ইসলামী আন্দোলন বনাম বাংলাদেশের রাজনীতি

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৩:০৩:৫৯ দুপুর

মহা গ্রন্থ আল কোরআনে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, ইসলাম হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট ধর্ম এবং মুসলমান হল সবচেয়ে উত্তম মানবজাতি যাতে কোনই সন্দেহ নেই। উম্মাতে মোহাম্মাদীই হচ্ছে “উম্মতে ওয়াসাত” কেন্দ্রীয় উম্মাত, মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী শ্রেষ্ঠ উম্মাত। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) হলেন বিশ্ব জাহানের মানবমণ্ডলীর নেতা, সত্যের আলোকবর্তিকা। আর তাঁর অনুসারী হিসাবে গোটা মানবজাতিকে সুসংগঠিত করার, নেতৃত্ব কর্তৃত্ব দেয়ার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যাবতীয় দায়িত্ব এই উম্মাতে মোহাম্মাদীর উপরই ন্যস্ত করা হয়েছে।

এজন্য একজন নেতার মধ্যে যেসব গুণাবলী ও যোগ্যতা থাকা দরকার সেটাও হতে হবে আমাদের প্রিয় মহান নেতা ও রসূল (সঃ) এর পদাঙ্গ ও গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে। যদিও এসব অর্জন ও প্রয়োগ অতি দুরূহ কাজ তবে অসম্ভব নয়। আমাদের প্রয়োজন এমন এক সুবিশাল সমুদ্রসম চিত্তের উদার মানবতাবাদী বিচক্ষণ নেতা যার মাঝে আমরা খুঁজে পাবো আমাদের নয়নমণি সুবিজ্ঞ দরদী নেতাকে। যিনি পাহাড়সম অবিচলতা, সুগভীর দৃঢ়তা, পরম মহানুভবতা ও অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন দূরদর্শিতা দিয়ে কারারুদ্ধ জাতিকে উপহার দিবে মুক্তি, স্বাধীনতা, ধর্ম পালনের গ্যারান্টি ও শান্তির অফুরন্ত স্বাদ আর ভরিয়ে তুলবে মানব জাতির স্বপ্নমাখা কাঙ্ক্ষিত বাস্তব আশা আকাঙ্ক্ষাকে। এভাবেই পরিপূর্ণভাবে আদায় হবে ধর্মের হক এবং নিখাদ নৈসর্গিক ত্যাগের অনুভূতিতে সিক্ত আকৃষ্ট অভিভূত হবে পুরো জগতময়। একারণেই ইসলামের যাবতীয় কাজ সুসামঞ্জস্যপূর্ণ, হৃদয়ঘটিত, সুসমন্বিত, পবিত্র ও অসাধারণ।

আর এই মহান গুরু দায়িত্ব শুধু তারাই নিতে সক্ষম যারা একমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য তাদের অতি প্রিয় জান মাল ও আপনজন হাসি মুখে কোরবানি দিতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্নভাবে জামায়াত এবং শিবিরের রক্ত প্লাবিত ইস্পাত কঠিন ঈমানী চেতনা ও ত্যাগকে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অগণিত মানুষ গর্বভরে শ্রদ্ধার সাথে সন্মান জানায়। কোরআন মজীদও তাঁদেরকে এভাবেই সম্মানিত করেছেন, যারা আল্লাহ্‌র পথে নিহত হয়েছে তাদের তোমরা কখনো মৃত্যু বলো না বরং তাঁরাই হচ্ছে প্রকৃত জীবিত মানুষ কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারো না। (সূরা বাকারাঃ ১৫৪)

অপর আয়াতে বলা হয়, আমি নিশ্চয়ই ঈমানের দাবীতে তোমাদের জান মাল, ক্ষুধা, ধনসম্পদ ও ফসলের ক্ষতিসাধন করে তোমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবো এবং যারা ধৈর্যের সাথে এর মোকাবেলা করে তুমি সেসব ধৈর্যশীলদের আমার নেয়ামতের সুসংবাদ দাও। তাঁরাই ধৈর্যশীল যারা কোনো বিপদ এলে বলে আমরা তো আল্লাহ্‌র জন্যেই এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। এরা হচ্ছে সে সব ব্যক্তি, যাদের উপর আল্লাহ্‌র অগণিত রহমত ও অপার করুণা বর্ষিত হয়, আর এরাই সৎ ও সঠিক পথপ্রাপ্ত। (সূরা বাকারা ১৫৫-১৫৭)

তাই সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে এই দলটির আশাতীত বিজয় অনেককে চমকিত বিস্মিত করলেও আমি কিন্তু এতটুকু বিচলিত হইনি কারণ জামায়াত পুরো জাতির কাছে এরচেয়েও অনেক বেশী কিছু “ডিজার্ভ” করে।

যদিও এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। তদুপরি আমার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আলোচনার বিষয়বস্তুতেও একই চিত্র ও অনুভূতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এখানে বলা প্রয়োজন যদিও আমি কখনই পূর্বে জামায়াত-শিবিরমনা ছিলাম না। আমার বিশ্বাস এটিও তাদের বিরাট বিজয় ও সাফল্য যে সরকার প্রকারান্তরে জামায়াত শিবিরকে বিশ্ব দরবারে রাজনীতির পরিমণ্ডলে ঘুমিয়ে থাকা মানুষদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি, অদম্য কৌতূহলী এবং গণজাগরণ সৃষ্টিতে অভূতপূর্ব অনন্য রাজনীতির প্লাটফর্ম গড়ায় সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করছে।

একইসাথে বর্তমান সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি, উদ্ধতপূর্ণ বক্তব্য, নিরাপরাধ মানুষের উপর সীমাহীন অন্যায় অত্যাচার অবিচার, চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের গোলামী, মনগড়া আজগুবি মিথ্যা অপবাদ দেয়া, ধর্ম বিদ্বেষীদের পক্ষালম্বন ও পুরুস্কৃত করা এরকম বহুবিধ কারণে জনগণ এই মিথ্যাচারী জালিম সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তা সত্ত্বেও এই দলটির আজ অবধি ক্ষমতায় টিকে থাকার নেপথ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি চিহ্নিত হয়েছে তা আপামর জনগণকে আশাহত করে, তা হল ইসলামী দলগুলোর বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রকট অভাব, অদূরদর্শিতা, দলীয় সংকীর্ণতা, বলিষ্ঠ ও সঠিক দিক নির্দেশনামূলক সময়োচিত পদক্ষেপের করুণ দৈন্যদশা!

অথচ ইসলামী আন্দোলনের যে আসল উদ্দেশ্য তা হোল সমাজে দুশমন কর্তৃক বিরাজিত জুলুম নির্যাতন অশান্তিময় গোলযোগপূর্ণ পরিবেশ প্রতিহত করে চক্রান্তকারীদের সর্বনাশা অপতৎপরতার শেষ চিহ্নটুকু চিরতরে মুছে ফেলে মজলুমদের রক্ষা করা। এইভাবে নবী (সঃ) এর একান্ত অনুগত উম্মত হিসাবে নিজেকে শামিল করার পাশাপাশি নিজের ঈমানী দায়িত্বকে সতেজ সজীব পরিপুষ্ট ও বলীয়ান করে তোলা। এজন্যই প্রতিটি মুসলমান ভাই ভাই এটাই ইসলামের শ্বাশত সৌন্দর্য এবং স্বভাবগত বৈশিষ্ট। এটাই ইসলামের নিখুঁত, সুষ্ঠু ও সুষম বিধান। অথচ বাস্তবে পরিলক্ষিত হয় বাংলাদেশের মাটিতে বিশ্ব ইজতেমায় সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলিম অংশগ্রহণ করলেও নিপীড়িত মানুষকে বাঁচানোর তাগিদ বা অপরিহার্যতা অনেকেই অনুভব করছেন না যা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক ও বেদনাদায়ক। এমতাবস্থায় ইসলামের দুশমনদের আগ্রাসন থেকে অসহায় মানুষকে নিরাপদ পরিবেশ দানে, পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্‌র প্রতিনিধিত্ব পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে সমগ্র বিশ্ব তথা বাংলাদেশের যমীনে সঠিক নেতৃত্ব ও ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মের কোনই বিকল্প নেই।

‘তাকওয়া’ আল্লাহভীতি কেবল বিশেষ কিছু ইসলামী আচার অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ নয়, নয় কোন দায়সারা অজুহাতে বিপদগ্রস্থ জাতিকে দুর্বিষহ ভয়াবহ পরিণামের দিকে ঠেলে দিয়ে পিছুটান দেয়া বা ধর্মান্ধতার কারণে ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করে মূল্যায়ন করা নয়তো সশরীরে লড়াইয়ের মাঠে অংশগ্রহণ না করে কেবল বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব কৌশলে এড়িয়ে চলা বরং সকল ষড়যন্ত্রের জালকে ছিন্ন করে একজন নেতা মুসলিম সংহতির লক্ষ্যে শৃঙ্খলিত জাতিকে উদ্ধার করে আলোকিত জীবন দান করে পরিচয় করিয়ে দেয় সুসংবদ্ধ মুসলিম জাতি হিসাবে। আর এভাবেই দ্বীন পরিপূর্ণভাবে জীবন্ত হয়ে উঠে, এর মহত্ত্ব, গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ত্বের দলীল জানান দেয় বিশ্বের দরবারে।

বিষয়: বিবিধ

১২৫৪ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

181196
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১০
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন :
তাই সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে এই দলটির আশাতীত বিজয় অনেককে চমকিত বিস্মিত করলেও আমি কিন্তু এতটুকু বিচলিত হইনি কারণ জামায়াত পুরো জাতির কাছে এরচেয়েও অনেক বেশী কিছু “ডিজার্ভ” করে।

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:১৬
134211
সন্ধাতারা লিখেছেন : বাংলাদেশের জনগণ জেগেছে, এদেরকে শুধু হক ও বাতিলগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। তাহলেই দ্রুত সফলতা আসবে ইনশাল্লাহ।
181200
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:১৪
সজল আহমেদ লিখেছেন : লেখার মান ভাল।প্রিয়তে রেখে দিলাম।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:১৮
134212
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার মহানুভবতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। শুকরান, জাযাকাল্লাহ খাইরান।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৩০
134217
সজল আহমেদ লিখেছেন : আল্লাহ আপনার হেফাজাত করুক।।
181279
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:১৩
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:১৯
134213
সন্ধাতারা লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য অনিঃশেষ দোয়া রইল।
181296
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৬
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:২১
134215
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার সর্বাঙ্গীণ সুন্দর ও সুস্থতার জন্য দোয়া রইল।
181414
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:১০
শেখের পোলা লিখেছেন : অত্যন্ত বলিষ্ঠ লেখনী৷ ধন্যবাদ৷ আমাদের বেশির ভাগ মৌলানা জেহাদ যে কি তা বোঝেননা,আর তাদের মনোভাব,'হামচুনী দীগার নিস্ত'৷আমার মত বুঝদার আর কেউ নে যুতের৷ যোগ্যতা না থাকলেও প্রধান নেতা হতে চায়৷ অথচ তাদের জানা উচিৎ;-হজ্জের কাফেলার সর্দার হজরত আবুবকরকে বানিয়ে অসুস্থ রসুল বিদায় দেওয়ার পর সুরা তওবা নাজিল হল, যার কিছু অংশ আাফাতের ময়দানে ঘোষনা দিতে হবে৷ রসুল সঃ তখন হজরত আলিকে একাজের দায়িত্ব দিয়ে কাফেলায় শরিক হতে পাঠালেন৷ হজরত আলি রাঃ কাফেলায় যোগদিলেই সালাম বিনিময়ের পর হজরত আবুবকর রাঃ আলি রাঃ কে প্রথম প্রশ্ন করে ছিলেন;আপনাকে কাফোর আমির করে পাঠানো হলে আগে দায়িত্ব নিন, পরে অন্য কথা৷ আলি রাঃ বললেন না, আমির আপনিই আমার দায়িত্ব আয়াত ঘোষণা দেওয়া৷ আবু বকর রাঃ কি আলির চাইতে উপযুক্ত ছিলেন না? কিন্তু তাঁরা নিজেকে অন্যের চাইতে কম মনে করতেন৷ আর আমাদের নায়েবে রসুল গন মনে করেন তার উল্টো৷ আর তাই সমঝোতা হয়না৷
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:৩৫
134218
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার উদারতার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও দোয়া কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি বলিষ্ঠদের দলভুক্ত আমি নই। দোয়া করবেন যেন ভাল কিছু আল্লাহ পাক লেখার তৌফিক দেন। সত্যিকার মেধাসম্পন্ন মানুষেরা নিজেদেরকে সমসময় আড়াল করে রাখে অথচ .........।।। ত্যাগ মানুষকে মহৎ করে আর লোভে হয় ধ্বংস। বাংলাদেশে শীঘ্রই যেন রাহমানুর রাহীম একজন যোগ্য ও ত্যাগী নেতা আমাদের মাঝে পাঠিয়ে দেন। আমীন।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
134537
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহ ঔদ্ধত্বের শেষ দেখতে চান,সাথে মুমিনদের ধৈর্য৷ আমরা বর্তমানে সেখানেই আছি৷ ওদের দেয়ালে পিঠ ঠেকলেই আমাদের এগুবার পালা৷ আল্লাহ নিশ্চয়ই হাদী পাঠাবেন৷ ধন্যবাদ আপনাকে৷
188901
০৮ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : আপনার মতামতের সাথে পূর্ণ মত পোষণ করি। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের ইমানি চেতনা বৃদ্ধি করুণ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File