“এটা ঈমানের আন্দোলন, এই আন্দোলন বন্ধ হবার নয়।

লিখেছেন লিখেছেন শিহাব আল মাহমুদ ০৪ জুলাই, ২০১৩, ০৬:২৬:০৫ সন্ধ্যা

[img]

তারা আমার কাছে বারবার জানতে চেয়েছে, সেদিন রাতে শাপলা চত্বরে কেন থেকে গিয়েছিলাম? এর জন্য জামায়াত- বিএনপি আমাদের কত টাকা দিয়েছে? খালেদা জিয়ার সাথে কয়বার দেখা হয়েছে?”

দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে রিমান্ডকালীন জিজ্ঞাসাবাদের বর্ণনা এভাবেই দেন হেফাজতে ইসলামীর মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবু নগরী। তিনি এখন চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি এখন অনেকটা সুস্থ। বাড়ী ফিরে যেতে পারবেন। হাসপাতালে প্রতিদিনই দেখা করছেন তার ছাত্র ও সহকর্মীরা। হাসপাতালে বসেই খোঁজখবর নিচ্ছেন কে, কোথায়, কি অবস্থায় আছে।

বুধবার সন্ধ্যায় সিএসসিআর হাসপাতালে বাবুনগরীর সাথে কথা বলেন পরিবর্তন ডটকম এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান। পরিবর্তন ডটকম এর কাছে ৫ মে, গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের নানা ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি।

মঞ্চ থেকে পড়ে যাই :

বাবুনগরী বলেন, “৫ মে বিকাল থেকে আমরা অপেক্ষা করছিলাম হুজুর ( শাহ আহমদ শফি) এসে বক্তব্য ও মোনাজাত করলে আমারা সমাবেশ শেষ করবো। সন্ধ্যার পরও যখন হুজুর আসলেন না তখন সিদ্ধান্ত নিলাম সকালে মোনাজাত করে চলে যাবো। রাতে যখন হামলা হলো তখন আমি মঞ্চ থেকে পড়ে যাই, আমার উপর দিয়ে শতাধিক মানুষ পার হয়, আমি ডান হাটুতে ব্যাথা পাই।”

পরদিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ২৯ দিন রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

আপনি ছিলেন টার্গেট :

রিমান্ড সম্পর্কে বাবুনগরী বলেন, “আমাকে প্রথমে সাতদিন ও পরে ২২ দিন রিমান্ডে নিলে সবাই অবাক হয়ে যায়। রিমান্ডে পুলিশ বলে আপনি তিনশ গাছ কেটেছেন, আপনার নামে ২৭টি মামলা। প্রত্যেক মামলায় আলাদা আলাদা রিমান্ডে নেওয়া হবে। এখানে অনেকদিন থাকতে হবে। রিমান্ডের প্রথম দুই দিন আমার সাথে একজন আসামির মত খারাপ ব্যবহার করা হয়, পরে তারা আমাকে হুজুর বলে ডাকতো এবং হাজতে ইমাম হিসেবে নামাজ পড়াতে বলে।”

“রিমান্ডের শুরুতে দুইজন অফিসার এসে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এর মধ্যে এক তরুন জুনিয়ার অফিসার আমাকে বললো, রাতে মতিঝিলে আপনি ছিলেন আমাদের টার্গেট। আপনাকে শেষ করে দেওয়ার নির্দেশ ছিলো, কিন্তু ভাগ্য ভালো আপনি কোন দিক দিয়ে চলে গেছেন। এরপর আমার পা দুটোর দিকে ইঙ্গিত করে বলে এখন আপনার রেহাই নেই। তখন সিনিয়র অফিসার তরুণ অফিসারকে থামিয়ে বলেন উনার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত একটু অন্যরকম। উনাকে তোমার কাছে দিচ্ছিনা। আমার কাছে রেখে দিবো। অফিসার দুইজন চলে যাওয়ার পরে সেখানকার লোকজন বললো আপনার বড় বিপদ ছিলো, সেটা কেটে গেছে।”

“এরপরও বিভিন্ন সময় আমাকে নানা বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, এর মধ্যে তারা বেশির ভাগ জানতে চেয়েছে ৫ মে সংঘর্ষে করা জড়িত ছিলো, তারা বারবার বিএনপি-জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন করেছে। তাদেরকে আমি বলেছি এসবের কিছুই জানি না। কারা মারামরি করেছে আমার জানা থাকার কথা নয়। আমি ছিলাম মতিঝিলের সমাবেশে। আর মারামারি হয়েছে বায়তুল মোকাররম এলাকায়,” যোগ করেন বাবুনগরী।

http://www.bdtomorrow.net/blog/bloggeruploadedimage/shihabalmahmud/1372940714.jpg[/img]

জামায়াত-বিএনপি কত টাকা দিয়েছে :

তিনি জানান, “রিমান্ডে আমাকে প্রশ্ন করা হয় বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কয়বার বৈঠক হয়েছে? কত টাকা দিয়েছেন? ঢাকা ও চট্টগ্রামে বাড়ি ও সম্পদ কি পরিমান আছে। এসব প্রশ্ন করলে তাদেরকে আমি বলি তার (বেগম জিয়া) সাথে আমার জীবনেও দেখা হয়নি। ঢাকা চট্টগ্রামে নয়, আমার বাড়ি ফটিকছড়ির বাবুনগরে যেখানে ভালো করে রিকশা পর্যন্ত যেতে পারেনা।”

“তারা আমাকে বলতো হুজুর চেহারা দেখে আমরা বুঝতে পারি, আপনি পীরের মত মানুষ, কোন দাঙ্গা হাঙ্গামায় জড়িত থাকার কথা নয়। কিন্তু কেন সেদিন রাতে আপনারা মতিঝিলে থেকে গেলেন?,” যোগ করেন বাবুনগরী।

তিনি বলেন, “তাদেরকে আমি একাধিকবার বলেছি হুজুর (আল্লামা শফী) না আসা পর্যন্ত তো আমরা সমাবেশ শেষ করতে পারি না। হুজুর যে আসতে পারেননি সেটাও মঞ্চে থেকে আমি জানতে পারিনি। ফজরের আগে দোয়া কবুল হয়, আমরা ওই সময়ে দেশ জাতির কল্যানে দোয়া করতে চেয়েছিলাম।”

“তখন তারা (পুলিশ) বলে দোয়া করার জন্য রাত জেগে থাকতে হবে কেন, এটা কেমন দোয়া। একাধিকবার বলার পরও তারা বুঝতে পারেনি রাতে কেন আল্লার দরবারে দোয়া কবুল হয়। এরপরও তারা আমাকে অনেক এলোমেলো প্রশ্ন করতো আমি তেমন কিছুই বলতাম না,” বলেন বাবুনগরী।

হাজতের দিনগুলি :

হাজতের দিনগুলোতে নানা ধরণের সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়েছে বলে জানান বাবুনগরী। তিনি বলেন, “রিমান্ড থাকাকালে হাজতে অনেকের সাথে থাকতাম, রাতে শোয়ার জন্য কোন বালিশ দেয়া হতো না। তবে একটা কম্বল দেয়া হতো। ওদের মত করে খাওয়া দাওয়া দেয়া হতো। তেমন কোন ঔষধপত্র দেয়া হতো না। এক পর্যায়ে পায়ের ব্যথা ও অন্যান্য কারনে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ছেলিাম। আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুরে নেয়া হয়। সেখানে দেখা হয় বেশ কিছু দলীয় নেতা-কর্মীর সাথে। দুই দিন মনে হয় কোর্টে নেওয়া হয়েছে। কারো সাথে তেমন কোন কথা বলতাম না, ম্যাজিষ্ট্রেটরাও আমাকে তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। অসুস্থ থাকায় জবানবন্দি নিয়েও বিশেষ কিছু জানতে পারিনি।”

গত ৩০ মে ছাড়া পেয়ে ঢাকার বারডেম এ ভর্তি করা হয় বাবুনগরীকে। সেখান থেকে তাকে নেয়া হয় চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে।

বাবুনগরী বলেন, “হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে আমি গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ির বাবুনগর যাবো। সেখানে মায়ের সাথে কিছুদিন সময় কাটাবো। পুরোপুরি সুস্থ হলে আবার ফিরে আসবো শিক্ষকতায় আর হেফাজতে ইসলামের কর্মকান্ডে।”

তিনি বলেন, “এটা ঈমানের আন্দোলন, এই আন্দোলন বন্ধ হবার নয়।”

http://www.poriborton.com/article_details.php?article_id=23778

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File