জাপানী মেয়ে ইউকোর ইসলাম গ্রহন: আধুনিকতার ধুয়া তুলে আত্মপরিচয় ভুলতে বসা মুসলিম নারীদের প্রতি অনুপম দৃষ্টান্ত।
লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৩:১২:৫২ দুপুর
জাপান প্রবাসী আমার বন্ধু আতিক ভাইয়ের অনুরোধে আজকের এই নিউজটি আমার ব্লগ সাইটে পাঠকের জন্য শেয়ার করছি।
প্রবাসে বাংলাদেশঃ
গত ৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৩ সাইতামা সিটির বাইতুল আমান গামো মসজিদে অনুষ্টিত হয় অনাডম্বর এক বিয়ের অনুষ্ঠানের।ব্যতিক্রমী এই বিয়েটি ছিল জাপানী ও বাংলাদেশী নাগরিকের। কনে কুরোসাকি ইউকো আয়শা ও বর হোসাইন আনোয়ার। টোকিও, এদোগাওয়া-কু এর বাসিন্দা আয়শা জাপানের তোচিগি কেনের কুরোসাকি পরিবারের মিতসুও-খাজুকো দম্পতির সন্তান। নও মুসলিম কনে কুরোসাকি ইউকো আয়শার সাথে কথা হয় প্রবাসে বাংলাদেশের এই প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথনের সারসংক্ষেপ প্রবাসে বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
কিভাবে ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হলেন:
ইউকো আয়শাঃ আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন তাকে হয়তো এভাবেই কোন না কোন পথ বাতলে দেন। ৩ বছর আগে ইন্টারনেট এ ব্রাউজিং করতে করতেই হঠাৎ আয়শা রমজান সম্পর্কে কিছু তথ্য দেখতে পান। জ্ঞান পিপাসু আয়শা প্রবল আগ্রহের বশবর্তী হয়ে রমজান কি তা আরো ভাল ভাবে বুঝার ও ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি কিছু জানার চেষ্টা করেন। সেই রমজান মাসেই ইসলাম ধর্ম গ্রহনের আগে ৬টি রোজা রাখেন। এরপর শুরু হয় আরো জানার আগ্রহ। অতপর টোকিওস্থ ইসলামিক সেন্টার এ আসা-যাওয়া, শান্তির ধর্ম ইসলামের নিগূঢ় রহস্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা। এরপর বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে ইসলাম কবুল করে মুসলিম হন ।
স্বামী হিসাবে হোসাইন আনোয়ারকে বেছে নিলেন কীভাবে?
ইউকো আয়শাঃ ইসলাম নিয়ে স্টাডী করে বুঝতে পারি যে, ইসলামই একমাত্র পথ যা কিনা পারে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা মৃত্যু পরবর্তী জীবনেরও সুনিশ্চিত সুখ-শান্তির সম্ভাবনা দিতে।
তারই জের ধরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন জাপানী কোনও অমুসলিম নয় বরং মুসলিম কাউকেই তিনি জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহন করবেন যে কিনা তাকে ধর্মীয় রীতি-নীতি আরো ভাল ভাবে জানতে বুঝতে ও মানতে সহযোগিতা করবে। তিনি পেয়েও যান এমন একজন কে। সে ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তিনি হলেন টোকিও নিবাসী ফেণী জেলার হোসাইন আনোয়ার। মহৎ বাক্তিত্তের অধিকারী আনোয়ারের সার্বিক সহযোগিতায় গত জুলাই ২০১৩ এর রমজান মাসে পুরো একমাস রোজা ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেন।
নব দিক্ষীত মুসলিম হিসাবে আপনার অনুভূতি কি?
ইউকো আয়শাঃ ‘’ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম। আমার বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কেউই মুসলিম ছিলোনা। আমি কিভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে তা সঠিকভাবে মেনে চলবো এ নিয়ে সর্বদাই মনে ভয় কাজ করত। তবে মুসলিম হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। এখন আমার সব ভয় কেটে গেছে”। আয়শা যেন বাকি জীবনটা আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) এর প্রদর্শিত পথে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে পরিচালিত করতে পারেন সেজন্য সকলের দোয়াপ্রার্থী।
ইসলামিক কালচারাল ফাইন্ডেশন অব জাপানের ব্যবস্থাপনায় সাইতামা, গামো মসজিদের সম্মানিত ইমাম হাফেজ সাবের আহমেদ সাহেব আয়শা ও আনোয়ারের বিবাহ কার্য সম্পাদন করান। তাদের বৈবাহিক জীবন সুখ, সমৃদ্ধি ও আনন্দময় হয়ে উঠুক সেই প্রত্যাশাই সকলের।
আজকের এই দিনে জ্ঞান বিমুখ অধঃপতিত,শান্তির অন্বেষায় পাগল পারা সমগ্র মুসলিম জাতির নিকট উন্নত বিশ্বের দেশ জাপানের আয়শা যেন সিরাতুল মোস্তাকিমের আয়নায় বিম্বিত আলোকোদ্ভাসিত এক মহীয়সী নারী। আধুনিকতার নামে নিজেদের অস্তিত্ব বিকিয়ে দিতে থাকা মুসলিম নারী জাতীর সামনে হিসেবে নিজেকে চির শাশ্বত,চির উন্নত, আধুনিক ইসলামের বিমুগ্ধ মুর্ত প্রতীক হিসাবে উপস্থাপন করল সুন্দরী,স্মার্ট ও উচ্চ শিক্ষিতা ইউকো আয়শা।
আল্লাহ তার মুসলিম জীবনের পূর্ববর্তী সকল গুনাহ সমুহ মাফ করে আসন্ন দিনে তাকে পাপমুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন, আমিন। পরিশেষে আমাদের মুসলিম মা-বোনদের নিকট প্রশ্ন, আমরা মুসলমান হয়েও আয়শার মত করে কখনো কি ইসলাম কে জানার, বুঝার ও সেই অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছি ?
(সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন প্রবাসে বাংলাদেশের স্টাফ রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌস)
বিষয়: বিবিধ
৪৯০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন