সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা: ভারতীয় হাইকমিশনারের দাবি ও বাস্তবতা

লিখেছেন লিখেছেন মোঃ হাম্মাদুর রহমান ১৩ জুন, ২০১৩, ১২:৩৪:০৫ রাত



ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ দাবি করেছেন- “গত ছয় মাসে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।”

আজ (বুধবার) জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি করেন। পঙ্কজ শরণ যখন এই দাবি করেন তখন ওই অনুষ্ঠানেই সাংবাদিকরা তাকে জানিয়ে দেন আজও বিএসএফ’র গুলিতে দুই বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

পঙ্কজ শরণ এমন সময় এ দাবি করলেন যখন বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া ও মানবাধিকার সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী চলতি বছর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হামলায় অন্তত ১৩ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।

ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর সীমান্তে মুক্তার দাই ও নুর ইসলাম নামে দুইজন এবং এর একদিন পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের বিবিসন সীমান্তে বিএসএফ'র গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হন। নিহতরা হলেন- তারাপুর গ্রামের মুহাম্মাদ মাসুদ এবং সাহাপাড়া গ্রামের শহীদুল ইসলাম।

২৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা আনারুল (৩৫) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে চাবুক মেরে ও কুপিয়ে হত্যা করে। নিহত আনারুল ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হলদিবাড়ী বিশ্বনাথপুর এলাকার নুরুলের ছেলে।

১৬ ফেব্রুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিদ্যাবাগিস সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি কলেজছাত্র মোকছেদুল নিহত হন।

এ ঘটনার পর বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিজিবির তীব্র প্রতিবাদের মুখে কলেজ ছাত্র মোকছেদুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে আগামীতে সীমান্তে আর গুলি না চালানোর অঙ্গীকার করে বিএসএফ।

২৭ মার্চ ঠাকুরগাঁওয়ের ধনতলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নেপাল চন্দ্র (২৫) নামে এক মানসিক রোগী নিহত হন।

তবে, মানবাধিকার সংগঠন- অধিকার দাবি করেছে, মার্চ মাসে বিএসএফ ২ জন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা,৪ জনকে নির্যাতন এবং একজনকে গুলি করে ও একজনকে ককটেল ছুঁড়ে আহত করেছে। একই সময়ে বিএসএফ’র হাতে অপহৃত হয়েছেন ১৬ জন যাদের মধ্যে ৬ জনই ছিল শিশু। পরে এই শিশুদের ছেড়ে দেয়া হয়।

‘অধিকার’-এর হিসাব আনুযায়ী- গত মে মাসে বিএসএফ ৩ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এছাড়াও বিএসএফ ২ জনকে নির্যাতন করে ও ৮ জনকে গুলি করে আহত করেছে। একই সময়ে বিএসএফ’র হাতে অপহৃত হয়েছেন ১০ জন।

২০১২ সালে বিএসএফ'র গুলি ও নির্যাতনে নিহত হন ৩৫ বাংলাদেশি। অধিকার-এর তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১০০০ বাংলাদেশি।

ভারত সরকার বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও সীমান্তে বিএসএফ-এর হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হওয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিষয়: বিবিধ

১৫০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File