বর্তমান মিশর ও ত্যাগের শিক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০১ আগস্ট, ২০১৩, ১০:৫৮:১২ রাত



মিশরে সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী সংগ্রামে ইসলামী শাসন, নবীজির আদর্শিক চেতনা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামে স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত লাখো জনতার ঢল বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়ার অঙ্গীকার করে বিশ্বে জিহাদের যে অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন অত্যন্ত ভারাক্রান্ত গর্বিত হৃদয়ে ও অশ্রুপূর্ণ নয়নে সেই বীরযোদ্ধাদের জানাই সস্রদ্ধ সংগ্রামী ছালাম এবং সেইসাথে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করি। নিশ্চয়ই দেশ ও ইসলামী শাসন রক্ষার লড়াইয়ে তাঁরা সকলেই বিশেষ শহীদি মর্যাদায় মহান প্রভুর পরম সান্নিধ্যে আছেন।

মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধ নুন্যতম মনুষ্যত্ত্ববোধ তো দুরের কথা স্রেফ ক্ষণিকের ক্ষমতার মোহ কিংবা গাড়ী বাড়ী সম্পদ আর প্রাচুর্যের লোভে দেশে দেশে মানুষ যেভাবে হিংস্র হয়ে উঠছে তা দেখে যে কোন শান্তিপ্রিয় মানুষ চিন্তিত, বিষণ্ণ ও উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। মৃত্যু তথা আখেরাতের একবিন্দু ভয়ও যদি একজন মুসলমানের হৃদয়ে থাকে তাহলেও কি এমনটা করা সম্ভব? অথচ মানব জাতিকে সৃষ্টির উদ্দেশ্যই হল আল্লাহ্‌র যমীনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। প্রত্যেকের হক আদায় করা। জাহান্নামের আগুন, আখেরাতের হিসাব নিকাশ তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। তারা আজ ক্ষমতা, দাম্ভিকতা, মিথ্যাচারিতা ও শক্তি প্রয়োগের নেশায় উন্মত্ত মশগুল। সামান্য লোভের তাড়নায় মুহূর্তের মধ্যে কত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, কত মানুষ সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করছে, কত শত পরিবার দিনরাত আহাজারি করছে, রক্তমাখা কাপড় নিয়ে কত শত জননী বিলাপ করছে, সারা জীবন কত মানব সন্তান মানবেতর জীবন যাপন করছে কে তার খবর রাখে?

সারা বিশ্ব জুড়ে যখন সংখ্যালঘু মুসলমানরা সুবিধাভোগীদের ভূমিকায় নির্লজ্জের মত দাসত্বের পিঞ্জরে নিজেকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে সেখানে লাখো জনতার জানমালের স্বতঃস্ফূর্ত এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। যা মুসলিম বিশ্বকে চিন্তায়, চেতনায়, শিক্ষায়, আদর্শে, কর্মে, ত্যাগে ও প্রতিজ্ঞায় আন্দোলিত অনুপ্রাণিত ও বেগবান করবে। কারণ নিশ্চয়ই তাঁদের ন্যায্য দাবীর প্রতি বিবেকবান মানুষ মাত্রই সহমত পোষণ না করে পারে না। নির্বাচিত একটি সরকারকে অস্ত্রের মুখে হটিয়ে ক্ষমতা দখল নিশ্চয়ই কোন নৈতিক কাজ নয়। আর তাই আন্দোলনরত জনতার একটিই দাবী তা হল প্রথমবারের মত দেশটির স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে তাঁর স্বপদে বহাল করা। উল্লেখ্য গত ৩ জুলাই সেনাবাহিনী মুহাম্মদ মুরসিকে অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তাঁর সমর্থকরা অত্যন্ত দৃঢ়প্রত্যয়ী লক্ষ্য, মনোভাব, প্রচণ্ড মনোবল ও চেতনা নিয়ে জীবন মরণ বাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে দেশটির সামরিক অভ্যুত্থান এবং বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান সরকারকে মেনে নিতে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকলেও মুহাম্মদ মুরসি ও তাঁর সমর্থকরা সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি।

ন্যায় প্রতিষ্ঠার দুর্বার সংকল্প, জনগণের শাসন ও মানবাত্মার মুক্তির মিশন নিয়ে মিশরের সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী জোট জাতীয় প্রতিরক্ষা পরিষদের চূড়ান্ত এবং কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি, সেনা বাহিনীর চলমান গণহত্যা, দু’শতাধিক শহীদের লাশ, রক্তের বন্যা, কয়েক হাজার পঙ্গু আহত মানুষ, নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও ব্যাপক সহিংসতাকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য পবিত্র রমজানে শত কষ্ট ও নিপীড়নকে হাসি মুখে সন্তুষ্টি চিত্তে বরণ করছে। এর চেয়ে ইসলামের আদর্শিক মহৎ কোরবানী, বৈপ্লবিক চেতনা, প্রাণস্পর্শী শিক্ষা, আলোকিত বীরত্বগাঁথা উদাহরণ ও ত্যাগের অপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত অভিভূতকর দৃশ্য ইসলামে আর কী হতে পারে?

প্রকৃত আল্লাহ্‌র মুমিনগণের এটিই সর্বোৎকৃষ্ট নমুনা ও উত্তম পন্থা নিজেকে ইমানি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিনের সন্তোষটি অর্জন করা। আল্লাহ্‌ পাক তাই কোরআনে অতি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, তোমরা কি ভাব যে পরীক্ষা ছাড়া এমনিতেই জান্নাতে প্রবেশ করবে? যতক্ষণ না আল্লাহ্‌ তোমাদের মধ্যে কে জিহাদ করেছে এবং কে ধৈর্যশীল তা না জানছেন। সূরা আল-ইমরান আয়াত ১৪২।

আসুন মিশরের মুহাম্মদ মুরসির দল ইখয়ানুল মুসলিমিনের অকুতোভয় বীর সৈনিকদের জিহাদি আন্দোলনের সফলতা কামনায় এই পবিত্র মাহে রমজানে সকলেই প্রাণভরে দোয়া করি। শহীদের রক্ত কখনই বৃথা যেতে পারে না, তাঁদের এই সুমহান ত্যাগ ও জানমালের কোরবানি থেকে আমরা তথা মুসলিম দেশগুলো যত দ্রুত শিক্ষা লাভ করতে পারব ততই দুনো জাহানের মঙ্গল শান্তি ও কল্যাণ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File