ইসলামে ওয়াদার গুরুত্ব
লিখেছেন লিখেছেন মহসিন শ্রীধরী ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৩৩:৫২ বিকাল
যে কোন ধর্মে ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। দুনিয়ার সবাই ওয়াদা পালনকারী ব্যাক্তিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে থাকে। তাকে সম্মান করে এবং মান্যও করে।ইসলামেও এর ব্যাতিক্রম নয়।ইসলামে ওয়াদার গুরুত্ব অত্যান্ত বেশী। ওয়াদা খেয়ানতকারীকে ইসলামে ভৎসনা করে। এমনকি ওয়াদা ভঙ্গকারীকে মুনাফিকের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
ওয়াদা একটি আরবী শব্দ। এই শব্দটি “আহদ” শব্দ হতে নির্গত। যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অঙ্গীকার, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা, প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি। আর ইসলামী পরিভাষায় কোনো লোকের সঙ্গে অপর কোনো ব্যক্তি অঙ্গীকার করলে বা কাউকে কোনো কথা দিলে তা পালন করার নাম ওয়াদা। জীবনে প্রতিনিয়ত চলার পথে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকি পেয়েও থাকি। ইসলাম এসব প্রতিশ্রুতি পালন করার জোরালো তাকিদ করেছে।
আল্লাহ ওয়াদা পালনকারীকে ভালোবাসেন। প্রতিশ্রুতি পালন করা আল্লাহর একটা অন্যতম গুন। আল্লাহ নিজে প্রতিশ্রুতি পালন সম্পর্কে কোরানের বলেন- ‘স্মরণ রাখিও যে, আল্লাহরই সত্বাধীন রহিয়াছে যাহা কিছু আসমান সমূহে এবং যমীনে আছে। স্মরণ রাখিও যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু অধিকাংশ লোক বিশ্বাস করে না( সূরা ইউনুস-৫৫)’।
ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন- ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূরণ কর( সূরা মায়িদাহ-১)।’
‘আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গিকার পূর্ণ কর এবং পাকাপাকি কসম পর তা ভঙ্গ করো না। অথচ তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন (সূরা নাহল-৯১)’।
‘অথচ তারা পূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার কত্রেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে না। আল্লাহর অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। (সূরা আহযাব-১৫)’
কোরানের অন্য এক জায়গায় আল্লাহ বলেনঃ ‘ও মুমিনেরা তোমরা কেন বল যা তোমরা তা করনা? আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃন্য সে ব্যাক্তি, যে নিজে যা বলে কিন্তু সে তা করেনা(সুরা সফ- ২-৩)’।
ওয়াদা পালনের জলন্ত দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই রাসুল (সাঃ) এর জীবনে। একবার রাসুল (সাঃ) এক লোকের সাথে একটি জায়গা দেখা করা কথা ছিল। লোকটি রাসুল (সাঃ) কাছে এলো সেই জায়গায় তিনদিন পর। লোকটি আসার পর রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন তুমিতো আমাকে সমাস্যাই ফেলে দিয়েছিলে। আমি তোমার জন্য তিন দিন এখানে অপেক্ষা করছিলাম। এই ঘটনার মাধ্যমে আমারা দেখতে পাই রাসুল (সাঃ) কিভাবে ওয়াদাকে গুরুত্ব দিতেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন বলেছেন ,মুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটিঃ ১) যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে। ২) যেখন সে ওয়াদা করে তা সে ভঙ্গ কর ৩) যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে তা খেয়ানত করে।
এবার আসুন আমাদের দৈনিন্দন জীবনে। আমরা চলার পথে মানুষের সাথে, সমাজের সাথে অনেক ধরনের ওয়াদা করে থাকি। কিন্তু আমরা কি সব ধরনের ওয়াদা পালন করি? আমরা কি সত্যি ওয়াদা পালনের গুরুত্ব অনুধাবন করি? আমারতো তা মনে হয়না। যদি আমরা সত্যিই অনুধাবন করতাম তাহলে ছয়টা প্রোগ্রাম ছয়টাই শুরু হত। আপনারাই বলেন তা কি হত না?
ওয়াদা ভঙ্গ করা যে কত বড় অপরাধ তা যদি আমরা জানতাম তাহলে আমরা কখনো ওয়াদা ভঙ্গ করতাম না। আসুন আমরা ওয়াদা পালনের প্রতিজ্ঞা করি। এই ওয়াদা পালনের মাধমে সমাজে সাম্য প্রতিষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সেই তওফিক দান করুন। আমিন।
বিষয়: সাহিত্য
১৫৭১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন