আওয়ামীপন্থী নাস্তিক সমার্থকরা হামলা শুরু করে দেয় আমাদের উপর।

লিখেছেন লিখেছেন হানিফ খান ০৬ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:৫১:০৩ দুপুর

৬ এপ্রিল আওয়ামীপন্থী নাস্তিক সমার্থকরা হামলা শুরু করে দেয় আমাদের উপর।

"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""

৬ এপ্রিল, আমাদের শায়েখ ও উস্তাদ আল্লামা শাহ আহমদ শফী দাঃবাঃ এর আহবানে সকল ইসলামী দলের ঐক্যবদ্ধতায় হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে ডাক দেওয়া হয় ঢাকা ঐতিহাসিক 'লংমার্চ'।

৫ এপ্রিল বাংলার আনাচেকানাচে থেকে সবাই প্রস্তুত 'লংমার্চ' সফল করতে।

নাস্তিক মুরতাদদের ফাঁসি সহ ১৩ দফা দাবী আদায়ের উদ্দেশ্যে জীবন বাজি রেখে সবাই ছুটলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।

আমি অধমও প্রস্তুত।

কিন্তু আব্বা-আম্মা ও পরিবারের সদস্যরা যেন চিন্তিত আমাকে নিয়ে । একটিমাত্র ছেলেসন্তান , তাই হয়তো । কিন্তু না, আমাকে যে এই ঈমানী আন্দোলনে শরীক হতেই হবে।

জিহাদী চেতনার ট্যাবলেট খাওয়াই দিলাম তাদের। দুইএকটি কথায় তাদের দিলে বসিয়ে দিলাম আল্লাহ রাসূলের ভালবাসা। অবশেষে অনুমতিও পেলাম সাথে পেলাম জিহাদে খরচ করার মত কিছু 'টাকা'।

জান ও মাল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম রাজপথে।

অন্যদিকে সহপাঠী বহু হেফাজত কর্মী আমার অপেক্ষায় নোয়াখালীর চৌমুহনী চৌরাস্তায়।

রিজার্ভ করা গাড়ির অপেক্ষায় আছি হাজারো ছাত্র ও তৌহিদি জনতা।

কিন্তু না, আর হলো না।

নাস্তিকদের 'নাম কা ওয়াস্তের' হরতাল এবং প্রশাসনের বাধার মুখে পড়ে কোন গাড়ি সম্মত নয় এই মুজাহিদদেরকে জিহাদের ময়দানে পৌছিয়ে দিতে।

তাই তো হাজারো মুজাহিদদের স্বপ্ন যেন ভেস্তে যায় নাস্তিকদের হস্তক্ষেপে।

সবাই অঙ্গীকার করে, প্রয়োজনে রথগাড়ী'তে (হেঁটেহেঁটে) যাবো।

আবেগ হলে কি হবে ? সম্ভব তো হতে হবে। তাইতো আমাদের আরেকটু অপেক্ষা করার অনুরোধ জানায় নোয়াখালী হেফাজত নেতা বা আমাদের উস্তাদগণ। মিডিয়া উপস্থিত, সরাসরি সম্প্রচার। আমরাও জানাই সরকার বা প্রশাসনের এমন ন্যক্কারজনক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ, প্রকাশ করি শরীরের প্রত্যেকটি পশমের গোড়ায় গোড়ায় বিরাজমান জিহাদি চেতনা।

অল্পক্ষণেই সারা বিশ্বে পৌঁছে গেল আমাদের দাবী। ক্রিংক্রিং করে মোবাইল বাজতেছে। মোবাইল রিসিভ করলাম, প্রবাস থেকে ফোন করে কোন এক আত্মীয়। তার সূরে একটি অনুরোধ পাওয়া যায়, আমি একজন আন্দোলনে না গেলে কী হয়!!?

রাজপথের মুজাহিদগণ ছত্রভঙ্গ। সবাই যারযার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়ার কাজে ব্যস্ত।

আমরাও কৌশল অনুসন্ধান করতে লাগি।

বাসায় খবর গেলো, নোয়াখালী থেকে কেউ যেতে পারছে না শাপলা চত্তরের উদ্দেশ্যে। তাই আব্বাও গাড়ি নিয়ে হাজির আমাকে বাড়ি নিয়ে যেতে। কারণ, সম্ভাবনা ছিলো কোন এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের।

কিন্তু না, হাজারো মুজাহিদের সামনে গুটিকয়েক নাস্তিক কিছুই না। তাই তেমন কিছু ঘটেওনি। অবশেষে যেন হতাশার চাদর গায়ে পেঁচিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম আর সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ও ফিকির করতে লাগলাম কিভাবে পৌছব চৌরাস্তার চত্বর থেকে শাপলা চত্বরে।

দুপুরে খানা খেয়ে ঘুমালাম। হঠাৎ কল করল দোস্ত মকবুল।

হানিফ জলদি আয় ৫ মিনিটের মধ্যে, গাড়ি রেডি। সবাই অপেক্ষায় আমার জন্য।

পাঞ্জাবী'টা পরেই 'মা যাচ্ছি' বলেই দৌড় দিলাম। ১০ মিনিটের পথ ৫ মিনিটে অতিক্রম করতে হলে যে কষ্ট করার প্রয়োজন সেটাই করতে হলো আমাকে। মনের মধ্যে যখন আশার আলো জাগে তখন হাজারো কষ্ট মিষ্টিতে রূপান্তরিত হয়।

গাড়ি ছেড়ে দিলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। সোনাইমুড়ী আসতেই আমাদের সামনে পিছনে সেনাবাহিনীর গাড়ী। যেন নিরাপত্তার বেষ্টনীতে আমাদের গাড়ী।

মনে হয় আল্লাহ তা'লা এদের পাঠিয়েছে আমাদের নিরাপত্তার জন্যই, যদিও মাওলার কুদরতি নিরাপত্তাই হলো বড় সম্বল।

আমরা এখন কুমিল্লার লাকশাম। গাড়ী আটক করে নাস্তিকরা। সামনের দিকের সেনাবাহিনীর গাড়ী চলে গেলো সামনের দিকে। আর পিছনের সেনাবাহিনী'রা আটকে গেলো আমাদের কারণে।

শুরু হয়ে গেলো আমাদের গাড়ির উপর হামলা আর চেষ্টা চালাতে লাগলো আমাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার। কিন্তু মাশওয়ারা ভিত্তিক আমীরের হুকুম ছিলো, আমরা যেন গাড়ী থেকে নেমে না পড়ি।

টাকাপয়সা ইত্যাদি আমীরের কাছে থাকার দরুণ আমীর গাড়ি থেকে নেমে চলে গেছেন আড়ালে যেন চিনতে ও বুঝতে না পারেন সন্ত্রাসীরা।

ততক্ষণে সেনাবাহিনী'রা কিছু বুঝতে না পেরে উঠে জ্যাম ভেবে হরণ দিতে লাগে। কৌশলে আমাদের আমীর সন্ত্রাসী'দের হামলার নিউজ পৌছিয়ে দিলো পিছনে আটকে পড়ে থাকা সেনাবাহিনীর কানে।

অমনিতেই ক্ষেপে গিয়ে গাড়ী থেকে নেমে যায় সেনাবাহিনী। আর পালাতে লাগে আওয়ামী নাস্তিক সন্ত্রাসীরা। ততক্ষণে গাড়ীর গ্লাস ভাঙ্গা এবং গাড়ির চাবি সন্ত্রাসীদের হাতে।

তবে বিকল্প চাবি থাকায় বিপদে পড়তে হয়নি আমাদের। এবার সেনাবাহিনীও চলে গেলো। গাড়ি ফের স্টার্ট দিতে কালক্ষেপণ হওয়ায় আবারো পিছন থেকে নাস্তিকদের হামলা।

তাদের একটাই দাবী, যেদিক থেকে গাড়ি আসছে, সেদিকে ফিরে যাওয়া। ড্রাইবার চতুর। তাই সেও গাড়িটি ঘুরানোর বাহানা দেখিয়ে দ্রুতগতিতে রকেটের মত চালাতে শুরু করলো সামনের দিকে আর পিছন থেকে সন্ত্রাসীরা দৌড় দিতে লাগলো ধরার উদ্দেশ্যে , কিন্তু কে পায় আর কার নাগাল!

বিশ্বরোড পার হয়ে লাকশামে থেকে যাওয়া সফরের আমীর শাহাদাত ভাইয়ের অপেক্ষা। তিনিও আসলেন অনেকক্ষণ পর। শুনলাম তার মুখ থেকে আরো বিচিত্র ঘটনা। আমাদের গাড়ির উপর আক্রমণ করাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ বেঁধে যায় লাকশাম বাজারে। স্থানীয় তৌহিদি জনতা ও সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ-এ হতাহত হয় অনেকেই। নিউজ আপডেট হয়ে যায় টেলিভিশনের খবরে।

চট্টগ্রাম, ফেনী থেকে আসা শতশত শাপলাচত্বরগামী গাড়ীগুলোর সাথে আমরাও একত্রিত হয়ে যাই। নিশ্চিন্তে গাড়ী চলছে ঢাকার দিকে। সবার মুখে শ্লোগান।

না-রায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার।

লংমার্চ সফল হোক, সফল হোক।

অতপর আমাদের গাড়ী পৌছল যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসার সামনে। রাত অতিবাহিত করলাম মহিউছ ছুন্নাহ 'আল্লামা মাহমূদুল হাসান যাত্রাবাড়ী দাঃ বাঃ' এর সান্নিধ্যে। বাদ ফজর আবারো মিছিলে মিছিলে আমরা উপস্থিত শাপলা চত্বরে। বসে পড়লাম স্টেজের ১০/১২ গজ সামনে।

চলছে ধর্মপ্রাণ মানুষের মেহমানদারিত্ব। চারিদিক থেকে মাথার উপর দিয়ে বৃষ্টির মত পড়তে লাগে বিস্কিট, কেক, পানি, কলা, পাউরুটি ও হরেক রকমের খাদ্য।

প্রচণ্ড রোদ, সরাসরি সম্প্রচার চলছে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে। স্টেজ থেকে খবর আসছে, আওয়ামী নাস্তিক সরকার লংমার্চ এর কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। খবর আসতে লাগলো বিভন্ন জায়গা থেকে আগত মুজাহিদদের উপর হামলা করতেছে সরকার দলীয় ক্যাডাররা।

তখন উত্তাল হয়ে পড়ে লক্ষলক্ষ নবীপ্রেমিকে সমাগম পুরো শাপলা চত্বর ও মতিঝিলের মাটি।

ওয়াক্তে যোহর: আমীরে হেফাজত আল্লামা সাহেবের ভাষণ ও মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় লংমার্চ কার্যক্রম।

রাজপথে দাঁড়িয়ে আদায় করে নেই যোহরের নামাজ।

গণস্বাক্ষর বোর্ড-এ স্বাক্ষর প্রদান করেন লক্ষলক্ষ তৌহিদি জনতা। সবার একটাই দাবী, নাস্তিকদের ফাঁসি ও যৌক্তিক ১৩ দফা দাবী।

অতপর নিজ গন্তব্যস্থানের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হলাম সন্ধায়। রাত ২ টায় বাসার দরজা নক করি। 'মা' দরজা খুলেন।সুস্থ অবস্থায় বাড়ী ফিরাতে তাদের মনে যেন প্রশান্তি ফিরে আসে।।

"""""""""""""""""""""""""""""""""

আজ ৬ এপ্রিল। ঐতিহাসিক সেই "লংমার্চ" এর আজ ৩ বছর।

২০১৩ এর ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ডাকে নিশ্চয় আপনারাও শরীক হয়েছিলেন সেই ঈমানী আন্দোলনে।

এই দেশে কালিমার পতেকা উড়বেই, ইংশা-আল্লাহ। প্রয়োজনে মোরা জীবন দিতে রাজি আছি। আল্লাহর দেওয়া জান, আল্লাহর দেওয়া মাল, আল্লাহর রাস্তায় হবে কুরবান।

(আরিফুল ইসলাম হানিফ গনিপুরী- ব্লগার হানিফ)

বিষয়: বিবিধ

৯৮১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364821
০৬ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৫:৩৯
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : ভাই এপ্রিল নয়, মে মাসের ঘটনা।
364844
০৬ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:২৫
শেখের পোলা লিখেছেন : সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে কোন আন্দোলনকে সফল করতে৷ আপনাদের জানাই মোবারকবাদ৷ ওহিদ ভাইয়েল সাথে আমিও বলি ঘটনাটি ছিল মে মাসে৷ ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File