ভিক্ষাবৃত্তি হালাল হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই ঘৃন্যতম কাজ
লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আল মাহমুদ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১১:৩৪:০৭ সকাল
আল্লাহ তা’য়ালা মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তবে মানুষের রিযিক তার সৃষ্টির পূর্বেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন মহান আল্লাহ তা’য়ালা। এজন্য মানুষ তার রিযিকের তল্লাশির হয়রানিতে থাকবে তা তো হতে পারে না। তবে আল্লাহ তা’য়ালার বিধান অনুযায়ী তার রিযিক তালাশ করা কোন দোষের নয়, বরং এই হিসেবে সে ব্যক্তি ছোয়াবের অধিকারী হবে। কারণ, আল্লাহ তা’য়ালা তার স্বীয় সত্যবাণী আর-ক্বোরআনে বলেছেন যে, “অতপর তোমরা যখন নামায আদায় করে নাও, তারপর তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর রিযিক তালাশ কর আর আল্লাহকে বেশী বেশী করে স্বরণ কর যাতে তোমরা সর্বকালে মুক্তি পাও ”।
এতে বুঝা গেল যে, আল্লাহর বিধান পালনের পর রিযিকের তালাশে বের হয়ে যাওয়া পুণ্যের কাজ। আল্লাহ রিযিক হালাল এবং হারাম দুনুটাই রেখেছেন। এই বলে হালাল হারাম মিশ্রিত করে খুজলে হবে না। আমাদের উচিৎ হালাল রুজিকে অর্জন করা। আল্লাহ রিযিক দিয়েছেন বলে হালাল হারাম চিনব না তা হতে পারেনা। রিযিক খেতে হলে হালাল রিযিক খেতে হবে। কারণ, অন্যত্র আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন যে, “তোমরা সৎকাজ কর এবং হালাল ভন কর”। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা একটা সীমা নির্ধারন করে দিয়েছেন ।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের উদরকে ৪ ভাগে ভাগ কর, ২ ভাগ খাদ্য, ১ ভাগে পানি আর অন্য ভাগ খালি রাখ। তাহলে তোমাদের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। মানুষের ক্ষুধা লাগাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে সে তো উপবাস থাকতে পারে না। কিছু না কিছু তাকে খেতেই হবে। জীবনকে রা করতেই হবে। ফলে মানুষ বিভিন্ন পেশা বেচে নেয়। কেউ শিকতা, কেউ ডাক্তারী, কেউ ব্যবসা, কেউ কৃষি, কেউ চাকরী, কেউ চুরি, কেউ ডাকাতি, কেউ ঋণ করা আবার কেউ ভিক্ষাবৃত্তি পথকে বেচে নেয়। এখানে উল্লেখিত কিছু পেশা হালাল, আবার কিছু পেশা আছে হারাম।
আর শেষের বাকী দুটো বিষয় হল ঋণ করা এবং ভিক্ষাবৃত্তি হালাল হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই ঘৃন্যতম কাজ। ১/২বেলা খেতে পার আর নাই পার ঋণ করো না। ঋণ নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। ঋণের কারণে মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ শুনতে হয়, ফলে রাতদিন নিজের মাঝে মানসিক টেনশন, উদ্ধিগ্ন-উৎকন্ঠা বৃদ্ধি পায়। ঋণ করে খুব আনন্দের সহিত খেয়ে-ফিরে চলছ। খুবই ভাল লাগছে। ঋণ করতে করতে তুমি যখন ঋণের পাহাড় গড়ে তুলবে তখন তুমি নিজেই বুঝতে পারবে না যে এত ঋণ কি করে হল। আর তোমাকে মানুষ বুঝতেই পারবে না যে তুমি একজন ঋণী মানুষ ছিলে। এভাবে অল্প দিনের আনন্দ ভোগ করার পর নির্দিষ্ট সময়ে যখন পাওনাদার পাওনা টাকার চাপ সৃষ্টি করবে তখন তুমি হাড়ে হাড়ে টের পাবে। সামর্থ থাকলে পরিশোধ করবে না হয় পাওনাদারের চাপের সৃষ্টিতে নিজে তো মৃত্যুর বরণ করবেই, এদিকে ছেলে সন্তানদের মাথায় পাওনাদারদের চাপ রেখে যাবে। নিজে তো শান্তিতে জীবন-যাপন করতে পারলে না আর ছেলে সন্তারদেরকেও শান্তিতে পৃথিবীতে থাকতে দিলেনা।
ঋণ হল বান্দার হক্ব। আর ঋণ অনাদায়ে কাল কিয়ামতের দিন প্রতিটি টাকার বিনিময়ে একটা করে নেকী দিতে হবে। হায়রে আমার পোড়া কপাল! শান্তিতে থাকার জন্য এতসব আয়োজন করেও দুনিয়াতেও শান্তি হল না আর পরকালে ঐসব টাকার বদলা হিসেবে নেকী দিতে হল। শান্তির জীবন হল ঋণমুক্ত জীবন। প্রতিদিন একমুটো ভাত খেয়েও যদি ঋণ না করে চলতে পারি তাহলেই তো ভাল। না খেয়ে মানুষ মারা গেছে এরকম তো পৃথিবীতে কোন ঘটনা ঘটে নাই। তাহলে আমরা কেন অযথা নিজেকে বাচানোর জন্য ঋণ করব। হতে পারে ১/২ দিন না খেয়ে থাকব, এজন্য তো মরে যাব না। দ্বিতীয় আরেকটা বিষয় হল, ভিাবৃত্তি। যথাসম্ভব ভিা না করাই ভাল। ভিক্ষা মানুষকে নিচু এবং চরিত্র নষ্ট করে ফেলে। কারণ, সে শুধু হাত পাততেই জানে, দিতে জানে না। তার হাত সর্বদাই নিম্নগামী থাকে। আর তা ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই ঘৃন্যতম কাজ। ইসলাম ভিাবৃত্তিকে কখনই সমর্থণ করে না।
হাদিছে একটি শিনীয় ঘটনা রয়েছে যে, একবার রাসূল (সাঃ) এর কাছে জনৈক সাহাবী কিছু চাইলে রাসূল (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমার কাছে কি আছে ? সাহাবী উত্তরে বললেন আমার কাছে কিছুই নেই। তবে একটা কম্বল আছে। রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, যাও এটা নিয়ে আস। নিয়ে আসার পর রাসূল (সাঃ) এটাকে বিক্রি করে তাকে একটা কুড়াল কিনে বললেন এটা দিয়ে পাহাড় থেকে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে খাদ্য কিনে নিবে। রাসূল (সাঃ) ঐ সাহাবীকে ভিক্ষা করা থেকে বাধা দিলেন। কারণ, এটা রাসূলের (সাঃ) কাছে পছন্দনীয় ছিল না। সামর্থ থাকাবস্থায় কোনক্রমেই ভিক্ষা করা জায়েজ নহে। ইসলামে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হল ভিক্ষাবৃত্তি। কাজেই আমাদের উচিৎ হবে যতন কর্মমতা শরীরে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত কারো কাছে ভিক্ষার জন্য হাত সম্প্রসারিত করব না।
বিষয়: বিবিধ
৩৪৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন