হেফাজতে ইসলাম ও বর্তমান বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন বঙ্গ মিত্র ৩১ মে, ২০১৩, ১২:৫৫:৪১ রাত
বর্তমান সময়ে আলোচিত বিতর্কিত একটি বিষয় এর নাম হেফাজতে ইসলামের ১৩দফা দাবি। কেউ ভুল শোনার কারণে পরে আছেন বিভ্রান্তিতে। আবার কেও বিভ্রান্তির জম্ন ও দিচ্ছেন।
আসুন শুরুতেই দেখে নেই হেফাজতে ইসলাম এর জম্ন সম্পর্কে
হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠা হয় ষাটের দশকে। এর প্রতিষ্ঠাতা সিলেটের শায়েখ বরুণা (রহঃ)
এ থেকে আপনারাই বুঝে নিন যে বর্তমানে যারা বলছেন জামাত শিবির কে বাচাতেই হেফাজতের জম্ম তাদের কথা কি ভুল নাকি ঠিক।
এখন যে কয়েকটি বিষয় কে আমি আমার চোখে বেশি আলোচিত দেখছি সে দুটি বিষয় নিয়েই আমার খুব সংক্ষেপ আলোচনা
*ইসলাম কে হেফাজত কে করবে? *
কিছু দিন আগে জনকন্ঠে পড়লাম “হেফাজতের তের দফা ও তার শানে নুজুল” শীর্ষক কলাম । যা লিখেছেন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ জনাব শাহিয়ার কবিরের কলাম। তিনি কুরানের আয়াত দিয়েই বললেন “ইসলাম হেফাঞ্জত করবে আল্লাহ, হেফাজতে ইসলাম এরা কারা?” আমি মনে করি যারা বলেন কুরআনে আল্লাহ বলেছেন “ইসলামের হেফাজত আল্লাহই করবেন” উনাদের সকলেরই জানা আছে কুরআনের কোন সুরার কোন আয়াতে এই কথা বলা আছে। উনাদের কে বলব একটু কষ্ট করে সেই সূরা ব্যাখ্যা পড়ে দেখুন “আল্লাহ কাদের দিয়ে ইসলাম হেফাজত করবেন” সেই কথাও বলা আছে।
আর যারা জানেন না কোন সূরার কোন আয়াতে বলা আছে আল্লাহই ইসলামের হেফাজত করবেন, কিন্তু জোর গলা এ বলেন “হেফাযত কে? ইসলাম কে হেফাজত করার ?” উনাদের বলব পিছনে ফিরে তাকান। যুগে যুগে আল্লাহ কাদের দিয়ে ইসলাম হেফাজত করেছেন? সকল যুগেই ইসলাম কে হেফাজত করার জন্যে আল্লাহ তার নবী রাসুল প্রেরণ করেছেন, অলী দের প্রেরণ করেছেন যারা দ্বীন কে হেফাজতের জন্যে লড়েছেন। আল্লাহ যুগে যুগে তার মনোনীত বন্দাদের দিয়েই ইসলাম হেফাজত করেছেন, করবেন।িসলাম শুধু আল্লাহই হেফাযত করলে রাসুল (সঃ) কে তায়েফের ময়দানে রক্ত ঝরাতে হত না , দাত মুবারক শহীদ করতে হত না। মহান আল্লাহ বলেছেন বান্দার রোগ সাড়ানো আল্লাহর কাজ তাহলে বান্দার কোন ঔষধ সেবনের দরকার নেই, এ বিষয় যেমন ইসলামের হেফাজতের জন্যে রাস্তায় নেমে রক্ত ঝরানোও তেমন।
*রাসুল সবাই কে ক্ষমা করে দিতেন*
কিছু দিন আগে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে বিশিষ্ট ব্লগার আইরিন সুলতানা নাস্তিকদের ফাঁসির প্রসংগে বলেন, “রাসুল (সাঃ) কে চলার পথে এক বুড়ি কাটা দিত। একদিন রাসূল রাস্তাতে সেই বুড়ির কাটা না দেখে বুড়ির বাড়ীতে খোজ নিতে গেলেন বুড়ির কি হয়েছে। আমরা কি রাসুলের সেই শিক্ষা বাস্তবায়ন করছি?” উনার বক্তব্য থেকে আমি যা বুঝলাম যে, উনি বলতে চাচ্ছেন রাসুল যেখানে এত দয়ালু তবে কেন রাসুল কে অবমাননা করার কারণে নাস্তিকদের ফাঁসি হবে। শুধু উনি ই না আরো অনেকেই এই কথা বলে থাকেন ।
এবারে একটি ঘটনা পড়ুন v
মক্কার নিয়ম ছিল কেউ যদি কোন বড় অন্যায় করে আর সে যদি কাবা শরীফের গিলাফ ধরে রাখে তবে তাকে (অন্যায়কারী কে) সরদাররা কাবার গিলাফ ধরে রাখার কারণে বাধ্য হয়ে ক্ষমা করে দিত। মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল তার সব শত্রুদের ক্ষমা করে দেন,কিন্তু যারা ধর্মদ্রোহী ছিল তাদের কাবার গিলাফ ধরা সত্বেও তিনি ক্ষমা করেন নি বরং তাদের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার আদেশ দেন।
তাহলে রাসূলের শিক্ষা আমাদের মাঝে রাখার জন্যে নাস্তিকদের ফাঁসি দিতে হবে।
*হেফাজতে ইসলামের ৪নং দাবী*
বর্তমানে নারী শ্রমিকদের যে কথা বলে উস্কে দেওয়া হচ্ছে তা হচ্ছে, “হেফাযতে ইসলাম নারীদের বন্দী করে রাখতে চায়” এবার দেখি আসলে হেফাযতে ইসলাম কি বলছে
** দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে নারী জাতির সার্বিক উন্নতির বিকল্প নেই। এ লক্ষে তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবী নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-বাহিরে ও কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-আব্রু ও যৌন হয়রানে থেকে বেঁচে থাকার সহায়ক হিসেবে পোশাক ও বেশভুষায় শালীনতা প্রকাশ ও হিজাব পালনে উদ্বুদ্বকরণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সব ধরণের বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন মেলামেশা, নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতা, যৌতুক প্রথা সহ যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
এবার আপনারাই বলুন এখানে নারী কে ঘরে বন্ধি করে রাখা অথবা সকল কে বাধ্যতামূলক ভাবে হিজাব পালন করতে কি বলা হয়েছে ??? এখানে কি বলা হয়েছে যে নারীরা ঘরে বসে থাকতে হবে, বাহিরে যেতে পারবেনা, তারা রাস্তাতে নামলে কঠিন শাস্তির বিধান রেখে আইন করতে হবে ? তাহলে কেন মুনাফিকের দল গুজব ছড়াচ্ছে? কেউ জেনে শুনে কেউ না জেনে। দয়া করে কোন বিষয় নিয়ে ভাল ভাবে কথা বলবেন না।
যে সকল নারী বলে যে হেফাজতের ৪নং দাবী নারী উন্নয়ন বিরোধী ধরে নিতে হবে তাদের চরিত্র নিয়ে সমস্যা আছে। তারা অবাধে মেলেমেশা করতে পারেনা বলেই এই কথা বলছে (যারা না জেনে বলছে তাদের জন্যে না)। তারা সরারসরি বলতে পারছেনা যে এই দাবী অশালীন মেলামেশা বিরোধী।
আর যে সকল পুরুষ এই দাবী কে বলছে এই দাবী নারীদের বন্ধি করে রাখতে চায়। তারা আসলে নারীর বন্ধুর মত আচরন করলেও তারাই নারীর প্রকৃত শত্রু।
কিছু প্রশ্ন
রাস্তার ধারে মাটি কাটা এটা কি নারীর সম্মান জনক জিবীকা?
ইট ভাঙ্গা কি নারীর সম্মান জনক জিবীকা?
রাস্তা পরিষ্কার করা কি নারীর সম্মান জনক জিবীকা?
বালুর বস্তা টানা কি নারীর সম্মান জনক জিবীকা?
দিনে ৮ ঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মাস শেষে মাত্র ৪০০০ টাকা কি নারীর ন্যায্য পারশ্রমিক?
হেফাজতের ৪নং দাবী নারীদের রাস্তার ধারে মাটি কাটা, ইট ভাঙ্গা, রাস্তা পরিষ্কার করা, বালুর বস্তা টানার বিরোধী, নারী কর্ম করতে পারবেনা এই কথার বিরোধী নয়।
যারা নারীকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় তারাই বলে হেফাজতের দাবী নারী উন্নয়ন বিরোধী……
null
বিষয়: বিবিধ
২৪৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন