হায়রে মাছ, তুই এতো নিষ্ঠুর আচরণ করলি আমার সাথে?
লিখেছেন লিখেছেন আহমদ মুসা ১৮ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:০৬:৩০ রাত
ভাবছি ব্লগটি পোস্ট করবো কি না। কারণ এই পোস্টের কিছু অংশ একজন ব্লগারের পোস্টে মন্তব্য করেছি। কিন্তু নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া বেরসিক মাছের কান্ড আমাকে দারুণভাবে হতাশ করেছে। আমার এমনিতেই মাছ ধরার শখ একটু বেশী। তাই মাছরাও হয়তো বুঝতে পেরে আমার সাথে রসিকতাও করেছে একটু বেশি। তাই বলে স্বপ্নে ধরা দিতে হবে!!!
কেইস স্টাডি-১
জীবনে প্রথম একটি মাগনা মাছ ধরতে পেরেছিলাম। বড় আপার বাড়ী থেকে আমাদের বাড়ীতে ফিরছিলাম কোন এক সন্ধ্যায়। পথিমধ্যে ইয়া বড় সাইজের একটি ষোল মাছ খায় থেকে লাফ দিয়ে রাস্তার উপর গড়াগরি করছে নতুন গন্তব্যে পাড়ি দেয়ার আশায়। কিন্তু ততক্ষণে সে আমার কব্জায় চলে এসেছে। মাছটাকে পাকড়াও করে খুশীতে আত্মহারা হয়ে সোজা বাড়ীর উদ্দেশ্যে রাওনা দিলাম। বাড়ীর সাতে লাগোয়া পুকুরের ঘাটে নেমেছি পায়ের কাদা পরিস্কার করার জন্য। আর তখনই আমাকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে আমার হাত থেকে নাড়া দিয়ে পানিতে দিলো এক ঝাপ!!! আজ থেকে আট বছর আগের স্মৃতি। এখনো সেই শোকাহত স্মৃতি ভুলতে পারিনি।
কেইস স্টাডি-২
এইতো সেদিনের কথা। সদ্য বিদায়ী রমজান মাসের শুরুতে। আনুমানিক সন্ধ্যা সাতটার সময়। মোটর বাইক চালিয়ে অফিস থেকে বাড়ী ফিরছিলাম হাইওয়ে দিয়ে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ বাইকের হেড লাইটের আলোতে আমার দৃষ্টিগোচর হলো খুব বড় সাইজের একটি কৈ মাছ রাস্তার উপর উঠে এসেছে। গড়াগরি দিচ্ছে অজানা গন্তব্যে। আমি গাড়ি থেকে নেমে মাছটাকে অন্য গাড়ির চাকার তলে পিষ্ট হওয়া থেকে বাচানোর জন্য পায়ে লাত্থি দিলাম নিজের ভাগে আনার জন্য। কিন্তু আমি কি জানতাম বেটা কৈ মাছ আমার তকদীরে নেই!!! এক লাথিতেই যেখান থেকে উঠে এসেছে সেখানেই ফেরত চলে গেল!!!
কেইস স্টাডি-৩
কখন কি কারণে পুকুর ঘাটে নেমেছি সেই ঘটনার কোন শুরু নেই। পুকুরের পাকা ঘাটের সিড়িতে পানির উপরি স্থরের সাথে লাগোয়া এক্কেবারে সারি সারি ভাবে বসে আছে বড় বড় সাইজের চিংড়ি মাছ। আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় চোঁয়াইছা নামে পরিচিত। আমি জটপট বেশ কয়েকটি ধরে ফেললাম। পুকুরের পানিও কমে গেছে। বড় বড় রুই, কাতলা, বোয়াল, ষোল সহ বিভিন্ন জাতের মাছ খেলা করছে। হাটু পরিমান পানি মাত্র। একেবারে পুকুরের তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। আরো অনেকের সাথে আমিও নেমে গেলাম পুকুরে মাছ ধরার জন্য। বড় সড় বেশ কয়েকটি মাছ ধরলাম। পুকুরে সব চেয়ে বড় রুই মাছটি ধরার জন্য সবাই চেষ্টা করছে। কিন্তু কেউ ভাগে আনতে পারছে না। ঘটনাচক্রে মাছটি আমার পাশে চলে আসাতে বাগ্যক্রমে আমিই তারে ধরে ফেললাম। অনেক বড় মাছ। ওজনে কম্পক্ষে দশ/বারো কেজির কম হবে না। এতো বড় দেশীয় পুকুরের মাছ খাওয়া তো দুরের কথা জীবনেও দেখিনি। আমি বড়ই ভাগ্যবান মানুষ। এক্কেবারে সোনার হরিণ পাওয়ার চেয়েও বেশি আনন্দ অনুভব করছি। মনে হয় আকাশের চাদঁ যদি কেউ আমার হাতে এনে দেয় তাতেও এতো খুশী হতাম না। বাড়ীর উঠোনে নিয়ে আসলাম মাছটিকে। পূর্বে বড় বড় চিংড়ি মাছসহ যা ধরেছি তা আমার প্রিয় গিন্নীকে ভাল ভাবে রান্না করার জন্য কখন নির্দেশ দিয়েছি তাও মনে নেই। একদিকে গিন্নীর ডাক- চিংড়ি মাছের সুস্বাদু পরিবেশনা দিয়ে ভাত খাওয়ার আমন্ত্রণ। অন্যদিকে বিশাল রুই মাছ নিয়ে বাড়ীর উঠোনে খুশীর আনন্দে ভরা ব্যস্ততা। তরুতাজা জীবন্ত রুই মাছের লাফালাফিতে আমার হাটুতে লেজের বাড়ি খেলাম সামান্য। সাথে সাথেই আমার চার বছরের দ্বিতীয় মেয়ে কান্না করে উঠলো। তাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে কখন যে আমি নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই। আমার হাটুর নিচেই তার একটি হাত চাপা পরাতে সে কেদেঁ উঠেছে। সাথে সাথে আমার ঘুমও ভেঙ্গে গেল। স্বপ্নের বাকী অংশটা শোকে আর বলতে পারছি না।
আহহারে মাছ তুই এতো নিষ্ঠুর আচরণ করলি আমার সাথে?
বিষয়: বিবিধ
২২৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন