একটি অমূল্য চিঠি এবং শিক্ষণীয় মর্মস্পর্শী ঐতিহাসিক ঘটনা

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৩ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৩৮:২৭ রাত



বিভিন্ন রেওয়ায়াত থেকে জানা যায় যে, সূরা বাকারার দু’টি আয়াত হযরত আবদুল্লাহ বিন জাহাশের নেতৃত্বাধীন সেনাদল সম্পর্কে নাযিল করা হয়েছিল। আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) হযরত আবদুল্লাহ বিন জাহাশের নেতৃত্বাধীন আট জন মোহাজেরের সেনাদলকে একটি স্থানে পাঠান যে দলে কোন আনসার ছিল না। যাত্রার প্রাক্কালে তাঁকে তিনি খামে বদ্ধ করা একটি চিঠি দিয়ে আদেশ করেন যে, দুই রাত অতিক্রম না করা পর্যন্ত চিঠিটি খোলা যাবে না। অতঃপর সঠিক সময়ে তিনি চিঠিটি খুলে দেখলেন, সেখানে অতি মূল্যবান সংক্ষিপ্ত শব্দগুচ্ছ মালা সুসজ্জিত রয়েছে এভাবেঃ

“আমার এই চিঠি পড়ার পর তোমরা মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী বাতনে নাখলায় চলে যাবে। সেখানে বসে কোরায়েশদের গতিবিধি প্রত্যক্ষ করবে এবং তাদের খবর আমাকে জানাবে। তোমার সাথীদের কেউ তোমার সাথে যেতে চাইলে তাতে আপত্তি করবে না”।

চিঠিটি পড়া মাত্রই হযরত আবদুল্লাহ বিন জাহাশ বলে উঠলেন, “রসূল (সাঃ) এর আদেশ শিরোধার্য”। এই ঘটনাটি ঘটেছিল ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধের পূর্বে। তিনি সাথীদের নিকট রসূল (সাঃ) এর চিঠিটির কথা খুলে বললেন, যে তিনি আমাকে বাতনে নাখলায় গিয়ে কোরায়েশদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে এবং তাদের সংবাদ জানাতে আদেশ করেছেন। তোমরা যদি কেউ আমার সাথে যেতে আগ্রহী হও তবে নিষেধ করতে বারণ করেছেন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি শহীদি মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা কর তবে তারা যেন আমার সঙ্গী হয়। আর যে ব্যক্তির সেটা অপছন্দ, সে যেন মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে। কারণ এই মুহূর্তে আমি রসূল (সাঃ) এর আদেশ পালনের জন্য নাখলার উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা হচ্ছি।

অতঃপর তিনি উপস্থিত সাথীদের আন্তরিক ইচ্ছায় সকলকেই নিয়ে রওয়ানা হলেন। তাদের কেহই অমত পোষণ করে পিছুটান দিলেন না। সুতরাং হেজাজের পথ ধরে সেনাদলটির যাত্রা শুরু হল। কিন্তু কিছু পথ অতিক্রমের পরই তাঁহার দুই সাথী সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস ও উতবা বিন গাজওয়ান (রাঃ) এর উট নিখোঁজ হয়ে গেল। ফলে তারা দুজনেই আবদুল্লাহ বিন জাহাশের দল থেকে অনেক পেছনে পড়ে গেলেন এবং অবশিষ্ট ছয়জন সাথীকে নিয়ে তিনি গন্তব্য পথে ছুটে চললেন। তারা যখন বাতনে নাখলায় পৌঁছালেন তখন দেখলেন কোরায়েশদের একটি বাণিজ্যিক কাফেলা সেই এলাকা অতিক্রম করছিল। যে কাফেলায় আমর ইবনুল হাদরামীসহ আরও তিনজন ছিল। এমতাবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনে জাহাশের নেতৃত্বাধীন সেনাদলটি আমর ইবনুল হাদরামীকে হত্যা করলো, দুইজনকে বন্দী করলো এবং অবশিষ্টজন পালিয়ে গেলো। সেইদিনটিকে সেনাদলটি মনে করেছিলেন জমাদিউসসানীর শেষ দিন, কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় দিনটি ছিল পয়লা রজব, যেটি একটি নিষিদ্ধ মাস। নিষিদ্ধ মাসগুলি সম্মান ও মর্যাদার বিবেচনায় আরবরা খুবই গুরুত্ব দিত। মর্যাদার বিবেচনায় ইসলামেও এ মাসগুলিকে মর্যাদা দেয়া হয়েছে এবং এগুলি নিষিদ্ধ ও পবিত্র মাস হিসাবে পরিগণিত।

পরবর্তী সময়ে দুজন বন্দীসহ বাণিজ্য বহরের সম্পদ রসূল (সাঃ) এর নিকট পেশ করলে তিনি বললেন, আমি তো নিষিদ্ধ মাসে তোমাদেরকে যুদ্ধ করতে আদেশ করিনি। তাই তিনি বন্দীদ্বয় ও বাণিজ্য বহরের মালামালকে গ্রহণ করলেন না। ফলে সেনাদলটি ভীতবিহ্বল হয়ে ভাবতে লাগলো তাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। তারা ভীষণভাবে অনুতপ্ত হলো।

একইসাথে সেনাদলটি সাধারণ মুসলমানদের তিরস্কারের বিষয়বস্তুতে পরিণত হলো। উপরন্তু কোরায়েশরা চারিদিকে এই বলে ছড়াতে লাগলো যে, নিষিদ্ধ মাসে রক্তপাত ঘটিয়ে, মানুষকে বন্দী করে এবং অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করে মোহাম্মদ ও তাঁর সাথীরা নিষিদ্ধ মাসকে হালাল করেছে। আর ইহুদীরা বললো, এই ঘটনাই প্রমাণ করে মোহাম্মদ এর আগামী দিনের কর্মকাণ্ড কী হতে যাচ্ছে। এভাবেই কুচক্রী মহলের প্রতিনিয়ত নানাবিধ কুরুচিপূর্ণ বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারে চারিদিক বিষিয়ে উঠলো। এমনকি মোহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর সাথীগণকে আরবের পবিত্র জিনিসের পদদলনকারী, সীমা অতিক্রমকারী, পবিত্রতা হরণকারী, আগ্রাসী ও স্বার্থান্ধসহ নিত্য নতুন অসহনীয় বিশেষণে বিশেষায়িত করতে লাগলো।

অবশেষে রাব্বুল আলামীন পাক কালামে আয়াত নাযিলের মাধ্যমে সকল অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা সমুচিত জবাব দিয়ে এর প্রকৃত মর্মার্থ তুলে ধরলেন। অতঃপর রসূল (সাঃ) বন্দীদ্বয়সহ বাণিজ্য বহরের আটককৃত মালামাল গ্রহণ করলেন। কেননা আয়াতে নিষিদ্ধ মাসের নিষিদ্ধতা ও পবিত্রতা মেনে নিয়ে ব্যাখ্যা করা হলো যে, সন্মানিত পবিত্র মাসের পবিত্রতা ভঙ্গ করে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করা একটি মারাত্মক অন্যায় কাজ, কিন্তু আল্লাহ্‌র পথ থেকে মানুষকে জোর করে ফেরানো আল্লাহ্‌র অবাধ্যতা, তার সাথে কুফুরী করা, মাসজিদুল হারামের অবমাননা করা, ও তার বাসিন্দাদেরকে তার ভেতর থেকে বহিষ্কার করা এর থেকেও আরো মারাত্মক পাপের কাজ। আর জুলুম, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা এবং অবৈধভাবে পৈশাচিক বলপ্রয়োগ হত্যার চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট। (সূরা বাকারাঃ ২১৭-২১৮) চলবে



বিষয়: বিবিধ

১৮৮৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

196468
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৫:১৬
শেখের পোলা লিখেছেন : চলুক৷ সঙ্গে আছি ইন শাআল্লাহ৷ ধন্যবাদ৷
২৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৮
148284
সন্ধাতারা লিখেছেন : মন্তব্যের সাথে অপেক্ষমাণ পাঠক হিসাবে উৎসাহ যোগানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এই প্রত্যাশায়।Good Luck Good Luck Good Luck
196475
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৭:৫৮
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ। অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ লেখা
২৩ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪
146650
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনুপ্রেরণামূলক সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনিঃশেষ দোয়া। শুকরান, জাযাকাল্লাহ খাইরান।
196500
২৩ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৩
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট, ধন্যবাদ।
২৩ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:৩৬
146653
সন্ধাতারা লিখেছেন : সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনিঃশেষ দোয়া। শুকরান, জাযাকাল্লাহ খাইরান।
196980
২৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১৮
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর প্রতি আনুগত্যের একটি অনুপম ঘটনা।
শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
২৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৩
148286
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার অনুভূতি প্রকাশের ভাষা সত্যিই দারুণ। উদ্দীপ্তমূলক ও আশা জাগানিয়া! পরম করুণাময় আমাদের সকলকেই কোরআন ও রসূল (সঃ) কে অনুসরণ করার সৌভাগ্য নসীব করুণ। আমীন।Rolling on the Floor

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File