পর্দার গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৯ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৩৯:১১ বিকাল
সমাজে প্রতিটি নারীর অনাবিল সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, মান-সম্ভ্রম, নিরাপত্তা, নিশ্চিন্ততা ও চির আকাঙ্ক্ষিত পরম শান্তির যে অন্যতম মূল চাবিকাঠি তা নিঃসন্দেহে পর্দা। একটি পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার অনন্তকালের আকর্ষণ, পারস্পারিক অনুপম ত্যাগের প্রতিযোগিতা, অগাধ শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস সেটা অর্জিত হয় একটি নির্মল নিখাদ ভালবাসা ত্যাগ মিশ্রিত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পর্দা বিমুখ নারীরা এই গুণাবলীর অন্তরায়। পর্দাহীন নারীরা সমাজে অবৈধ আকর্ষণ ও অরুচিকর আসক্তির জন্ম দেয় যা পুরুষদেরকে নিষিদ্ধ বস্তুর দিকে আকৃষ্ট করে টেনে নেয় এক কুৎসিত অবাঞ্চিত পাপাচার জগতে। যা সমাজকে অস্থির ও অসহিস্নু ও অশান্ত করে তোলে। গৃহদাহ শুরু হয় জ্বালাময়ী বিশ্বাসঘাতকতার নিষ্ঠুর তাণ্ডবে, অহর্নিশ স্নায়ুযুদ্ধ পুড়ে ছারখার করে মন মগজকে যার বিষ বাস্পে আক্রান্ত হয় পুরো পরিবার তথা গোটা জাতি।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিরুদ্বেগ আস্থা, সংশয়মুক্ত ভালবাসার অপূর্ব সৌন্দর্যের মোহময়ী নির্ভেজাল সম্পর্ক আনায়নে পর্দা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নিঃসন্দেহে। পর্দা যেমন একটি মেয়েকে সুস্থ, নিরাপদ, শান্তিময় পরিশীলিত সমাজে বসবাসের নিশ্চয়তা দেয় ঠিক তেমনি দেয় সম্মানজনক জীবন জীবিকার গ্যারান্টি। হিজাব পরিধান একজন নারীর ধর্মীয় মূল্যবোধের চেতনা ও স্বাধীনতা যা ইসলামিক অনুশাসনের অংশ। মুসলিম নারীদের অধিকার পরিপন্থী কোন কাজ করা যেমন ইসলাম সম্মত নয় ঠিক তেমনি কারও প্রতি জোর করে ইসলামী কর্মকাণ্ড বা অনুশাসন চাপিয়ে দেয়ারও কোন বিষয় নয়। মুসলিম নারীগণ আল্লাহভীতি তথা ধর্ম বিশ্বাসের কারণেই বোরকা পড়ে থাকেন যা পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং সম্প্রীতি বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর ব্যতয় হলে কিংবা দ্বীনের নবী (সঃ) প্রবর্তিত পর্দা সংক্রান্ত সুন্নাহগুলি লঙ্ঘন করলে নারীরা তাদের ব্যক্তিগত সম্মান, অধিকার, সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হতে বঞ্চিত হবে।
কোরআন মজীদে পর্দা সম্পর্কে বলা হয়েছে এভাবেঃ তুমি ঈমানদার নারীদেরকে বলো, তারা যেন নিজের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গকে হেফাজত করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য ও সাজসজ্জাকে প্রকাশ না করে। তবে আপনা হতে যেটুকু প্রকাশিত হয় সেটুকু ব্যতীত (মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি, পায়ের পাতা)। মোমেন নারীদের আরও সতর্ক করে দাও তারা যেন তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত রাখে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর ছেলে, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, বোনের ছেলে, আপন নারীরা, তাদের অধিকারভুক্ত অনুগত দাসী, অধীনস্থদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কিত অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো কাছে নিজেদের সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য বা আভরণ প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদেক্ষেপ না করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ্র নিকটবর্তী হয়ে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা নুরঃ ৩০-৩১)
দয়াময় প্রভু আমাদের কল্যাণের জন্য অতি উত্তম পন্থা বাতলে দিয়েছেন, সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন কীভাবে নিজেদেরকে পর্দাসহ শালীনভাবে অপরের সামনে উপস্থাপন করতে হবে, কীভাবে পথ চলতে হবে এবং এহলৌকিক ও পারলৌকিক সফলতার জন্য মহান রাব্বূল ইজ্জতের দরবারে কীভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে তাও শিখিয়ে দিয়েছেন! সূবহানাল্লাহ!! অথচ এই নারীরা ভ্রান্তির কারণে মানুষ প্রণীত আইনের ফাঁদে পরে কখনো ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে যৌন দাসী সেজে নিজের অমূল্য রত্ন সতীত্ব, মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধকে চিরতরে বিসর্জন দিচ্ছেন হচ্ছেন শোষিত ও নিগৃহীত। বিলাসী স্বাধীন রঙ্গিন জীবন পাবার প্রাণান্তকর প্রয়াসে স্বেচ্ছাচারী, বিধ্বস্ত ও সর্বশান্ত হচ্ছেন প্রতিটি পদক্ষেপে। পরিশেষে অবসন্ন, অশান্ত, পরিশ্রান্ত হৃদয়ে দুকূল হা্রানোর তীব্র যন্ত্রণার দহনে পুড়ে হচ্ছেন দিশেহারা, পথহারা। অপরদিকে অন্য আর এক শ্রেণীর নারী পর্দার নামে অজ্ঞতার মুকুট মাথায় পড়ে নিজেদেরকে ঘরের কোণে বন্দী করে হচ্ছেন পরিবারের জন্য বাড়তি বোঝা ও মহা দুশ্চিন্তার কারণ! ধর্ম বিমুখ মানুষ যেমন সমাজের জন্য অনিরাপদ এবং বিপদজনক ঠিক তেমনি অনেকাংশে ধর্মান্ধতাও সমাজ সংসারের জন্য অনুপযোগী ধ্বংসাত্মক ও অনাকাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট, যা সুকৌশলে আল্লাহ্র বিধি বিধানকে লঙ্ঘনের প্ররোচনায় ইন্ধন যোগাতে অভিমুখী করে। যেমন ফতোয়া দেয়া হয় মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা হারাম। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে তাহলে আমাদের মা বোনেরা যদি গুরুতর অসুস্থ হন, গর্ভবতী অবস্থায় সংকটাপন্ন হয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে চান (আল্লাহ্ না করুন) তখন তারা কার কাছে যাবেন? অথবা বয়োবৃদ্ধ পিতামাতার জীবনে যদি কেহ একমাত্র কন্যা সন্তান হন তাহলেই বা তাদের জীবিকার ব্যয়ভার কে বহন করবে? কিংবা বিবাহিত জীবনে সন্তানসন্ততি সহ যদি হঠাৎ করে বিধবা হয়ে যান বা স্বামী বিকলাঙ্গ হয়ে যায় তাহলেই বা কি করনীয়? এসব হাজারো বাস্তব সমস্যা আজ আমাদের চারিদিকে বিরাজমান, নেই কোন সমাধান!
এই দুই প্রান্তিকতার সীমাহীন বাড়াবাড়ির ফল সমগ্র বিশ্বকে প্রতিনিয়ত কূড়ে কূড়ে খাচ্ছে, নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের শেষ কিনারায়। তাই প্রকৃত মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হল ধর্মবিমুখতা পরিহার করতঃ এক্ষেত্রে ইসলামী চিন্তা ও আদর্শের ভিত্তিতে ধর্ম নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি না করে ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত করা যাতে বিশ্ব শান্তি ও কল্যাণ লাভ তথা আল্লাহ্ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৩০১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই নিন একজন বাংলাদেশী মুসলিম মহিয়সী । Made in Bangladesh .
বাংলাদেশের সন্মান বিশ্বের দরবারে আরও উঁচু হল ।
ব্রাভো মাকসুদা ওরফ্ মাকস্ !
আমরা নারী সবই পারি
মন্তব্য করতে লগইন করুন