রমজানের তাতপর্য,,(সংগৃহিত)
লিখেছেন লিখেছেন হানিফ খান ২৭ জুন, ২০১৪, ১০:৪৩:৪৯ সকাল
নাজাতের মাস
মাহে রামাযান
রামাযান মানে কি?
রমাযান আরবী শব্দ। আরবী মাস
সমূহের মাঝে একটি মাসের নাম।
যার আভিধানিক অর্থ
ঝলসিয়ে দেয়া, জ্বালিয়ে দেয়া।
রামাযানকে রামাযান এজন্য
বলা হয়-(ক) সর্ব প্রথম যখন
রামাযানে রোযা ফরয হয় তখন প্রচন্ড
গরম ছিল তাই এ মাসকে রামাযান
বলা হয়। (খ) রামাযান মাসে আল্লাহ
তায়ালা তার অবারিত রহমত ও বরকত
দিয়ে বান্দার পূর্ব মাসের
গোনাহকে পুড়িয়ে ছাই করে দেন, এ
হিসেবেও
একে রামাযান বলে উল্লেখ
করা হয়েছে।
রোযা কাকে বলে?
আরবীতে যে শব্দকে সিয়াম
বলে বলে তাকেই
আমরা বাংলা উর্দু ও
ফারসীতে রোযা বলে থাকি।
রোযা মৌলিকভাবে তিন যিনিস
থেকে নিয়তের সাথে বিরত
থাকার নাম। যথা-(ক) সহবাস (খ)
খাবার গ্রহণ (ঘ) পানীয় গ্রহণ।
রোযার ইতিহাস
দ্বিতীয় হিজরীতে মদীনায়
থাকা অবস্থায় আল্লাহ
তায়ালা আয়াত নাজিল করার
মাধ্যমে রোযাকে ফরয করেন
মুসলমানদের উপর। মহান রাব্বুল
আলামীন পবিত্র
কুরআনে সূরায়ে বাক্বারার ১৮৩
নং আয়াতে ইরশাদ করেন- ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ
ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ
ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ অর্থাৎ হে মুমিনরা!
আমি তোমাদের উপর রোযাকে ফরয
করেছি যেমন ফরয করা হয়েছিল
পূর্ববর্তীদের উপর
যেন তোমরা পরহেযগার হতে পার।
(সূরা বাক্বারা-১৮৩) এই আয়াতের
মাধ্যমে একথা স্পষ্ট
বুঝা যায়, উম্মাতে মুহাম্মদীর
পূর্বে অন্য নবীর উম্মাতের উপরও
রোযা ফরয ছিল। যেমন বিভিন্ন
তাফসীর গ্রন্থে যে বিস্তারিত
আলোচনা করা হয়েছে তার
সারাংশ হচ্ছে-
কারো কারো মতে পূর্বের সকল
উম্মতের উপরই তা ফরয ছিল
কারো কারো মতে কিছু কিছু
উম্মতের উপর। তবে এ ব্যাপারে প্রায়
সবাই একমত যে, খৃষ্টানদের উপর
রামাযানের রোযা ফরয ছিল
উম্মাতে মুহাম্মদীর মত। খৃষ্টানদের
ক্ষেত্রে বিধান ছিল রামাযানের
রাতে ঘুমানোর পর থেকে পরদিনের
সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত পানাহার ও
স্ত্রী সহবাস করতে পারবেনা। এ
বিষয়টি তাদের কাছে কঠিন
মনে হলে শীত ও
গ্রীষ্মকালে তারা মনমত রোযার
সংখ্যা পাল্টে নিত। অর্থাৎ
যে সময়ের রমাযান মাস কষ্টদায়ক হত
সে সময় তারা রোযা ১০
টা রাখতো পরের বছর
২০ টি অতিরিক্ত
রেখে রোযা ৫০টি রাখত। রোযার
ফরয হবার পরও খৃষ্টানদের উপর আপতিত
বিধান
অনুযায়ী মুসলমানরা রোযা রাখতে শুরু
করেন। অর্থাৎ রামাযানের
রাতে ঘুমানোর পর থেকেই
রোযা শুরু হয়ে যায়। ঘুম
থেকে জেগে কোন কিছু পানাহার
করা ও স্ত্রী সহবাস
করতে পারবেনা। পরবর্তীতে আবু
কায়েস বিন সারমা রাঃ সহ কিছু
সাহাবী আবেদন করলে আল্লাহ
তায়ালা সহজতার আয়াত নাজিল
করে জানিয়ে দিলেন
সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত
রোযা নেই। পর থেকে রোযা শুরু।
(তাফসীরে তাবারী-৩/৪০৯)
খোদাভীরু হবার মাস
মাহে রামাযান
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন
আমি তোমাদের উপর রোযা ফরয
করেছি যেন
তোমরা মুত্তাকী তথা খোদাভীরু হতে পার।
রোযার মাধ্যমে একজন
বান্দা খোদাভীরু এভাবে হয় যে,
একাকি চুপটি ঘরে রোযাদার
যখন থাকে তখন সে ইচ্ছে করলেই
পানাহার করতে পারে কিন্তু সে এ
থেকে কেবল বিরত
থাকে আল্লাহর আদেশ অমান্য
হয়ে যাবার ভয়ে,
একাজটি সে করে থাকে শুধু
আল্লাহর ভয়ে, কারণ
সেখানেতো কোন মানুষ
তাকে দেখছেনা।
সুতরাং রোযা রাখাটাই
খোদাভীরুতার একটি পরিচায়ক।
সুতরাং রামাযানে এই প্রশিক্ষণ
নিয়ে অন্য সময়ে যেন বান্দা কোন
গোনাহ করতে আল্লাহ দেখছেন এই
ভয়ে বিরত
থাকে এর একটি প্রশিক্ষণও এই
রামাযান। এজন্যই আল্লাহ বলেছেন
তোমরা মুত্তকী হবার জন্য
আমি রোযাকে ফরয করেছি।
রামাযানের ফযীলত
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ : ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ
ﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﺃﻭﻝ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺻﻔﺪﺕ
ﺍﻟﺸﻴﺎﻃﻴﻦ ﻭﻣﺮﺩﺓ ﺍﻟﺠﻦ ﻭﻏﻠﻘﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻠﻢ ﻳﻔﺘﺢ
ﻣﻨﻬﺎ ﺑﺎﺏ ﻭﻓﺘﺤﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﻠﻢ ﻳﻐﻠﻖ ﻣﻨﻬﺎ ﺑﺎﺏ
ﻭﻳﻨﺎﺩﻱ ﻣﻨﺎﺩ ﻳﺎ ﺑﺎﻏﻲ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﺃﻗﺒﻞ ﻭﻳﺎ ﺑﺎﻏﻲ ﺍﻟﺸﺮ ﺃﻗﺼﺮ
ﻭﻟﻠﻪ ﻋﺘﻘﺎﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻭﺫﻟﻚ ﻛﻞ ﻟﻴﻠﺔ ﻗﺎﻝ ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺒﺎﺏ ﻋﻦ
ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺑﻦ ﻋﻮﻑ ﻭ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻭ ﺳﻠﻤﺎﻥ
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﻷﻟﺒﺎﻧﻲ : ﺻﺤﻴﺢ
অনুবাদ-হযরত আবু
হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল
সাঃ বলেছেন-যখন রামাযানের
প্রথম রাত আসে তখন শয়তান ও
জীনদের পায়ে বেড়ি পড়ানো হয়।
এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ
করে দেয়া হয়, তাই জাহান্নামের
কোন দরজা খোলা থাকেনা, ও
জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়,
এমনকি জান্নাতের কোন দরজা বন্ধ
থাকেনা। আর একজন
আহবানকারী ডাকতে থাকে-
হে কল্যাণ প্রার্থী! এগিয়ে এসো!
আর মন্দতাপ্রার্থী! তুমি ফিরে যাও!
আর আল্লাহ তায়ালার পক্ষ
থেকে অনেক
গোনাহগারকে জাহান্নাম
থেকে মুক্তি দেয়া হয়।(অর্থাৎ তার
ক্ষমার সীদ্ধান্ত গৃহিত হয়।)
(তিরমিজি শরীফ-রামাযান অধ্যায়)
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ : ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ
ﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻗﺎﻣﻪ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ
ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻡ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻏﻔﺮ
ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ
অনুবাদ-হযরত আবু
হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল
সাঃ ইরশাদ করেন-
যে ব্যাক্তি ঈমানের
সাথে ও পূণ্যের আশায় রামাযানের
রোযা রাখে আর ঈমানের
সাথে পূণ্যের আশায় শুয়ার পূর্বে নফল
(তারাবীহ) পড়ে তার পূর্বের সকল
গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়। আর
ঈমানের সাথে পূণ্যের আশায়
শবে কদরে নফল পড়ে তার পূর্বের সকল
গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
(তিরমিজী শরীফ-রামাযান অধ্যায়)
সেহরীর ফযীলত
ﺃﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ( ﺗﺴﺤﺮﻭﺍ ﻓﺈﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ ﺑﺮﻛﺔ )
অনুবাদ-হযরত আনাস
রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল
সাঃ ইরশাদ করেন-
তোমরা সেহরী খাও
কেননা সেহরীতে বরকত নিহিত।
(বুখারী শরীফ-২/৬৭৮)
ﻋﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﺎﺹ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ - ﻗﺎﻝ ﻓﺼﻞ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺻﻴﺎﻣﻨﺎ ﻭﺻﻴﺎﻡ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ
ﺃﻛﻠﺔ ﺍﻟﺴﺤﺮ
অনুবাদ-হযরত আমর বিন আস
থেকে বর্ণিত রাসূল সাঃ ইরশাদ
করেন-আমাদের ও
আহলে কিতাবীদের মাঝে রোযার
মাঝে পার্থক্য নির্ণায়ক হল
সেহরী খাওয়া। (মুসলিম
শরীফ-৩/১৩০)
বান্দাদের পূণ্য আর গোনাহমুক্তির
ক্ষেত্রে বোনাসময় মাস
গোনাহগার বান্দাদের গোনাহ
মাফের ব্যাপকতার জন্য এ মাস এক
বিশাল সুযোগের মাস।
রামাযানের শুরু থেকেই গোনাহ
মাফের যে অফার শুরু হয়
তা থাকে ঈদের চাঁদ উঠা পর্যন্ত।
একবার কোন ইবাদাত করলে অন্য
মাসে ৭০ বার সে ইবাদাত করার
সোয়াব পাবার নিশ্চয়তা।
সুবহানাল্লাহ! মহান
আল্লাহর অবারিত মাগফিরাত আর
বরকতপূর্ণ এ মাস। এ মাসে যেন আল্লাহ
তায়ালা ক্ষমা আর বরকতের
ঝাঁপি খুলে দিয়েছেন।
ﻣﻦ ﺗﻘﺮﺏ ﻓﻴﻪ ﺑﺨﺼﻠﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻛﺎﻥ ﻛﻤﻦ ﺃﺩﻯ ﻓﺮﻳﻀﺔ
ﻓﻴﻤﺎ ﺳﻮﺍﻩ ﻭ ﻣﻦ ﺃﺩﻯ ﻓﻴﻪ ﻓﺮﻳﻀﺔ ﻛﺎﻥ ﻛﻤﻦ ﺃﺩﻯ ﺳﺒﻌﻴﻦ
ﻓﺮﻳﻀﺔ ﻓﻴﻤﺎ ﺳﻮﺍﻩ
অনুবাদ-সালমান রাঃ থেকে বর্ণিত
একদা নবীজী সাঃ খুতবায় বলেন-
যে ব্যক্তি এ মাসে (নফল)
নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর
নৈকট্য অর্জন করবে, সে ঐ ব্যক্তির
ন্যায় হবে যে রামাযান ছাড়া অন্য
সময় একটি ফরয আদায় করল, আর
যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায়
করবে সে যেন অন্য মাসের
সত্তরটি ফরয আদায় করল। (সহীহ
ইবনে খুজাইমা-৩/১৯১)
আহবান
প্রিয় পাঠক/পাঠিকারা! আসুন রহমত
বরকত মাগফিরাতে পূর্ণ এই পবিত্র
মাসটি আমরা এবার অন্য
সময়ের তুলনায় পবিত্র ও সুন্দর
করে পালন করি। তারাবিহ-
তাহাজ্জুদ, সেহরী-ইফতার, জিকির-
তাসবীহ, প্রথম ওয়াক্তে-
জামাতে নামায পড়া ইত্যাদীর
মাধ্যমে এ রামাযানটি পালন
করি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্বের সাথে।
সাথে সাথে সকল প্রকার গোনাহ ও
অশ্লীলতা থেকে মুক্ত থাকি দৃঢ়তার
সাথে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের
এ পবিত্র মাসে ইবাদত করে তার
প্রিয় বান্দা হবার তৌফিক দান করুন।
সাথে সাথে যারা এ
মাসে নিজের গোনাহকে মাফ
করাতে না পারে তাদের
ক্ষেত্রে হযরত জিবরাঈল
আঃ যে অভিশাপ করেছেন
যে ব্যক্তি এ মাসে গোনাহ মাফ
করাতে না পারে সে ব্যক্তি সবচে দূর্ভাগা নবীজী সাঃ যে বদদুআর
প্রদুত্তরে বলেছেন আমীন, সেই মকবুল
বদ দুআকৃত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত
না হতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের
হিফাযত করুন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন