ব্লগার মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের পোস্টকৃত ব্লগের উত্তরে।

লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ৩১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:১৮:৩২ সন্ধ্যা

জামায়াতের নারী কর্মীদের প্রতিবাদী রূপ শিরোনামে একটি ব্লগ পোস্ট করেছেন জনাব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। আমি তার ব্লগে একটি মন্তব্য করেছিলাম। আমার মন্তব্যটি বেশ লম্বা হওয়ার কারণে কয়েকজন বন্ধুর অনুরোধে মন্তব্যটিকে এডিট করে বর্ধিত ব্লগ আকারে পোস্ট দিলাম বিজ্ঞ পাঠকদের খেদমতে।

জবান মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম সাহেবের বেশ কয়েকটি ব্লগ আমি পড়েছি। তার অধিকাংশ ব্লগে সাধারণত আমাদের দেশে যারা কলুষিত নোংরা দুর্বৃত্ত্বপনা অশালীন রাজনীতিকে ইসলামের রঙ্গে রাঙ্গায়িত করে ইসলামাইজড করার মাধ্যমে কলুষমুক্ত করে পবিত্র করতে আন্দোলন করছে মূলতঃ ফখরুল সাহেবের লেখালেখিতে সেসব নিবেদিতপ্রাণ মহান ব্যক্তিদের বিকৃত সমালোচনা ও মিথ্যা কুৎসা রটানোই যেন তার জীবনের ব্রতী এবং প্রধান মিশন হিসেবে গ্রহণ করেছে।

বিভিন্ন প্রসঙ্গক্রমে পবিত্র কোরআন এবং মাঝে মধ্যে হাদিসের রেফারেন্স টানার চেষ্টা লক্ষ্যণীয় তার লিখিত ব্লগগুলোতে। তার দেয়া বিভিন্ন রেফারেন্স দেখে কোরআন ও হাদিসের একজন সচেতন পাঠকের নিকট কোরআনের বিভ্রান্তিকর বিকৃত অনুবাদ পড়ে বুঝতে বাকী নেই যে, আয়াতের শানে নযুল, হাদিসের শানে উরুদ, কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের নির্দেশিত মোখাতেব, সর্বপরি কোরআন বুঝার মৌলিক শাস্ত্র ইলমে নাহু, ইলমে ছরফ, উসুলুল কোরআন, ইসুলুল হাদিস, বালাগাত ও মান্তিক শাস্ত্র, সনদে ইস্রাইলীর চুলচেরা বিশ্লেষণপূর্বক ইজতিহাদকৃত সঠিক সিদ্ধান্তে আসার মত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে ফখরুল সাহেবের পড়াশুনার ঘাটতি আছে যা একজন সচেতন কোরআন-হাদিসের পাঠক মাত্রই দৃষ্টিতে ধরা পড়ে।

অতীতে ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক ইয়াহুদী ও খ্রীস্টান পন্ডিতদের চাতুর্যপূর্ণ ষড়যন্ত্রের কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে যারা সরলমনা মুসলমানদেরকে গোমরাহী ও ঈমানহীন করার মিশন নিয়ে কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা এবং বিভিন্ন জাল হাদিস লিখে বিভ্রান্তি ছড়াতো। ফখরুল ইসলামের লেখালেখির উপস্থাপনা ও ধরণ দেখে সচেতন মানুষের কাছে সে রকম ধারণাই জন্মাচ্ছে।

ফখরুল ইসলাম সাহেব মুসলিম মহিলাদের ড্রেসকোড নিয়ে বিভিন্ন বিদ্বেষপূর্ণ ও কটাক্ক করে মাঝে মধ্যে পোস্ট দিয়ে থাকেন। তার এসব লেখা পড়ে প্রবল সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে যে মুসলিম মহিলাদের ড্রেসকোড তথা হিজাব নিয়ে অযথা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্য মিশন নিয়ে মাঠে মেনেছেন তিনি। হিজাবের বিরোধীতা করতে গিয়ে নারীর শালীন পোষাকের উত্তম নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী বোরকার বিরোধীতা শুরু করেছেন। এক্ষেত্রে ফখরুলদের মত দৃষ্টিভঙ্গীপোষণকারী ও তাদের সমগোত্রীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি সহীহ হাদিসের রেফারেন্স দেয়ার চেষ্টা করবো আমি। যেখানে মুসলিম মহিলাদের ড্রেসকোড কি ধরনের হওয়া উচিত তার একটি ইউনিভার্সেল পদ্ধতির ধারণা বিভিন্ন মুজতাহিদগণ কোরআন সুন্নাহ গবেষণা করে স্থির সিদ্ধান্তে এসেছে। ব্লগার নাবিলের মন্তব্যের উত্তরে তিনি লিখেছেন-

পোষাকের ব্যাপারে কোরআনের বেসিক রুল হচ্ছে মার্জিত থাকা । একজন সুস্থ মানুষ কিভাবে মার্জিত থাকতে হয় তা ভালো ভাবেই জানেন । সুতরাং

১.কুরআনের আয়াত অনুযায়ী হাতের পাতা, পায়ের পাতা এবং চেহারা বের হলে কোন অসুবিধা নেই ।

২.আব্রু রক্ষার জন্য বোরখা পরিধান করতে হবে এমন কোন ইংগিত দেয়া হয়নি ।



বেশ ভাল কথা, আমরাও ধরে নিলাম কোরআনের বেসিক রুল হচ্ছে মার্জিত পোষাক পড়া। কথাটির ব্যাখ্যাও তিনি পয়েন্টাকারে দিয়েছেন সাথে সাথে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে মার্জিত পোষাকের মানদন্ড কি? তিনি যে ব্যাখ্যা দিলেন তাও বা পেলেন কোথায়? নাকি নিজের বিকৃত মস্তিষ্কপ্রষুত চিন্তার ফসল? তার বা তাদের দৃষ্টিতে যেটা মার্জিত সেটা অনেকের দৃষ্টিতে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি। যেমন ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মহিলাদের খোলামেলা ড্রেসকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এমনকি সেখানে মুসলিম মহিলাদের হিসাব পরিধানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আইন করে। আপনি যেটাকে মার্জিত শালিন বলছেন তাদের দৃষ্টিতে সেটা অমার্জিত, অশালীন। আর যদি ল্যাসবিয়ানদের কথাই বলেন তাহলে তো মহিলাদের জন্য কোন ড্রেসকোডই তারা মার্জিত মনে করে না। তারা সব সময় জন্মদিনের পোষাকে থাকতে যেমন পছন্দ করে তেমনি গোটা দুনিয়ার মানুষকে তাদের মত করতে অব্যাহত চেষ্টার অন্ত নেই। এখন যদি তারা ফখরুলদের দেয়া থিওরীকেই অমার্জিত আখ্যায়িত করে দাবী তোলে তাহলে কি সেটা আপনি মেনে নিতে পারবেন?

আসল ব্যাপার হচ্ছে পুরো বিষয়টাই আপেক্ষিক। বিষয়টা আরেকটু পরিস্কার করে বলতে গেলে আমরা একটি উদাহরণ দিতে পারি পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল হচ্ছে পবিত্র মক্কা নগরীতে অবস্থিত হারম শরীফ। পবিত্র হারম শরীফ আমাদের পশ্চিমে হওয়ার কারণে আমরা বাংলাদেশীরা পশ্চিম দিকে কেবলামূখী হয়ে নামাজ আদায় করি। কিন্তু মদিনার মানুষরা উত্তর দিকে নামাজ আদায় করে। কারণ হেরম শরীফ তাদের উত্তর দিকে। এখন আমরা যদি দাবী করি কেবলা পশ্চিম দিকে। তা কি বেটিক হবে? আর মদিনাবাসীরা যদি আমাদের দাবীকে নাকচ করে বলে না না কেবলা হচ্ছে উত্তর দিকে। তাও কি সঠিক নয়?

এখানে কিন্তু উভয়েই তাদের দাবীতে সঠিক অবস্থানে আছে। এখানে দৃষ্টিভঙ্গিগত ব্যাপারের কোন ঘটনা ঘটেনি। এটা হচ্ছে অবস্থানগত আপেক্ষিকতা। পবিত্র হারম শরীফ তার নিজস্ব অবস্থানেই আছে। পশ্চিম দিকেও না, উত্তর দিকেও না।

একইভাবে যদি আমরা চিন্তা করি বিভিন্ন দেশ ও জাতির মহিলাদের ড্রেসকোড কিভাবে প্রচলিত আছে সমাজে। তাদের পোষাক আষাক মার্জিত কিনা। যারা মহিলাদের জন্য কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে সমর্থিত, নির্দেশিত ও নির্ধারিত ড্রেসকোডকে মার্জিত মনে করেন তাদের দৃষ্টিতে অন্যদের খোলামেলা পোষাক আষাক অমার্জিতই মনে হবে। আর যারা মহিলাদের ড্রেসকোড সম্পর্কে ঐশী কোন নিয়ম কানুনই জানেন না তাদের দৃষ্টিতে খোলামেলা পোষাক আষাকই মার্জিত মনে হতে পারে। যেমন ফখরুল ইসলামদের মত লোকদের দৃষ্টিতে অত্যন্ত শাজগুজো করে খুব সুন্দর ড্রেসাপ করে মহিলারা নিজের সৌন্দর্য্যকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থান করে অন্যদের দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করে মডেল হয়ে পোজ দিলে সেটাকেই কোরআনের আলোকে শালীন ও মার্জিত পোষাক বলে বিভ্রান্তি চড়াচ্ছেন। অথচ এসব ড্রেসকোড কোন অবস্থাতেই নারীদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ব হিজাব তথা পর্দার কোন সংজ্ঞাই পড়ে না।

এখন আসি মহিলাদের ড্রেসকোড সম্পর্কে পবিত্র কোরআন দেয়া সেই নির্দেশনার দিকে।

যেহেতু কোরআন শুধু মাত্র মুসলিমদের জন্য নাজিল হয়নি। বরং এটি গোটা মানব জাতির হেদায়তের জন্যই প্রেরিত হয়েছে। তাই সাধারণভাবে মহিলাদের ড্রেসকোড হওয়া উচিত মার্জিত পোষাক। কোরআনের এই মার্জিত পোষাকের ধরণ কি রকম হওয়া উচিত? তারই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে রাসুল (সা) এর পবিত্র হাদিসে। কারণ কোরআনের পকৃত ব্যাখ্যা হচ্ছে রাসুল (সা) তেইশ বছরের নবুয়তী জীবন এবং তার পবিত্র হাদিসসমূহ। নারীদের পর্দার স্টাইল এবং তার ইম্পিমেন্ট স্বয়ং মহানবী (সা) তার কন্যা হযরত ফাতিমা (রা) এর মাধ্যমেই দুনিয়াবাসীকে সবক দিয়ে গেছেন। আমি জনাব ফকরুল ইসলাম এবং তার সমগোত্রীয় বিভ্রান্তবাজদের অনুরোধ করবো হযরত ফাতিমা (রা) এর পর্দার স্টাইল এবং তার অনুসরণীয় পদ্ধতি সম্পর্কে একটু পড়াশুনা করতে। একটু খোজ খবর নিতে।

ইসলামের বিভিন্ন মুজতাহিদগণ কোরআনের ব্যাখ্যা করেছেন রাসুলের হাদিসের মাধ্যমে।

আমি এখানে মেয়েদের ড্রেসকোড কি ধরনের হওয়া উচিত সে বিষয়ে পবিত্র কোরআনের নির্দেশনার ব্যাখ্যা স্বরূপ হাদিসটি উল্লেখ করছি-

صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا

(এখানে আরবী টাইপ করতে গিয়ে দুয়েকটি শাব্দিক ভুল হয়েছে। যেহেতু আমি আরবী টাইপিংয়ে তেমন দক্ষ নই। তাই পাঠক আশা করি আমার ভূলগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

হাদিসটির বাংলা অনুবাদের সারংশ-

নারী পুরুষ দু'দল জাহান্নামীদের মধ্যে প্রথম দলের অবস্থা হচ্ছে এমন যে তারা দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় গরুর লেজের মত সব সময় তাদের সাথে একটি অস্ত্র রাখবে যা দিয়ে মানব সমাজে ফিতনা ফ্যাসাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়াবে, সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলবে।

অন্যদলটি হচ্ছে নারীদের, যারা এমন পোষাক আষাক পরিধান করবে যে পোষাকে তাদের শরীরের লোভনীয় অঙ্গগুলো আরো আকর্ষণীয়ভাবে জাহির করবে, তাদের পড়নে কাপড় থাকবে কিন্তু তার পরেও তাদের অঙ্গগুলো স্পষ্টভাবে দেখা যাবে, তারা এভাবে অশালিন কাপড় চোপড় পড়ে অন্যদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করবে এবং তাদের অন্তরেও সেই বাসনা থাকবে যে, পরপুরুষরাও যেন তাদের দিকে আকৃষ্ট হয়- তাদের মাথার চুল হবে উঠের চোটের চেয়েও সুন্দর। এরাই হচ্ছে জাহান্নামী। জান্নাতের সুগ্রাণ তারা ঘুণাক্ষরেও পাবে না।

আমি এখানে উক্ত হাদিসের শানে উরুদ এবং এ সংক্রান্ত শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিসিনদের মতামত ফিকাহ শাস্ত্রের ইমামদের ইজতিহাদকৃত মাসআলা কিভাবে বর্ণনা করেছেন এবং এই হাদিসের বাস্তব শিক্ষা কি তা উল্লেখ করছি না। আমি শুধু ভাবানুবাদ উল্লেখ করেছি মাত্র। জনাব ফখরুল ইসলাম সাহেব যদি এতোই ইসলাম বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন এই হাদিসের আলোকে মহিলাদের ড্রেসকোডের ব্যাপারে মুসলিম স্কলাররা কি মতামত দিয়েছেন আশা করি তা নিয়ে একটু ব্যাখ্যা দিবেন।

উক্ত হাদিসের আলোকেই মুসলিম মুজতাহিদরা ইজতিহাদ করে কি সিদ্ধান্তে এসেছেন মহিলাদের ড্রেসকোড কি ধরণের হওয়া উচিত তা জানালে ব্লগের পাঠকদের উপকার হবে। অন্যথায় আমাদের সন্দেহটা আরেকটু প্রকট হবে আপনার ব্যাপারে।

জনাব ফকরুল ইসলাম সাহেব কথায় কথায় পবিত্র কোরআনের আয়াতের রেফারেন্স দেন। যেহেতু নিজেকে ইসলাম সম্পর্কে ব্লগে আমাদেরকে খুব সবক দেন। তাই আশা করছি আমি আরবী এবারতসহ যা টাইপ করেছি তাও বুঝতে পেরেছেন।

যেহেতু আপনি নিজেকে কোরআন সুন্নাহ সম্পর্কে পড়া শুনা করা একজন আলেম দাবী করেন তাই উল্লেখিত হাদিসের আলোকে ইসলামের দেয়া নারীর ড্রেসকোড কি তা ব্যাখ্যা করে জানাবেন আশা করছি।

বিষয়: বিবিধ

৫৮০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File