।।।ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলেদের পর্দা।।।

লিখেছেন লিখেছেন কুরআনের যোদ্ধা ২৯ মে, ২০১৩, ০২:৫২:১১ দুপুর

মুসলমানদের মধ্যে বিশেষ করে ছেলেদের মাঝে একটা বিশেষ ধারণা প্রচলিত আছে যে মনে হয় তাদের মেয়েদের মতো হিজাব কিংবা পর্দা করার দরকার নেই। কিন্তু এটা সঠিত আসুন ইসলামের দৃষ্টিতে ছেলেদের পর্দার গুরুত্ব জেনে নেই।।

হিজাব (পর্দা) শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে; আবরণ বা অন্তরাল। অথবা আচ্ছাদিত করা, আড়াল করা বা ঢেকে রাখা। যাকে ইংরেজিতে বলে Curtain অথবা cloak covering the whole body আর শরিয়তের পরিভাষায়; ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী-পুরুষ প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত অঙ্গ-প্রতঙ্গসমূহ ঢেকে রাখার নামই হিজাব বা পর্দা। এটা সকল মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ।

হিজাব শব্দের ৬টি অর্থ

১। পুরুষের হাটু থেকে নাভি পর্যন্ত এবং মহিলাদের জন্য সমস্ত শরীর হাতের কজ্বী ও মুখ বাদে ঢেকে রাখা।

২। এমন পোশাক পরা যাবেনা যাহাতে শরীরের গঠন সমূহ বোঝা যায়।

৩। পোশাক এমন পাতলা হবে না যাহাতে ভিতর থেকে দেখা যায়।

৪) পোশাক এমন আকর্ষণীয় হবে না যাহাতে বিপরীত লিঙ্গকে আকৃষ্ট করে।

৫) এই পোশাক এমন হবে না যাহা অবিশ্বাসীদের মতো যেমন খৃষ্টানরা পরে অম বা টিকা অথবা স্কাট ও মিনি।

৬।এমন পোশাক পরবেনা যাহা বিপরীত লিঙ্গের মতো। যেমন- পুরুষ মেয়েদের পোশাক ও মেয়েরা পুরুষদের পোশাক পরা আর হিজাব বলতে শুধু পোশাকের হিজাব নয়, হিজাব হলো মানুষের ব্যবহার ও আচরন, চোখের হিজাব বা লজ্জা ।হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, হায়া ও লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ, আর ঈমান হলো জান্নাতের জিনিস। আর অশ্লীলতা হলো অসভ্যতার অংশ, আর অসভ্যতা জাহান্নামের জিনিস।

-- তিরমিযি, হাদিস,২০০৯

হায়া ও লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ, কারণ ঈমানের দাবী হলো আল্লাহ তা'আলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। আর লজ্জা মানুষকে তাতে সাহায্য করে।

আর হায়া ও লজ্জাশীলতার সর্বপ্রথম ও সর্বোত্তম পর্যায় হলো, আল্লাহকে লজ্জা করা। আর আল্লাহকে লজ্জা করার অর্থ হলো, তিনি যেন বান্দাকে তাঁর নিষেধকৃত কাজ করা অবস্থায় এবং আদেশকৃত কাজ না করা অবস্থায় দেখতে না পান।

আর লজ্জাশীলতার দ্বিতীয় স্তর হলো, মানুষের সম্মুখে এমন কোন কথা কিংবা কাজ না করা যা সমাজে নির্লজ্জতা মনে করা হয়। কোন মুমিন এমন করতে পারে না।

আর যে যত নির্লজ্জ সে ততো অশ্লীল ও অসভ্য। আর অসভ্যতা মানুষকে নফসের গোলামীর পথে পরিচালিত করে,ফলে সে জাহান্নামী হয়।, চিমত্মার হিজাব সর্বোপরি হিজাব এমন এক ঢাল যা কিনা অসতী ও লাম্পট্যকে প্রতিহত করবে। আর হিজাব বা শালিনতা ইসলাম ধর্মের অন্যতম আকর্ষনীয় বিষয়।

---------পুরুষদের জন্য ভিন্ন নারী হতে দৃষ্টিও লজ্জা স্থানের হেফাযত করা---------------

আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে সূরা নুর এর ৩০নং আয়াতে এরশাদ করেছেন,

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]

হে নবী! মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

মূল শব্দগুলো হচ্ছে يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ এখানে غُضُّوমানে হচ্ছে কোন জিনিস হ্রাস করা ও নিচু করা। غُضُّوএর অনুবাদ সাধারনত করা হয়, ‘‘দৃষ্টি নামিয়ে নেয়া বা রাখা’’। কিন্তু আসলে এ হুকুমের অর্থ সমসময় দৃষ্টি নিচের দিকে রাখা নয় । বরং এর অর্থ হচ্ছে পূর্ণ দৃষ্টিভরে না দেখা এবং দেখার জন্য দৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে না দেওয়া। ‘‘দৃষ্টি সংযত রাখা’’ থেকে এ অর্থ ভালভাবে প্রকাশ পায়। অর্থ্যাৎ যে জিনিসটি দেখা সংগত নয় তার ওপর তেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া। আবার مِنْ أَبْصَارِهِمْ এর মধ্যে مِن (মিন) ‘‘কিছু বা কতক অর্থ প্রকাশ করেছে। অর্থ্যাৎ সমস্ত বিষয়ের উপর দৃষ্টি সংযত রাখতে বলা হয়নি।বরং কোন কোন সময় দৃষ্টি সংযত রাখতে বলা হয়েছে ঐসকল নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর উপর।

‘‘পুরুষেদের মহিলাদেরকে দেখা অথবা অন্যদের লজ্জাস্থানে দৃষ্টি দেয়া কিংবা অশ্লীল দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকা’’। এর ব্যাখা এই যে, নিজের স্ত্রী বা মুহাররাম নারীদের ছাড়া কাউকে নজর ভরে দেখা মানুষের জন্য জায়েয নয়। একবার হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে ক্ষমাযোগ্য কিন্তু প্রথম দৃষ্টিকে আকর্ষণীয় মনে করে দ্বিতীয় দৃষ্টিপাত ক্ষমাযোগ্য নয়। নবী করীম (স.) একে চোখের যিনা বলেছেন।

তিনি বলেছেন ‘‘ মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের যিনা, ফুসলানো কন্ঠের যিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনার যিনা কানের যিনা, হাত লাগানো ও অবৈধ উদ্দেশ্য নিয়ে চলা, হাত ও পায়ের যিনা। ব্যভিচারের এ যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয় তখন লজ্জাস্থানগুলো তাকে পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে’’।--(সহীহ বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ)

@-হযরত বুরাইদাহ বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী (রা.)কে বলেন- ‘‘হে আলী! এক নজরের পর দ্বিতীয় নজর দিয়ো না। প্রথম নজর ক্ষমাপ্রাপ্ত কিন্তু দ্বিতীয় নজরের ক্ষমা নেই’’। --(মুসনাদে আহমদ, তিরমীজি, আবু দাউদ, দারেমী)

@-হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী (রা.) বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম; হঠাৎ চোখ পড়ে গেলে কি করবো? তিনি বললেন, চোখ ফিরিয়ে নাও’’। --(সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ,তিরমীজি, আবু দাউদ, নাসাঈ)

@-আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) রেওয়ায়েত করেছেন রাসুল (স.) আল্লাহর উক্তি বর্ণনা করেছেন ‘‘ দৃষ্টি হচ্ছে ইবfলসের বিষাক্ত তীরগুলোর মধ্যে থেকে একটি তীর, যে ব্যক্তি আমাকে ভয় করে তা ত্যাগ করবে আমি তার বদলে তাকে এমন ঈমান দান করবো যার মিষ্ট সে নিজের হৃদয়ে অনুভব করবে’’ ।--(তাবারানী)

আবু উমামাহ রেওয়ায়েতে নবী করীম (স.) বলেনঃ ‘‘ যে মুসলমানের দৃষ্টি কোন মেয়ের সৌন্দর্যের ওপর পড়ে এবং সে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, এ অবস্থায় আল্লাহ তার ইবাদাতে বিশেষ স্বাদ সৃষ্টি করে দেন’’। --(মুসনাদে আহমদ)

وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ [٢٣:٥]

যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে সূরা আল মুমিনুন আয়াত-৫ এর দুই অর্থ হয়। এক, এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। অথ্যাৎ উলংগ হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং অন্যের সামনে লজ্জাস্থান খোলে না । দুই, তারা নিজেদের সততা ও পবিত্রতা সংরক্ষন করে। অখ্যাৎ যৌন স্বাধীনতা দান করেন এবং কামশক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাগানহীন হয় না।

দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশের অর্থ হতে পারে যে , কোন নারী বা পুরুষের সতরের প্রতি মানুষ দৃষ্টি দেবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘‘ কোন পুরুষ কোন পুরুষের লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টি দেবে না এবং কোন নারী কোন নারীর লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টি দেবে না। --( মুসণাদে আহমদ, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমীজি)

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে পর্দা শুধু মাত্র মেয়েদের জন্য নয়, পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক। কিছু কিছু গোঁড়া মুসলমান আছে যারা মনে করে যে ছেলেদের কোন পর্দা নেই তারা কুফরের মধ্যে আছে আল্লাহ তাদের সঠিব বুঝ দান করুক। আর আমাদের পর্দা পালন করার তৌফিক দিক।

এবার আসি কোন অবস্থায় অপরিচিত মেয়েদের দেখা জায়েয। কিছু প্রয়োজনীয় ব্যাপার সমূহ যেমন বিবাহ, অপরাধ অনুসন্ধানে সন্দেহজনক মহিলাকে দেখা, আদালতে সাক্ষি দেওয়ার সময়, ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার ক্ষেত্রে। (আবু দাউদ)

এছাড়াও শিক্ষকের ক্লাসে, কোন সাহায্য নেওয়ার ক্ষেত্রে।

এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস আছে। মুগীরাহ ইবনে শু’বা বর্ননা করেন, আমি এক জায়গায় বিয়ের প্রস্তfব দেয়। রাসুল্লাল্লাহ (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, মেয়েটিকে দেখে নিয়েছো তো? আমি বলিলাম না। তিনি বললেন- তাকে দেখে নাও। এর ফলে তোমাদের মধ্যে অধিকতর একাত্নতা সৃষ্টি হওয়ার আশা আছে’’। --( মুসনাদে আহমদ, তিরমীজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, দারেমী)

সুতরাং য সকল ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই সে সকল জায়গায় নারী পুরুষ প্রয়োজনে পরস্পরকে দেখতে পারবে।

বিষয়: বিবিধ

৫০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File