আসুন এই রমজান মাসে ওদের পাশে দাঁড়াই...
লিখেছেন লিখেছেন আমি স্বাধীন ১৬ জুলাই, ২০১৩, ০৪:৫৪:৩৬ বিকাল
অবস্থা- ১: ২০ বছর আগের কথা। অল্প বয়সেই বিয়ে হয় মহিলাটির (এলাকায় পুঙ্কুনির মা নামে পরিচিত) এক রিক্সা চালকের সাথে। হতদরিদ্র সংসার হলেও খেয়ে পরে মোটামুটি চলে যাচ্ছিল তাদের। বিয়ের পরেই আল্লাহ্ সেই সংসারে চার চারটা মেয়ে সন্তান দেন, তাও ৩ জন প্রতিবন্দী, আরেকজনের অবস্থা মোটামুটি(বড় মেয়েটার)।
বিধাতার কি খেয়াল কি জানি হঠাৎ করেই স্বামী মারা যায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে; তাকে দুঃখ-দুর্দশার অথৈ সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে। সেই থেকে চলছে জগত সংসারে তার টিকে থাকার সংগ্রাম। সে হারেনি কখনো। তার ঘরে প্রতিদিনের ভোর হয় ধরনীতে সূর্যের কিরণ দেখা যাবার আগেই। সেই থেকে শুরু, সারাটাদিন এই বাড়ি ওই বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে মহিলাটি, তাও নামমাত্র ২০০-৩০০টাকা মুল্যে, সারামাসে!! মাস শেষে যা পায় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে, রোগে শোকে ভুগে চলছে তাদের দিন। আমি দেখেছি তার সন্তান গুলোকে; মেঝটার হাড্ডিসার অবস্থা, পরেরটার শরীরের চেয়ে পেটের আকার অনেক বড়, সবার ছোটটার দিন যায় কাঁদা মাঠির রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে দিতে। হ্যাঁ, অনেক কষ্টে বড় মেয়েটার বিয়ে দিয়েছেন মানুষের কাছে টাকা ধার করে আর কিছু টাকা মানুষের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে। ওদের কপালে ভালো খাবার জুটেনা কখনো, হ্যাঁ সেসিন তাও কিছুটা পেট ভরে খেতে পারে যেদিন কোন পরিবার থেকে ‘মিসকিন’ হিসেবে দাওয়াত দেয়া হয় তাদের। আর রোগাক্রান্ত হলে কি হয় সেটা আমার জানা নেই। এভাবেই চলছে সেই অভাগা মহিলাটির সংসার।।
অবস্থা-২: আরেকজনের জমিতে ছোট্ট একটা জায়গায়(বড় লোকদের বাড়ির ওয়াস রুমও এর চেয়ে বড় হয়) বুড়ো-বুড়ীর ছোট্ট সংসার, এক কথায় টুনাটুনির সংসার বলতে পারেন। বিধাতা এখানে তাদের একটি সন্তানও দিতে নারাজ, তাই তারা সন্তান হারা !! কয়েক মাস অবধি বুড়ো প্রতিদিন রোজগার করে আনে আর বুড়ী নিজের সবটুকু চেষ্টা দিয়ে মজা করে রান্নার চেষ্টা করেন। এলাকার সবার ঘরে আলো জ্বললেও তাদের এখনো কেরোসিনের প্র্দীপ-ই ভরসা। ঝড় বৃষ্টিতে ঘরে পানির বন্যা বয়ে যায়। তবু তাদের সংসারে দুঃখ দেখিনি। রং- রসে ভরে থাকে তাদের প্রতিটি মূহুর্ত। এভাবেই চলছিল তাদের দ্বৈত জীবন। কিন্তু এখন তাদের সেই আগের শক্তি সামর্থ্য দুটোই নেই; বার্ধক্য অনেকটাই গ্রাস করে ফেলেছে তাদের। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। খেয়ে না খেয়ে দিন পোহাতে হয়! তারা হয়তো অন্তিম শয্যায় যেতে বিধাতার অন্তিম ডাকের অপেক্ষায় আছেন।
এরকম আরো কিছু অবস্থা লেখার ইচ্ছে ছিল। ইচ্ছে ছিল ধনীর দুলাল-দুলালীদের সারা বছর এবং এই রমজান ও রমজান পরবর্তী ঈদের সময় ভোগ বিলাসের চিত্র সংযুক্ত করেও কিছু লেখার, কিন্তু দিলাম না লেখাটা বড় না করার প্রয়াসে। আমাদের আশেপাশে চোখ মেলে তাকালেই এরকম আরো অনেক মহিলা আর টুনাটুনির অবস্থার দেখা মিলবে নিমেষেই। আমরা হয়তো দেখতে নারাজ।
কিন্তু এবার দেখছি বা দেখার চেষ্টা করছি আমরা। হাই স্কুলের বন্ধুরা মিলে চেষ্টা করছি এরকম কিছু দূর্দশাগ্রস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়াতে, তাদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফুটাতে। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এইসব বন্ধুদের কাছ থেকে ৫০০-১০০০ টাকা করে নিয়ে(কেউ এর চেয়ে বেশি দিয়েছে, আবার কমও দিয়েছে কেউ) মোটামুটি একটা এমাউন্ট সংগ্রহ করে অবস্থা-১,২-এ উল্লেখিত ওরকম পরিবারের হাতে তুলে দিতে যা দিয়ে তারা কিছু একটা করতে পারবে, অন্তত কিছু দিন ঠিকমতো দু-মুটো ভাত খেতে পারবে, কয়েকটা জামা কিনে দিতে পারবে প্রতিবন্দী ওইসব সন্তানদের, পারবে কিছু মেডিসিন কিনে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার সাহস সঞ্চয় করতে। আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াসে এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভবও না, কারণ আমরা এখনো চাকরি বা ব্যবসা করিনা, আমরা সবাই স্টুডেন্ট। আমরা ইতিমধ্যে মোটামুটি একটা এমাউন্ট সংগ্রহ করেছি; বাকিটা প্রক্রিয়াদিন। ইনশা-আল্লাহ হাইস্কুল বন্ধুদের কাছ থেকে পুরো সংগ্রহটা হয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে।
এভাবে আপনারাও পারেন আপনাদের আশেপাশের মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে, তাদের মুখে হাসি ফুটাতে। ভাবছেন কিভাবে? সেজন্য আপনাকেই উদ্যোগটা নিতে হবে, এখনই নিতে হবে। দেখবেন একে একে সবাইকে পেয়ে যাচ্ছেন। ভাল কাজ করতে এই উদ্যোগটাই প্রধান, বাকিটা কিভাবে কিভাবে যেন হয়ে যায় আল্লাহ্র ইচ্ছায়। চাইলে আমাদের সাথেও যোগ দিতে পারেন আপনার ক্ষুদ্র সহায়তা নিয়ে। যোগাযোগ করতে পারেন এই 01818850591, 01735668810 নাম্বারগুলোতে। মনে রাখবেন, “Many drops make a shower-বিন্দু বিন্দু জলেই সিন্দুর জন্ম।” এবং “Something is better than nothing-নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো”
পুরো সংগ্রহটা নিয়ে যখন ওইসব চাল-চুলাহীন, শঙ্কান্বিত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পর তাদের ঠোঁটের এক চিলতে হাসি বা চোখের এক ফোঁটা আনন্দ অশ্রু হবে আমাদের জীবনের সব চেয়ে বড় সংগ্রহ, পরম প্রাপ্তি। আর এটাও ঠিক যে “Every dog has his day- সুখ-সৌভাগ্যের দিন কারো চিরস্থায়ী হয় না”। আল্লাহ্ আমাদের ছোট্ট প্রয়াসটা কবুল করুক, আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৯৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন