রুখো ভারত, বাঁচাও দেশ
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৩:১৮:৪৮ রাত
বাংলাদেশের হতভাগ্য মানুষ অবিশ্বাসী মীরজাফর নেতাদের হাতে দেশের ভাগ্য নির্ধারণের যে পবিত্র দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল তারই খেসারত হিসাবে জাতিকে আজ দিতে হচ্ছে কঠিন মাশুল। যদিও গত নির্বাচন ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রেরই খণ্ডিত অংশবিশেষ। যার দলীল-প্রমাণ জনগণের হাতে রয়েছে। তাই সচেতন বিবেকবান মানুষ আজ হারে হারে টের পাচ্ছে প্রতি পদে প্রতারিত হয়ে। দাঁতে দাঁত পিষছে, ছিঁড়ছে নিজের মাথার চুল, বিবেক দংশনে ক্ষত বিক্ষত আজ। মাতম করছে নিজেদের চরম বোকামি আর ভুলের জন্য। এমতবস্থায় ক্ষমতার পালাবদলের জন্য সামনের নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণী খেলা বেশ জমজমাট, নাটকীয়তায় ভরপুর। আবার জনগণকে বোকা বানানোর অপচেষ্টা এবং নিত্য নতুন কূটকৌশল!!
এ খেলায় যারা বাজিমাত করার অপকৌশলে লিপ্ত তারা সুদীর্ঘকাল পর্দার অন্তরালে থেকে কলকাঠি নাড়ালেও এখন নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে আবির্ভূত হয়েছে। কথার মারপ্যাঁচে জনগণকে বোকা বানানোর সর্বশেষ কৌশল প্রয়োগে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতার লোভে এতটাই উন্মাদ ও বেপরোয়া যে ভারতের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে দেশকে গৃহযুদ্ধের পথে ঠেলে দিয়েছে। তাদের প্রেসক্রিপশন থেকে তারা যে একচুলও নড়বে না তার জ্বলন্ত প্রমাণ দেশবাসী ভালভাবেই প্রত্যক্ষ করছে। অতি লোভের কারণে তারা যে কোন মূল্যে জনগণের মতামতকে জিবিয়ে খাবে। কারণ ওখানেই নিহিত আছে ক্ষমতার চাবি। এ চাবি কিছুতেই তারা হাত ছাড়া করতে নারাজ। সেটা হোক অন্যায়, জুলুম বা জুয়াচুরি। এতে গোটা বাংলাদেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না। কিন্তু তাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। ভারতের প্রয়োজনীয়তা যেদিন ফুরিয়ে যাবে, হিসাব নিকাশের খাতা যেদিন বন্ধ হবে সেদিন হয়তোবা আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সিকিমের ভাগ্যবরণ করতে হবে কিংবা তার থেকেও অতি ভয়াবহ করুণ পরিণতি। ইতিহাস তো সে কথাই বলে।
আমি কোন দলের লোক নই তবে নিজের বিবেক দিয়ে অন্তত এটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি সরকার জামাত-শিবিরের নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বানিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যে কুৎসিত রটনা রটিয়ে জামাত-শিবিরকে মূলত সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ মানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে দেয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। মানুষকে কৌতূহলী করেছে সত্যকে জানার, বোঝার এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার। তাই বাংলার জনগণ তাঁদের ঈমানী চেতনার দায়বদ্ধতা থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে দেশ রক্ষার সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে জানবাজি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ জামায়াত-শিবির সংগ্রাম করে ঈমানের ছায়াতলে। তাঁদের চাওয়া পাওয়া দুনিয়া নয়, আখিরাত। তাই তাঁরা বীরের বেশে সংগ্রাম করে আল্লাহকে রাজী খুশী করার জন্য। আর অধিকাংশ রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য হোল আত্মিক সাধন, ব্যক্তি পূজা বা নিজের খায়েশকে চরিতার্থ করা। এটাই বোধকরি জামাত-শিবির এবং অন্যান্য দলের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য। আর এই আদর্শের কারণে কারো মৃত্যু হচ্ছে শহিদী মৃত্যু, আবার একই ময়দানে মৃত্যুবরণ করেও কারো ভাগ্যে নসীব হচ্ছে কাফেরী মৃত্যু।
এই শহীদি মৃত্যুর আরাধনা যারা করে শুধু তাঁরাই বোঝে এর মর্ম বা প্রাপ্তি। তাঁদের জান, মাল, জ্ঞান, অর্জন সবকিছুই আত্মসমর্পিত হয় কেবলমাত্র আল্লাহর রাহে। তাঁরা বাতিল শক্তির কাছে মাথানত করতে জানে না। তাই তাঁরা যেকোন ইসলামী আন্দোলনের মাঠে থাকে সদা অকুতোভয়, অপ্রতিরোধ্য। যা লুটেরা ভারতকে ভীষণ ভাবনায় ফেলেছে, তাদের স্বপ্নের ভীতকে কাঁপিয়ে তুলেছে, আতঙ্কিত করেছে। তাদের হিসেব নিকেশে গরমিল হচ্ছে। এজন্য তারা মরণ কামড় দেয়ার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর মাধ্যমে বিভিন্নভাবে অপতৎপরতা দীর্ঘ দিন ধরে চালাচ্ছে। অতিসম্প্রতি ভারত মদদপুষ্ট নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কোনরকম রাক ঢাক ছাড়াই সাংবাদিকদের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ভারত বিএনপি নয় জামাত-শিবিরকে ভয় পায়। অর্থ দাঁড়াচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের গতিপথ রুখতে তারা বেশ অধৈর্য এবং অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আর এজন্যই ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফরের সময় স্পষ্টভাবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিএনপি-জামায়াতের সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করে আওয়ামীলীগের সাথে একদলীয় নির্বাচনে শরীক হতে চাপ প্রয়োগ করে। যদিও এই নেতা বলেছেন, আমার মত দু’জন এরশাদ আওয়ামীলীগকে সমর্থন করলেও তাদেরকে বাঁচানো যাবে না। ইতিমধ্যেই জননেত্রী খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের মনের ভাষা বোঝার জন্য ভারতের কাছে আশা প্রকাশ করেছেন। এ যেন চোরকে ধর্মের কাহিনী শুনানোর মত।
বাংলাদেশের কাছ থেকে বন্দর সুবিধা, ট্রানজিট সুবিধা, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভারতীয় বিদ্রোহী দমনে সহযোগিতা ছাড়াও বহুবিধ সুযোগ সুবিধা তারা ভোগ করছে। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে অবাধ রমরমা ব্যবসা-বানিজ্যসহ প্রতিটি সেক্টরে ক্ষমতার যে প্রভূত স্বাদ তারা পেয়েছে এটা পরিত্যাগ করা তাদের জন্য সত্যিই দুরূহ। তাই তারা গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামীলীগ সরকারকে দিয়ে এক ঢিলে বহু পাখী মারার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যে দেশে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেও শাস্তির পরিবর্তে সন্মানিত করা হয়! ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে যে দেশে দেশবরেণ্য নেতা হওয়া যায়! যেখানে শেয়ার বাজারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উল্টো বিনিয়োগকারীদেরকে ধমকি-হামকি দেয়া হয়! যে দেশে সরকারী আদেশে নির্বিচারে গুলি করে স্কুল ছাত্রকে খুন করা হয়! যে দেশে রাষ্ট্রীয় নির্দেশে অন্ধকারে গভীর ঈমানী চেতনার আলেম-ওলামাকে গণহারে হত্যা করা হয়! সত্য সংবাদ প্রকাশের দায়ে জেলের ঘানি টানতে হয়! আল্লাহ্ ও রসূলের কটাক্ষকারীকে গদ গদ ভাষায় তোয়াজ করা হয়! পরিকল্পিতভাবে অরুচিকর অসত্য ইসলামী ইতিহাস পাঠ্য পুস্তকে সন্নিবেশিত করা হয়! সে দেশের স্বৈরাচারী সরকারের কাছে সৎ, আদর্শবান, নির্ভীক, ধর্মপ্রাণ মানুষ যে নিরাপদ নয় তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে? তাইতো তারা ইসলামী গণজাগরণের নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে উল্লাসে মেতে উঠে। এই ইসলাম বিদ্বেষী, জনগণের দুশমন শাসক গোষ্ঠীর কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আর কিইবা আশা করা যায়??? এতেই তাদের মানসিক অভিরুচি ও বিকৃতির চেহারাটা আরও নগ্ন ভাবে বেরিয়ে আসে। তাদের কাছে ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, সত্য-অসত্য মুখ্য নয়। তাদের কাছে বিবেচ্য হল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে ক্ষমতা দখল করা। তাই তারা শকুনের মত হামলে পড়েছে। বিচারের নামে চলছে চরম জুলুম অত্যাচার এবং লোমহর্ষক-হৃদয়বিদারক অবিচার।
বাংলাদেশের মানুষের আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। গোটা দেশ লণ্ডভণ্ড, বিধ্বস্ত। রক্তের নেশায় উন্মাদ সরকারী পেটোয়া বাহিনী। তারা নির্লজ্জ বেহায়ার মত জনগণের টাকায় উদর পূর্তি করে তাঁদেরকেই গুলি করে মারছে। হত্যা, জেল, জুলুম, গুম, আগুন আর আগুন চারিদিকে। এ এক ভয়াল তাণ্ডব। মানুষ আজ দিশেহারা। জীবনের স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ স্তব্ধ। মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছে। এরই মধ্যে চলছে নিরাপরাধ ইসলামী নেতার ফাঁসির মহড়া। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। দেশজুড়ে সাধারণ মানুষ বেদনায় জর্জরিত হয়ে শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করেছে। বিক্ষুব্ধ জনতার ঘৃণা আর ক্ষোভের আগুন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এরমধ্যে র্যা।ব, পুলিশ, বিজিবিসহ আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের উস্কানিমুলক বর্বরতা ও গুলিবর্ষণের কারণে সংঘাত আর সংঘর্ষে সারাদেশ উত্তাল। সহিংসতায় নিহত-আহতসহ রেল, সড়ক, নৌ, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, গণতন্ত্র, মানুষের ধর্মচিন্তা ও আদর্শ বোধের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ভারত যে সর্বনাশা ন্যাক্কারজনক খেলায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে এর ভয়াবহ পরিণামের ফল একদিন তাদেরকেও ভোগ করতে হবে। আর এজন্যই তারা ইসলামধর্ম বিশ্বাসীদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত। ভারত ভালো করেই জানে আদর্শহীন দলের নেতাদেরকে ক্ষমতার মোহে কাবু করা গেলেও আল্লাহভীরু নেতাদের বাগিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই তারা হন্যে পাগলের মত ছুটাছুটি করছে। ইসলামী সেনারা আল্লাহ্ তায়ালার রহমতের আশায় আখেরাত কামনা করে, অবিচল বিশ্বাসের সাথে একমাত্র আল্লাহ্র রসূলের আদর্শ অনুসরণ করে। তাঁরা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে কেবলিই কোরআনকে দিকনির্দেশনা হিসাবে পেতে চায়। এই অসাধারণ জ্ঞান-প্রজ্ঞা এবং ত্যাগের মহিমায় তারা হয়ে উঠে আলোকিত মানুষে। এ কারণেই ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে কোন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে তাঁরাই হবে শ্রেষ্ঠ দল এতে কোনই সন্দেহ নেই। তাঁরাই বাংলাদেশের গর্বিত সন্তান এবং নেতা। মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা পাওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত হকদার। এই সূর্য সন্তানদের দ্বারাই এদেশ শত্রুমুক্ত হবে ইনশাল্লাহ। ইসলামী আইন ও শাসন কায়েমের জন্য শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার জীবনদান বিশ্ববাসীর জন্য প্রেরণাদায়ক শক্তি হিসাবে কেয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে। এই শাহাদতি রক্তের শক্তি চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবাণ এবং ত্বরান্বিত করবে। শহীদের রক্ত কখনই বৃথা যায়নি, যাবে না। আল্লাহু আকবর।
বিষয়: বিবিধ
১৬৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন