো মানুষের সভ্যতা ও মনুষ্যত্ব।

এরূপ হৃদয়বিদারক নোংরা কাজে তারা অভ্যস্ত ছিল হিজরতের পূর্ব থেকে সুদীর্ঘ তেরটি বছর। এমনকি লোমহর্ষক জুলুম নির্যাতনের পর তারা স্থানীয় এলাকাবাসীদের বলপূর্বক সেখান থেকে বিতাড়িত করেছে। আল্লাহ্‌র দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করার চেয়েও মাসজিদুল হারামের অধিবাসীদেরকে অযাচিতভাবে অমানবিক বহিষ্কার করা ছিল গুরুতর পাপ। এসব নিকৃষ্ট কার্যকলাপের জন্য তাই তাদের নিষিদ্ধ মাসের পবিত্রতা ও আল্লাহ্‌র ঘরের পবিত্রতার দোহাই দেয়ার কোন অধিকার নেই। কেননা তারা ইচ্ছামত তাদের প্রয়োজনে আল্লাহ্‌র ঘর ও নিষিদ্ধ মাসের পবিত্রতার দোহাই দিবে আবার নিজেদের খেয়াল-খুশীমত এর পবিত্রতা পদদলিত করবে সেটা মুসলমানরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। সত্য প্রত্যাখ্যানকারী, সীমা অতিক্রমকারী, যাবতীয় নৈতিক নীতিমালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী, ধর্মপ্রাণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী পশুরুপী মোশরেকদেরকে তাই যে অবস্থায় যেখানেই পাওয়া যাক তাদের মোকাবিলায় মুসলমানদের যুদ্ধ করা উচিত ছিল।

পবিত্রতার বিষয়টি সত্য ও ন্যায়সঙ্গত হলেও এটি ছিল তাদের চাতুরীপূর্ণ বাহানা যা ছিল অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সত্যের সামনে তারা ছিল অবিশ্বস্থ ও অসংযত। মূলত তারা ষড়যন্ত্রমূলক বাহানা করে নিজেদের আত্মরক্ষা করা ও মুসলমানদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চেয়েছিল। বিনা অপরাধে সত্যদ্রোহী, বিপর্যয় সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তরা সৎ ন্যায়পরায়ণ নির্দোষ ব্যক্তিদেরকে গুলী করে হত্যা করবে, নির্ভয়ে-নিরাপদে তাদের কুকর্ম নির্বিবাদে চালিয়ে যাবে প্রতিরোধ ছাড়াই যা ইসলাম কোনমতেই বরদাস্ত করে না। ইসলাম শুধু তাদেরকেই সম্মান করতে নির্দেশ দেয় যারা নিষিদ্ধ বস্তুর মর্যাদা রক্ষা করে। কিন্তু নিষিদ্ধ বস্তুর পবিত্রতাকে পুঁজি করে অপরাধী চক্রের রক্ষাব্যুহ ও রক্ষাকবচ কখনই হতে দিতে পারে না। জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে নীরবতার অর্থ জালেমদের ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজকে উৎসাহিত করে খারাপ কাজের পরিধি বিস্তৃত করা। তাই এই দুরাচারী মোশরেকরা সবধরনের অস্ত্র ব্যবহার করলেও মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে না তা কিছুতেই হতে পারে না। এটা বাস্তবসম্মতও নয়। ইসলাম এরূপ শিক্ষা দেয় না। ইসলাম চায় বাতিল ও গোমরাহীর বিষ দাঁত উপড়ে ফেলতে, অন্যায় অসত্য ও জুলুমকে চিরতরে নির্মূল করে সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করতে। আদেশ করে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শাসকের হাতে সারা দুনিয়ার ক্ষমতা ও দায়িত্বভার অর্পণ করতে। ইসলাম সর্বাবস্থায় ন্যায়-নীতির উচ্চমান মর্যাদা সম্মান বজায় রেখে দুষ্কৃতিদের মোকাবিলা করতে শেখায়। ইসলাম কখনো ঘৃণ্য অস্ত্র ও নোংরা ফন্দি-ফিকিরের আশ্রয় গ্রহন করে না বরং দুর্বৃত্ত জুলুমবাজদের জঘন্য কার্যকলাপ থেকে সামাজিক শান্তি, নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব রক্ষায় প্রকাশ্য দিবালোকে নির্দেশ প্রদান করে।

সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ইসলাম স্পষ্ট, দ্ব্যর্থহীন, অনমনীয় ও আপোষহীন ভূমিকা পালনে মোমেনদেরকে কঠোর হতে নির্দেশ দেয়। এক্ষেত্রে বক্রতা বা ঘোরপ্যাঁচের কোন সুযোগ নেই। যারা এগুলো করতে চায় তাদের জন্য কোরআন মজীদে কঠিন হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। আর এই হোল আল কোরআনের ভূমিকা যা মুসলমানদেরকে কোন অন্ধকার চোরাবালিতে নয় বরং এক স্থায়ী পাকাপোক্ত শক্ত মাটির উপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যেখানে দাঁড়িয়ে সর্বত্র বিরাজিত তামাম অন্যায়, জুলু্‌ম, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা থেকে পবিত্র করার লক্ষ্যে মুমিনগণ দৃঢ়ভাবে সম্মুখপানে ধাবিত হয়। কোরআনের মর্মস্পর্শী নূরের জ্যেতি তাদের বিবেক, বুদ্ধি, বিশ্বাস, দৃঢ়তা ও আপসহীনতাকে উত্তরোত্তর শাণিত করে। কোন বিপদেই প্রকৃত মুমিনগণ কুণ্ঠিত, দ্বিধাগ্রস্ত বা শয়তানী কুমন্ত্রণায় প্ররোচিত হয় না। তাদের সাথে থাকে দুর্দমনীয় জয়ের স্পৃহা, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের গুণাবলী , অদম্য ত্যাগের মনোবল ও অপ্রতিরোধ্য সাহস।

উচ্ছৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় তাদের উপর আল্লাহ্‌র অর্পিত দায়িত্ব মুমিনগণ পালন করে পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা সহকারে অকুণ্ঠচিত্তে। এমনিভাবেই কোরআনের প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত ব্যক্তিদের দুর্বার প্রতিরোধে পাপ পংকিলতা ও অরাজকতায় নিমজ্জিত বীভৎস কালিমালিপ্ত ঘুটঘুটে অন্ধকার সমাজের বুক চিরে ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে সত্য ও সভ্যতার মহতী মশাল।



বিষয়: বিবিধ

১৫৬৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

198034
২৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০১:২৮
ইক্লিপ্স লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
২৩ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:০৭
192247
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকেGood Luck Good Luck Good Luck
198053
২৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০২:২৮
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৩ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:০৮
192250
সন্ধাতারা লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। Good Luck Good Luck Good Luck
198090
২৬ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৬:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : বেশ ভালো লাগলো৷
কারও মন্তব্যের যদি উত্তর বা প্রতি মন্তব্য করতে চান তবে তার মন্তব্যের নীচে ডান দিকের ছোট্ট নীল এ্যরোতে ক্লিক করুন, যে ঘর আসবে তাতে উত্তর দিন নয়তো কেউ জানতে পারবে না আপনি তার উত্তর দিয়েছেন৷ আমার ধারনা আপনি জানেন, যে কোন কারণে ভুল হয়ে গেছে৷ ধন্যবাদ৷
২৬ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৬
148274
সন্ধাতারা লিখেছেন : লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে সেজন্য শুকরিয়া। পরবর্তী মন্তব্য সংক্রান্ত বক্তব্যটুকু বোধগম্য হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে খোলসা করে বলুন।Good Luck Good Luck Good Luck
198095
২৬ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৭:৫০
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : ধন্যবাদ।
২৬ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৮
148276
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
198177
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:১১
ভিশু লিখেছেন : অনেক সুন্দর করে মূল্যবান এবং পালনীয় কথাগুলো বলেছেন!
২৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০২
148278
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার মহৎ মন্তব্যটি নিঃসন্দেহে আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। আল্লাহ্‌ আপনার মঙ্গল করুণ। সুস্থ থাকুন। ভাল থাকুন। দোয়া রইল। Tongue Tongue Tongue Rolling on the Floor
২৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১২
148285
ভিশু লিখেছেন : Surprised কি ঐসে...এত্ত ভেংচি আবার গড়াগড়ি...Rolling Eyes
২৩ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:১০
192251
সন্ধাতারা লিখেছেন : না না...। ভুল বুঝবেন না ভাইয়া। এতো আনন্দের গড়াগড়ি!!
Good Luck Good Luck Good Luck
198627
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : খুব ভালো লাগলো। +
২৩ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:১২
192252
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File