“রাত যত গভীর হয়, ভোর ততই কাছে আসে’’
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০৭ নভেম্বর, ২০১৩, ১২:০১:০২ রাত
প্রতিনিয়ত হানাহানি, খুনাখুনি, মারামারি, সংঘর্ষ, ভাংচুর, লুণ্ঠন, জুলুম, গ্রেফতার, মামলা, রিমান্ড, প্রকাশ্য দিবালোকে জনসম্মুখে প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, অনবরত গুলির আওয়াজ, বুলেটের আঘাতে জর্জরিত রক্তপ্লাবিত আহতদের গগণবিদারী আহাজারি ও পথে পড়ে থাকা গুলিবিদ্ধ নিহতদের নিথর দেহ দেখলে বিনা দ্বিধায় বলতে হয় বাংলাদেশে এখন রীতিমত যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। আর এই সৃষ্ট মহাদুর্যোগ ও মহাসঙ্কটের মূল এবং একমাত্র কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধিবিধান সংবিধানে ছিল তা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবিধান থেকে বাদ দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করা। সরকারের এই নগ্ন ও দুরভিসন্ধিমূলক হীনমন্য চরিত্র আজ গোটাবিশ্বে উন্মোচিত, সমালোচিত, ঘৃণিত।
আওয়ামীলীগ সরকারের প্রায় পাঁচ বছরের আকাশচুম্বী সীমাহীন দুর্নীতি শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত মফস্বল পর্যন্ত একই দাপটে চলছে। যে প্রতিহিংসার স্বীকার রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্পষ্টবাদী সাধারণ মানুষ, সৎসাহসী সাংবাদিক, গার্মেন্টস শ্রমিক, আলেম-ওলামা, স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী, মেধাবী তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া অসহায় দিনমজুর পর্যন্ত। এই সরকার শেয়ার বাজার, হলমার্ক, কুইক রেন্টাল, ভূমিদখল, রেল, পদ্মাসেতুসহ অগণিত উপায়ে সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকাই শুধু আত্মসাৎ করেনি, ক্ষমতার দাপটে কেড়ে নিয়েছে মা বোনের ইজ্জত, হরণ করেছে ভোটাধিকার, ঘটিয়েছে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, অত্যন্ত সুকৌশলে পাঠ্যক্রমে ঢুকিয়ে দিয়েছে দীর্ঘমেয়াদি ইসলাম চেতনা বিনাশী কার্যক্রম, মহান রাব্বুল আলামিন এবং মুসলমানদের হৃদয়ের মণি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্ললাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে করেছে জঘন্যভাবে অপমানিত। এরই প্রতিবাদে রাস্তায় নামলে ভিন্ন মতের টিভি মিডিয়া বন্ধ করে, বিদ্যুতের আলো নিভিয়ে গভীর রাতের অন্ধকারে লক্ষ লক্ষ জিকির-নামাজরত ও ঘুমন্ত দীনি ভাইদের উপর নেমে আসে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম বর্বরোচিত হামলা। মুহূর্তেই তাজা রক্তে ভেসে যায় মতিঝিল চত্তর। এখানেই তারা ক্ষান্ত হননি, মিথ্যা মামলা, রিমান্ডসহ তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় পবিত্র কোরআন পোড়ানোসহ ব্যাংক ও স্বর্ণের দোকান লুণ্ঠনের চাতুরীপূর্ণ অভিনব অভিযোগ। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার করা হয়, বলা হয় সেদিন কোন লোক মারা যায়নি, তাঁরা গাঁয়ে রঙ মেখে রাস্তায় শুয়ে ছিল। লক্ষ লোকের সমাবেশ “আধাঘণ্টায় ফিনিশ” বলে দম্ভোক্তি করা হয়।
যা দেখে-শুনে সারা জাহানের বিবেকবান মানুষ হয়েছে স্তম্ভিত, বাকরুদ্ধ। এতকিছুর পরেও অতি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, কান্নাবিগলিত নয়নে পরম ধৈর্য, ত্যাগ আর সংযমের পথ অবলম্বন করে সরকারকে সংশোধিত পথে আসার বিনীত অনুরোধ করে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন নেতারা। কিন্তু কার্যত ঘটেছে তার বিপরীত। সত্যবিমুখ ন্যায়ভ্রষ্ট জালিম সরকার তদন্ত কমিটি গঠন না করে বরং মানবাধিকারের নেতাকে তথ্য প্রকাশের দায়ে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ার ব্যবস্থা করে যদিও তা প্রতিবাদের মুখে এক পর্যায়ে সরকার হার মানতে বাধ্য হয়। এই ফ্যাসিবাদী সরকার জেলখানায় পুড়ে রেখেছে অগণিত নিরাপরাধ মানুষকে।
বর্তমান অবস্থায় উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত, আতঙ্কিত মানুষ যেন বসবাস করছে এক জ্বলন্ত চুল্লীতে। পুড়ছে ঘরবাড়ী, আর্তনাদ স্বজনহারার, পঙ্গুদের অসহনীয় দুর্ভোগ, বুকের ধন সন্তান হারানোর কষ্টে স্তব্ধ মাতাপিতা, ঘরে ঘরে জ্বলছে প্রতিবাদের আগুন, গুমরে মরছে নির্ভীক আত্মচিৎকার আর ন্যায় বিবেকের নিদারুণ কষ্টের দংশন। আর এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ইসলামবিদ্বেষী ভারতের তাঁবেদার আওয়ামীলীগ সরকার নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে ভারতস্বপ্ন বাস্তবায়নে জনগণের সাথে চরম বেঈমানি করে একের পর এক নীলনকশা প্রণয়ন করে চলেছেন। যার চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের পরিবর্তে নতুনরূপে সর্বদলীয় নামে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার খায়েশ। আর এই খায়েশ পূরণে ইতিমধ্যেই নির্লজ্জভাবে আওয়ামীলীগ সরকারকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় বসাতে ভারত একহাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট বরাদ্দ করেছে। ভারতের এই অনৈতিক আস্থা অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে দিতে হয়েছে চরম মাশুল। ক্ষমতার মোহে অন্ধ সরকার বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তাঁদের জন্য মরণফাঁদ তৈরি করে একে একে ভারতকে ফ্রি ট্রানজিট, বন্দর সুবিধা প্রদান, টিপাইমুখ প্রকল্পের অনুমোদন, সর্বনাশা রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদনসহ যাবতীয় আবদার পূরণ করে চলেছে।
চলমান এই পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর বর্তমান চতুর ক্ষমতালিপ্সু সরকারকে সংলাপের নাটক বন্ধ করে অবশ্যই জাতির চাওয়া-পাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে অনতিবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। একথা দিবালোকের মত পরিষ্কার, সংলাপ নাটক দিয়ে এ বুদ্ধিদীপ্ত জাতিকে কখনই বিভ্রান্ত বা অবদমিত করা যাবে না।
সময়ের সৎসাহসী আপোষহীন এদেশের প্রতিবাদী, আত্মদানকারী সংগ্রামী জনগণ যেকোন মূল্যে ভারতের এই তাবেদার গোলাম সরকারকে অত্যন্ত নির্মমভাবে ক্ষমতাচ্যুত করে বাংলার মাটিকে পবিত্র করবে ইনশাল্লাহ। পরিকল্পিতভাবে যারা বাংলাদেশে অশান্ত বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করতে চায় তাদের স্বপ্ন কোনদিনই বাস্তবায়ন হবে না, হতে দেয়া হবে না। চলমান আন্দোলনের গতি ও তেজ তারই বার্তা বহন করে। সোনার দেশের সোনার মানুষেরা এগিয়ে যাবে সম্মুখপানে জয়ের পতাকা নিয়ে, বিজয় মোদের অতি সন্নিকটেই, কারণ এটাই চিরন্তন সত্য রাত যত গভীর হয়, প্রভাত ততই সামনে এগিয়ে আসে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন