ইসলাম এবং আসাদ পরবর্তী সিরিয়া
লিখেছেন লিখেছেন মোঃ হাম্মাদুর রহমান ০২ জুন, ২০১৩, ১২:৩৬:২৮ দুপুর
আরব বসন্তের জের ধরে সিরিয়ার কতিপয় মুক্তিকামী জনতা বহুবছরের স্বৈরশাসককে হঠাতে আন্দোলন শুরু করে । আন্দোলন ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ কঠোর নীতি গ্রহণ করেন এবং আন্দোলনকারীরাও বেপরোয়া হয়ে ওঠে । এখানে উল্লেখ্য যে, আসাদ পরিবার ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পরম বন্ধু ও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের চরম শত্রু । বলা হয়ে থাকে, যখন তিউনিসিয়া ও মিশরের অহিংস বিপ্লব সফল হয় তখন আমেরিকা-ইসরায়েল লবি তাদের শত্রু আসাদ সরকারকে হঠাতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং পরিকল্পনা মোতাবেক সিরিয়ার জনগণকে আসাদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করতে থাকে । কিন্তু আসাদ বিক্ষোভ দমনে কঠোর হওয়ায় তাদের পরিকল্পনা ভণ্ডুল হওয়ার উপক্রম হয় । তখন তারা বিক্ষোভকারীদেরকে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে ধাবিত করে । যাই হোক, আন্দোলনের শুরুতে আমেরিকা-ইসরায়েলের হাত ছিল কিনা এ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এখন যে তারা বিদ্রোহীদের সবরকম সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছে এ নিয়ে সন্দেহ নেই ।
অনেকেই আসাদ সরকারের ধ্বংস কামনা করেন । তারা বিদ্রোহীদের সমর্থন করেন কারণ বিদ্রোহীরা একটি গণতান্ত্রিক ও ইসলামি সিরিয়ার কথা বলছে । এটা সত্য যে, আসাদ একজন স্বৈরশাসক । কিন্তু আসাদের পতন হলে সিরিয়ায় গণতন্ত্র ও ইসলাম কতটুকু রক্ষিত হবে তা নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে । বিদ্রোহীরা যারা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে তাদের মধ্যেই কোন ঐক্য নেই । তারা একাধিক মতবাদে বিশ্বাসী । অন্যদিকে, তারা যে সরকার গঠন করবে সেটা আজীবন আমেরিকা-ইসরায়েল লবির প্রতি অনুগত থাকবে । সুতরাং পশ্চিমাদের স্বার্থ রেখে সিরিয় জনগণের দাবী কতটুকু পূরণ করা যাবে সেটা বিবেচ্য বিষয় । বিদ্রোহীরা যে ইসলামি সরকার গঠন করবে সেটা হবে একটি পুতুল সরকার, যেমনটি আছে আফগানিস্তানে । এবং তারা যে ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করবে সেটা হবে একটি ছায়া ইসলামপন্থী সরকার ।
এটাও দেখার বিষয়, এখানে ইরানকে দুর্বল করতে হলে সিরিয়ার পতন অপরিহার্য । আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে রাশিয়াকে বিতাড়িত করার মোক্ষম হাতিয়ার হচ্ছে আসাদের পতন । মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের একক আধিপত্য বিস্তার করা সিরিয়ার পতনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে । আসাদ সরকারের পতনের পর পশ্চিমারা ইরানে হামলা চালাতে সিরিয়াকে ব্যবহার করবে । যেভাবে ইরাকের বেলায় কুয়েতকে ব্যবহার করেছিল । আবার ইসরায়েল তার বৈশ্বিক পরিকল্পনার আওতায় সিরিয়া দখলও করতে পারে । তখন মধপ্রাচ্যের অবস্থা হবে অত্যন্ত নাজুক ।
এখন সিরিয় বিদ্রোহীদের সাথে যে অনেক আমেরিকান- ইসরাইলী সন্ত্রাসী আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে তা স্বাভাবিক । তাই ন্যাটো কতৃক বিদ্রোহীদের অস্ত্র দেওয়ার বিপরীতে আসাদ সরকারকে রাশিইয়ার অস্ত্র প্রদান অনেকটা যৌক্তিক । এতে করে অবশ্য নিহতের সংখ্যা বাড়বে ও যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে । কিন্তু এছাড়া উপায় আর নেই । সিরিয়ার পতন মানেই মধপ্রাচ্যে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্য বিলোপ ও ইসরায়েলের একাধিপত্য লাভ । তাই আমি মনে করি বিদ্রোহীরা অস্ত্র ছেড়ে আলোচনায় বসুক এবং শান্তিপুর্ণ উপায়ে যদি জনগণ চায় তাহলে আসাদ পদত্যাগ করুক । সিরিয়াকে কখনও সন্ত্রাসীদের অভায়রন্য হতে দেয়া যাবে না । সাম্রাজবাদিদের কবল থেকে অবশ্যই সিরিয়াকে রক্ষা করতে হবে ।
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন