জীবনের শ্রেষ্ঠতম দশ রাত
লিখেছেন লিখেছেন সন্ধাতারা ০২ জুন, ২০১৩, ০১:২৪:০৭ রাত
গত বছর পবিত্র মাহে রমযানের শুরুতেই অন্তরের ভিতর এক সুতীব্র বাসনা ও সুপ্ত স্বপ্ন তোলপাড় করতে থাকে। আর সাথে সাথেই রমযানের শেষের দশ রাত মসজিদে ইতেকাফ করার মানসে নিয়ত করে ফেলি। নিয়ত পালনকল্পে দৃঢ় ঈমানী শক্তি নিয়ে নিজেকে শুরু থেকেই সেভাবেই প্রস্তুত করি। প্রায় প্রতিটি দিনই পরিবারের আপনজনসহ মসজিদে অন্যান্য উপস্থিত সকলের সাথে ইফতার এবং তারাবী শেষে বাসায় ফেরার আনন্দানুভূতি ছিল একটু ভিন্ন রকম যা সত্যিই অতুলনীয়, অনুপম। একের প্রতি অন্যের যে মহানুভবতা, ত্যাগ, সংযম, সেবা, সম্মান, আতিথেয়তা আর আন্তরিকতা প্রদর্শনের যে অপূর্ব প্রতিযোগীতার মুহূর্ত তাতে যে কেউ অভিভূত না হয়ে পারে না। বিশেষ করে ছোট ছোট সোনামণিরা যখন বড়দের সেবা করতে প্রাণান্তকর ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিল। আর তাদের মধ্যে বিরাজিত ছিল শুভ্র-সত্য আর সৌন্দর্যের এক মায়াভরা নয়নজুড়ানো অভিব্যক্তি। তাদের কচি মুখের আনন্দের ঝর্ণাধারা সবাইকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। এর মাধুর্য সত্যিই বর্ণনাতীত। প্রতি দিন কোন না কোন অবিশ্বাস্য ঘটনা বা দৃশ্য হৃদয়কে নতুন চেতনায়, নতুন ভাললাগায়, নতুন উদ্দীপনায় ও ঈমানী স্পর্শে ভরিয়ে তুলত, আর কেবলিই মনে হত এটাই ইসলামের শ্বাশত সৌন্দর্য। আমরা মুসলমানরা ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে পালন না করার কারণে মূলত এই সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত।
ইংল্যান্ডের মত দেশে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলা এবং ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য মসজিদের যে আয়োজন তা স্বচক্ষে দেখে এবং রমযানের প্রকৃত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, মর্যাদা ও শিক্ষা তা হৃদয় দিয়ে অনুভব ও উপভোগ করে বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি। বাংলাদেশে প্রায়ই দেখতাম আমার মমতাময়ী মা দ্বীনি আগ্রহী মহিলাদের নিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়ীর এক নির্জন ঘরে ইতেকাফ করতেন। বিদেশ-বিভূয়ে অজানা-অচেনা বিভিন্ন দেশের সমস্ত মুসলিম পরিবারের এই যে মিলন মেলা, পারস্পারিক ধর্মীয় বোধের আদান প্রদান, একের জন্য অন্যের মহব্বত, হাদিয়া দেয়া, প্রতিদিন বিভিন্ন রকমারি সুস্বাদু খাবার, ফলমূল, পানীয় এবং নিজেকে অন্যের সেবায় উৎসর্গ করার যে ব্যতিক্রমধর্মী চেতনা ও মূল্যবোধ তা ইসলাম বা কিতাবে থাকলেও নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাস্তবে এতটা প্রয়োগ আগে কখনো দেখিনি। এ কারণেই রমযানের প্রতিটি দিনই মনে হচ্ছিল এক একটি ঈদ। চলবে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন