সোনিয়া তুমি ভাল করে পরীক্ষা দাও, আমি ইফতারের আগেই বাসায় ফিরবো। তোমাকে নিয়ে এক সঙ্গে ইফতার করবো।

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আল মাহমুদ ১৬ জুলাই, ২০১৩, ০৬:৩২:০১ সন্ধ্যা



সোনিয়া তুমি ভাল করে পরীক্ষা দাও, আমি ইফতারের আগেই বাসায় ফিরবো। তোমাকে নিয়ে এক সঙ্গে ইফতার করবো।

ও আসবে, এসে ইফতারি খাবে। নিজের উদ্দেশ্যে বলা স্বামীর শেষ কথাগুলো এভাবেই আর্তনাদ করে বলছিলেন সোনিয়া বেগম।

আব্দুল্লাহপুর থেকে বাসে ওঠার আগে আশুলিয়ায় বাস দুর্ঘটনায় নিহত আলী হোসেনের স্ত্রী সোনিয়া বেগম স্বামীর সঙ্গে মোবাইলে শেষ কথা বলেন সকাল সাড়ে আটটায়।

আলী হোসেন তখন তাকে জানিয়েছিলেন, অফিসের কাজে আব্দুল্লাহপুর থেকে নবীনগর যাবেন। এরপর স্বামীর মোবাইলে আর সংযোগ পাচ্ছিলেন না সোনিয়া।

যখন স্বামীর মৃত্যুর খবর পেলেন তখন বেলা পৌনে একটা। তুরাগ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা ফোন করে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর কথা জানান সোনিয়াকে। প্রিয়জনের মৃত্যুর সংবাদে মুহূর্তের মধ্যেই পাগলের মতো ছুটে আসেন ভাষানটেকের বাসা থেকে তুরাগের ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

শুধু সোনিয়া নয়, তার মত রফিকুল ইসলাম এসেছেন ভাইয়ের লাশের সন্ধানে। হাফিজুদ্দিন এসেছেন ছেলে সারোয়ার মোরশেদের লাশ নিতে।

বেলা আড়াইটার পর থেকে স্বজনদের গগনবিদারী আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আকাশ-বাতাস।

আশুলিয়ার বাস দুর্ঘটনায় এই পর্যন্ত মোট ৮ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ডুবুরিরা। এদের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন নরসিংদীর রবিউল্লাহ (২২), বাসের হেলপার আব্দুর রহমান বাবু (৫০), পাবনার হারবাল চিকিৎসক ডা. ফজলুর রহমান (৩৫), ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার আলী হোসেন (৪০) ও কাপাসিয়ার সারোয়ার মোরশেদ (৩৮)। বাকি ৩ জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।

এই দুর্ঘটনায় আহত ২০ জন ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এরা হলেন মসিউর রহমান (৩২), হুমায়ুন কবির (৩৫), তারেক (৩২), জিল্লুর রহমান (৩৬), মিজান (২৭), সাইফুল (২২), আব্দুস সালাম (২৪), রেজাউল করিম (৩৪), মুস্তোফা আহমেদ (২৩), রাসেল (১৮), রফিক (১৯), আব্দুর রউফ (৪২), জিল্লুর রহমান (৩৫), সিদ্দিকুর রহমান (৪৫), গোলাম মোস্তফা (৪৬), ফয়েজ (৩০), খোকন সিকদার (২৬), ইয়াসমিন জাহান (৫০), রুহুল আমিন (১৬) ও মাইনুল ইসলাম (৩২)।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত মিজান বাংলানিউজকে জানান, সকাল সোয়া আটটার দিকে আব্দুল্লাহপুর থেকে সায়েম পরিবহনের একটি বাসে আশুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। সকাল পৌনে ন’টার দিকে আশুলিয়ার ধউর এলাকার ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি বাসের সঙ্গে ধাক্কা লাগে বাসটির। মুহূর্তের মধ্যের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের নিচে তুরাগ নদীতে পড়ে যায় তাদের বাসটি।

চালকের পিছনের সিটে বসা মিজান নিজেই বাসটির জানালা ভেঙে বের হয়ে সাঁতার কেটে তীরে চলে আসেন।

তিনি আরও জানান, বাসটিতে বসা এবং দাঁড়ানো অবস্থায় ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিলো।

চিকিৎসাধীন আরেক যাত্রী মসিউর রহমান জানান, গতকাল শ্বশুরকে ট্রেনে তুলে দিতে ঢাকায় আসেন তিনি। আত্মীয়ের বাসায় রাতযাপন করে সকাল সাড়ে আটটার দিকে কর্মস্থল আশুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

দু’টি বাসের সংঘর্ষের পর নিজেকে পানির ভিতর আবিস্কার করেন বলে জানান মসিউর।

ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হাই বাংলানিউজকে জানান, দুর্ঘটনার পরপরই সকাল ন’টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত ২০ জন আহত যাত্রীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে তারা এখন সুস্থ আছেন বলে জানান আবদুল হাই।

তুরাগ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক কামাল বাংলানিউজকে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তাদের লাশগুলো ময়না তদন্ত ছাড়া স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে একটি দুর্ঘটনার মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

বিষয়: বিবিধ

১৯৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File