ব্লগার সকাল সন্ধ্যার মন্তব্যের জবাবে।
লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৬:৩৭:১৯ সন্ধ্যা
প্রথমেই বিডিটুডে থেকে বিডিটুমরোতে প্রমোশন হওয়াতে এই ব্লগ সাইটের সংশ্লিষ্ট ব্লগার, মন্তব্যকারী, ভিজিটর, পাঠক এবং কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে সম্মানিত সম্পাদক সাহেবকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আমি নিজেও এই ব্লগ সাইটের একজন ভক্ত। বেশ কিছু ব্লগও পোস্ট করেছি এই সাইটে। ব্লগার হিসেবে তেমন যোগ্য ব্যক্তি নই। ভাল লিখতেও জানি না। বানানে যেমন শাব্দিক ভুল থাকে তেমনি ভাব প্রকাশ ও বাচন ভঙ্গিতেও একদম কাঁচা। আপনাদের দোয়া পেলে হয়তো আমার লেখা মানসম্মত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
বিডিটুমরো নাম সিলেকশনেও দারুণ দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আগামীর পথ চলা যেন হয় বাধাহীন সে প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহ কাছে।
ব্লগার জেদ্দাবাসী'র পোস্ট করা একটি ব্লগে আমার মন্তব্যের সূত্র ধরে সোবহান হুজুরের মুরিদ খ্যাত ব্লগার সকাল সন্ধ্যা'র মন্তব্যের জবাবে আমি এই ব্লগটি লিখতে চেষ্টা করেছি।
তিনি আমার মন্তব্যে সংক্রান্ত বিষয়ে একটি প্রশ্নের সাথে সম্পূর্ণ অপ্রাসংগিকভাবে ভিন্ন একটি লিংক দিয়ে বিতর্কের সূচনা করেছেন। তার কথার তাৎক্ষনিক জবাব দিতে গিয়ে আমি একটি মন্তব্যে করেছি। বেশ লম্বা মন্তব্যে। এখানে তা প্রাসংগিক মনে করে নতুন কিছু না লিখে সেটাকে এডিট করে পোস্ট করলাম মাত্র।
ব্লগার সকাল সন্ধ্যা মন্তব্যে করেছেনঃ অন্য ব্লগ গুলিতে সব বিষয়ে আলোচনা হতে পারলে এই ব্লগে পারবে না কেন দয়া করে বলবেন কি মুসা ভাই---
লিংকটি গিয়ে দেখবেন আশা করছি- লিখে
একটি ব্লগ সাইটে একজন চরম ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক জ্ঞানপাপী ব্লগারের পোস্টকৃত ব্লগের লিংকটি দিলেন।
তার কথার উত্তরে আমার অভিমত তুলে ধরছি সম্মানিত পাঠকদের দৃষ্টিগোচরের জন্য-
অন্য ব্লগ সাইটগুলিতে সব বিষয়ে আলোচনা হতে পারে- কথাটি মনে হয় দৃষ্টিভঙ্গিগত আপেক্ষিক ব্যাপার। কোন মানুষ নিজের বিশ্বাস ও রুচির অনুকুল পরিবেশ পেলে হয়তো সে মনে করে এই প্লটফর্মটা বেশ ভাল, খুব সুন্দর, নিরপেক্ষ সবার মতামতকে গুরুত্ব দেয়।
কিন্তু সে ব্যক্তির চিন্তায় অগভীর এবং আক্কেল-জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে মনে হতে পারে যে সংশ্লিষ্ট অনলাইন পোর্টাল বা ব্লগ সাইটটি নিরপেক্ষ, সবার মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়। এটাকে আমরা দোষের মনে করি না। কারণ তার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এজন্য তার চিন্তার বিষয় নয় যে, যারা যে উদ্দেশ্যে প্লাটফর্ম সৃষ্টি করেছেন তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে কিংবা আদর্শের সমর্থক লোক হওয়ার কারণে বাধার সৃষ্টি করছে না।
ব্যাপারটা একই ঝাড়ের বাশেঁর মত। সমমনা সব বাশঁ সেখানে গ্যাদারিং করলে কারো মনে হতে পারে যে, এই প্লাটফর্মটা নিরপেক্ষ। অথচ কর্তৃপক্ষের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকে। অন্য ব্লগ সাইটগুলোও নিরপেক্ষ নয়।
ব্লগার সকাল সন্ধ্যাসহ তার সমগোত্রীয় বন্ধুদের প্রতি আমার বক্তব্য হচ্ছে অন্য ব্লগের সাথে এই ব্লগের তুলনা হয়না। এই ব্লগ সাইটে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মেধাবী ছাত্র, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মাদ্রাসা পড়ুয়া আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত আলেমসহ সমাজের বিভিন্ন পেশার অনেক মেধাবী রুচিশীল লেখক ব্লগারটা লিখে থাকেন। এ কারণেই বিটিটুমরো অনলাইন পোর্টাল সাইটটি অন্য ব্লগের চাইতে অধিক জনপ্রিয়। এখানকার সব লেখকই যথেষ্ট রুচিবান মেধাবী। আজ পর্যন্ত একজন ব্লগারের ভাষাতেও কদর্য অশ্লীল ও অরুচিকর চটি মার্কা লেখা ও মন্তব্য দৃষ্টিগোচর হয়নি। কিন্তু আপনার দেয়া লিংকে গেলে কোন রুচিবান ভদ্র মানুষ পাতাটি বেশিক্ষণ ওপেন রাখার দৈর্য্য রাখতে পারবেন কিনা আমার সন্দেহ।
উক্ত লিংকটার মন্তব্যতে দেখুন কি অসম্মাজনক ও অরুচিকর গালাগালি। হয়তো এটা ব্লগ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও বিকৃত রুচিবোধের প্রকাশ ও পলিসিও হতে পারে। তাই বলে এসব ব্লগ সাইটের সাথে সত্যিকারের লেখক ও ব্লগারদের ফোরামের সাথে তুলনা করা উচিত নয়। এখানে সে ধরনের অসম্মাজনক লেখা-মন্তব্য করতে কাউকে দেখা যায় না।
ব্লগের নীতিমালা মেনে সব বিষয়ে আলোচনা-সমালোচানা হোক কিন্তু কাউকে অসাম্মান করে নয়। উস্কানিমূলক মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তির মাধ্যমে ফিতনা সৃষ্টি করে নয়।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নাস্তিক বা সেমি নাস্তিক সেকিউলারদেরও স্বাগতম জানানো উচিত। ব্লগ সাইটে তাদের লেখালেখি ও মতামত প্রকাশের অধিকার দেয়া উচিত।
কারণ তারা সবাই কিন্তু একরোখা, ধুর্ত, অযৌক্তিক নয়। তাদের মধ্যও অনেক ভাল মানের সহনশীল মেধাবী লোক আছেন। ইসলামপন্থীদের উচিত তাদেরকে দাওয়াতের আওতায় আনা। তাদের সাথে মত বিনিময় করা বই বিনিময় করা। যুক্তি তর্কের ডিবেইট করা।
কিন্তু যারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধুর্তামী, অযৌক্তিক মিথ্যা প্রচার প্রচারণা চালিয়ে কুৎসা রটনাতে ব্যস্ত তাদের ব্যাপারে ব্লগের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে আমি অবশ্যই সমর্থন করি। অশ্লীলতা পরিহার করে মাথায় গিলু থাকলে আসুন যুক্তি ও নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে আমরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের অসংগতি নিয়ে ডিবেইট করি। ধর্মীয় গোড়ামীর বিরুদ্ধে আমরাও আপনাদের মত সৌচ্চার। তবে তা হচ্ছে বিভ্রান্ত মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম। এখানেই আপনারা যুক্তি ও জ্ঞানের ধার ধারেন না। বিশেষ করে মানবতার ধর্ম ইসলামকে নিয়ে বিদ্বেশপূর্ণ কটাক্ষ, যুক্তি ও বুদ্ধির পরিবর্তে মিথ্যা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
বিখ্যাত ব্লগ সাইট সামুর ব্যাপারেও অনেকেই অভিযোগ করে থাকে ধর্মীয় বিশ্বাসগত কারণে তাদেরকে সে ব্লগ সাইটে এক্সেস সুযোগ দেয়া না। অথচ বিভ্রান্ত নাস্তিক এবং সেমি নাস্তিক সেকিউলার নৈরাজ্যবাদীদের অযৌক্তিক অসত্য প্রচার প্রচারণাকে খুব আগ্রহ সহকারে এপ্রিশিয়েট করে। যুব সমাজের নৈতিক অধঃপতনের প্রধান হাতিয়ার চটি সাহিত্য ও অশ্লীলতাকে তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে আশ্রয়-পশ্রয় দেয়। কিন্তু কোন দক্ষ কলমযোদ্ধা ইসলামপন্থীদের সেখানে সুযোগ দেয়া হয় না। এই অভিযোগ আমার নয়। অনেক ভুক্তভোগীর।
এখন আমি আলোচনায় আসবো ব্লগার সকাল সন্ধ্যার দেয়া লিংকের উপর।
কোরান কেন আল্লাহর বাণী নয়
আপনি যে লিংক দিলেন তার শিরোনামেই রয়েছে হাস্যকর স্ব-বিরোধীতা। ব্লগার নিজেই একজন নাস্তিক আল্লাহতে তার বিশ্বাস নেই। যে সত্তার প্রতি তার বিশ্বাস নেই সেই অস্থিত্বহীন (তার দৃষ্টিতে অস্থিত্বহীন, আমার দৃষ্টিতে নয়। আমি আল্লাহতে বিশ্বাসী একজন মানুষ) কাল্পনিক সত্তার পক্ষ হয়ে কোন কিছুকে (পবিত্র কোরআনকে) তার বাণী নয় প্রমাণ করার এতো মুরোদ কেন হয়ে পড়লো এই মূর্খটার? আসলে নাস্তিকরা কত মুর্খ সেটাই প্রমাণ দিল লেখার শিরোনামেই। পবিত্র কোরআনের কিছু কাঁচা হাতের বাংলা অনুবাদ পড়ে কিছু সন্দেহপরায়ন নাস্তিক জ্ঞানপাপী ও সেমি নাস্তিক সেকিউলারপন্থী গাধাও দেখি মহা পন্ডিত হয়ে বিশেষজ্ঞ বনে যাওয়ার বাহাদুরি দেখায়। উক্ত ব্লগারের পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের অনুবাদের উপস্থাপনা দেখে তার জ্ঞানের বহর বুঝা যায়। বেশ কিছু আয়াতের অনুবাদ কাট-পেস্ট-কপি করতে গিয়েও সে ভুল করেছে। আহহারে বিশেষজ্ঞ!
পবিত্র কোরআনের শুরুতেই চ্যালেঞ্জ দিয়ে ঘোষণা দেয়া হয়েছে- যা’লিকাল কিতাবু লা রাইবা ফিহি হুদাল্লিল মুক্তাকিন। আমি এখানে আরবী উচ্চারণটা এজন্যই লিখলাম যে, কোরআনের এই একটি বাক্যের ভাষাগত মাধুর্যতা, উপস্থাপনার প্রকাশ ভঙ্গি, শব্দ চয়ন, ব্যকরণগত সৌন্দর্য, সর্বপরি এই একটি বাক্য যা কিনা কোরআনের শুরুতেই মানব জাতির প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে যে মহাজাতিক ডাক- তা তুলনাহীন। দুনিয়ার কোন সাহিত্যে এর ধারে কাছেও ঘেষতে পারবে না। আর এই চ্যালেঞ্জিং উচ্চারণকে পবিত্র কোরআনের অন্য একটি নিদের্শনার আলোকে আমল করে তেলাওয়াতের রূপ দেয়া হয়- অর্থাৎ ওরাত্তিলিল কোরআনা তারতিলান। তখন এই মহা জাগতিক বাণী কোন সত্যানুসন্ধানী মানুষের কর্ণে যখন বিদ্ধ করে তখন সে মানুষের ভিতরে লুকায়িত সুপ্ত আত্মা জেগে উঠে। যদি তার কপালে হেদায়ত নসীব হয়।
তাই তো দেখি হযরত ওমর (রাযি) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনার যুগে যুগে পূনরায় মঞ্চস্থ হতে। ভারতের ড. শিবসেবা হয়ে গেলেন ইসলামুল হক। বৃটেনের এন্টনি গ্রীন হয়ে গেলেন আব্দুর রহীম গ্রীন। আমেরিকার খ্রীস্টান মিশনারী ধর্ম জাযক হয়ে গেলেন ড. ইউসুফ স্টেইচ। যারাই পবিত্র কোরআনকে একান্ত জানার জন্য, সত্যিকারের সমালোচনা করার জন্যই একবার তাতে তুলে নিয়েছে। সত্য বলতে কি পবিত্র কোরআনের নুরানী তেজস্ক্রীয়তায় শুধু তাদের হাতকে নয় বরং তাদের অন্তরকে পর্যন্ত পবিত্র করে দিয়েছে। বিখ্যাত আমেরিকান সিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. লরেন্স ব্রাউন, ড. মরিস বুখাইলী, মাইকেল এইচ হার্ড তাদের মধ্যে কয়েকজন মাত্র। মহিয়ষী নারীরাও পিছিয়ে নেই। লরেণ বুজ, ওয়াইবুনি রিডলি, কুইন পেডিল্লা, নিকোল কুইনসহ তারাও আজ উদারণ সৃষ্টি করছে। যারা পবিত্র কোরআনকে হাতে নিয়েছে একান্ত আন্তরিকভাবে অজানাকে জানার জন্য। কোরআনও তাকে উঝাড় করে বুকে ধারণ করে রেখেছে। দিয়েছে মানসিক প্রশান্তি। খোলা মন নিয়ে যদি পবিত্র কোরআনকে জিজ্ঞাসা করা হয় হে কোরআন কি তোমার কাজ? তখন কোরআন উত্তর দিবে “হুদান লিন্নাস”” যখন কোরআনকে প্রশ্ন করা হবে কোথায় তোমার অবস্থান? তখন কোরআন উত্তর দিবে ফি লাউহিম মাহফুজ। এভাবে মানুষের প্রতিটি জিজ্ঞাসার জবাব পবিত্র কোরআন দিতে চুড়ান্তভাবে সক্ষম।
এ বিষয়ে রাসুল (সা) এর হাদিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণী হচ্ছে “আল কোরআনু হুজ্জাতুন লাকা, আও আলাইকা”
এখানেও আমি আরবী এবারতের উচ্চারণ বাংলাতে লিখে দিলাম। কারণ কোরআন-সুন্নাহকে বুঝতে হলে, মনের নাস্তিকতাজনিত সন্দেহ দূর করতে হলে অবশ্যই ইসলামের মুল রিসোর্সগুলো যে ভাষাতে প্রেরিত হয়েছে সে ভাষাতে দক্ষতা অর্জন করা উচিত। অন্যথায় আগাগোড়াহীন অনুবাদ পড়ে মনের সন্দেহ দূর করবেন কিভাবে? বিশেষ করে যখন কোন ধুর্ত শয়তানের অসৎ উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য পবিত্র কোরআনের ভুল অনুবাদ পড়ে নিজেই ইসলামোফৌবিয়ায় আক্রান্ত হন তখন আপনাদের মত বিভ্রান্ত গন্তব্যহারা পথিকদের জন্য করুণা ছাড়া আর কিছুই চিন্তা করতে পারি না।
পরিশেষে সোবহান হুজুরের মুরিদ মিস্টার সকাল সন্ধ্যাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি একটি বিষয়ে বিতর্কের অবতারণা করার জন্য। আমিও দোয়া করছি আল্লাহর কাছে। কিন্তু হেদায়ত দেয়ার মালিকানা একান্ত আল্লাহর হাতে।
বিষয়: বিবিধ
৩২৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন