সকল ইসলামী দলগুলোর প্রতি কিছু কথা...
লিখেছেন লিখেছেন কুরআনের যোদ্ধা ৩১ মে, ২০১৩, ১১:০৪:১৫ সকাল
আমাদের দেশের বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর নেতাদের এতো আবেগী মনোভাব যে ইসলামের ব্যাপারে কোন ইস্যূ পেলে রাতারাতি ইসলামকে প্রতিষ্ঠা কিংবা রক্ষার জন্য মাঠ গরম করে ফেলেন। কিন্তু অল্প সময় যেতে না যেতেই তাদের সেই আন্দোলন কোথায় হারিয়ে যায় আমরা টের পাই না।উদাহরণ স্বরূপ ১৯৯২/৯৩ সালে ইসলাম বিদ্ধেশী নাস্তিক চটি সাহিত্যের লেখিকা তসলিমা নাসরিনদের বিরুদ্ধে ইসলামী দলগুলো এবং তাদের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা স্বরণ করা যেতে পারে। বেশির ভাগ ইসলামী দল সস্থা আবেগ নির্ভর। ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত এই বাংলাদেশকে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্য লোক তৈরীর কিংবা ঘুণে ধরা আমাদের এই অবনতিশীল সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের স্থায়ী কোন কর্মসুচী চোখে পড়ার মতো দেখি না।কিছু কিছু ইসলামী দল আছে গোত্র ও অঞ্চল নির্ভর।আবার কিছু দল আছে পীরের তরীকা নির্ভর। এক দলের লোকজন অন্য দলের সমর্থকদের সাথে খুবভালো ভাবে জানাশুনা সু-সম্পর্ক, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল, জিকির-আযকারের অনুষ্ঠানে তাদের যৌথভাবে উপস্থিতি লক্ষ্য করি।শুধু ব্যতিক্রম দেখা যায় বেরলভী আক্বিদার অনুসারী ও সুন্নী মুসলিম বলে পরিচয় দানকারী এবং দরগাহ-মাজারপন্থী উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ছাড়া। এই ধারার লোকগুলো কশ্বিনকালেও বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর সাথে ঐক্য হতে দেখা যায় না। হোক না সমস্যাটি জাতির অস্তিস্থ বিনাশী ও ঈমান নিয়ে বেচে থাকার প্রশ্ন! তার পরেও এদেরকে জাতীয় স্বার্থে কিংবা ঈমান আকিদা রক্ষার স্বার্থে কখনো ঐক্যবদ্ধ হতে দেখি না। বর্তমানে চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রিক এদের যাবতীয় নীতি আদর্শ ও কর্মসুচী নির্দেশিত হয়ে আসছে।কিন্তু রাজনৈতিক ময়দানে যৌথভাবে একটি দলের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয় না। বিশেষ করে আমাদের দেশে ওলামায়ে দেওবন্দের অনুসারীদের মাঝে ভ্রাত্ববোধ থাকলেও রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন না। অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম এবং একমাত্র সুসংঘঠিত একটি দলকে তারা ইসলামী আক্কীদা বিশ্বাসের আলোকে স্বীকৃতি দিতে অনিহা। অথচ এই দলেরই রয়েছে একটি দেশকে সার্বিকভাবে নেতৃত্ব দেয়ার মত বহুমূখী ব্যবস্থা। অন্য ইসলামী দলগুলোর তুলনায় এদের রয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুর্দশিতাসম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তিত্ব, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরীর মত দক্ষ লোক, মানবকল্যাণমুখী ব্যাংকিং ব্যবস্থা, সামাজিক বন্ধনকে মজবুত করার মত সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল , সামরিক শক্তিকে সুবিন্যস্তভাবে কাজে লাগিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঘোটা মুসলিম জাতির নিরাপত্বা বলয় সৃষ্টির দক্ষতা, পররাষ্ট্রনীতিকে একটি স্বাধীন দেশের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠার যোগ্যতা, দারিদ্র বিমোচনে কার্যকরী ও যুগান্তকারী উদ্যোগ, শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঢেলে সাজানোর পর একে বাস্তবরূপে কার্যকর করার মত যোগ্য লোক তৈরীর সুদুরপ্রসারী উদ্যেগসহ একটি রাষ্ট্রকে সফলভাবে পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সরকারী ও বেসরকারীর প্রতিটি সেক্টরে যোগ্যতা ও দক্ষতার কার্য সম্পাদন করার মত লোক তৈরী।অর্থাৎ এক কথায় দুনিয়াবী জীবনের সার্বিক সফলতা এবং পারলৌকিক জীবনে আল্লাহর আদলতে জবাবদিহিতার উপযোগী লোকের এক বিশাল সমাহার যার, বাংলাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি রয়েছে তার নাম হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। অথচ আমাদের দেশের অন্যন্যা ইসলামী দলগুলো এই শক্তিটিকে ইসলামী দল বা ইসলামী শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করে। যদি এই মুহুর্তে আল্লামা আহমদ শফী তার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এদেশে ইসলামী বিপ্লবের ডাক দেন তবে আমার শতভাগ বিশ্বাস এদেশে ইসলামী জীবন ধারার রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠার সুচনা হবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই জামায়াতে ইসলামীকে তাদের সহযাত্রী হিসেবে নিলেই হবে না, বরং জামায়াতে ইসলামীর দীর্ঘ দিনের সুপরিল্পনায় তৈরী সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ের রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষতা ও মেধার সাথে দেশ গড়ায় অবদান রাখছেন তা স্বীকার করতে হবে।আমি এখানে শ্রদ্বেয় আলেম সমাজকে খাটো করা কিংবা তাদের অবদানকে অস্বীকার করার জন্য বলছি না। বাস্তব কারণে কথাটা স্বীকার করতে হবে। ওলামায়ে দেওবন্দ কিংবা আলিয়া মাদ্রাসা ধারার আলেমদের বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। জামায়াত-শিবির তাদের দাওয়াতী কার্যক্রমের বেশীর ভাগ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক হওয়ার কারণে সহজেই সেখানে তাদের তৈরী লোকগুলোই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পথ সহজ হয়েছে আমাদের দেশের বহুমূখী শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে। সামাজিকভাবেও জামায়াত শিবিরের এক বিশাল বলয় সৃষ্টি হয়েছে। ক্বাউমী দ্বীনি মাদারিস থেকেও অনেক মেধাবী লোকজন তৈরী হয়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সুনামের সাথে অবদান রাখছে। একটি বিপ্লব উত্তর দেশকে গড়ার জন্য যে বিশাল দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি দরকার তার বেশির ভাগই রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে। যেটি অন্যন্যা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। অন্যদিকে এটাও অনস্বীর্কায যে, বর্তমান সভ্যতার দন্তের কষাঘাতে পিষ্ট, মজলুম ও নির্যাতিতদের সারা বিশ্বে মানব জাতির সব চেয়ে বড় অংশটিই হচ্ছে মুসলমানরা। অসহায় নির্যাতিতদের চোখের পানি পরিনত হয়েছে বারুদে। এই বারুদের আগুন জ্বলছে জালেমের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বের অনেক তরুণদের বুকে। পিঠ দেয়ালে টেকে যাওয়ার কারণেই আজ আফগানিস্তান, সিরিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত দেশে প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছি। আরো দেখতে পাচ্ছি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে জন্ম নেয়া বিভিন্ন মুসলিম দেশ সহ সারা রাশিয়া জুড়ে। আমি জানিনা হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল ভাইয়েরা কতটুকু আকৃষ্ট সেসব বিপ্লবী প্রক্রিয়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এবং বিশ্ব রাজনৈতিক পটভূমির আলোকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে কোন পন্থায় আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।আমরা বাংলার মুসলমান আশা করি ইসলামী দলগুলো নিজেরা একে অপরের সমালোচনা থেকে দুরে থেকে ইসলামের স্বার্থে বৃহৎ ঐক্যের ডাক দিবেন।ইসলামপন্থীরা যদি নিজেদের ছোট খাটো ইখতিলাফ পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যায় তবে তাগুতী শক্তির পতনের জন্য তেমন বেশী ক্ষয়-ক্ষতি হবে না।
বিষয়: বিবিধ
১২০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন