যিকির কেন গুরুত্বপূর্ণ আমল?
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৪ মার্চ, ২০১৪, ০৩:০২:৫১ দুপুর
যিকির অর্থ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাককে স্মরণ করা। ইহা বান্দার জন্য বর্ষিত মহান দাতার অফুরাণ সত্ত্বা ও সীমাহীন দানের প্রতি সন্তুষ্টি কামনায় অতি সুন্দর মর্যাদাপূর্ণ সম্মানসূচক আল্লাহরই নাম। যে নামে জমিন ও আসমানের সমস্ত সৃষ্টিকুল তাদের রবের অনিঃশেষ নিয়ামত, বরকত, রহমত এবং সান্নিধ্য পাবার আশায় ও আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল চিত্ত হয়ে ডাকে। কোরআনে বর্ণিত, আল্লাহ্ তা’য়ালার অনেক সুন্দর সুন্দর নামসমূহ রয়েছে, সুতরাং তোমরা সেসব নামসমুহ দ্বারা আল্লাহ্কে ডাকতে থাক। (সূরা আরাফঃ ১৭৯)
এমনিভাবে আল্লাহ্র যিকিরের গুরুত্ব, মাহাত্য, তাৎপর্য এবং অবিশ্বাস্য প্রাপ্তির কথা স্বয়ং আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে অসংখ্যবার উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও যিকির সম্পর্কিত বহু মূল্যবান হাদীস রয়েছে। আল্লাহ্ পাকের পবিত্র নামের স্মরণ তাঁর নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করে এভাবেই একজন যিকিরকারীর দেহ-মন-আত্মা মহান প্রভুর ভালবাসায়, অগাধ বিশ্বাসে আর শান্তিতে একেবারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। কোরআন পাকে আল্লাহ্ বলেন, আপনি বলে দিন হে মোহাম্মাদ যে, তাঁরা আল্লাহ্ বলে ডাকুক বা রহমান ডাকুক সকল নামই উত্তম, কেননা তাঁর অনেক চমৎকার নাম রয়েছে। আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভই তাঁদের একমাত্র ফিকির। আর আপনি ঐ সমস্ত লোকের সংসর্গে বসতে অভ্যস্ত হউন যাঁরা সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য যিকির করে। (সূরা কাহাফঃ ২৮)
আল্লাহ্ পাক এক চমৎকার সর্বোত্তম বাণী সম্বলিত কালাম মানুষের জন্য অবতীর্ণ করেছেন। ইহা এমন একটি কিতাব যাহা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ এবং একই কথা হৃদয়গ্রাহী করে মনোরম ভাষায় বারংবার বর্ণিত হয়েছে। পাক কালামে আছে, আল্লাহ্ ইসলামের জন্য যার বক্ষ উন্মুক্ত করেছেন এবং যে তাঁর রব প্রদর্শিত পথে আছে সে কি তার সমান? দুর্ভোগ তাদের জন্য যাদের অন্তর আল্লাহ্র স্মরণে পরাঙ্মুখ, ওরা বিভ্রান্তিতে আছে স্পষ্টভাবে। আর ইহা তেলোওয়াত করলে ঐসব লোকের শরীর শিহরিত-পুলকিত হয়ে উঠে যাঁরা আপন রবকে ভয় করে। অতঃপর তাঁদের দেহ এবং মন প্রশান্ত-প্রসস্থ হয়ে আল্লাহ্ পাকের স্মরণে বিনয়ের সহিত ঝুঁকে পড়ে। এটিই আল্লাহ্র হেদায়েত, তিনি যাকে ইচ্ছা ইহা দ্বারা হেদায়তপ্রাপ্ত করেন। (সূরা জুম্মারঃ ২২-২৩)
যিকির মানুষের অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়ে আলোর ঝর্ণাধারা সঞ্চারিত করে অবারিত সৌন্দর্যের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় এবং মন-প্রাণকে সুগভীর শান্তির আবেশে ভরিয়ে তোলে। জীবনকে মহতী করে তোলে এবং আনন্দের ফল্গুধারায় আন্দোলিত করে জীবনকে করে সুশোভিত, পরিপূর্ণ এবং মহিমান্বিত। এইভাবে যিকিরকারীগণ নিজেদের আমলনামার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেন এবং তাদের মৃত আত্মা বা ক্বলব হয়ে উঠে আলোকময়, জ্যেতিস্মান। এমতাবস্থায় কেবল তাদের দেলের মধ্যে আল্লাহ্র মহৎ গুণাবলী প্রতিবিম্বিত ও বিকশিত হয়ে উঠে এবং দেলের মধ্যে অফুরাণ শান্তি অনুভূত হয়। আল্লাহ্ পাক কোরআন মজীদে বলেন, যারা ঈমাণ এনেছে এবং একাগ্রচিত্তে বিনীতভাবে আল্লাহ্কে স্মরণ করে আল্লাহ্ তাঁদের অন্তঃকরণ প্রশস্থ ও প্রশান্ত করেন এবং সত্যিকার অর্থে আল্লাহ্র স্মরণেই কেবল অন্তঃকরণ তৃপ্ত ও প্রশান্ত হয়। (সুরা রা’আদঃ ২৮)
যে ব্যক্তি আল্লাহ্র দিকে রুজু হয় তিনি তাঁকে হেদায়েত দান করেন। তাঁরা ঐসব লোক যাঁরা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও আল্লাহ্র যিকিরেই তাঁদের অন্তরে শান্তি আসে। গভীর মনোযোগের সাথে অনুভব করে যে, একমাত্র আল্লাহ্র যিকিরেই মনের শান্তি পাওয়া যায়। (সূরা আরাফঃ ২০১)
কোরআনে বর্ণিত, নিশ্চয়ই আল্লাহ্র স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। (সূরা আনকাবুতঃ ৪৫)
পবিত্র কালামে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন হে বিশ্বাসীগণ তোমরা আল্লাহ্কে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। (সূরা আহযাবঃ ৪১)
অনুরূপভাবে আরো বলা হয়েছে যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহ্র যিকির করে এবং আসমান ও জমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা ভাবনা করে এবং বলে, হে আমাদের রব তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা কর। এঁদের জন্য আখেরাতে মহাপ্রতিদান রয়েছে। (সূরা আল ইমরানঃ ১৯০-১৯১)
আল্লাহ্ তা’য়ালা অন্যত্র বলেছেন, তোমরা যখন জলযান ও পশুর পৃষ্ঠে দৃঢ়রূপে বসে আরোহণ কর, তখন তোমার রবের নেয়ামতকে স্মরণ কর এবং বল, ‘পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি আমাদের অসমর্থ হওয়া সত্ত্বেও এগুলিকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। (সূরা যুখরুফঃ ১৩)
অতএব আল্লাহ্র নেয়ামতগুলি স্মরণ কর যেন তোমাদের কল্যাণ হয়। যেমন পৃথিবীতে থাকার জন্য বাসস্থান, কোমল মাটিতে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ, পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ এ সবকিছুর জন্য আল্লাহ্র স্মরণ কর। (সূরা আরাফঃ ৬৮,৭৪)
আরো বলা হয়, নিঃসন্দেহে আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, যৌন অঙ্গ হিফাজতকারী পুরুষ ও যৌন অঙ্গ হিফাজতকারী নারী, আল্লাহ্কে অধিক পরিমাণে স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক পরিমাণে স্মরণকারী নারী এঁদের জন্য আল্লাহ্ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা আহযাবঃ ৩৫)
আল্লাহ্ পাক বলেছেন পবিত্র আল কোরআন বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশস্বরূপ। অতএব তুমি ধৈর্য ধারণ কর, আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য, তুমি ক্ষমা চাও তোমার পাপের জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রবের সুপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। (সূরা মুমিনঃ ৫৪-৫৫)
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, আপন প্রতিপালককে অন্তরে কান্নাকাটি ও ভয়ভীতির সহিত সামান্য অস্পষ্ট স্বরে সকাল ও সন্ধ্যায় ডাকতে থাক এবং গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হইও না। ( সূরা আরাফঃ ২০৫)
সমান নয় অন্ধ ও চক্ষুষ্মান এবং যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে এবং যারা পাপাচারী। (সূরা মুমিনঃ ৫৮)
তোমরা আপন প্রতিপালককে বিনয় এবং নীরবতার সহিত ডাকতে থাক নিশ্চয়ই তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না; বরং জমীনের উপর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবার পর অশান্তি ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করিও না এবং ভয়-ভীতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষা সহকারে আল্লাহ্কে ডাকতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রহমত নেক বান্দাদের অতি সন্নিকটেই। (সূরা আরাফঃ ৫৬)
প্রকৃত ঈমানদার তাঁরাই যাদের সম্মুখে আল্লাহ্র যিকির হওয়া মাত্রই তাঁদের অন্তরসমুহ ভয়ে কম্পিত হয়ে উঠে এবং তাঁদের নিকট যখন আল্লাহ্র আয়াতসমূহ পঠিত হয় তখন তাঁদের ঈমান আরও মজবুত ও বর্ধিত হয়, আর তাঁরা সর্বদা পরওয়ারদিগারের উপরই নির্ভর করে থাকে। (সূরা আনফালঃ ২)
আল্লাহ্ বলেন “তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। আর যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা অচিরেই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ্ই রাতকে বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং দিনকে করেছেন আলোকোজ্জ্বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অনুগ্রহশীল মানুষের প্রতি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মুমিনঃ ৬০)
হে ঈমানদারগণ তোমরা শত্রু দলের সম্মুখীন হলে অবিচল থাকবে এবং আল্লাহ্কে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য করবে অন্যথায় সাহসহারা হয়ে পড়বে ও তোমাদের প্রভাব বিনষ্ট হবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন। (সূরা আনফালঃ ৪৫)
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী আর কে? আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা কুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করেছি; তুমি তাদেরকে সৎপথে আহ্বান করলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না। (সূরা কাহাফঃ ৫৭)
আল্লাহ্র যিকির থেকে তাদের চোখের মধ্যে আবরণ পড়ে গিয়েছিল ও তাদের কানও ছিল বধির তাই তারা শুনতে অপারগ ছিল। (সূরা কাহাফঃ ১০১)
হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি এবং সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদিগকে আল্লাহ্র যিকির হতে উদাসীন না করে, যারা এরূপ করবে নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকূনঃ ৯)
সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে দূর করে দেয়। স্মরনকারীদের জন্য ইহা একটি উপদেশ। (সূরা হূদঃ ১১৪)
পূর্ণ ঈমানদারদের ইহাও একটি পরিচয় যে, তাঁরা ভয় করে সে দিনকে যেদিন তাঁদের অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে এবং তাঁদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহ্র যিকির হতে বিরত রাখতে পারে না। (সূরা নূরঃ ৩৭)
আপনি ঐসব বিনয়ী ব্যক্তিগণকে জান্নাতের সুসংবাদ দান করুন, যাদের নিকট আল্লাহ্র যিকির করা মাত্রই তাঁদের অন্তর ভয়ে কম্পিত হয়ে উঠে, যারা তাঁদের বিপদে-আপদে ধৈর্যধারণ করে ও নামায কায়েম করে এবং আমি তাঁদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা হাজ্জঃ ৩৫)
যে ব্যক্তি আপন প্রতিপালকের যিকির হতে বিমুখ হয় আল্লাহ্ পাক তাকে কঠিন আজাবে গ্রেফতার করবেন। ( সূরা জ্জীনঃ ১৭)
যে ব্যক্তি জেনে শুনে মেহেরবান আল্লাহ্র যিকির হতে বিমুখ হয় আমি তাঁর উপর একটা শয়তান নিযুক্ত করে দেই, অতঃপর সেই হয় তার সহচর। (সূরা জূখরুফঃ ৩৬)
আল্লাহ্ পাক আক্ষেপ করে বলেন, মু’মিন লোকদের জন্য এখনও কি ঐ সময় আসে নাই যে, তাদের অন্তর আল্লাহ্র যিকিরের দিকে ঝুঁকে পড়বে। (সূরা হাদীদঃ ১৬)
মোনাফেকদের উপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে, তাই শয়তান তাদেরকে আল্লাহ্র যিকির হতে গাফেল করে দিয়েছে, ইহারাই শয়তানের দল। জেনে রাখবে শয়তানের দলই অনিবার্য ধ্বংসপ্রাপ্ত। (সূরা মূজাদালাহঃ ১৯)
অনিবার্য ধ্বংস ঐসব লোকের জন্য যাদের অন্তর আল্লাহ্র যিকির দ্বারা বিগলিত হয় না। ইহারাই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে। (সূরা জুম্মারঃ ২২)
নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তি কামিয়াবী লাভ করে যে বদ আখলাক ছেড়ে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও নামাজ আদায় করে। (সূরা আ’লাঃ ১৪-১৫)
তিনিই চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নাই। অতএব দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে একনিষ্ঠ হয়ে একমাত্র তাঁকেই ডাক। (সূরা মু’মিনঃ ১৪)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্কে বেশী বেশী স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর। তিনিই তোমাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও তোমাদের জন্য রহমত প্রার্থনা করে যেন তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যায় এবং তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা আহযাবঃ ৪১-৪৩)
যাঁরা আরামের বিছানা ত্যাগ করে এই অবস্থায় যে, তাঁরা আশঙ্কায় ও আশায় আপন মাওলাকে ডাকতে থাকে এবং তাঁদের প্রদত্ত রিজিক হতে তাঁরা ব্যয় ও দান-খয়রাত করে। কেহই উপলব্ধি করতে পারে না এই ধরনের লোকদের মনোরঞ্জনের জন্য আল্লাহ্র দরবারে নয়ন প্রীতিকর কি সংরক্ষিত রয়েছে ইহা একমাত্র তাঁদের কৃতকর্মের পুরুস্কারস্বরূপ। (সূরা ছেসদাঃ ১৬-১৭)
বিশ্বাসীগণের সদা-সর্বদা ঈমানকে তরতাজা রাখার ক্ষেত্রে তাই তীক্ষ্ণ খেয়াল রাখা জরুরী। প্রত্যেক মানুষের উচিৎ ঈমানকে সতেজ ও বিশুদ্ধ করার জন্য গভীর রাত্রে মাওলার ভয়ে ও মহব্বতে রোনাজারী করা। তা না হলে অতিরিক্ত পাপাচারের ফলে অন্তরের ময়লা পুরু হয়ে যায় এবং সত্য কথা একে ছুঁতে বা স্পর্শ করতে পারে না বরং প্রবেশই করে না। হতভাগ্য এবং বঞ্চিত ঐ সমস্ত মানুষ যারা আল্লাহ পাকের কথা শুনলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে হাল্কাভাবে উড়িয়ে দেয়। (সূরা মুতাফফিফানঃ ১৪)
সারা জাহানের রব আল্লাহ্! তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, তাই তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে ডাক। প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহ্রই প্রাপ্য এবং তাঁরই নিকট সকলকে আত্মসমর্পণ করতে আদিষ্ট করা হয়েছে। এদের মধ্যে কারও কারও পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং এজন্য যে যাতে তারা তাদের নির্ধারিতকাল প্রাপ্ত হয় এবং যাতে তারা অনুধাবণ করতে পারে। তিনিই জীবন দেন ও তিনিই মৃত্যু ঘটান এবং যখন তিনি কিছু করার ইচ্ছা করেন তখন বলেন, “হও” এবং তা হয়ে যায়। তুমি কি ওদের লক্ষ্য কর না যারা বিতর্ক করে আল্লাহ্র নিদর্শন সম্পর্কে? ওরা কোথায় ফিরে যাচ্ছে? ওরা গ্রন্থ ও আমার রাসূলদের যা দিয়ে প্রেরণ করেছিলাম তা অস্বীকার করে- সুতরাং ওরা জানতে পারবে-যখন ওদের গলদেশে বেড়ি ও শৃঙ্খল থাকবে, ওদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে, প্রথমে ফুটন্ত পানিতে, পরে ওদের অগ্নি দগ্ধ করা হবে; পরে বলা হবে, যাদের তোমরা শরীক করতে তারা কোথায়? ওদের বলা হবে জাহান্নামে চিরকাল অবস্থিতির জন্য ওতে প্রবেশ কর, কত নিকৃষ্ট উদ্ধতদের আবাসস্থল। (সূরা মুমিনঃ ৬৪-৭৩-৭৬)
এসব মানুষের আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রতি ভয় ও ভক্তি উঠে যায় ও এবাদত-বন্দেগীতে আলস্য, বিতশ্রদ্ধ ও বিরক্তবোধ জন্ম নেয়। তাই য যিকিরকারীগণ সর্বাবস্হায় তাঁদের ঈমাণী চেতনায় অটল ও অনড় থেকে একমাত্র আল্লাহ্র আনুগত্য ও উভয় জাহানের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। যিকির-আজগরের প্রতি চুম্বকতুল্য আকর্ষণ তাঁদেরকে একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টিতে বিলীন করে দেয়। সেখানেই তাঁরা মধুর সঞ্জীবনী সুধা আহরণ করে সিক্ত হয়। যা পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায় না। এ এক অব্যক্ত দুর্লভ প্রাপ্তি। আল্লাহ্ পাক বলেন, হে বিশ্বাসীগণ তোমরা আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। তিনিই তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও অনুগ্রহ প্রার্থনা করে অন্ধকার হতে আলোকে আনার জন্য এবং তিনি বিশ্বাসীদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা আহজ্জাবঃ ৪১-৪৪)
দুনিয়াতে এমন অনেক লোক আছে যারা পবিত্র হতে চায় এবং আল্লাহ্ পবিত্রদের পছন্দ করেন। পবিত্র কালামে উল্লেখিত, যে ব্যক্তি তাঁর গৃহের ভিত্তি আল্লাহ-ভীতি ও আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উপর স্থাপন করে সেই উত্তম, না ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার গৃহের ভিত্তি স্থাপন করে ধ্বংসের কিনারায়, এবং যা ওকে সহ জাহান্নামের আগুনে পতিত হয়? আর আল্লাহ্ অনাচারী কাওমকে পথ দেখান না। (সূরা তওবাহঃ ১০৯)
যিকিরকারীদের অন্তঃকঃকরণ প্রদীপের আলোয় ঝলমলে যে আলোয় সমস্ত পৃথিবী আলোকিত হয়ে থাকে। এরাই জীবিত এঁদের কোন মৃত্যু নেই। আল্লাহ্র যিকিরের মধ্যেই মুলতঃ প্রত্যেক ঈমাণদার ব্যক্তির মাগফেরাত ও কল্যাণ নিহিত। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, এসমস্ত বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদের জন্য আছে উচ্চ মর্যাদা ও শুভ পরিণাম। (সূরা ছোয়াদঃ ২৫)।
যিকিরের ফলে মোমিনের অন্তরে এক ধরণের ভাব অনুভূত হয় এবং সেই অনুভূতি ও ভাবাবেগের ফলশ্রুতিতে মানুষের দেল পরিশুদ্ধ হয়। এই পরিশুদ্ধ ক্বলব বা আত্মা মানুষকে অহর্নিশ কল্যাণের পথে অগ্রগামী করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং মহৎ কাজের স্বাদ আস্বাদন করার সৌভাগ্য এনে দেয় যা থেকে অবিশ্বাসীগণ সর্বদাই বঞ্চিত থাকে। দ্বীনপিপাসু যিকিকারীদের মন-প্রাণ আল্লাহ্র প্রতি গভীর ভালোবাসায় ও অগাধ শ্রদ্ধায় ডুবে থাকে। খোদাপ্রেমীগণ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে পূর্ণ শান্তি ও অন্তহীন স্বাদের ভিতরে তলিয়ে যায় যেখানে তাঁরা অনুভব করেন চুম্বকতুল্য আকর্ষণ এবং লাভ করেন মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের পরম সান্নিধ্য। সুতরাং আপন পরওয়ারদেগারের নাম জপতে থাক এবং যাবতীয় সংশ্রব হতে সম্পর্কচ্ছেদ করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকেই মগ্ন হয়ে যাও। (সূরা মোজাম্মেলঃ ৮)
যিকির অর্থ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহপাককে স্মরণ করা। ইহা বান্দার জন্য বর্ষিত মহান দাতার অফুরাণ সত্ত্বা ও সীমাহীন দানের প্রতি সন্তুষ্টি কামনায় অতি সুন্দর মর্যাদাপূর্ণ সম্মানসূচক আল্লাহরই নাম। যে নামে জমিন ও আসমানের সমস্ত সৃষ্টিকুল তাদের রবের অনিঃশেষ নিয়ামত, বরকত, রহমত এবং সান্নিধ্য পাবার আশায় ও আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল চিত্ত হয়ে ডাকে। কোরআনে বর্ণিত, আল্লাহ্ তা’য়ালার অনেক সুন্দর সুন্দর নামসমূহ রয়েছে, সুতরাং তোমরা সেসব নামসমুহ দ্বারা আল্লাহ্কে ডাকতে থাক। (সূরা আরাফঃ ১৭৯)
এমনিভাবে আল্লাহ্র যিকিরের গুরুত্ব, মাহাত্য, তাৎপর্য এবং অবিশ্বাস্য প্রাপ্তির কথা স্বয়ং আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে অসংখ্যবার উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও যিকির সম্পর্কিত বহু মূল্যবান হাদীস রয়েছে। আল্লাহ্ পাকের পবিত্র নামের স্মরণ তাঁর নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করে এভাবেই একজন যিকিরকারীর দেহ-মন-আত্মা মহান প্রভুর ভালবাসায়, অগাধ বিশ্বাসে আর শান্তিতে একেবারে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। কোরআন পাকে আল্লাহ্ বলেন, আপনি বলে দিন হে মোহাম্মাদ যে, তাঁরা আল্লাহ্ বলে ডাকুক বা রহমান ডাকুক সকল নামই উত্তম, কেননা তাঁর অনেক চমৎকার নাম রয়েছে। আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভই তাঁদের একমাত্র ফিকির। আর আপনি ঐ সমস্ত লোকের সংসর্গে বসতে অভ্যস্ত হউন যাঁরা সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য যিকির করে। (সূরা কাহাফঃ ২৮)
আল্লাহ্ পাক এক চমৎকার সর্বোত্তম বাণী সম্বলিত কালাম মানুষের জন্য অবতীর্ণ করেছেন। ইহা এমন একটি কিতাব যাহা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ এবং একই কথা হৃদয়গ্রাহী করে মনোরম ভাষায় বারংবার বর্ণিত হয়েছে। পাক কালামে আছে, আল্লাহ্ ইসলামের জন্য যার বক্ষ উন্মুক্ত করেছেন এবং যে তাঁর রব প্রদর্শিত পথে আছে সে কি তার সমান? দুর্ভোগ তাদের জন্য যাদের অন্তর আল্লাহ্র স্মরণে পরাঙ্মুখ, ওরা বিভ্রান্তিতে আছে স্পষ্টভাবে। আর ইহা তেলোওয়াত করলে ঐসব লোকের শরীর শিহরিত-পুলকিত হয়ে উঠে যাঁরা আপন রবকে ভয় করে। অতঃপর তাঁদের দেহ এবং মন প্রশান্ত-প্রসস্থ হয়ে আল্লাহ্ পাকের স্মরণে বিনয়ের সহিত ঝুঁকে পড়ে। এটিই আল্লাহ্র হেদায়েত, তিনি যাকে ইচ্ছা ইহা দ্বারা হেদায়তপ্রাপ্ত করেন। (সূরা জুম্মারঃ ২২-২৩)
যিকির মানুষের অন্ধকারাচ্ছন্ন হৃদয়ে আলোর ঝর্ণাধারা সঞ্চারিত করে অবারিত সৌন্দর্যের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় এবং মন-প্রাণকে সুগভীর শান্তির আবেশে ভরিয়ে তোলে। জীবনকে মহতী করে তোলে এবং আনন্দের ফল্গুধারায় আন্দোলিত করে জীবনকে করে সুশোভিত, পরিপূর্ণ এবং মহিমান্বিত। এইভাবে যিকিরকারীগণ নিজেদের আমলনামার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেন এবং তাদের মৃত আত্মা বা ক্বলব হয়ে উঠে আলোকময়, জ্যেতিস্মান। এমতাবস্থায় কেবল তাদের দেলের মধ্যে আল্লাহ্র মহৎ গুণাবলী প্রতিবিম্বিত ও বিকশিত হয়ে উঠে এবং দেলের মধ্যে অফুরাণ শান্তি অনুভূত হয়। আল্লাহ্ পাক কোরআন মজীদে বলেন, যারা ঈমাণ এনেছে এবং একাগ্রচিত্তে বিনীতভাবে আল্লাহ্কে স্মরণ করে আল্লাহ্ তাঁদের অন্তঃকরণ প্রশস্থ ও প্রশান্ত করেন এবং সত্যিকার অর্থে আল্লাহ্র স্মরণেই কেবল অন্তঃকরণ তৃপ্ত ও প্রশান্ত হয়। (সুরা রা’আদঃ ২৮)
যে ব্যক্তি আল্লাহ্র দিকে রুজু হয় তিনি তাঁকে হেদায়েত দান করেন। তাঁরা ঐসব লোক যাঁরা আল্লাহ্র প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ও আল্লাহ্র যিকিরেই তাঁদের অন্তরে শান্তি আসে। গভীর মনোযোগের সাথে অনুভব করে যে, একমাত্র আল্লাহ্র যিকিরেই মনের শান্তি পাওয়া যায়। (সূরা আরাফঃ ২০১)
কোরআনে বর্ণিত, নিশ্চয়ই আল্লাহ্র স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। (সূরা আনকাবুতঃ ৪৫)
পবিত্র কালামে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন হে বিশ্বাসীগণ তোমরা আল্লাহ্কে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। (সূরা আহযাবঃ ৪১)
অনুরূপভাবে আরো বলা হয়েছে যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহ্র যিকির করে এবং আসমান ও জমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা ভাবনা করে এবং বলে, হে আমাদের রব তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা কর। এঁদের জন্য আখেরাতে মহাপ্রতিদান রয়েছে। (সূরা আল ইমরানঃ ১৯০-১৯১)
আল্লাহ্ তা’য়ালা অন্যত্র বলেছেন, তোমরা যখন জলযান ও পশুর পৃষ্ঠে দৃঢ়রূপে বসে আরোহণ কর, তখন তোমার রবের নেয়ামতকে স্মরণ কর এবং বল, ‘পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি আমাদের অসমর্থ হওয়া সত্ত্বেও এগুলিকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। (সূরা যুখরুফঃ ১৩)
অতএব আল্লাহ্র নেয়ামতগুলি স্মরণ কর যেন তোমাদের কল্যাণ হয়। যেমন পৃথিবীতে থাকার জন্য বাসস্থান, কোমল মাটিতে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ, পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ এ সবকিছুর জন্য আল্লাহ্র স্মরণ কর। (সূরা আরাফঃ ৬৮,৭৪)
আরো বলা হয়, নিঃসন্দেহে আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনয়ী পুরুষ ও বিনয়ী নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার নারী, যৌন অঙ্গ হিফাজতকারী পুরুষ ও যৌন অঙ্গ হিফাজতকারী নারী, আল্লাহ্কে অধিক পরিমাণে স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক পরিমাণে স্মরণকারী নারী এঁদের জন্য আল্লাহ্ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন। (সূরা আহযাবঃ ৩৫)
আল্লাহ্ পাক বলেছেন পবিত্র আল কোরআন বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য পথনির্দেশ ও উপদেশস্বরূপ। অতএব তুমি ধৈর্য ধারণ কর, আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য, তুমি ক্ষমা চাও তোমার পাপের জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রবের সুপ্রশংসা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। (সূরা মুমিনঃ ৫৪-৫৫)
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, আপন প্রতিপালককে অন্তরে কান্নাকাটি ও ভয়ভীতির সহিত সামান্য অস্পষ্ট স্বরে সকাল ও সন্ধ্যায় ডাকতে থাক এবং গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হইও না। ( সূরা আরাফঃ ২০৫)
সমান নয় অন্ধ ও চক্ষুষ্মান এবং যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে এবং যারা পাপাচারী। (সূরা মুমিনঃ ৫৮)
তোমরা আপন প্রতিপালককে বিনয় এবং নীরবতার সহিত ডাকতে থাক নিশ্চয়ই তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না; বরং জমীনের উপর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবার পর অশান্তি ও ফ্যাসাদ সৃষ্টি করিও না এবং ভয়-ভীতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষা সহকারে আল্লাহ্কে ডাকতে থাক। নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রহমত নেক বান্দাদের অতি সন্নিকটেই। (সূরা আরাফঃ ৫৬)
প্রকৃত ঈমানদার তাঁরাই যাদের সম্মুখে আল্লাহ্র যিকির হওয়া মাত্রই তাঁদের অন্তরসমুহ ভয়ে কম্পিত হয়ে উঠে এবং তাঁদের নিকট যখন আল্লাহ্র আয়াতসমূহ পঠিত হয় তখন তাঁদের ঈমান আরও মজবুত ও বর্ধিত হয়, আর তাঁরা সর্বদা পরওয়ারদিগারের উপরই নির্ভর করে থাকে। (সূরা আনফালঃ ২)
আল্লাহ্ বলেন “তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের প্রার্থনা কবুল করব। আর যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা অচিরেই লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ্ই রাতকে বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং দিনকে করেছেন আলোকোজ্জ্বল। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অনুগ্রহশীল মানুষের প্রতি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। (সূরা মুমিনঃ ৬০)
হে ঈমানদারগণ তোমরা শত্রু দলের সম্মুখীন হলে অবিচল থাকবে এবং আল্লাহ্কে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও। আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য করবে অন্যথায় সাহসহারা হয়ে পড়বে ও তোমাদের প্রভাব বিনষ্ট হবে। তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গেই আছেন। (সূরা আনফালঃ ৪৫)
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার অপেক্ষা অধিক অত্যাচারী আর কে? আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা কুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করেছি; তুমি তাদেরকে সৎপথে আহ্বান করলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না। (সূরা কাহাফঃ ৫৭)
আল্লাহ্র যিকির থেকে তাদের চোখের মধ্যে আবরণ পড়ে গিয়েছিল ও তাদের কানও ছিল বধির তাই তারা শুনতে অপারগ ছিল। (সূরা কাহাফঃ ১০১)
হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি এবং সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদিগকে আল্লাহ্র যিকির হতে উদাসীন না করে, যারা এরূপ করবে নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা মুনাফিকূনঃ ৯)
সৎকর্ম অবশ্যই অসৎকর্মকে দূর করে দেয়। স্মরনকারীদের জন্য ইহা একটি উপদেশ। (সূরা হূদঃ ১১৪)
পূর্ণ ঈমানদারদের ইহাও একটি পরিচয় যে, তাঁরা ভয় করে সে দিনকে যেদিন তাঁদের অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে এবং তাঁদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহ্র যিকির হতে বিরত রাখতে পারে না। (সূরা নূরঃ ৩৭)
আপনি ঐসব বিনয়ী ব্যক্তিগণকে জান্নাতের সুসংবাদ দান করুন, যাদের নিকট আল্লাহ্র যিকির করা মাত্রই তাঁদের অন্তর ভয়ে কম্পিত হয়ে উঠে, যারা তাঁদের বিপদে-আপদে ধৈর্যধারণ করে ও নামায কায়েম করে এবং আমি তাঁদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (সূরা হাজ্জঃ ৩৫)
যে ব্যক্তি আপন প্রতিপালকের যিকির হতে বিমুখ হয় আল্লাহ্ পাক তাকে কঠিন আজাবে গ্রেফতার করবেন। ( সূরা জ্জীনঃ ১৭)
যে ব্যক্তি জেনে শুনে মেহেরবান আল্লাহ্র যিকির হতে বিমুখ হয় আমি তাঁর উপর একটা শয়তান নিযুক্ত করে দেই, অতঃপর সেই হয় তার সহচর। (সূরা জূখরুফঃ ৩৬)
আল্লাহ্ পাক আক্ষেপ করে বলেন, মু’মিন লোকদের জন্য এখনও কি ঐ সময় আসে নাই যে, তাদের অন্তর আল্লাহ্র যিকিরের দিকে ঝুঁকে পড়বে। (সূরা হাদীদঃ ১৬)
মোনাফেকদের উপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে, তাই শয়তান তাদেরকে আল্লাহ্র যিকির হতে গাফেল করে দিয়েছে, ইহারাই শয়তানের দল। জেনে রাখবে শয়তানের দলই অনিবার্য ধ্বংসপ্রাপ্ত। (সূরা মূজাদালাহঃ ১৯)
অনিবার্য ধ্বংস ঐসব লোকের জন্য যাদের অন্তর আল্লাহ্র যিকির দ্বারা বিগলিত হয় না। ইহারাই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে। (সূরা জুম্মারঃ ২২)
নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তি কামিয়াবী লাভ করে যে বদ আখলাক ছেড়ে পবিত্রতা অবলম্বন করে এবং প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও নামাজ আদায় করে। (সূরা আ’লাঃ ১৪-১৫)
তিনিই চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নাই। অতএব দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে একনিষ্ঠ হয়ে একমাত্র তাঁকেই ডাক। (সূরা মু’মিনঃ ১৪)
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্কে বেশী বেশী স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর। তিনিই তোমাদের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও তোমাদের জন্য রহমত প্রার্থনা করে যেন তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যায় এবং তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা আহযাবঃ ৪১-৪৩)
যাঁরা আরামের বিছানা ত্যাগ করে এই অবস্থায় যে, তাঁরা আশঙ্কায় ও আশায় আপন মাওলাকে ডাকতে থাকে এবং তাঁদের প্রদত্ত রিজিক হতে তাঁরা ব্যয় ও দান-খয়রাত করে। কেহই উপলব্ধি করতে পারে না এই ধরনের লোকদের মনোরঞ্জনের জন্য আল্লাহ্র দরবারে নয়ন প্রীতিকর কি সংরক্ষিত রয়েছে ইহা একমাত্র তাঁদের কৃতকর্মের পুরুস্কারস্বরূপ। (সূরা ছেসদাঃ ১৬-১৭)
বিশ্বাসীগণের সদা-সর্বদা ঈমানকে তরতাজা রাখার ক্ষেত্রে তাই তীক্ষ্ণ খেয়াল রাখা জরুরী। প্রত্যেক মানুষের উচিৎ ঈমানকে সতেজ ও বিশুদ্ধ করার জন্য গভীর রাত্রে মাওলার ভয়ে ও মহব্বতে রোনাজারী করা। তা না হলে অতিরিক্ত পাপাচারের ফলে অন্তরের ময়লা পুরু হয়ে যায় এবং সত্য কথা একে ছুঁতে বা স্পর্শ করতে পারে না বরং প্রবেশই করে না। হতভাগ্য এবং বঞ্চিত ঐ সমস্ত মানুষ যারা আল্লাহ পাকের কথা শুনলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে হাল্কাভাবে উড়িয়ে দেয়। (সূরা মুতাফফিফানঃ ১৪)
সারা জাহানের রব আল্লাহ্! তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই, তাই তাঁর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে ডাক। প্রশংসা বিশ্বজগতের রব আল্লাহ্রই প্রাপ্য এবং তাঁরই নিকট সকলকে আত্মসমর্পণ করতে আদিষ্ট করা হয়েছে। এদের মধ্যে কারও কারও পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং এজন্য যে যাতে তারা তাদের নির্ধারিতকাল প্রাপ্ত হয় এবং যাতে তারা অনুধাবণ করতে পারে। তিনিই জীবন দেন ও তিনিই মৃত্যু ঘটান এবং যখন তিনি কিছু করার ইচ্ছা করেন তখন বলেন, “হও” এবং তা হয়ে যায়। তুমি কি ওদের লক্ষ্য কর না যারা বিতর্ক করে আল্লাহ্র নিদর্শন সম্পর্কে? ওরা কোথায় ফিরে যাচ্ছে? ওরা গ্রন্থ ও আমার রাসূলদের যা দিয়ে প্রেরণ করেছিলাম তা অস্বীকার করে- সুতরাং ওরা জানতে পারবে-যখন ওদের গলদেশে বেড়ি ও শৃঙ্খল থাকবে, ওদের টেনে নিয়ে যাওয়া হবে, প্রথমে ফুটন্ত পানিতে, পরে ওদের অগ্নি দগ্ধ করা হবে; পরে বলা হবে, যাদের তোমরা শরীক করতে তারা কোথায়? ওদের বলা হবে জাহান্নামে চিরকাল অবস্থিতির জন্য ওতে প্রবেশ কর, কত নিকৃষ্ট উদ্ধতদের আবাসস্থল। (সূরা মুমিনঃ ৬৪-৭৩-৭৬)
এসব মানুষের আল্লাহ্ ও রাসুলের প্রতি ভয় ও ভক্তি উঠে যায় ও এবাদত-বন্দেগীতে আলস্য, বিতশ্রদ্ধ ও বিরক্তবোধ জন্ম নেয়। তাই য যিকিরকারীগণ সর্বাবস্হায় তাঁদের ঈমাণী চেতনায় অটল ও অনড় থেকে একমাত্র আল্লাহ্র আনুগত্য ও উভয় জাহানের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। যিকির-আজগরের প্রতি চুম্বকতুল্য আকর্ষণ তাঁদেরকে একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টিতে বিলীন করে দেয়। সেখানেই তাঁরা মধুর সঞ্জীবনী সুধা আহরণ করে সিক্ত হয়। যা পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যায় না। এ এক অব্যক্ত দুর্লভ প্রাপ্তি। আল্লাহ্ পাক বলেন, হে বিশ্বাসীগণ তোমরা আল্লাহ্কে অধিক স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো। তিনিই তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও অনুগ্রহ প্রার্থনা করে অন্ধকার হতে আলোকে আনার জন্য এবং তিনি বিশ্বাসীদের প্রতি পরম দয়ালু। (সূরা আহজ্জাবঃ ৪১-৪৪)
দুনিয়াতে এমন অনেক লোক আছে যারা পবিত্র হতে চায় এবং আল্লাহ্ পবিত্রদের পছন্দ করেন। পবিত্র কালামে উল্লেখিত, যে ব্যক্তি তাঁর গৃহের ভিত্তি আল্লাহ-ভীতি ও আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উপর স্থাপন করে সেই উত্তম, না ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার গৃহের ভিত্তি স্থাপন করে ধ্বংসের কিনারায়, এবং যা ওকে সহ জাহান্নামের আগুনে পতিত হয়? আর আল্লাহ্ অনাচারী কাওমকে পথ দেখান না। (সূরা তওবাহঃ ১০৯)
যিকিরকারীদের অন্তঃকঃকরণ প্রদীপের আলোয় ঝলমলে যে আলোয় সমস্ত পৃথিবী আলোকিত হয়ে থাকে। এরাই জীবিত এঁদের কোন মৃত্যু নেই। আল্লাহ্র যিকিরের মধ্যেই মুলতঃ প্রত্যেক ঈমাণদার ব্যক্তির মাগফেরাত ও কল্যাণ নিহিত। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, এসমস্ত বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীলদের জন্য আছে উচ্চ মর্যাদা ও শুভ পরিণাম। (সূরা ছোয়াদঃ ২৫)।
যিকিরের ফলে মোমিনের অন্তরে এক ধরণের ভাব অনুভূত হয় এবং সেই অনুভূতি ও ভাবাবেগের ফলশ্রুতিতে মানুষের দেল পরিশুদ্ধ হয়। এই পরিশুদ্ধ ক্বলব বা আত্মা মানুষকে অহর্নিশ কল্যাণের পথে অগ্রগামী করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং মহৎ কাজের স্বাদ আস্বাদন করার সৌভাগ্য এনে দেয় যা থেকে অবিশ্বাসীগণ সর্বদাই বঞ্চিত থাকে। দ্বীনপিপাসু যিকিকারীদের মন-প্রাণ আল্লাহ্র প্রতি গভীর ভালোবাসায় ও অগাধ শ্রদ্ধায় ডুবে থাকে। খোদাপ্রেমীগণ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের কাছে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে পূর্ণ শান্তি ও অন্তহীন স্বাদের ভিতরে তলিয়ে যায় যেখানে তাঁরা অনুভব করেন চুম্বকতুল্য আকর্ষণ এবং লাভ করেন মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের পরম সান্নিধ্য। সুতরাং আপন পরওয়ারদেগারের নাম জপতে থাক এবং যাবতীয় সংশ্রব হতে সম্পর্কচ্ছেদ করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকেই মগ্ন হয়ে যাও। (সূরা মোজাম্মেলঃ ৮)
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুব ভালো লাগ্লো পোস্টটি...
মন্তব্য করতে লগইন করুন